দ্রুততার সাথে শক্তি বাড়াচ্ছে চীনা নৌবাহিনী

মো: বজলুর রশীদ | Jun 17, 2021 09:17 pm
চীনা নৌবাহিনী

চীনা নৌবাহিনী - ছবি : সংগৃহীত

 

অল্প দিনের মাঝে চীন মেরিন কোরের সদস্য সংখ্যা ২০ হাজার থেকে এক লাখে বর্ধিত করেছে। বিভিন্ন মিশনে তাদের রাত-দিন প্রশিক্ষণ চলছে। প্রসঙ্গত, বিশ্বের বৃহৎ মেরিন সেনাদলের তালিকায় শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের সদস্য এক লাখ ৮০ হাজার, চীনের এক লাখ, দক্ষিণ কোরিয়ার ২৯ হাজার, ভিয়েতনামের ২৭ হাজার, থাইল্যান্ড ২৩ হাজার, ইন্দোনেশিয়া ২০ হাজার। চীনের নতুন বিশাল আকৃতির উভচর অ্যাসল্ট জাহাজ কোনো যুদ্ধকবলিত দ্বীপে মেরিনারদের রক্ষা করার জন্য প্রস্তুত। এমন সব যুদ্ধে চীনা সামরিক দফতর ‘মোবাইল কমান্ড সেন্টার’ চালু করেছে, যা প্রচলিত যুদ্ধকৌশল অনুমোদন করে না। দক্ষিণ চীনসাগরে সাজানো হয়েছে ড্রেজড আইল্যান্ডকে। এটি যেন গভীর সমুদ্রে ভাসমান সেনা দফতর।

চীন অন্যান্য দেশ ও মহাদেশে তার অর্থনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধির চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। চীনাদের স্বার্থ ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য মেরিন সেনাবাহিনী ও জাহাজ সাহায্যকারী শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হবে। দূর-দূরান্তে চীনা সম্পদ ও পুঁজির রক্ষণাবেক্ষণের ও নিরাপত্তার জন্য শক্তিশালী বাহিনীর সাপোর্ট বর্তমান বিশ্বে কৌশলগত উপাদান হিসেবে ধরা হয়। ‘মোবাইল কমান্ড সেন্টার’-এর হাতে উদ্দেশ্য-পরিকল্পনা-লক্ষ্যসহ মিশন বুঝিয়ে দিয়ে দায়-দায়িত্ব অপর্ণ করা হয়।

নৌবাহিনীর সমুদ্রের গভীরে চলমান ড্রোন সাবমেরিন ক্যারিয়ারের সাথে থাকে এবং ক্যারিয়ারে স্টিলথ এয়ারক্রাফটও যুক্ত করা হয়েছে। নৌবহরের যুদ্ধবিমান আকাশে রিফুয়েলিং করার ব্যবস্থাসহ কম্পিউটারাইজড মিসাইল সিস্টেম রয়েছে, যার সাহায্যে শত্রুর কেরিয়ার ডুবিয়ে দেয়া যায়। এসব কারণে পিএলএ নেভি বা চীনের নৌবাহিনী শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। তবে এই শক্তির উত্থানে পশ্চিমাদের মতো পড়শিরাও অনেকে চিন্তিত।

গেল বছরের শেষের দিকে প্রতিরক্ষা খাতের ব্যয় নিয়ে চীন সরকার শ্বেতপত্র প্রচার করে। সেখানে একটি কথা উচ্চারিত হয়েছে ‘শক্তিমত্তা অর্জিত হলে আক্রমণের প্রয়োজন পড় না’। চীন সামুদ্রিক বিষয়গুলো নিরসনের জন্য নৌবাহিনীর পরিবর্তে মিলিশিয়া ও কোস্টগার্ড দিয়ে সামাল দিতে চায়। এই পলিসি বাস্তবায়নের জন্য চীনা নৌবাহিনী পানিসীমায় ও সমুদ্রে চীনের স্বার্থরক্ষার জন্য মিলিশিয়া ও কোস্টগার্ডকে প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক অস্ত্রসম্ভার দিয়ে সজ্জিত করে নিয়মিত সেনাদের মতো দক্ষ করে তুলছে। উল্লেখ্য, চীনের কোস্টগার্ড বিশ্বে সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী।

