কীভাবে হয় ওষুধ ও ভ্যাকসিনের ট্রায়াল?

অন্য এক দিগন্ত | May 31, 2021 08:03 am
কীভাবে হয় ওষুধ ও ভ্যাকসিনের ট্রায়াল?

কীভাবে হয় ওষুধ ও ভ্যাকসিনের ট্রায়াল? - ছবি : সংগৃহীত

 

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ক্লিনিক্ল্যাল ট্রায়াল-এর অর্থ হলো দু’টি ভিন্ন ভ্যাকসিন বা দুটি আলাদা ওষুধের মধ্যে কোনটি বেশি নিরাপদভাবে কার্যকরী তার তুলনামূলক পর্যবেক্ষণ। তবে এখানেই প্রশ্ন উঠে আসে, যারা ট্রায়ালে অংশ নেন তারা কি তবে ল্যাবরেটরির গিনিপিগে পরিণত হন? বিশেষ করে যখন এত দ্রুত করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা সফল হলো, এবং অব্যবহিত পরেই মানুষের উপর ভ্যাকসিনের প্রয়োগ শুরু হলো, তখন অনেকের ভ্রু কুঁচকে গিয়েছিল! কীভাবে এত দ্রুত ভ্যাকসিন বাজারে আসতে পারে? ইবোলা ভ্যাকসিন বের করতেও অন্তত বছর তিনেক কেটে গিয়েছিল। অন্যান্য অসুখের ক্ষেত্রে তো আরো বেশি সময় লেগেছিল। সেক্ষেত্রে করোনা ভ্যাকসিন তৈরির সময় কি মানুষের নিরাপত্তার দিকটি কি আদৌ সুনিশ্চত করা গিয়েছে? তাছাড়া মানুষের দেহে ভ্যাকসিনের প্রভাব কেমন পড়তে পারে সেই বিষয়টি নিয়েও গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয়েছে কি?

ভ্যাকসিন নিয়ে এই সংশয় প্রসঙ্গে পিয়ারলেস হসপিটাল অ্যান্ড বিকে রয় রিসার্চ সেন্টারের পিয়ারলেস হসপিটাল অ্যান্ড বিকে রয় রিসার্চ সেন্টারের ডিপার্টমেন্ট অব ক্লিনিক্যাল রিসার্চের প্রধান ডাঃ শুভ্রজ্যোতি ভৌমিক জানালেন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল কীভাবে হয় তা জানলেই এই সন্দেহের নিরাশয় হবে। করোনা ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে তুলনামূলক পর্যালোচনার জন্য ৩:১ অনুপাতে ব্যবহার করা হয়েছে প্লাসিবো। অর্থাৎ প্রতি তিনজনের মধ্যে দু’জনকে দেয়া হচ্ছিল সত্যিকারের ভ্যাকসিন। একজনকে দেয়া হয়েছিল ভ্যাকসিনের মতো দেখতে তরল। এবার আর একটু এগিয়ে আসুন। ভারতে কোভিশিল্ডের ট্রায়াল হয়েছিল প্রায় হাজার মানুষের উপর। এর পর অন্তত ১০ কোটি মানুষ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। এখনো কিছু মানুষ ভ্যাকসিন পাননি। এক্ষেত্রেও তুলনামূলক পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কোভিডবিধি মেনে চলার পরও ভ্যাকসিন পেয়েছেন এমন ব্যক্তিবর্গ এবং ভ্যাকসিন পাননি এমন ব্যক্তিবর্গের মধ্যে বেশি সুরক্ষিত থাকছেন ভ্যাকসিন পেয়েছেন এমন ব্যক্তিরা।

ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায় বা ফেজ কী?
করোনা ভ্যাকসিন আসার ঊষাকাল থেকে শোনা যাচ্ছে, ফেজ ওয়ান, ফেজ টু, ফেজ থ্রি ট্রায়াল ইত্যাদি। এই যে ফেজ বা পর্যায় এগুলো আসলে কী? ডা. ভৌমিক জানালেন, শুধু ভ্যাকসিন নয়, ওষুধের ক্ষেত্রেও এভাবে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চালানো হয়। তবে ওষুধের ক্ষেত্রে ফেজ ওয়ানের ট্রায়াল সর্বদাই সুস্থ স্বাস্থ্যবান স্বেচ্ছাসেবীর উপরেই করা হয়? এভাবেই বোঝা যায় ওষুধের প্রভাব শরীরে কীভাবে পড়ছে। সাধারণত ২০ থেকে ৮০ জনের উপরে এই ট্রায়াল হয়। ওষুধের ফেজ টু ট্রায়ালে ২০০ থেকে ৫০০ রোগীর উপর ট্রায়াল চলে। আবার ওষুধের ফেজ থ্রি ট্রায়ালে ৫০০ থেকে হাজার রোগীর উপর ওষুধ প্রয়োগ হয়। তবে ভ্যাকসিনের ফেজ টু ট্রায়ালে সবসময় সুস্থ স্বেচ্ছাসেবীকেই অংশ নিতে হয়। ভ্যাকসিনের ফেজ টু ট্রায়ালে যোগ দেন প্রায় ৫০০। ভ্যাকসিনের ফেজ থ্রি ট্রায়ালে হাজারজন স্বেচ্ছাসেবীকে অংশগ্রহণ করতে হয়।

প্রশ্ন হলো, যদি কোনোভাবে যদি স্বেচ্ছাসেবী অসুস্থ হয়ে পড়েন? সেক্ষেত্রে কি তাদের উপর থেকে হাত তুলে নেয়া হবে? এক্ষেত্রে জেনে রাখা দরকার যে দেশের আইনই রক্ষা করবে স্বেচ্ছাসেবীকে। আইনগত নানা কারণে, যেখানে সেখানে ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চালানো যায় না। এমনকী যে প্রতিষ্ঠান ট্রায়াল চালানোর যোগ্য, সেই প্রতিষ্ঠানের এথিকস কমিটিরও অনুমোদন লাগে। এছাড়া, ট্রায়াল চলাকালীন স্বেচ্ছাসেবী সামান্যতম অসুস্থ হয়ে পড়লেও তার চিকিৎসার সমস্ত দায়ভার ও পরিস্থিতি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকে ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থা। এছাড়া ট্রায়াল চালানোর জন্য চিকিৎসকরদের আলাদা করে আন্তর্জাতিক গাইডলাইন মেনে নিতে হয় ট্রেনিং। ট্রেনিং না থাকলে সরকার ট্রায়াল চালানোর অনুমোদন দেয় না। সুতরাং স্বেচ্ছাসেবীরা সবসময় সুরক্ষিত থাকেন।

ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ও অ্যানিম্যাল স্টাডি’র তফাত
ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শব্দটি প্রযোজ্য হয় মানুষের ক্ষেত্রে ওষুধ বা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল করলে। অন্যদিকে অ্যানিমাল স্টাডি সবসময় মনুষ্যেতর প্রাণী যেমন ইঁদুর, কুকুর, শিম্পাঞ্জি, বাঁদরের উপরেই করা হয়। অর্থাৎ যেকোনো ওষুধ বা ভ্যাকসিনের প্রভাব কেমন তা আগে ছোট থেকে বড় প্রাণীর উপর প্রয়োগ করে দেখা হয়। প্রাণীর উপর করা প্রয়োগ করা ওষুধ ও ভ্যাকসিনের ফলাফল এরপর সরকারের রিভিউ কমিটি দেখে। রিভিউ কমিটি কতখানি কড়া নজর রাখে এই ধরনের সমীক্ষার উপর সেই বিষয়ে একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। ১০ হাজার ওষুধ অ্যানিমাল স্টাডিজ করার পর গবেষণাপত্র জমা দিলে তার থেকে মাত্র ১০০টি সংস্থা ফেজ ওয়ান ক্লিনিক্যাল স্টাডির অনুমোদন পায়। এরপরেও ফেজ থ্রি –এর স্টাডি শেষ করতে পারে মাত্র দুই থেকে তিনটি সংস্থার ওষুধ। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে ঠিক কতখানি কঠোর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল।

সূত্র : বর্তমান


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us