নামের মাহাত্ম্য ও আরবের বিশ্বাস

নজরুল ইসলাম টিপু | Jul 14, 2021 07:03 pm
নামের মাহাত্ম্য ও আরবের বিশ্বাস

নামের মাহাত্ম্য ও আরবের বিশ্বাস - ছবি : সংগৃহীত

 

অনেকেই নিজের নামের অর্থ জানে না। কেউবা আবার তা জানার প্রয়োজনীয়তাও বোধ করে না। ইসলাম ধর্মে নামের ভূমিকা ব্যাপক। ভালো ও সুন্দর নাম ওয়ালা একজন ব্যক্তির নাম, অন্যের পাপের বোঝা বাড়ানোর কারণ হতে পারে! ব্যাপারটি একটু বিদঘুটে ঠেকাল না? নিশ্চয়ই! তাহলে চলুন একটি সত্য ঘটনা দিয়েই ব্যাপারটি বুঝতে চেষ্টা করি। নামের মাহাত্ম্য ও আরবের বিশ্বাস

অবৈধ মানুষের সন্ধানে, একটি ব্যস্ত রেস্টুরেন্টে, পুলিশসহ আরব দেশের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা ঢুকে অনুরোধ করল। সবাই যেন তাদের নিজ নিজ আইডি কার্ড বের করে। সবাইকে প্রশ্ন করা হবে। প্রথম ব্যক্তি দোকানেরই এক কর্মচারী।

ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা : কী নাম তোমার?
কর্মচারী : করিম

ইমি কর্মকর্তা : লা হাউলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ! কী নাম যেন বললে?
কর্মচারী : করিম

ইমি কর্মকর্তা : আসতাগফিরুল্লাহ রাব্বি মিন কুল্লি…। মানুষের নাম কখনো ‘করিম’ হতে পারে না! পুলিশ তাকে শিখিয়ে দিয়ে বলল, বরং তুমি বল, ‘আমার নাম আবদুল করিম’। (করিম আরবি শব্দ যার অর্থ মহা-সম্মানিত, যে নাম শুধু আল্লাহর জন্য প্রযোজ্য এ কারণেই পুলিশ আসতাগফিরুল্লাহ পড়েছে এবং নামটি কেমন হলে ঠিক হবে তা ঠিক করে দিয়েছে)

ইমি কর্মকর্তা : তাহলে কি নাম তোমার?
কর্মচারী : (চেহারায় চরম উদ্বিগ্নতা! ভুল-ভাল নামে না জানি কোন অজানা মুসিবত ভর করে, তাই অতি সতর্কতার সাথে ভক্তি সহকারে পরিষ্কারভাবে জানাল) আমার নাম 'মোহাম্মদ করিম'- এটাই আমার মূল নাম। আই ডি কার্ডে ওভাবেই লেখা আছে।

ইমি কর্মকর্তা : (চেহারায় বিরক্তি ও মেজাজ তিরিক্ষি হওয়ার লক্ষণ) 'নাউজুবিল্লা মিন জালিক' (তোমার চরম মূর্খতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি)। গর্দভ, নির্বোধ জানোয়ার কোথাকার? করিমের উপর আবার মোহাম্মদও লাগিয়ে দিয়েছ! তোমার গ্রামে কি একজন অশিক্ষিত আলেমও নেই! কে রেখেছে এই নাম? তুমি বরং বলো 'আমার নাম আবদুল করিম।'

(উল্লেখ্য মুহাম্মদ শব্দের অর্থ প্রশংসিত। সে হিসেবে ‘মোহাম্মদ করিম’ শব্দের অর্থ দাঁড়ায় ‘প্রশংসিত মহা সম্মানী ব্যক্তি’ আর ‘আবদুল করিম’ শব্দের অর্থ মহা সম্মানিত আল্লাহ গোলাম। কর্মকর্তা তার নামটি এভাবে বলতে বলেছে)

উপস্থিত পুলিশ : বাদ দাও! তাকে ছেড়ে দাও! ওর কাগজপত্র ঠিক আছে।

ইমি কর্মকর্তা : তাকে তো ছেড়ে দিব। কিন্তু আল্লাহ তো আমাকে ছাড়বে না! তার নাম 'করিম' একথা মেনে নিয়ে এই স্থান ত্যাগ করলে তো আমার আকিদা, পরকাল দুটিই বরবাদ হয়ে যাবে। এসব মূর্খকে ব্যাপারটি অবশ্যই বুঝতে হবে!

– (রেস্টুরেন্টে অবস্থিত কিছু মানুষ, মোহাম্মদ করিমকে শুনিয়ে হিন্দিতে বলতে লাগল, তুমি তোমার নাম আবদুল করিম বলো)

কর্মচারী : আমার নাম আবদুল করিম!
ইমি কর্মকর্তা : (যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন) আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ তুমি আমার মুক্তি দিয়েছ। এবার থেকে তোমার নাম আবদুল করিম। এটা মনে থাকে যেন। করিম বলা হারাম। এটা আল্লাহর নাম।

