করোনা : গরিবের টিকা কোনটি আর বড়লোকের টিকা কোনটি

গৌতম দাস | May 15, 2021 10:25 pm
করোনার টিকা

করোনার টিকা - ছবি : সংগৃহীত

 

চীন না আমেরিকা- আমাদের জন্য কে ভালো- এনিয়ে আমাদের ব্যক্তিগত আগ্রহ, লাভালাভ অথবা ভালো-মন্দ বিচারবোধ থাকতে পারে। কিন্তু এটা ব্যক্তিগত বা সাবজেকটিভ বোধবিচার। আজকের আলোচনার বিষয়টার বিচার নৈর্ব্যক্তিক বা অবজেকটিক হতে হবে। তাতে এই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটার সহজ সমাধান পাওয়া যেতে পারে।
করোনার টিকা জিনিসটা শেষ পর্যন্ত গরিব-বড়লোকের টিকা হয়েই হাজির হয়ে গেল। আবার একই সাথে তা গ্লোবালি এক ভুয়া এম্পায়ার আর উপযুক্ত এম্পায়ারের দাবি হিসাবে হাজির হয়ে গেল।

গরিব-বড়লোকের টিকা বলতে সর্বসাকুল্যে দুনিয়ায় ব্যবহৃত টিকাগুলো হলো একদিকে ফাইজার, মর্ডানা আর জনসন। অন্যদিকে - এস্টোজেনিকা, সিনোভ্যাক, সিনোফার্মা, স্পুটনিক, কোভ্যাক্সিন ইত্যাদি। এর মধ্যে প্রথম তিনটা - মানে ফাইজার, মর্ডানা, জনসন হল বড়লোকের টিকা। কারণ এর দাম অনেক বেশি আর এর চেয়েও বড় কথা হল এর সংরক্ষণের তাপমাত্রা রক্ষা করা খুবই কঠিন। এদের দাম ২০ থেকে ৩৩ ডলারের মধ্যে। আর সংরক্ষণ তাপমাত্রা (-১৫) থেকে (-৮০) ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে। যেখানে গরিব গোত্রের টিকাগুলোর প্রায় সবই ৪ ডলারের নিচে আর সংরক্ষণ তাপমাত্রা ২-৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। সাধারণের বুঝার ভাষায় বললে, বাসায় আমরা যে ধরণের কমন ফ্রিজ ব্যবহার করি (ডিপফ্রিজ না) সেটাই গরীবের ভ্যাকসিনগুলো সংরক্ষণের জন্য যথেষ্ট। আর বড়লোকের ভ্যাকসিন আমাদের মত দেশে যেখানে গরমের সময় তাপমাত্রা +৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা সেখানে সংরক্ষণ কঠিন। তাই বড়লোকের ভ্যাকসিন আমরা বিনা-পয়সায় পেলেও তা ঢাকাতেই ব্যবহার প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে। [এখানে ভ্যাকসিন বিষয়ে তথ্যগুলো বিবিসির ১০ এপ্রিলের আর ১৪ জানুয়ারির দুটি রিপোর্ট থেকে নেয়া ]।
তাহলে এটা পরিস্কার যে, আমাদের মত দেশকে এস্টোজেনিকা, সিনোভ্যাক, সিনোফার্মা, স্পুটনিক, কোভ্যাক্সিন - এসব গরীবদের টিকার মধ্যেই থাকতে হবে। এর মধ্যে এস্টোজেনিকা যুক্তরাজ্যে আবিস্কার হলেও এর ফর্মুলা ভারতে এনে তৈরির ফলে এর সস্তা ভার্সান কোভিশিল্ড পাওয়া যায়, যা বাংলাদেশকে বিক্রি করেছিল ভারত এবং এজন্য তারা আগাম বিনিয়োগ হিসাবে টাকা নিয়েও এখন আর টিকা দিচ্ছে না। আগামিতেও দেয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

এরপরের দুই টিকা সিনোভ্যাক, সিনোফার্মা চীনের তৈরি। দুটোই হু-এর নোটিশ বোর্ডে ৭৮-৯০% পর্যন্ত কার্যকর দেখা যায়। যার মধ্যে সিনোভ্যাক এর কার্যকারিতা পরে ব্রাজিলে কমে গিয়ে ৫০.৪% হয়েছিল, তবে ব্লুমবার্গ ইন্দোনেশিয়ায় ফল ৯৪-৯৮%, চিলিতে ৬৭% কার্যকারিতার কথা জানায়। আর সিনোফার্মা হু-এর তালিকায় ৭৯% কার্যকর হিসাবে উল্লেখ আছে এখনো। আবার, রাশিয়ান স্পুটনিক এখনো ৯১% কার্যকর বলে উল্লেখ রয়েছে।
খারাপ খবর হল ভারতের অপর টিকা কোভ্যাক্সিন ৭৮% পর্যন্ত কার্যকর দেখালেও এটা তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শেষ হবার আগেই বাজারজাত শুরু করেছে বলে অভিযোগ আছে বিবিসির রিপোর্টে। [What was the controversy around Covaxin?]

তার মানে দাঁড়ালো দুনিয়াতে অন্য যত ভ্যাকসিন আবিস্কৃত হয়ে থাকুক না কেন, বাংলাদেশের জন্য ‘পাওয়া সম্ভব’ এবং ‘উপযুক্ত’ ভ্যাকসিন বলতে বাকি থাকল চীনা সিনোভ্যাক, সিনোফার্মা (এটা বেশি উপযুক্ত) আর রাশিয়ান স্পুটনিক।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us