কে এই কায়েস সাইদ

মাসুম খলিলী | Aug 03, 2021 05:56 pm
কায়েস সাইদ

কায়েস সাইদ - ছবি : সংগৃহীত

 

তিউনিশিয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করা, পার্লামেন্ট স্থগিতকারী কায়েস সাইদের কোনো রাজনৈতিক পটভূমি ছিল না। তিনি ছিলেন আইনের অধ্যাপক এবং টেলিভিশনের টকশোর জনপ্রিয় বক্তা। ২০১৯ সালে তিনি যখন তিউনিশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন তখন তিনি আমিরাতি বলয়ের এক নাম্বার পছন্দও ছিলেন না। তখন তাদের প্রধান পছন্দ ছিল ফ্রান্সকেন্দ্রিক ব্যবসায়ী ও মিডিয়া মোগল হার্ট অব তিউনিশিয়া দলের নাবিল কারোই।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাড়ে ১৫ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন কারোই। এ নির্বাচনে ১৩ শতাংশ ভোট পেয়ে আন নাহদা প্রার্থী তৃতীয় স্থানে থাকেন। দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে আমিরাত ফ্রান্স লবির সমর্থক হিসাবে নাবিল কারোই এর বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থি কায়েস সাইদকে আন নাহদাসহ অধিকাংশ দল সমর্থন করেন। ফলে তার ভোট প্রথম দফার সাড়ে ১৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৩ শতাংশে উন্নীত হয়। আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পর আমিরাত-ফ্রান্স লবি কায়েস সাইদের উপর ভর করে। কায়েসের মধ্যে এমনিতেই ক্ষমতাধর হবার উচ্চাভিলাষ ছিল বলে মনে হয়। তিনি এর আগে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার নানা ধরনের সমালোচনাও করেন। ফলে সহজেই তিনি পা দিতে পেরেছেন আমিরাত ফ্রান্স মিসরের পরিকল্পনার ফাঁদে। পরিকল্পনা সফল করতে পারলে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবার প্রতিশ্রতিও তিনি দিয়েছেন বলে আমিরাতি সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে।

আঞ্চলিক সমীকরণ
আর এটি অজানা নয় যে, শুধু তিউনিশিয়া নয় এই অঞ্চলের সব দেশের উপরই ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবার চাপ আমিরাতের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের সাথে ইসরাইলের এ ব্যাপারে রয়েছে গভীর সখ্য। আফ্রিকার এই অঞ্চলের অন্য একটি প্রভাবশালী দেশ সুদানের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ওমর বশিরকে একই প্রস্তাব দিয়ে বলা হয়েছিল, প্রস্তাবে সাড়া দিলে তিনি যতদিন খুশি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। ওমর বশির এটি গ্রহণ করেননি। পরে এক রহস্যজনক বিক্ষোভে তিনি ক্ষমতা হারান।

মাগরেবের আরেক দেশ মরক্কোর বাদশাহ ষষ্ঠ হাসান ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবার প্রস্তাবে সম্মত হয়ে দেশটির সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করেছেন। লিবিয়ার জিএনএ সরকারের প্রতিও একই ধরনের চাপ রয়েছে। আলজেরিয়াকেও ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক তৈরির জন্য প্রলুব্ধ করা হচ্ছে। এর পেছনে ইসরাইল এবং এর লেজ ধরে আমিরাতি প্রভাব বিস্তারের পাশাপাশি এই অঞ্চল থেকে তুরস্কের প্রভাব কমানোর একটি বড় লক্ষ্য সব পক্ষের রয়েছে। তুরস্ক ছিল একদিকে আরব বসন্তে গণতান্ত্রিক পরিবর্তনকে সমর্থনকারী অন্যতম প্রধান দেশ। আর প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি, সমুদ্রসম্পদ আহরণ এবং উন্নয়নে সহায়তা করার মতো যে সক্ষমতা দেশটির রয়েছে তা নানা ক্ষেত্রে দেশটিকে ফ্রান্স এবং ইসরাইলের প্রতিদ্বন্দ্বিতে পরিণত করেছে।

বিশেষত লিবিয়ার সাথে তুরস্কের সমুদ্রসীমানা নিয়ে যে চুক্তি হয় সেটি তুরস্ককে কনটেইন করার বড় একটি পরিকল্পনাকে ব্যর্থতার কাছাকাছি নিয়ে যায়। আর আফ্রিকায় ফ্রান্স যেসব দেশে ঔপনিবেশিক প্রভাব বজায় রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সেসব দেশ এক সময় উসমানীয় খেলাফতের অংশ থাকায় তুরস্কের সাথে তাদের ছিল ঐতিহাসিক সম্পর্ক। আফ্রিকায় তুরস্কের প্রভাব বিস্তারে উত্থান, ফ্রান্সের কর্তৃত্ব ধরে রাখার প্রচেষ্টা, ইসরাইলের স্বীকৃতি পাবার বেপরোয়া উদ্যোগ আর আমিরাতের ইসরাইলের হাত ধরে মুসলিম বিশ্বে আধিপত্য বিস্তারকারী শক্তি হবার আকাক্সক্ষা তিউনিশিয়ায় বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে পটভূমি হিসাবে কাজ করেছে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us