শিক্ষকদের শতভাগ উৎসব ভাতা কেন নয়?

মো: আবদুর রহমান | Jul 10, 2021 08:41 pm
শিক্ষকদের শতভাগ উৎসব ভাতা কেন নয়?

শিক্ষকদের শতভাগ উৎসব ভাতা কেন নয়? - ছবি : নয়া দিগন্ত

 

প্রতি বছরের মতো জুন মাসে সংসদে বাজেট অধিবেশন হয়। প্রতি বছরই শিক্ষা খাতের বাজেটকে আকারে বড় দেখালেও এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের এখনো বাড়িভাড়া এক হাজার টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা, এমপিওভুক্ত শিক্ষকের উৎসব বোনাস ২৫ শতাংশ, কর্মচারীর উৎসব বোনাস ৫০ শতাংশ এবং শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় বেতন স্কেলের অন্তর্ভুক্ত হলেও স্থায়ী পেনশন ব্যবস্থা আজো চালু হয়নি। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয় সরকারি কোষাগারে জমা নিলে এবং শিক্ষার্থীদের বেতন কাঠামো একটু পরিবর্তন করলেই সরকারের চলমান মেয়াদেই এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ সম্ভব।

কোভিড-১৯ এর কারণে শিক্ষাব্যবস্থা আজ বিপর্যস্ত। ফলে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের জীবন যাপন এতই কষ্টসাধ্য যা বর্ণনাতীত। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা ২০০৪ সাল থেকে তথা ১৭ বছর ধরে উৎসব ভাতা পেয়ে আসছেন ২৫ শতাংশ শিক্ষক এবং ৫০ শতাংশ কর্মচারী। লক্ষ করা যাচ্ছে যে- ক, ১২ হাজার ৫০০ টাকা স্কেলের একজন স্নাতকোত্তর শিক্ষক বোনাস পাচ্ছেন তিন হাজার ১২৫ টাকা। খ. ১৬ হাজার টাকা স্কেলের একজন স্নাতকোত্তর শিক্ষক বোনাস পাচ্ছেন চার হাজার ৬৩২ টাকা। গ. তৃতীয় শ্রেণীর এইচএসসি পাস একজন কর্মচারী বোনাস পাচ্ছেন পাঁচ হাজার ৩৯০ টাকা। ঘ. চতুর্থ শ্রেণীর অষ্টম শ্রেণী পাস একজন কর্মচারী বোনাস পাচ্ছেন চার হাজার ৭৮৫ টাকা। ঙ. সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণী পাস একজন কর্মচারী বোনাস পাচ্ছেন আট হাজার ২৫০ টাকা। এমপিওভুক্ত একজন এমএ পাস শিক্ষক একজন কর্মচারীর চেয়ে বোনাস কম পাওয়া খুবই লজ্জাকর এবং অমানবিক।

মনে হচ্ছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষা অভিভাবকহীন এবং যারা এমপিওভুক্ত শিক্ষা পরিচালনা করছেন তাদের কোনো দায় ও জবাবদিহিতা নেই। আজ মাধ্যমিক শিক্ষা আলাদা থাকলে এবং সেখানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রতিনিধি থাকলে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এমন পরিণতি হতো না। শিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিগত দিনে বহুবার এমপিওভুক্ত শিক্ষক নেতারা স্মারকলিপি ও আবেদন জমা দিলেও তার কোনো প্রতিকার আদৌ হয়নি। তবে শিক্ষকদের বিশ্বাস ছিল, মুজিব শতবর্ষে এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বোনাস শতভাগ হবে এবং দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ করা হবে। কিন্তু জাতীয়করণ আদৌ করা হলো না।

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা সোশ্যাল মিডিয়া, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় স্মারকলিপি ও আবেদনের মাধ্যমে সরকারকে জানিয়ে দিয়েছেন, তারা ঈদুল ফিতরের আগেই শতভাগ বোনাস চান। বিষয়টি সরকার নিশ্চিত না করায় বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতীকী আন্দোলনের অংশ হিসেবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় পূর্বক মানববন্ধনের মাধ্যমে শত ভাগ বোনাস প্রাপ্তির দাবিটি সরকারের কাছে পৌঁছানোর জন্য সাংবাদিক বন্ধুদের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। তাই এক্ষণে, সাংবাদিক বন্ধুদের লেখনী শক্তির মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা যেন আগামী ঈদুল আজহার আগে শত ভাগ বোনাস প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় পেতে পারেন তার ব্যবস্থা যেন হয় এবং এ সরকারের ক্ষমতাকালীন প্রতিটি বাজেটে একটু বেশি অর্থ শিক্ষায় বরাদ্দপূর্বক এ সরকারের আমলেই যেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা যেন জাতীয়করণ করা হয়। কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় এবং টেকসই শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিও এর আওতায় আনা এখন সময়ের দাবি। অনার্স-মাস্টার্স কলেজের শিক্ষকদেরকে এমপিওভুক্ত করা অতীব প্রয়োজন।

