‘সুবর্ণ রুই’ : মৎস্য বিপ্লবের হাতছানি

সাইফুল মাহমুদ ময়মনসিংহ অফিস | Jun 10, 2021 01:04 pm
‘সুবর্ণ রুই’ 

‘সুবর্ণ রুই’  - ছবি সংগৃহীত

 

এবার জেনেটিক গবেষণায় অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)। ২০২০ সালে ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ এক যুগ গবেষণার মাধ্যমে রুই মাছের চতুর্থ প্রজন্মের নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন। রুই মাছের নতুন ওই জাতটি দ্রুত বর্ধনশীল, স্থানীয় জাতের চেয়ে ২০.১২ শতাংশ অধিক উৎপাদনশীল, খেতে সুস্বাদু এবং দেখতে লালচে ও আকর্ষণীয়। নতুন উদ্ভাবিত রুই মাছ মাঠপর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হলে দেশে প্রায় আট টন মাছ অধিক উৎপাদন হবে। রুই মাছের এ জাতটিকে ‘সুবর্ণ রুই’ হিসেবে নামকরণ করছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)। মৎস্য খাতের সাথে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে স্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে সুবর্ণ রুই মাছের নতুন জাত ঘোষণা ও অবমুক্ত করা হবে। অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং সচিব রওনক মাহমুদ ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ সুখবর দিয়ে জানান, স্বাদুপানির অন্যতম প্রধান মৎস্য প্রজাতি হচ্ছে রুই। বাংলাদেশে চাষযোগ্য মাছের মধ্যে রুই সবচেয়ে বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন। বর্তমানে মৎস্য চাষ প্রায় সম্পূর্ণভাবে হ্যাচারি উৎপাদিত পোনার ওপর নির্ভরশীল। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, হ্যাচারিতে উৎপাদিত রুই মাছের পোনার কৌলিতাত্ত্বিক অবক্ষয় (মবহবঃরপ ফবঃবৎরড়ৎধঃরড়হ) ও অন্তঃপ্রজননজনিত সমস্যা (রহনৎববফরহম ফবঢ়ৎবংংরড়হ) মৎস্য চাষ উন্নয়নে অন্যতম অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যা হতে উত্তরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে কৌলিতাত্ত্বিক গবেষণার মাধ্যমে রুই মাছের নতুন উন্নত জাত উন্নয়নে গবেষণা চালানো হয়। এক্ষেত্রে যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও হালদা নদীর প্রাকৃতিক উৎসের রুই মাছ সংগ্রহ করে ধারাবাহিক গবেষণায় ২০২০ সালে রুই মাছের চতুর্থ প্রজন্ম উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়। নতুন জাতের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলোÑ স্থানীয় জাতের তুলনায় চতুর্থ প্রজন্মের ‘সুবর্ণ রুই’ ২০.১২ শতাংশ অধিক উৎপাদনশীল। এ মাছের গায়ের রঙ লালচে হওয়ায় দেখতে খুবই আকর্ষণীয় এবং অন্তঃপ্রজনন সমস্যামুক্ত।

জাত উন্নয়নের কৌশলপ্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি জানান, ভিন্ন ভিন্ন নদী যেমন- হালদা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদের উৎস থেকে সংগৃহীত স্থানীয় জাতের রুই মাছের মধ্যে দ্বৈত এ্যালিল ক্রসিংয়ের (ফর-ধষষবষব পৎড়ংংরহম) মাধ্যমে ৯টি গ্রুপ থেকে প্রথমে বেইজ পপুলেশন (নধংব ঢ়ড়ঢ়ঁষধঃরড়হ) তৈরি করা হয়। অতঃপর বেইজ পপুলেশন থেকে সিলেকটিভ ব্রিডিংয়ের (সধংং ংবষবপঃরড়হ) মাধ্যমে ২০০৯ সালে রুই মাছের উন্নত জাতের প্রথম প্রজন্মের (ঋ১) মাছ উদ্ভাবন করা হয়েছে- যা বেইজ পপুলেশন থেকে ৭.৫ শতাংশ অধিক উৎপাদনশীল। পরবর্তীতে সিলেকটিভ ব্রিডিংয়ের (ভধসরষু ংবষবপঃরড়হ) মাধ্যমে রুই মাছের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের যথাক্রমে ১২.৩৮ শতাংশ ও ১৬.৮৩ শতাংশ অধিক উৎপাদনশীল জাত উদ্ভাবন করা হয়। অতঃপর ২০২০ সালে উন্নত জাতের চতুর্থ প্রজন্মের নতুন রুই মাছের জাত তৈরি করা সম্ভব হয়েছে-যা স্থানীয় জাতের চেয়ে ২০.১২ শতাংশ অধিক উৎপাদনশীল।

