যেভাবে পাকানো হচ্ছে কাঁঠাল

ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) থেকে সংবাদদাতা | Jun 05, 2021 07:31 am
কাঁচা কাঁঠালে বিষাক্ত রাসায়নিক প্রয়োগ করছেন একজন ব্যবসায়ী

কাঁচা কাঁঠালে বিষাক্ত রাসায়নিক প্রয়োগ করছেন একজন ব্যবসায়ী - ছবি : নয়া দিগন্ত

 

একরকম কিলিয়েই পাকানো হচ্ছে মধুমাসের মধুফল জাতীয়ফল কাঁঠাল। কাঁঠাল ব্যবসায়ীরা বিষাক্ত রাসায়নিক প্রয়োগে জোর করেই কাঁঠাল পাকাচ্ছে। বেশি লাভের আশায় মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই কচি কাঁঠালে প্রয়োগ করছে বিষাক্ত রাইপেন, লবণ ও পটাশের দ্রবণ এবং ইথিফন জাতীয় বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ।

চলতি মৌসুমে এসব এলাকায় শুরু হয়েছে কাঁঠালে রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগের প্রতিযোগিতা। স্থানীয় ভাষায় রাসানিক প্রয়োগের এ পদ্ধতিকে ‘শিক মারা’ বলে। প্রায় দেড় ফুট লম্বা লোহার শিক কাঁঠালের বোটা বরাবর ঢুকিয়ে দিয়ে ছিদ্র পথে সিরিঞ্জ দিয়ে বিষাক্ত কার্বাইড, লবণ ও পটাশের দ্রবণ, ইথিফন ও রাইপেন জাতীয় পদার্থ প্রয়োগ করা হয়। পরে স্তূপাকারে সাজিয়ে পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে চাপা দিয়ে রাখলেই ২৪ ঘণ্টায় একটি কচি কাঁঠালও পেকে যায়। মেশিনে স্প্রে করেও রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করে থাকেন কেউ কেউ।

প্রতি মৌসুমেই টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার প্রায় ১০-১৫টি বাজারে ওঠে প্রচুর কাঁঠাল। ঘাটাইলের গারোবাজার, সাগরদীঘি, জোড়দীঘি, আষাড়িয়া চালা, রামদেবপুর, শহর গোপিনপুর, ধলাপাড়া, দেওপাড়া, দেলুটিয়া, ছোনখোলা, চাপড়ি, পেচারহাট, মাকড়াই, কুশারিয়াসহ অনেক বাজার থেকে প্রতি হাটবার এক থেকে দেড়শতাধিক ট্রাক কাঁঠাল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যায়। এ ছাড়াও ঘাটাইলের পার্শ্ববর্তী উপজেলা মধুপুর-সখিপুরেও উৎপাদন হয় প্রচুর কাঁঠাল। এবার ঘাটাইলে কাঁঠালের ফলন অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম। কাঁঠালের আকারও হয়েছে ছোট। প্রাকৃতিক আবহাওয়াগত ও অনাবৃষ্টির কারণে এবারের কাঁঠাল একটু দেরিতে নামতে শুরু করেছে।

লক্ষিন্দর গ্রামের স্কুল শিক্ষক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, আমার কাঁঠাল বাগানে অন্যান্য বছরের তুলনায় ফলন অনেক কম হয়েছে। গারোবাজার অঞ্চলের মুরাইদ গ্রামের কাঁঠালচাষি মীর ফজলুল হক বলেন, ফলও কম ধরেছে দামও কমে গেছে। প্রচণ্ড তাপ ও অনাবৃষ্টির কারণে কাঁঠালের আকারও বেশ ছোট।

গারোবাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জামাল হোসেন বলেন, পাহাড়ি অঞ্চলে পুরনো কাঁঠালগাছ কেটে দ্রুত বর্ধনশীল গাছ রোপণ করছে অনেকেই যে কারণে আগের মতো বড় বড় কাঁঠাল বাগান নেই। বেশি লাভের আশায় আগাম কাঁঠাল বাজারে আনতে শুরু করেছে অনেকেই।
মুরাইদ গ্রামের কাঁঠাল ব্যবসায়ী চান মাহমুদ বলেন, গত বুধবার গারোবাজারে কাঁঠালের পরিমাণ অন্য বছরের তুলনায় অর্ধেক, দামও কম। এভাবে চলতে থাকলে আমার ব্যবসায় লাভ হবে না। গারোবাজার বণিক সমিতির সভাপতি আব্দুস ছাত্তার বলেন, কচি কাঁঠালে বিষাক্ত রাসায়নিক দেয়া শুভ লক্ষণ নয়। এর প্রতিকার হওয়া প্রয়োজন।

একজন ব্যবসায়ী বলেন, এক ট্রাক কাঁঠাল ঢাকা নিতে গেলে স্থানীয় দালালদের কমিশন দিতে হয় হাজার টাকার ওপরে। তা ছাড়াও দিতে হয় রফতানি কর, খাজনা, সুইপার, নাইটগার্ড, মসজিদ, লেবারখরচসহ নানা চাঁদা। তাই আগাম মৌসুমে বেশি লাভের আশায় আমরা কাঁঠালে রাসানিক দ্রব্য মিশিয়ে থাকি। রাসানিক দ্রব্য দিয়ে কাঁঠাল পাকানো নিয়ে তিনি আরো বলেন, ঢাকা শহরে কেউ কাঁচা কাঁঠাল কিনতে চায় না। সবাই পাকা কাঁঠাল চায়। সব কাঁঠাল একসাথে পাকাতে মেডিসিন দিতেই হয়।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী এসব রসানিক দ্রব্য মিশ্রিত কাঁঠাল খেলে আমাশয়, লিভারের রোগ, রাতকানা, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা ও ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ হতে পারে। সম্প্রতি সরকারের ভেজালবিরোধী অভিযান চললেও থেমে নেই কাঁঠালে রাসায়নিক মেশানো।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us