চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরশাপাতি : স্বাদে অনন্য

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা | Jun 12, 2021 07:21 am
চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি বাগানে থোকায় থোকায় হিমসাগর আম

চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি বাগানে থোকায় থোকায় হিমসাগর আম - ছবি : নয়া দিগন্ত

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের অনন্য এক আমের নাম ক্ষীরশাপাতি। নামেই তার পরিচয়। জেলায় উৎপাদিত মোট আমের মধ্যে প্রায় ২৫ ভাগ উৎপাদিত হয় এই আম। ক্ষীরশাপাতি মানে এমন এক সুমিষ্ট আমের নাম যার স্বাদ কাউকে বিমুখ করে না। জেলার বাইরে তার আরেক নাম হিমসাগর। অবশ্য চাঁপাইবাসী তাকে কখনোই সে নামে ডাকে না। বাংলাদেশের একমাত্র ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল ইনডেক্স) পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত আম এটি। এখন চলছে এই আমের ভর মওসুম। আরেকটু বাড়িয়ে বলা যায় চলছে বিখ্যাত ক্ষীরশাপাতি আম উৎসব। অনলাইন অর্ডার, কিংবা ব্যবসায়িক কেনাবেচা, খাওয়া কিংবা উপহার দেয়া, বাসায় কিংবা বাজার, সব খানের এই মুহূর্তের আম মানেই ক্ষীরশাপাতি।

সম্ভাবনা বিবেচনায় আমের স্বত্ব সুরক্ষার চিন্তা থেকে ২০১৭ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরশাপাতি আমকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের প্রস্তাব করা হলে পরবর্তীতে তা গৃহীত হয়। ক্ষীরশাপাতি ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আরো দু’টি আমের জাত ল্যাংড়া ও আশিনাকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। সেগুলোর ব্যাপারেও আশাবাদী চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফল বিজ্ঞানীরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।

বর্তমানে এ জেলার মোট উৎপাদিত আমের মধ্যে ২৫ ভাগই ক্ষীরশাপাতি। প্রতি বছর রফতানি হওয়া আমের শীর্ষে রয়েছে এই জাতটি। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে বাংলাদেশের এই আম।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের দেয়া তথ্য মতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ বছর ৩৪ হাজার ৭৩৮ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। তার মধ্যে ক্ষীরশাপাতির পরিমাণ হচ্ছে তিন হাজার ৬৫ হেক্টর। এ হিসেবে শতকরা ১২ ভাগ জমিতে ক্ষীরশাপাতির উৎপাদন হয়েছে। পুরো জেলার মোট আম উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা দুই লাখ ৫৭ হাজার ৭৫৮ টন। এর মধ্যে ক্ষীরশাপাতির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ হাজার ৬৮৫ টন।

তবে এ হিসাবের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট গাজীপুরের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ফল বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বিশিষ্ট আমবিজ্ঞানী ড: মো: শরফ উদ্দিন। তিনি জানান, ক্ষীরশাপাতি আমকে ব্র্যান্ডিং করে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের যে সার্ভে সংঘটিত হয়েছে তাতে দেখা যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের মোট আমের মধ্যে ২৫ শতাংশই হচ্ছে ক্ষীরশাপাতি। সে হিসেবে জেলায় ক্ষীরশাপাতির আম বাগানের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। চলতি বছর যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৪ শ’ কোটি টাকা।

ড. শরফ উদ্দিন আরো জানান, পৃথিবীর যেকোনো দেশের আমের চাইতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরশাপাতির গুণগত মান ও বৈশিষ্ট্য অনন্য। বাংলাদেশে আমের অনেক জাত রয়েছে। কিন্তু অনন্য বৈশিষ্ট্যে, স্থায়িত্বে ও রফতানি যোগ্যতায় এটি সেরা। বর্তমান বিশ্বে থাইল্যান্ড তাদের দেশে উৎপাদিত নমডকমাই, ভারত-পাকিস্তানে চৌষা, আর ফিলিপাইনের ক্যারাবাউ আম বহির্বিশ্বে রফতানিতে সেরা অবস্থানে রয়েছে। সে প্রতিযোগিতায় ক্ষীরশাপাতির যোগ্যতা অনেক বেশি। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রথম আম রফতানির বছরে ১৫৩ টন, ২০১৬ তে ৬৮০ টন এবং সর্বশেষ ২০২০ সালে যে ১০০ টন আম বিদেশে রফতানি হয় তার প্রায় পুরোটায় ছিল এই জাতের আম। মূলত বাংলাদেশের গর্বের ব্র্যান্ডিংকৃত একমাত্র এই ক্ষীরশাপাতি দিয়ে সরকারের যে শুধু কোটি কোটি টাকা আয়ের সুযোগ আছে তাই নয় এই আম দিয়েই বিশ্ব দরবারে আমাদের বিশেষ পরিচিতি ঘটার সুযোগ রয়েছে। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ।

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হরিদাস মোহান্ত জানান জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জেলার একমাত্র আমের উৎপাদন আরো বাড়াতে হবে। এ জন্য নিতে হবে সমন্বিত গবেষণা ও সম্প্রসারণের উদ্যোগ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের এই বিখ্যাত আমটি ক্ষীরশাপাতি থেকে কিভাবে বেশি পরিমাণে হিমসাগর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে সে ব্যাপারে তিনি কোনো তথ্য জানাতে পারেননি।

এখানে উল্লেখ্য রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বাইরে এবং গোটা দেশে এমনকি নেট দুনিয়ায় এ আমের নাম হিমসাগার। তাতে ব্যাপক মানুষের ধারণা রয়েছে এ দুটি ভিন্ন জাতের আম। ক্ষীরশাপাতির এই দ্বৈত পরিচয়ের উৎস তালাশ করেও পাওয়া যায়নি।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us