গবেষণাকালে ডিএনএ (চড়ষুসড়ৎঢ়যরপ উঘঅ) মার্কার ব্যবহার করে চতুর্থ প্রজন্মের জাতের তুলনামুলক বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, নতুন এই জাতের কৌলিতাত্ত্বিক ভিন্নতা (মবহবঃরপ াধৎরধঃরড়হ) রয়েছে অর্থাৎ চড়ষুসড়ৎঢ়যরপ লোকাস এবং জিন ডাইভার্সিটি স্থানীয় জাত অপেক্ষা অধিক। এতে প্রমাণিত হয় চতুর্থ প্রজন্মের জাতের কৌলিতাত্ত্বিক অবদান (মবহবঃরপ পড়হঃৎরনঁঃরড়হ) স্থানীয় জাত অপেক্ষা অধিক যা প্রজাতির বিশুদ্ধতা (মবহবঃরপ ঢ়ঁৎরঃু) বজায় রাখার পাশাপাশি মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। চতুর্থ প্রজন্মের সুবর্ণ রুই, নদীর উৎস থেকে প্রাপ্ত রুই এবং হ্যাচারিতে উৎপাদিত পোনা থেকে রুই মাছের কৌলিতাত্ত্বিক ভিন্নতা রয়েছে যথাক্রমে লোকাস ৭১.৪৩ শতাংশ, ৬৬.৬৭ শতাংশ ও ৫৭.১৪ শতাংশ।

বিএফআরআই মহাপরিচালক জানান, অধিক উৎপাদনশীল ও অন্তঃপ্রজনন সমস্যামুক্ত উন্নতজাতের চতুর্থ প্রজন্মের সুবর্ণ রুই মাছ স্বাদুপানি ও আধা-লবণাক্ত পানির পুকুর, বিল, বাঁওড় এবং হাওরে চাষ করা যাবে। এতে সামগ্রিকভাবে দেশে প্রায় ৮০ হাজার কেজি মাছ অধিক উৎপাদিত হবে-যার বর্তমান বাজারমূল্য দুই কোটি ৪০ লাখ টাকায় দাঁড়াবে। তা ছাড়া, উন্নত এ জাতের রেণু পোনা হ্যাচারি থেকে সংগ্রহ করে নার্সারি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অনেকেই লাভবান হতে পারবে।
ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ আরো জানান, সুবর্ণ রুই মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রথমে এর জার্মপ্লাজম বিতরণ করা হবে। এ লক্ষ্যে ভিডিও সংযোগের মাধ্যমে মৎস্য অধিদফতর ও বেসরকারি পর্যায়ের নির্বাচিত ২০টি হ্যাচারিতে সুবর্ণ রুই এর জার্মপ্লাজম (রেণু/পোনা) আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে।

হ্যাচারিতে এসব রেণু/পোনা লালন-পালন করে ‘ব্রুড মাছ’ তৈরি করা হবে এবং পোনা উৎপাদনে ব্যবহার করা হবে। উৎপাদিত পোনা পরবর্তীতে চাষাবাদের জন্য ব্যবহৃত হবে। ফলে দেশে মাছের সামগ্রিক ফলন বৃদ্ধি পাবে। সুবর্ণ রুই মাছের পোনা সরাসরি ইনস্টিটিউট হতে দেশের বিভিন্ন এলাকার ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধীর পুকুরে বিনামূল্যে সরবরাহ করা হবে। তাদের পুকুরে উৎপাদন দেখে অন্যরাও সুবর্ণ রুই মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবেন এবং সুবর্ণ রুই দ্রুত মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us