রোনালদো এবং একটি বিপ্লবী ঘোষণা

জি. মুনীর | Jun 18, 2021 08:59 pm
কোকের বোতল সরিয়ে পানির বোতল হাতে রোনালদো

কোকের বোতল সরিয়ে পানির বোতল হাতে রোনালদো - ছবি : সংগৃহীত

 

সম্প্রতি উয়েফা কাপে অংশ নেয়া একজন বিশ্বখ্যাত খেলোয়াড় একটি ম্যাচ শেষে হাজির হন এক সংবাদ সম্মেলনে। এ সময় এ খেলোয়াড় দেখতে পান, টেবিলে তার সামনে দুটি কোকাকোলার বোতল। কোকাকোলা উয়েফা কাপের স্পন্সর। এই খেলোয়াড় কোকাকোলার বোতল সরিয়ে রাখেন, টেনে নেন পানির বোতল। আর বলেন, এর বদলে পানি পান করুন। অনেকের কাছেই এটি খুবই মামুলি গোছের ছোট্ট একটি ঘটনা। কিন্তু ছোট্ট ও সাধারণ এই ঘটনাটি বড় ধরনের ক্ষতি বয়ে আনে কোকাকোলার ব্যবসায়ে। মাত্র এক দিনের ব্যবধানে কোকাকোলার ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৪০০ কোটি ডলার। অনেকের ধারণা, সামনের দিকে এই ঘটনা কোকাকোলার জন্য আরো বড় ধরনের ক্ষতি বয়ে আনবে। এ ঘটনার পর চকিতেই শেয়ারবাজারে কোকাকোলার ব্র্যান্ডমূল্য পড়ে যায় ৪০০ কোটি ডলার। প্রতিষ্ঠানটির মূল্য ২৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার থেকে নেমে দাঁড়ায় ২৩ হাজার ৮০ কোটি ডলারে। এই খেলোয়াড় ব্যক্তিজীবনে পরিমিত খাদ্যাভ্যাসে বিশ্বাসী। তাতে কোমল পানীয়ের ঠাঁই নেই, মদপানের প্রবল বিরোধী। এমনটিই জানা যায় তার সাবেক সতীর্থ প্যাট্রিস এভরার ভাষ্য থেকে। এভরা বলেন : ‘একবার ওর বাসায় গিয়েছিলাম। খুব ক্ষুধা নিয়ে। সেখানে গিয়ে সালাদ, মুরগির বুকের গোশত আর পানি ছাড়া আর কিছুই পাইনি।’ স্বাস্থ্যসচেতন এই খেলোয়াড় কোকাকোলা বা চিপস খেতে দেন না তার ছেলেকেও। তিনি ফুটবল খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী বলে বিবেচিত। ৬ ফুট উঁচু এই খেলোয়াড় বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত গতির ফুটবলারদের একজন। তার শারীরিক সক্ষমতা দেখে তার সমর্থকেরা বলে থাকে, তিনি যেন ‘ভিনগ্রহী এক প্রাণী’।

গত ১৫ জুন অন্য একটি সংবাদ সম্মেলনে একই ধরনের এক ঘটনা ঘটান ফ্রান্সের ফুটবল তারকা পল পগবা। জার্মানির সাথে ফ্রান্সের জেতার পর সংবাদ সম্মেলনে যোগ দিয়ে দেখেন টেবিলে বিয়ারের বোতল। তিনি হেইনেকেন বিয়ারের এই বোতল এক পাশে সরিয়ে দেন। বিয়ার উৎপাদক হেইনেকেন এবারের ইউরো কাপের অন্যতম স্পন্সর। ধর্মবিশ্বাসের কারণে পল পগবা বিয়ারের বোতল তার সামনে রাখতে চাননি। পগবা একজন মুসলমান। গত রমজানে ইউরোপা লিগে এএস রোমার বিপক্ষে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ৬-২ গোলে জয়ের ম্যাচেও তিনি রোজা রেখে মাঠে নেমেছিলেন।
সুপ্রিয় পাঠক, এতক্ষণ নাম না জানিয়ে যে বিশ্বখ্যাত খেলোয়াড়ের কোকাকোলা-কাহিনী জানালাম, তিনি কে, ফুটবলপ্রেমীরা অবশ্যই এরই মধ্যে আন্দাজ করতে পেরেছেন। আবার যারা ফুটবল খেলা একেবারেই দেখেন না, তাদের মনে হয়তো প্রশ্ন দোল খাচ্ছে : কে হতে পারেন সেই বিখ্যাত ফুটবল তারকা? একটু পরে নিশ্চয় জেনে যাবো তার নাম। তবে এর আগে দিতে চাই তার সম্পর্কে আরো কিছু আভাস-ইঙ্গিত।

