প্রাচীন বিশ্বে শিল্পায়নে নবি-রাসূলদের ভূমিকা

জি. মোস্তফা | Aug 14, 2021 07:55 pm
প্রাচীন বিশ্বে শিল্পায়নে নবি-রাসূলদের ভূমিকা

প্রাচীন বিশ্বে শিল্পায়নে নবি-রাসূলদের ভূমিকা - ছবি : সংগৃহীত

 

শিল্পায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।শিল্প ছাড়া বিশ্বব্যবস্থাকে কল্পনাও করা যায় না। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো শিল্পায়নের মাধ্যমেই এগিয়ে গেছে। ইসলাম শিল্পায়নকে গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছে। কোরআন মাজিদে অগণিত জায়গায় শিল্প ও শিল্পায়নের কথা বর্ণিত হয়েছে। প্রাচীন বিশ্বে শিল্পায়নে নবি-রাসূলরাই সর্বপ্রথম অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন।

হাফেজ শামসুদ্দিন যাহাবি রহ. রচিত "আত-তিব্বুন নববি" কিতাবে বর্ণিত আছে, মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সর্বপ্রকার শিল্পকর্ম ওহির মাধ্যমে কোনো নবির পবিত্র হাতে শুরু হয়েছে।অতঃপর প্রয়োজনানুসারে যুগে যুগে তার মধ্যে উন্নতি-অগ্রগতি ও উৎকর্ষ সাধন করা হয়েছে।
সর্বপ্রথম আদম আ.-এর প্রতি যেসব ওহি নাজিল করা হয়েছিল তার বেশির ভাগই ছিল
কৃষিকাজ ও শিল্পায়ন সংক্রান্ত।

পরিবহনের জন্য চাকা-চালিত গাড়ি আদম আ.-ই সর্বপ্রথম আবিস্কার করেছিলেন।স্যার সৈয়দ আহমদ বলেন, কালের বিবর্তনে বিভিন্ন প্রকার গাড়ি আবিস্কৃত হয়েছে, কিন্তু সব গাড়ির ভিত্তি চাকার উপর।গরুর গাড়ি,ঘোড়ার গাড়ি হতে শুরু করে মোটর ও রেলগাড়ি সর্বত্র চাকার কারবার। কাজেই যিনি সর্বপ্রথম চাকা আবিস্কার করেছেন,তিনিই সবচেয়ে বড়ো আবিস্কারক। আর এ কথা আগেই বলা হয়েছে যে,আদম আ.-ই সর্বপ্রথম ওহির মাধ্যমে সর্বপ্রথম চাকা আবিস্কার করেছিলেন।(মায়ারেফুল কোরআন, সংক্ষিপ্ত, মুফতি মুহাম্মদ শফি রহ., অনুবাদ : মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, পৃ.৬২৯)

আদম আ. কৃষিকাজের প্রাথমিক যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন করেন। তার এই কর্ম শিল্পায়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছিল।

শিস আ. শিল্পায়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিলেন। তার পুত্র ছিল আনুশ, আনুশের পুত্র ছিল কিনান।কিনানের পুত্র ছিল মাহলাইল।মাহলাইল মুকুট বানিয়ে পরিধান করে রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। মাহলাইল সর্বপ্রথম বৃক্ষ কেটে কাঠের ব্যবহার শুরু করেন। তিনি ছিলেন সুর নগরী ও ব্যাবিলন সিটির প্রতিষ্ঠাতা। (সীরাত বিশ্বকোষ, ইফাবা, প্রথম খণ্ড,পৃ.১৫৩)

ইদরিস আ. শিল্পায়নে রেখেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তিনি যুদ্ধাস্র নির্মাণ করতেন।নূহ আ.
এর প্লাবনের সংকেত পেয়ে তিনি মিসরের উচ্চ ভূমিতে পিরামিড নির্মাণ করেছিলেন।এটিই ছিল দুনিয়ার প্রথম পিরামিড। এখানে তিনি মূল্যবান বইপত্র সংরক্ষিত রেখেছিলেন।এটি আবার অস্রাগারও ছিল।অনেক অস্রের ছবি তিনি এখানে চিত্রায়িত করে রেখেছিলেন, যাতে দুনিয়া থেকে কল্যাণকর জ্ঞান ও প্রযুক্তি হারিয়ে না যায়।