আরবদেশের মতো এই ধরনের কোনো ঘটনা হয়ত আমাদের দেশে হয় না। কেননা আমরা নামের অর্থ জানি না কিংবা বুঝি না। কিন্তু আমরা রহিম (পরম দয়ালু), খালেক (সৃষ্টিকর্তা), মালেক (মহাবিশ্বের অধীশ্বর), কুদ্দুস (নির্ভুল সত্ত্বা), সাত্তার (দোষ গোপন কারী), জব্বার (পরাক্রমশালী)- এসব নাম রেখে থাকি। নামের অর্থ জানলে, একজন কাণ্ডজ্ঞানহীন মানুষও বুঝে নিবে যে এগুলো মানুষের জন্য হতে পারে না। এসব নাম একমাত্র আল্লাহর জন্য প্রযোজ্য এবং তাঁর জন্যই নির্ধারিত।

তাই আরব দেশে এই সব নাম ভুলেও রাখে না। রাখলে তার কপালে প্রতিনিয়ত কী অপমান জুটতে পারে তা রেস্টুরেন্টের ঘটনা থেকে অনুমেয়!

আমাদের দেশে লম্বা নাম রাখার প্রবণতা বিদ্যমান। অবশ্য আমাদের দেশে আল্লাহর নামগুলো রাখার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা হয়। তাই আল্লাহর নামের আগে ‘আবদুল’ তথা গোলাম শব্দটি লাগিয়ে দেয়া হয়। সে হিসেবে আবদুল খালেক, আবদুল মালেক, আবদুল কুদ্দুস নাম রাখা হয়। তাই বলে শুধু নাম রাখলেই হয় না। নিজেদের সমাজব্যবস্থা ও সংস্কৃতি কেমন সেটা মাথায় রেখেই সন্তানের নাম রাখতে হয়।

বাক্য ছোট করে উচ্চারণ করার প্রবণতা পৃথিবীর বহু জাতির চরিত্রে দেখা যায়। আমরা বাংলা-ভাষাভাষীরাও এ থেকে মুক্ত নই। বরং আরো একটু সরেস। বিশেষ করে নামের উচ্চারণের ক্ষেত্রে। লম্বা নামকে এদেশে সংক্ষিপ্ত তো করাই হয়, আবার সে সব নামের শেষে ‘য-ফলা’ ‘র-ফলা’ যোগ করে, তুচ্ছ অর্থে ব্যবহার করা হয়। এভাবে নামকে বিশ্রীভাবে পরিবর্তন করে ডাকা বড় গুনাহ। কখনো তা তওবা করার পর্যায়ে চলে যায়।

সাধারণত কারো নাম আবদুল মালেক হলেও তাকে সেভাবে ডাকা হয় না। বাক্য সংক্ষেপ করে ‘মালেক’ বলে ডাকা হয়। মূর্খরা ‘মালেইক্যা’ বলেও ডাকতে পারে। জেনে হোক, না জেনে হোক এই নামটিকে ওভাবে ডাকলে সে মারাত্মক গুনাহগার হবে। একজন ব্যক্তি দৈনিক যত এবাদতই করুক না কেন, বিশ্রীভাবে নাম ডাকার কারণে, প্রতিনিয়ত তার পাপের বোঝা ভারী করতে থাকবে। ধনী সম্মানী ব্যক্তিকে হয়ত আবদুল জব্বার বলবে, কিন্তু অবহেলিত মানুষ হলে ‘জব্বাইরা’ বলে কটূক্তি করতে পারে। সে ক্ষেত্রে এই নাম বদলানোর চেষ্টা করা উচিত।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, 'এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ উপনামে ডেকো না। ঈমানের পর মন্দ নাম কতই না নিকৃষ্ট! আর যারা তওবা করে না, তারাই তো জালিম।' (হুজরাত : ১১)

তার মানে নামকে ভেঙ্গে মন্দ করে উপনাম করে ফেলার অপরাধ ছোট নয়। রীতিমতো কবিরা গুনাহের পর্যায়ে চলে যেতে পারে। যার জন্য তওবা করাটা জরুরি। বুঝে-না বুঝে সর্বদা নামকে এভাবে ব্যবহার করলে ফেরেশতারা কষ্ট পায়, তারা বদদোয়া করবে। এভাবে প্রতিনিয়ত ব্যবহার হলে, তার আকিদা-বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যেটা আমরা আরব দেশের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার সতর্ক উপলব্ধি থেকে জেনেছি।

আল্লাহর রাসুল সা. বলেছেন, 'আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান নাম দুটি তার কাছে খুবই পছন্দ।' মূলত এগুলো আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত নাম। তবে এসব নাম উপরের ওগুলোর মতো, খণ্ড করে উচ্চারণ করা যায় না। পুরোটাই উচ্চারণ করতে হয়। হয়ত সে কারণেই তিনি বলে দিয়েছেন, কেউ যদি এমন নাম রাখতেই চায় তারা যেন ও দুটিতে সীমাবদ্ধ থাকে।

তাই আমাদের উচিত, নামের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা এবং নামের উচ্চারণে অধিক সতর্ক থাকা। সাথে সাথে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পবিত্র নামগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকা। যদি তার মহিমাপূর্ণ নামগুলো না জানি, তাহলে ভুল ধরা হবে কিসের ভিত্তিতে? এটি উপেক্ষা-অবহেলার করার বিষয় নয় বরং নিজের চিন্তা বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত বিষয়।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us