এই খেলোয়াড় এমন এক মানুষ, যার বাবা মাদকের ছোবলে মারা গিয়েছিলেন বলে জীবনে মদ পান করেননি: যিনি পুরস্কার হিসেবে পাওয়া গোল্ডেন বুট ও অন্যান্য পুরস্কার নিলামে বিক্রি করে সে অর্থ খরচ করেন অভাবী ও নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের সেবায়, যিনি তিনটি বড় মাপের দাতব্য প্রতিষ্ঠানের শুভেচ্ছাদূত, যিনি বিপুল অঙ্কের বিনিময়ে কোকাকোলার অ্যাম্বাসেডর হওয়ার প্রস্তাব গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। নিজের দেহকে ট্যাটুমুক্ত রেখেছেন, যাতে নিয়মিত রক্তদান করতে পারেন, এবং তা করেনও; যার অর্থে চলে নিজ দেশে বড় মাপের এতিমখানা, হাসপাতাল, যিনি ফিলিস্তিনিদের সহায়তার ব্যাপারে বরাবর উদার, যিনি সহায়তা জুগিয়েছেন শ্রীলঙ্কা ও জাপানের সুনামির শিকার অসহায় মানুষের।

এবার হয়তো বুঝতে বাকি নেই, কে এই ফুটবল তারকা। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন: সন্দেহ নেই, আলোচিত অনন্যসাধারণ এই খেলোয়াড় ব্যক্তিত্ব ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। অসমান্তরাল বড় মাপের এক ফুটবল তারকা। বিশ্বজুড়ে তার সুনাম-সুখ্যাতি আকাশছোঁয়া। তার খেলোয়াড়ি জীবনের সাফল্যগাথা সুদীর্ঘ। মহাকাব্য লেখার পরও তা শেষ হওয়ার নয়। সে সাফল্যগাথা তুলে ধরা এ নিবন্ধের উদ্দেশ্য নয়। এ লেখার মাধ্যমে তুলে ধরার প্রয়াস পাবো মাঠের বাইরের অন্য এক মানবিক রোনালদোকে, এক দানশীল রোনালদোকে, এক নৈয়ায়িক প্রতিবাদী রোনালদোকে, একজন মানুষ রোনালদোকে। তবে বিষয়বস্তুর স্পষ্টতার জন্য এর আগে পাঠকসাধারণের কাছে খেলোয়াড় রোনালদোর একটি পরিচয় কিছুটা তুলে ধরার প্রয়োজন বোধ করছি। কারণ, খেলোয়াড় রোনালদোই তার আসল পরিচয়। তার খেলোয়াড়ি জীবনের সাফল্যের সেতু পাড়ি দিয়েই তিনি গড়ে তুলেছেন তার বাকি সব পরিচয়। খেলোয়াড় জীবনের সাফল্য সূত্রেই তিনি বিশ্বসেরা দানশীল এক মানুষ। তাই দানবীর রোনালদোকে পরিপূর্ণভাবে জানার প্রয়োজনেই তার খেলোয়াড় জীবনের ওপর কিছুটা আলোকপাত অপরিহার্য।

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। অসাধারণ এক পর্তুগিজ পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড়। জুভেন্টাস ও পর্তুগাল জাতীয় দলের ফরোয়ার্ড। তিনি বর্তমান সময়ের অন্যতম নামী-দামি ফুটবলার। ২০০৯ সালে রিয়াল মাদ্রিদ তাকে ১৩ কোটি ১৬ লাখ ডলার দিয়ে ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে নিয়ে আসে। এর ফলে রোনালদো হয়ে ওঠেন সে সময়ের ফুটবল ইতিহাসের সবচয়ে দামি খেলোয়াড়। জুভেন্টাসের ফরোয়ার্ড রোনালদো বর্তমানে এ ক্লাব থেকে সপ্তাহে পান ৫০০০,০০০ পাউন্ড (১ পাউন্ড = ১.৩৯ ডলার)। এর বাইরে স্পন্সরশিপ চুক্তি রয়েছে নাইকি, কেএফসি, হারবালাইফ ও একই সাথে নিজের সিআর৭ পোশাক, জুতা, আন্ডারওয়্যার-এর সাথে। এসব আয়ের বেশির ভাগটাই তিনি ব্যয় করেন তাদের পেছনে- যাদের মুখে খাবার নেই, থাকার ঘর নেই, যারা যুদ্ধবিগ্রহের শিকার হয়ে উদ্বাস্তু কিংবা ভিন দেশে শরণার্থী।

