একই মাস্ক ব্যবহার, অকারণে গরম ভাপে বাড়ে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমণের শঙ্কা

ডা. দ্বৈপায়ন মুখোপাধ্যায় | Jun 12, 2021 01:55 pm
একই মাস্ক ব্যবহার, অকারণে গরম ভাপে বাড়ে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমণের শঙ্কা

একই মাস্ক ব্যবহার, অকারণে গরম ভাপে বাড়ে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমণের শঙ্কা - ছবি সংগৃহীত

 

বিপদ যেন মানুষের কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। একে করোনায় রক্ষা ছিল না, এখন আবার দোসর হয়েছে মিউকরমাইকোসিস বা চলতি ভাষায় ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। তবে প্রথমেই বলে রাখি, এই ছত্রাককে ব্ল্যাকফাঙ্গাস বলাটা কিন্তু ভুল। এই ছত্রাক কালো নয়। এই ছত্রাকের বিজ্ঞানসম্মত নাম মিউকর। আসলে এই ছত্রাকের দ্বারা আক্রান্ত হলে নাকের ভিতরের চামড়ায় পচন ধরে এবং জায়গাটার রং কালো হয়ে যায়। বোধ হয় এই হিসেবেই অদ্ভুদভাবে এই ব্ল্যাকফাঙ্গাস কথাটা চালু হয়েছে। তারপর তা জনশ্রুতির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। তাই প্রথমেই মিউকরমাইকোসিসকে ব্ল্যাকফাঙ্গাস বলার ভুলটা শুধরে নিতে হবে। বর্তমানে করোনা থেকে সেরে ওঠা বহু মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। কয়েকজনের মৃত্যুও ঘটছে। তাই এই ছত্রাকজনিত অসুখকে নিয়ে সব মহলেই দুশ্চিন্তা রয়েছে। এমন দমবন্ধকর পরিস্থিতিতে সন্দেহ জাগছে— বারবার একই মাস্ক ব্যবহার, অহেতুক গরম ভাপ নেয়া থেকেও এই ছত্রাক সংক্রমণ মানুষের শরীরে ছড়িয়ে থাকতে পারে।

বারবার একই মাস্ক ব্যবহার
সার্জিক্যাল মাস্কসহ কোনো মাস্কই বারবার ব্যবহার করা উচিত নয়। কাপড়ের মাস্ক একাধিকবার ব্যবহার করলেও তা কেচে নিয়ে পরা উচিত। আসলে মাস্কের ভিতরের দেয়ালে দিকে শ্বাস ছাড়া ও নেয়ার কাজটা চলে। এছাড়া ঘাম, ময়লাও ওই অংশে মেশে। ফলে মাস্কের ভিতরের অংশে ছত্রাক বেড়ে ওঠার আশঙ্কা তৈরি হয়। এবার করোনা থেকে সেরে ওঠার পর কোনো ব্যক্তি এই ধরনের মাস্ক ব্যবহার করলে তার মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই সার্জিক্যাল মাস্ক কোনোভাবেই পুনর্ব্যবহার করা চলবে না। আর কাপড়ের মাস্ক পরলেও তা রোজ কেচে, শুকিয়ে নিতে হবে। তবে এখানে বলে রাখি, মাস্ক বারবার ব্যবহারের কারণেই মিউকরমাইকোসিস হচ্ছে, এটা জোর দিয়ে বলা যাবে না। কিন্তু একটা আশঙ্কা থেকেই যায়।

অহেতুক গরম ভাপ নেয়া
করোনার ভয়ে লোকে বারবার গরম ভাপ নিচ্ছেন। তারা মনে করছেন, স্টিম নিলেই বোধহয় করোনা থেকে বাঁচা যাবে। যদিও এই ভাবনার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং বারবার স্টিম নিলে নাকের ভিতরের থাকা মিউকাস স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই মিউকাস স্তর ফাঙ্গাস, ব্যাকটেরিয়া সহ বিভিন্ন জীবাণুকে প্রতিহত করতে সাহায্য করে। এবার স্টিম নেয়ার কারণে এই অংশটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে মিউকর সহ অন্যান্য সংক্রমণে সহজেই আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা যায়।

অন্যান্য কারণ
১. ডায়াবেটিস : করোনার পর রক্তে সুগারের মাত্রা অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে। আর অনিয়ন্ত্রিত সুগার থাকলে অবশ্যই মিউকরমাইকোসিস হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

২. স্টেরয়েড ব্যবহার : কোভিডের চিকিৎসায় যথেচ্ছভাবে স্টেরয়েড ওষুধটি ব্যবহার হয়েছে। অপ্রয়োজনে স্টেরয়েড ব্যবহারে মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে। এরফলে মিউকরে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা যায়।

৩. জিঙ্ক ট্যাবলেট ব্যবহার : কোভিডের ভয়ে অনেকেই অহেতুক জিঙ্ক ট্যাবলেট খেয়ে চলেছেন। মনে রাখবেন, শরীরে জিঙ্কের মাত্রা বেড়ে গেলে তা মিউকরের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

৪. আয়রন বেড়ে যাওয়া : কোভিড সংক্রমণের কারণে অনেকের শরীরে আয়রনের পরিমাণ বেড়ে যায়। আয়রনের বৃদ্ধি মিউকরমাইকোসিসের বৃদ্ধিতে সহয়তা করে।

ভয় পাবেন না
মিউকরমাইকোসিসের খুব ভালো চিকিৎসা রয়েছে। তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। দরকার কেবল প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়। করোনা থেকে সেরে ওঠার পর- নাক দিয়ে তরল বা কফ বেরিয়ে আসছে, তরলের রং কালো হলে, মাথাব্যথা, গালের একদিকে অস্বস্তি, গাল ফোলা, হঠাৎই শক্ত দাঁত নড়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে সত্ত্বর ইএনটি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ইএনটি চিকিৎসকরা নাকে এন্ডোস্কোপি করে প্রাথমিকস্তরে রোগ নির্ণয় করতে পারেন।

লেখক : অধ্যাপক, ইএনটি বিভাগ, কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ

সূত্র : বর্তমান


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us