তিনি তৎকালীন পোশাক শিল্পেও অসামান্য ভূমিকা রেখেছিলেন।গণিত ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে তার অসামান্য প্রতিভা ছিল।(মায়ারেফুল কোরআন, মুফতি মুহাম্মদ শফি, হাদিস ও সামাজিক বিজ্ঞান, ২য় খণ্ড)।

নূহ আ. পৃথিবীর প্রথম অ্যাডমিরাল ও মেরিন প্রকৌশলী। তার মাধ্যমে দুনিয়ায় জাহাজ শিল্পের গোড়াপত্তন হয়।তিনি শাল কাঠ দিয়ে জাহাজ নির্মাণ করেছিলেন।এক দল ইতিহাসবিদের মতে, ওই জাহাজ ছিল ৩০০ গজ দীর্ঘ, ৫০ গজ প্রস্থ, ৩০ গজ উঁচু ও ত্রিতল বিশিষ্ট।(সীরাত বিশ্বকোষ, প্রথম খণ্ড, মায়ারেফুল কোরআন, সংক্ষিপ্ত, মুফতি মুহাম্মদ শফি,পৃ.৬২৯, )

মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম আ.-সহ অনেক নবি রসূল ইরাকে বসবাস করেছেন। মেসোপটেমীয় সভ্যতায় তাদের অসামান্য অবদান ছিল।পাকিস্তানি গবেষক ও লেখক ডা. তারেক মাহমুদ লিখেছেন, আমাদের পয়গম্বরদের পবিত্র জন্মভূমিতে প্রসিদ্ধ শহর বাগদাদের
নিকটবর্তী স্থানে খনন করার পর বিদ্যুতের স্রোতধারা আবিস্কৃত হয়েছে।যার অবস্থা সম্পর্কে প্রসিদ্ধ পরমাণু বিজ্ঞানী জর্জ গিমুই লিখেছেন, বিদ্যুতের স্রোতধারাকে সে সময় অলংকারের উপর স্বর্ণ পালিশ লাগানোর কাজে ব্যবহৃত হতো। পরবর্তী সময় এ জ্ঞান পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়।এর মাত্র কিছু দিন আগে Dettore Galvani তা পুনরায় আবিস্কার করেন। (সুন্নাতে রাসূল ও আধুনিক বিজ্ঞান, ডা. তারেক মাহমুদ, খণ্ড : ৫,৬; পৃ. ২৮৬)

নবি-রাসূলরা শিল্পায়নের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছেন।তারা শুধু ইবাদত গৃহে পড়ে থাকেননি।তারা প্রকৌশলী ছিলেন, চিকিৎসাবিদ ছিলেন। বিভিন্ন স্থাপত্যও তারা নির্মাণ করেছেন।হাফিজ উদ্দীন আহমেদ লিখেছেন, মিসরে সর্বপ্রথম পিরামিডটি স্থাপন করেছিলেন ইমহটেপ নামক জনৈক স্থপতি। পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতা,হাফিজ উদ্দীন আহমেদ,পৃ.৪৫)

ইমহোটেপ ɪmˈhoʊtɛp নামের অর্থ হলো, ”যে শান্তি নিয়ে এসেছে বা শান্তিতে এসেছেন।”

ইমহোটেপকে বলা হয় প্রাচীন মিসরের লিওনার্দো দা ভিঞ্চি। তিনি একইসাথে ছিলেন বিজ্ঞানী, স্থপতি, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, জ্যোতির্বিদ ও দার্শনিক।গবেষকরা গবেষণা করে বলেন, ইমহোটেপ এবং হজরত ইউসুফ আ. একই ব্যক্তি।বাংলাদেশী ইতিহাসবিদ সাহাদত হোসেন খান তার "প্রাচীন মিসর" গ্রন্থে ইমহোটেপ এবং ইউসুফকে একই ব্যক্তি হিসেবে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন।

তার সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে- ইমহোটেপ ছিলেন মানব ইতিহাসের প্রথম বিজ্ঞানী, স্থপতি ও চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত । তিনি পরিচিতি লাভ করেন একজন মহান চিকিৎসকরূপে।প্রাচীন মিসরীয় চিকিৎসাবিদ্যা সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায় প্যাপিরাস কাগজের উপর লেখা ইমহোটেপের বর্ণনা থেকে।