তিন বছর বয়সে রোনালদোর পা ফুটবল ছোঁয়। ছয় বছর বয়সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খেলা শুরু। কৈশোরে তার প্রিয় দল ছিল বেনফিকো। কিন্তু যোগ দেন এর প্রতিপক্ষ ‘স্পোর্টিং ক্লাব দ্য পর্তুগাল’-এ। আট বছর বয়সে ‘এডরিনহার’ নামের এক ফুটবল ক্লাবে যোগদানের মধ্য দিয়ে কার্যত পেশাদারি খেলোয়াড়ি জীবনের শুরু। এর দুই বছর পর ১৯৯৫ সালে চলে যান ‘ন্যাশিওনালে’। ১৯৯৭ সালে আসেন পর্তুগিজ স্পোর্টিং ক্লাব ‘স্পোর্টিং সিপি’তে। স্পোর্টিং সিপিতে খেলার সময়েই নজর কাড়েন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ম্যানেজার স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের। তিনি ২০০৩ সালে রোনালদোকে ১৫ কোটি ১৬ লাখ ডলার দিয়ে তার দলে নিয়ে নেন।

২০০৪ সালে রোনালদো ইউনাইটেডের হয়ে প্রথম ট্রফি এফএ কাপ জেতেন। রোনালদো ইংল্যান্ডের প্রথম খেলোয়াড়, যিনি প্রধান চারটি পিএফএ এবং একটি এফডব্লিউএ পুরস্কার জিতে নেন, যা তিনি ২০০৭ সালে করেন। রোনালদো ২০০৮, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০০১৭ সালে বিশ্বসেরা খেলোয়াড় পুরস্কার ‘বালোঁ দর’ জিতেন। তিনিই একমাত্র পর্তুগিজ যিনি এই পুরস্কার পাঁচবার পান। ২০০৭ ও ২০০৯ সালে ‘বালোঁ দর’ এবং ২০১১ ও ২০১২ সাল ‘ফিফা বালোঁ দর’ দ্বিতীয় স্থান দখল করেন। তিনি ২০০৮ ও ২০১১ সালে ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট পুরস্কার পান। ২০০৮ সালে হন ফিফার বিশ্বসেরা খেলোয়াড়। ২০০৭ সালে হন ফিফপ্রো প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার, ওয়ার্ল্ড সকার প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার, ২০০৯ সালে সেরা গোলের জন্য পান প্রথম পুস্কাস অ্যাওয়ার্ড। অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার পান তিনি।

রোনালদো ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন লিগগুলোর মধ্যে প্রথম খেলোয়াড়, যিনি পরপর দুই মওসুমে ৪০ গোল করেছেন। রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয় কম সময়ে ১০০ লিগ গোল করেছেন। সেই সাথে তিনিই প্রথম খেলোয়াড় যিনি লা লিগায় প্রতিটি দলের বিরুদ্ধে গোল করেছেন। এ ছাড়া তিনি রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে এক মওসুমে সবচেয়ে বেশি গোল এবং লা লিগায় মিনিটপ্রতি সবচেয়ে বেশি গোল করার রেকর্ডের অধিকারী। ২০০৩ সালে জানুয়ারি পূর্ণ করেন তার ৩০০-তম গোল। পরের বছর জানুয়ারিতে করেন তার খেলোয়াড়ি জীবনের ৪০০-তম গোল: ২০১৪ সালে করেন ৬০০-তম গোল। তিনিই করেন চ্যাম্পিয়ন লিগে বিশ্বের প্রথম ১০০ গোলের রেকর্ড। তিনি প্রথম চ্যাম্পিয়ন লিগে ১১ ম্যাচেই গোল করেন। চ্যাম্পিয়ন লিগের এক মওসুমে সর্বোচ্চ ১৫ গোলের রেকর্ডও তার। ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে পাঁচটি চ্যাম্পিয়ন লিগ জয় করেন। নিজের জন্য পঞ্চম ও রিয়াল মাদ্র্রিদের হয়ে টানা তৃতীয়বার চ্যাম্পিয়ন লিগ জেতেন।