তাদের জাহাজগুলোকে আধুনিকীকরণ ছাড়াও আধুনিক জাহাজ হস্তান্তর করা হয়েছে। নৌ মিলিশিয়াদের নিত্যকার কাজে রয়েছে নিজেদের ‘ফিশিং বোট’ ও তেলের ট্যাঙ্কারকে অনুসরণ করা এবং নিজস্ব জলসীমায় অন্যদের অনুপ্রবেশে ভীতি প্রদর্শনসহ ব্যবস্থা নেয়া। তাই দক্ষিণ চীনসাগরেও নৌ মিলিশিয়াদের কাজ করতে হয়। এভাবে একসময় চীনা নেভি যে কাজ করত তাই নৌ মিলিশিয়া ও কোস্টগার্ড এখন সম্পন্ন করেছে। এমনকি লোহিত সাগর ও হরমুজ প্রণালীতেও বাধাহীনভাবে নৌ মিলিশিয়াদের প্রটেকশন বহর অবাধে কাজ করছে। ফলে চীনা নৌবাহিনী এখন ‘গ্লোবাল মিলিটারি পাওয়ারে’ পরিণত হয়েছে। গত বছরের শেষের দিকে ও সাম্প্রতিক সময়ে চীনা নৌবাহিনী দক্ষিণ আফ্রিকা ও রাশিয়ার সাথে ক্যাপ অব গুড হোপ এবং পাকিস্তানের সাথে আরব সাগরে যৌথ মহড়া পরিচালনা করে সরব উপস্থিতি জানিয়েছে।

 চীনকে নিয়ে পড়শিদের অনেক হিসাব-নিকাশ। স্বার্থের নীতিতে অন্য প্রতিবেশীরা সমর্থন করছে না। জাপান ইতোমধ্যে দশক পুরনো শান্তিবাদ নীতি পরিহার করে নিজের দেশকে অস্ত্রসজ্জিত করতে চলেছে। অস্ত্র রফতানি ও অত্যাধুনিক অস্ত্র বানানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে, একই সাথে আধুনিক যুদ্ধসরঞ্জাম সংগ্রহ করছে এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫ বিমান ও মিসাইল ডিফেন্স ব্যাটারিও রয়েছে। ভারতীয় মহাসাগরে চীনের প্রভাব সম্পর্কে ভারত ওয়াকিবহাল। ভারত তার নৌশক্তি আরো বড় ও উন্নত করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। ভারতও নিজেদের প্রযুক্তিতে কেরিয়ার বানানো শুরু করেছে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও ভারত সামরিক দিক উন্নত করার প্রয়াস চালাচ্ছে; ফ্রান্স ও চিলি থেকে যুদ্ধ সরঞ্জাম সংগ্রহ করছে।

ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কটেও ভারত সরকার অত্যাধুনিক একঝাঁক সাবমেরিন নির্মাণ খাতে ৫০ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ করেছে। ভারতীয় নৌবাহিনী ২৪টি সাবমেরিন নিজেদের অস্ত্রভাণ্ডারে যুক্ত করতে চলেছে। তার মধ্যে ছয়টি সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তির নিউক্লিয়ার অ্যাটাক সাবমেরিন। নতুন সাবমেরিন সিরিজের মধ্যে থাকবে ১২টি ল্যান্ড অ্যাটাক ক্রুজ মিসাইল এবং অ্যান্টি শিপ ক্রুজ মিসাইল। ডুবোজাহাজগুলো সমুদ্রের মধ্যেই টর্পেডো বহন এবং নিক্ষেপ করতে পারবে। ভারতের সামরিক ইতিহাসে এই সাবমেরিন প্রজেক্ট হতে চলেছে সবচেয়ে আধুনিক একটি প্রতিরক্ষা প্রকল্প। ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া ও রাশিয়ার পাঁচটি সংস্থার সাথে যৌথ উদ্যোগে চুক্তি সম্পাদন করে পি-৭৫ আই ক্লাস ডুবোজাহাজগুলো নির্মিত হবে। প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছিলেন, সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হবে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পে। এটি তার এক উদাহরণ।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us