প্যাপিরাসে বর্ণিত ৪৮টি চিকিৎসা ধরনের মধ্যে ৩০টি এখনো চিকিৎসার ক্ষেত্রে উপযুক্ত।
তবে তার সব কাজের কৃতিত্ব ছাপিয়ে উঠে ইতিহাসের প্রথম মানব নির্মিত বিশাল প্রস্তরখণ্ডের সমাধিক্ষেত্র 'পিরামিড' নির্মাণের মাধ্যমে। মেম্ফিসের নিকটে সাক্কারায় অবস্থিত এই পিরামিড। সাক্কারা হচ্ছে প্রাচীন মিসরের বিখ্যাত রাজধানী মেম্ফিসের একটা সমাধিপুরী। প্রথম পিরামিড স্টেপ পিরামিড নামেও পরিচিত। ফারাও জোসেরের (Djoser) জন্যই নির্মাণ করা হয়েছিল মিসরের প্রথম পিরামিড।

পৃথিবীতে ইমহোটেপ প্রথম কলামের সাহায্যে দালান মজবুত করার প্রথা প্রবর্তন করেন, এর আগে কখনো কলাম ব্যবহার হত না। প্রথম পিরামিডের ডিজাইনও তিনিই করেন, মিসরের সাক্কারাতে। "ফারাও জোসের এর পিরামিড" নামে পরিচিত সেটা।

জোসের ভাগ্যবান ছিলেন ইমহোটেপের মতো একজন জ্ঞানী ব্যক্তিকে উজির পেয়ে। মিশরীয় প্রজারা তাকে চিকিৎসা শাস্ত্রের দেবতা বলে গন্য করতেন। মনে করা হয় তিনি খরা জনিত দুর্ভিক্ষের হাত থেকে মিশরবাসিদের রক্ষা করেছিলেন। প্রজা দরদি উজির হিসেবে এতটাই খ্যাতি লাভ করেন যে পরে রাজা জোসেরের থেকে মানুষ ইমহোটেপের নাম বেশি স্মরণে রাখে। তিনি হয়ে ওঠেন তৃতীয় রাজবংশের শ্রেষ্ঠ ফারাও (রাজা)।

উত্তর মিসরের একটা প্রাচীন লেখা (Famine Stele) থেকে এরকম একটা ঘটনা জানা যায়, ফারাও জোসের একবার একটা স্বপ্ন দেখেছিলেন। অদ্ভুত স্বপ্ন। দেখলেন, তিনি দাঁড়িয়ে আছেন নীল নদের তীরে। নদের পানি কমতে কমতে কাদা হয়ে যাচ্ছে। মাছ লাফিয়ে কাদায় উঠে পড়ছে। হঠাৎ নদী থেকে সাতটা মোটা গরু উঠে এলো, পেছনে সাতটা শীর্ণ গরু। এরপর আজব ব্যাপার হলো। ঐ সাতটা শীর্ণ গরু খেয়ে ফেলল সাতটা মোটা গরুকে! ফারাও ভয় পেয়ে গেলেন। নদীর পাড়ে সাতটা শস্যদানা দেখা গেলো, সবুজ... এরপর কাদায় মিশে গেল। এরপর ঠিক ওখানেই সাতটা শুকনো শস্য পড়ে রইল।

তখন সেই স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন ইমহোটেপ। মিসরে নাকি টানা সাত বছর খরা হবে। ইমহোটেপ এর পদক্ষেপে প্রচুর ফসল জমিয়ে রাখা হয়, এবং টানা সাত বছরের সে খরার সময় ইমহোটেপের কল্যাণে কোনো সমস্যাই হয়নি মিসরের। সেই পিরামিডের পাশেই আরেকটা স্ট্রাকচারে ফসল জমিয়ে গুদামজাত করে রাখেন। এটি ইতিহাসের প্রথম দীর্ঘসময় ধরে শস্য সংরক্ষণের পদ্ধতি।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে পিরামিড আসলে কী দিয়ে নির্মিত হয়েছে?
কোরআন মাজিদে বর্ণিত হয়েছে : "ফেরাউন বললো,হে পারিষদবর্গ! আমি জানি না,আমি ছাড়া তোমাদের কোনো ইলাহ্ আছে।হে হামান ইট পোড়াও,অতঃপর আমার জন্যে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করো, যাতে আমি মুসার উপাস্যকে উঁকি মেরে দেখতে পারি।আমার তো ধারণা সে একজন মিথ্যাবাদী"।(সূরা আল-কাসাস, আয়াত : ৩৮)