সুপ্রিয় পাঠক এরই মধ্যে আন্দাজ করতে পেরেছেন রোনালদো কোন মাপের ফুটবল তারকা। এবার তবে ফিরে যাওয়া যাক তার খেলার মাঠের বাইরের জীবনে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ছয় বছর খেলার মধ্য দিয়ে ২০০৯ সালে তিনি হয়ে ওঠেন বিশ্বসেরা এক ফুটবল তারকা। সে বছরেই ইউনাইটেড ছেড়ে ১৬ লাখ ১৩ কোটি ডলারের চুক্তিতে যোগ দেন রিয়াল মাদ্রিদে। এর মধ্য দিয়ে হয়ে ওঠেন বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়। তার মেধা, সক্ষমতা এবং প্রভাব বিস্তারকারী ব্যক্তিত্ব বিশ্বব্যাপী তাকে করে তুলে অসমান্তরাল জনপ্রিয়। তিনি ২০০৩ সালের ১৮ বছরের বয়সের ১২.২৪ মিলিয়ন পাউন্ড দামের খেলোয়াড় থেকে ২০০৯ সালের ৮০ মিলিয়ন পাউন্ড দামের খেলোয়াড়ে পরিণত হন। সেই সাথে শুরু তার দাতব্যকর্মের।

রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে লা লিগায় খেলেন ৯ মওসুম। এ সময় তিনি ৩০টিরও বেশি টিম ট্রফি ও অসংখ্য ব্যক্তিগত পুরস্কার পান। এর মাধ্যমে তার হাতে আসে বিপুল পরিমাণ অর্থ। ফলে তার জন্য পথ খুলে যায় আরো ব্যাপকভাবে দাতব্যকর্মে নেমে পড়ার। এক অনুমিত হিসাব মতে, তিনি ফুটবল খেলে, মডেলিং করে ও সামাজিক গণমাধ্যম থেকে আয় করেছেন ৩৬০০ কোটি মার্কিন ডলার। এ অর্থ নিজের জন্য ব্যাংকে জমা করেননি কিংবা বিনিয়োগ করেননি। এর বেশির ভাগই ব্যয় করেছেন ও করছেন আর্ত-মানবতার সেবায়। পৃথিবীর যে প্রান্ত থেকেই তার কানে মানুষের আর্তনাদ পৌঁছেছে, সেখানেই ছুটে গেছেন। বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত। অভাবী মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বরাবর। কারণ, ছোটবেলায় এক অভাবী পরিবারের সন্তান হিসেবে অভাবের জ্বালার সাক্ষাৎ অভিজ্ঞতা রয়েছে তার নিজের। তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে বেশ অর্থাভাবের মধ্য দিয়েই।

ব্যক্তিগত জীবনে রোনালদো এখন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী খেলোয়াড়। তার দানশীলতা ও অসহায় মানুষের পাশে, বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী নির্যাতিত অসহায় মুসলমানদের সাহায্য করার জন্য ব্যাপক প্রশংসিত। সম্প্রতি এক জরিপে তিনি ঘোষিত হন বিশ্বের সবচেয়ে দানশীল খেলোয়াড় হিসেবে। ফিলিস্তিনের একটি সংস্থা ২০১৬ সালে তাকে ‘বর্ষসেরা মানব’ ঘোষণা করে।

রোনালদো এখন খেলছেন জুভেন্টাসে। তিনি সিদ্ধান্ত নেন করোনাভাইরাসের কারণে জুভেন্টাসের কাছ থেকে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত এই চার মাস কম বেতন নেবেন। এ জন্য তিনি ব্যক্তিগতভাবে এই চার মাসে বেতন কম নিয়েছেন ৩৮ লাখ পাউন্ড। এ ছাড়া তিনি তার এজেন্ট মেনডিসের সাথে মিলে করোনাভাইরাস মোকাবেলার জন্য পর্তুগালের হাসপাতালগুলোতে দান করেন ১০ লাখ পাউন্ড। তাদের দু’জনের অর্থায়নে চলে সেখানকার একটি হাসপাতালের দুটি আইসিইউ ইউনিট। রোনালদোর অনুরোধেই পর্তুগাল ফুটবল টিমের সব খেলোয়াড় তাদের কোয়ালিফাইং বোনাসের ৫০ শতাংশ দান করেন করোনা মোকাবেলার জন্য।