করোনায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। জাতীয়করণে অর্থ সংস্থানের ক্ষেত্রে শতভাগ উৎসবভাতা বাস্তবায়ন কমিটির নেতাদের প্রস্তাব হলো- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যাবতীয় আয় যেমন রিজার্ভ ফান্ড, সাধারণ তহবিল, প্রতিষ্ঠানের পুকুর, জমি ও দোকান ভাড়ার টাকা সরকারি কোষাগারে যেন জমা নেয়া হয়। যদি সরকারি স্কুলে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীর বেতন ৮ টাকার স্থলে ২০ টাকা করা হয়, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীর বেতন ১২ টাকার স্থলে ৩০ টাকা করা হয়, নবম থেকে দশম শ্রেণীর বেতন ১৮ টাকার স্থলে ৪০ টাকা করা হয় এবং কলেজশিক্ষার্থীদের বেতন ২৫ টাকার স্থলে ৫০ টাকা করা হয় তবেই এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ করা সম্ভব।

তারপরও সরকারি হিসাব ও নিরীক্ষা কমিটি যদি মনে করে আরো অর্থের প্রয়োজন, তাহলে উৎসবভাতা বাস্তবায়ন কমিটির নেতাদের প্রস্তাব হলো- জানুয়ারি মাসে শিক্ষার্থী ভর্তির সেশন ফি খাতে শিক্ষার্থীপ্রতি ৫০০ টাকা নেয়া হয় এবং প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা ও পাবলিক পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থী পরীক্ষার ফি ৫০ টাকা বা তার চেয়ে একটু বেশি নেয়া হয়। উৎসবভাতা বাস্তবায়ন কমিটির নেতাদের উপরোক্ত প্রস্তাব অনুযায়ী ৩৯ হাজার ৯২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক কোটি ৬২ লাখ ৬৩ হাজার ৭২৪ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বছরে দুই হাজার ৫৭৪ কোটি দুই লাখ ৯৯ হাজার ৪০০ টাকা আয় হতে পারে বলে শিক্ষকরা হিসাব করেছেন এবং এ হিসাববিবরণী প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকেও দিয়েছেন। ওই টাকা সরকার যদি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন খাতে খরচ করে তাহলে এ খাতে সরকারকে কোনো ভর্তুকি দিতে হবে না। বিশেষভাবে উল্লেøখ্য, এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে এ সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রয়োজন এবং প্রধানমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই বিষয়টি নিষ্পত্তি হতে পারে। উৎসবভাতা বাস্তবায়ন কমিটির নেতাদের মনে-প্রাণে দাবি, প্রধানমন্ত্রী যেন তার এ ক্ষমতা বলেই এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ করেন, তখন শিক্ষাব্যবস্থা এগিয়ে যাবে এবং মেধাবীরা শিক্ষকতায় আকৃষ্ট হবে। ফলে দ্রুত এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ, লাখো কোটি শিক্ষার্থী একই মানের সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করবে, অভিভাবকদের অর্থ সাশ্রয় হবে এবং নিশ্চিত হবে আলোকিত শিক্ষা।

শিক্ষকদের প্রতিটি আন্দোলনেই শিক্ষকরা সাংবাদিকদের সহযোগিতা পেয়েছেন। ২০১৮ সালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ৫ শতাংশ বৈশাখী ভাতার আন্দোলনের দাবিটি সাংবাদিকরাই প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বেশি প্রচার করার কারণে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের দাবিটি পূরণ করেছিলেন। এখনো শিক্ষকরা প্রত্যাশা করছেন, তাদের এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণের বিষয়টি, শতভাগ বোনাসের দাবির বিষয়টি আগামী ঈদুল আজহার আগে প্রধানমন্ত্রী যেন পূরণ করেন, তার লক্ষ্যে সাংবাদিকরা মিডিয়ায় বেশি বেশি প্রচার পূর্বক শিক্ষকদের বিশেষভাবে সহযোগিতা করবেন।

লেখক : উপাধ্যক্ষ, রোকনউদ্দিন মোল্লা গার্লস ডিগ্রি কলেজ, আড়াউহাজার, নারায়ণগঞ্জ

E-mail: marahman_biu@yahoo.com


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us