এখানে প্রাসাদ বলা হলেও পিরামিডও সে ধরনের স্থাপনার একটি অংশ।এখানে যে পোড়া ইটের কথা বলা হচ্ছে, সেটিই হচ্ছে বিস্ময়কর।পিরামিডের চাঁইগুলো ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপের তলে দিয়ে প্রমাণিত হচ্ছে- তা মাটি, চুনাপাথর বা অনুরূপ কিছু উপাদানের মিশ্রণে তৈরি।এটি জোড়া লাগানোর জন্য সে সময় হয়ত তাপ প্রযুক্তিও যে হয়েছিল তা হয়ত এখন জানা না গেলেও পরে জানা যাবে।(আল-কুরআন ও বিজ্ঞান, মুহাম্মদ শামীম আখতার, পৃ.২৮৬)

উপরিউক্ত বিবরণ থেকে প্রমাণিত হয় যে ইউসুফ আ. খু্বই দক্ষ বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলী ছিলেন। তার সময় শিল্পে বড়ো ধরনের উন্নয়ন ঘটেছিলো। মাটি এবং চুনাপাথরের সংমিশ্রণে বিশাল বিশাল পিরামিড নির্মাণ করা চাট্টিখানি কথা নয়। এটি তৎকালীন শিল্পায়নের বড় প্রমাণ।

ইউসুফ আ.-এর শাসনামলে মিসরে কাচ শিল্প, সিরামিক্স, কাগজ শিল্প প্রভৃতির আরো উন্নয়ন ঘটেছিলো।এ তে তার ব্যাপক অবদান ছিল।

হযরত মুসা আ. ছিলেন হিব্রু সভ্যতার প্রাণ পুরুষ। তিনি ফিরাউনের পতনের পর মিশর সাম্রাজ্যের অধিপতি হয়েছিলেন।পরবর্তীতে তিনি মিশরের শিল্পায়নে ভূমিকা রেখেছিলেন।

কোরআনে কারিমে হযরত সুলাইমান আ.-এর যে সব কার্যকলাপের বর্ণনা রয়েছে তাতে তৎকালীন শিল্পায়নের উন্নত ব্যবস্থার কথা জানা যায়। বাইবেলেও এর স্বীকৃতি পাওয়া যায়।বলা হয়েছে তিনি তামা গলিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করতেন।

দাউদ আ. লৌহ গলিয়ে বর্ম তৈরি করতেন।লোহার গলন তাপ ১৫০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড আর উবালন তাপ ৩০০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড; আর তামার গলন তাপ ১০৮৩ ডিগ্রি, উবালন তাপ ৩৩১০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এতে বোঝা যায়, তখন ধাতুশিল্প বেশ অগ্রসর হয়েছিলো।নবি দাউদ ও নবি সুলাইমান আ. কিভাবে এসব ধাতুর জিনিস তৈরি করতেন, তা নিয়ে পুরাতত্ত্ববিদরা উঠেপড়ে লেগেছেন।

১৯৪০ সালে একদল আমেরিকান প্রত্নতত্ত্ববিদ আকাবা উপসাগরের কাছে অনুসন্ধান চালিয়ে
দেখতে পান যে, সেখানে Blast Furnace-এর মতো তামা লোহা গলানোর ফার্নেস ছিল।আর এসব ফার্নেস ব্যবহার করেই পিতা-পুত্র নবিদ্বয় ধাতু গলানোর কাজ করতেন। ওয়াদি আল-আরাবাতে প্রবাহিত অবিরাম বায়ুপ্রবাহ তাতে হাপরের কাজ করত।

সুলাইমান আ.-এর অধীনে বৃহদাকার ডেগ ও তৈজসপত্র তৈরি করা হতো। তিনি স্বচ্ছ কাচ দিয়ে অট্টালিকা নির্মাণ করেছিলেন। ওই সময় কেমন কাচ শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল,এ থেকে তার নিদর্শন পাওয়া যায়।

আল্লাহতায়ালা বায়ুপ্রবাহকে সুলাইমানের অধীন করে দিয়েছিলেন।তিনি বায়ুর সাহায্যে আকাশযানে চড়ে যাতায়াত করতেন। তিনি যখন ইচ্ছে, যেদিকে ইচ্ছে বায়ুকে আদেশ করতেন, বায়ু তাকে তার সিংহাসন এবং লোক লস্করসহ সেখানে পৌঁছে দিত, যেখানে নামতে চাইতেন, সেখানে নামিয়ে দিত, সেখানে নামিয়ে দিত এবং যখন ফিরে আসতে চাইতেন,ফিরিয়ে দিয়ে যেতো।-(রুহুল মা'আনী, বায়যাভি, মাআরেফুল কোরআন) দাউদ আ. জেরুসালেমে মেহরাব নির্মাণ করেছিলেন।(সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ,১ম খণ্ড,পৃ.৪৭০)।