২০১১ সালে ৪০ গোল করে পান ইউরোপীয় গোল্ডেন বুট। তা নিলামে বিক্রি করে পাওয়া ১২ লাখ পাউন্ডের সবটুকুই দিয়ে দেন যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বেশ কয়েকটি স্কুলের শিশুদের সহায়তায়। তিনি সিরিয়াতে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য পাঁচ হাজার ঘর বানিয়ে দিয়েছেন। তিনি ইসরাইলি ফুটবলারদের সাথে জার্সি বদল ও করমর্দন করেননি। কারণ, তার মতে, ইসরাইল একটি অত্যাচারী জাতি। বিষয়টি আখ্যায়িত হতে পারে একটি শ্রেষ্ঠ প্রতিবাদ হিসেবে। রোনালদো ২০১৩ সালের ‘বালোঁ দর’ ট্রফি থেকে সংগ্রহ করে ৫৩০,০০০ পাউন্ড দান করেন ‘মেইক অ্যা উইশ ফাউন্ডেশনের জন্য। একই বছরে তার দল বর্ষসেরা উয়েফা টিম হয়। রোনালদো সেভ দ্য চিলড্রেন, ইউনিসেফ ও ওয়ার্ল্ড ভিশনের শুভেচ্ছাদূত। তিনি গোপনে সেভ দ্য চিলড্রেনকে যে অর্থসহায়তা দিয়ে থাকেন, এর পরিমাণ প্রকাশ করেন না। রিয়েল মাদ্রিদকে লা ডেসিমায় নেতৃত্ব দেয়ার সময় ক্লাব থেকে পাওয়া ৪৫০,০০০ পাউন্ডের বোনাসের অর্থ দিয়ে দেন তিনটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানকে, যেগুলোর শুভেচ্ছাদূত তিনি নিজে।

২০১৬ সালে নেপালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের সময় দুর্গতদের মাঝে কাজ করার জন্য সেভ দ্য চিলড্রেন ফান্ডে দান করেন ৫০ লাখ পাউন্ড। দুটি বিশ্বকাপ বাছাই খেলার পর যান ইন্দোনেশিয়া। সেখানে নিজস্ব খেলার সরঞ্জাম বিক্রি করে পাওয়া ৬৬,০০০ পাউন্ড দান করেন সুনামির শিকার মানুষের জন্য। তার দলের খেলোয়াড়েরা মিলে সুনামিতে ক্ষতিগ্রস্ত এক ইন্দোনেশীয়কে বাড়ি কিনে দেন।

২০০৭ সালে রোনালদোর মা পর্তুগালের এক ক্যান্সার কেন্দ্রে চিকিৎসা করে সুস্থ হন। রোনালদো এই ক্যান্সার সেন্টারকে ১২০,০০০ পাউল্ড দিয়ে ধন্যবাদ জানান। তিনি অসংখ্য ক্যান্সার রোগীকে দেশে-বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। অন্যকে আনন্দ দেয়ায় তার কর্মকাণ্ড নানামাত্রিক। ২০১৪ সালে এক মা তার ১০ মাস বয়সী শিশু এরিক ওরট্রিজের জন্য রোনালদোর কাছে একটি শার্ট চান। ছেলেটি তখন কঠিন ডিসপ্লাসিয়ায় ভুগছিল। রোনালদো তার জন্য করলেন এর চেয়েও বেশি কিছু। তিনি ৫৫ হাজার পাউন্ড ব্যয়ে শিশুটির ব্রেন সার্জারি করান এবং প্রতিশ্রুতি দেন পরবর্তী চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার বহনের। তিনি কিটে সাইন করে পাওয়া অর্থও এ ছেলেটির জন্য খরচ করেন।

২০০৯ সালে তিনি শোনেন ভয়াবহ ক্যান্সারে আক্রান্ত ৯ বছরের নুহুজেত গুইলেনের কথা। তিনি ড্রাইভার পাঠিয়ে তাকে ও তার পরিবারের অন্যদের এনে তোলেন রিয়েল মাদ্রিদ হোটেলে। তাকে একটি প্রাইভেট বক্সে খেলা দেখার ব্যবস্থা করেন। এই ম্যাচের একটি গোল উৎসর্গ করেন তার নামে। সেই সাথে তাকে দেন তার ম্যাচ শার্ট। এর পর তাকে পরীক্ষামূলক চিকিৎসার জন্য পাঠান আমেরিকায় এবং প্রতিশ্রুতি দেন তার যাবতীয় চিকিৎসার খরচ বহনের। কিন্তু তাকে বাঁচানোর রোনালদোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

তিনি আশপাশের মানুষের প্রতি সহমর্মী। ২০১৮ সালে যান দক্ষিণ গ্রিসের ‘কোস্টা ন্যাভারিনো রিসোর্টে। প্রতিবারই ফেরার সময় রিসোর্টের ১০ স্টাফকে বখশিশ দিয়েছেন ২০ হাজার পাউন্ড। মাঠের ভেতরের ও বাইরের এ মানুষটির জন্য রইল শুভকামনা।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us