সন্দেহ নেই, তৎকালীন শিল্পের বিকাশে দাউদ ও সুলাইমান আ) অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

নবি এবং তাদের উত্তরসূরীরাও শিল্পায়নে প্রভূত উন্নয়ন সাধিত করেছিলেন।
কোরআন মাজিদের ১৬ পারায় সূরা কাহাফের ৯৬ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,
"তোমরা আমার কাছে খন্ড খন্ড লোহা আনো, যতক্ষণ দুই পাহাড়ের মধ্যস্থল ভর্তি না হয়। যখন দেশবাসী সেই দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তীস্থল ভর্তি করে দিলো তখন তিনি বলেছিলেন, তোমরা গলিত তামার উপর এগুলো ঢেলে দাও।"

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কই আমরা তো দেখি না, কোথা সে তামা লোহা-পিতলের প্রাচীর। কেউ বা ছিলেন তার স্থপতি? ওই প্রাচীর যিনি স্থাপন করেছিলেন তার নাম ছিল কোরআনের কথায় বিজ্ঞানী জুলকারনাইন। তিনি আবার বিজ্ঞানী লোকমানের ভ্রাতুষ্পুত্র ছিলেন। পারস্য বা ইরান ও মিডিয়া সাম্রাজ্যের উত্তর সীমান্তের দারবন্দ নামক স্থানে অবস্থিত ককেশাস পর্বতমালা কৃষ্ণসাগর ও কাস্পিয়ান সাগরের মধ্যবর্তী প্রশস্ত পার্বত্য ঘাঁটিগুলো রুদ্ধ করে বিরাজমান রয়েছে। এই প্রাচীর ৫০ মাইল দীর্ঘ, ১০ ফুট চওড়া এবং ২৩ ফুট উচ্চ ছিল।এই ককেশীয় প্রাচীরই কোরআনে বর্ণিত প্রাচীর।খুবই আশ্চর্যের বিষয় এই লৌহ দরজা বা কাস্পিয়ান গেট লৌহ এবং পিতল প্রভৃতি কঠিন ধাতুতেই নির্মিত হয়েছে।(পুস্তক সম্রাট,আল্লামা গোলাম আহমাদ মোর্তজা,পৃ.৫৫)

কোরআন মাজিদে বিভিন্ন শিল্প ও উৎপাদনের কথা বর্ণিত রয়েছে যার মাধ্যমে শিল্পায়নের অপরিহার্যতার কথা জানতে পারা যায়।
সূরা নাহলে ৮ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে- তোমাদের আরোহণের জন্য এবং সৌন্দর্যের জন্য তিনি ঘোড়া,খচ্চর ও গাধা সৃষ্টি করেছেন।আর তিনি এমন জিনিস সৃষ্টি করবেন যা তোমরা জানো না।

মুফতি মুহাম্মদ শফি রহ. এ আয়াতের তাফসিরে বলেন, সওয়ারীর তিনটি জন্তু ঘোড়া,খচ্চর ও গাধার কথা বিশেষভাবে বর্ণনা করার পর পরিশেষে অন্যান্য যানবাহন সম্পর্কে ভবিষ্যত পদবাচ্য ব্যবহার করে বলা হয়েছে,ওয়া ইয়াখলুকু মা-লা- তা'লামুন।অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা ঐ সব বস্তু সৃষ্টি করবেন যেগুলো তোমরা জানো না।এখানে ঐসব নবাবিস্কৃত যানবাহন ও গাড়ি বোঝানো হয়েছে যেগুলোর অস্তিত্ব প্রাচীননকালে ছিলো না।যেমন- রেল,মটর,বিমান ইত্যাদি;যেগুলো এ পর্যন্ত আবিস্কৃত হয়েছে, এছাড়া ভবিষ্যতে যেসব যানবাহন আবিস্কৃত হবে,সেগুলোও এর অন্তর্ভুক্ত।"
সুতরাং জমিনের খলিফা মানুষের দায়িত্ব হচ্ছে শিল্পায়নের জন্য কাজ করা, বিভিন্ন প্রয়োজনীয়
সামগ্রী উৎপাদন করা এবং মানুষের কল্যাণে তাকে নিয়োজিত করা।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us