ইসলামী বইমেলা : পরিসর প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

আবু সাঈদ | Oct 31, 2021 03:49 pm
ইসলামী বইমেলা : পরিসর প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

ইসলামী বইমেলা : পরিসর প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা - ছবি সংগৃহীত

 

ইসলামিক ফাউন্ডেশন অনেক আগ থেকেই বইমেলার আয়োজন করে আসছে। তবে তাতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে গত দুই বছর আগে। ইসলামী ঘরানার কিছু প্রবীণ সাহিত্যিকের বই মোড়ক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে মেলাটি ইসলামী সাহিত্যপ্রেমী মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়। এবং ইসলামী প্রকাশনা জগতের ইতিবাচক সম্ভাবনা হিসেবে প্রকাশকদের কাছে প্রতীয়মান হয়। ইসলামী প্রকাশনাগুলো তখন পরবর্তী মেলায় অংশগ্রহণে আগ্রহী হয়ে ওঠে।

ওই ধারাবাহিকতায় ইসলামী প্রকাশনাগুলো ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এই বইমেলায় অংশগ্রহণ শুরু করে। গত বছরের চেয়ে এবছরের মেলাটি অধিক জমজমাট হয়েছে। ইসলামী সাহিত্য ও ধর্মীয় বই-পুস্তকের আকর্ষণে ঢাকার বাইরে থেকেও বইপ্রেমী মানুষজন ছুটে এসেছে। মূলধারার মিডিয়াগুলোর বিশেষ প্রচারণা না থাকলেও ব্যক্তিগত উদ্যোগেই মেলার প্রচারণা হয়েছে। তাতেই বইপ্রেমীদের উপচে পড়া ভীড়। পূর্ব জানান দিয়ে ইসলামী ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতিও মেলাটিকে আলাদা মাত্রায় উন্নীত করেছে। তবে ইসলামী অভিজাত প্রকাশনাগুলোর আশানুরূপ উপস্থিতি না দেখে অনেকের মুখেই হতাশার মেঘ। তাদের বিশ্বাস, অভিজাত প্রকাশনাগুলোর আরো অধিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা গেলে মেলা আরো মুখরিত হবে। আদর্শিক, রুচিশীল ও উন্নত সাহিত্যসমৃদ্ধ বইয়ের আকর্ষণে বিপুল বইপ্রেমীদের সমাগম ঘটবে। মেলার পরিধি নিয়েও অনেকের মনে রয়েছে চাপা ক্ষোভ। বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিতদের সাথে বইমেলায় এসে একসাথে থাকাটাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। প্রচন্ড ভিড়ে হাঁটাচলাতেও নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে। মেলার ব্যবস্থাপনা দেখলে মনে হয়, তাতে পরিকল্পনার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। আছে আন্তরিকতারও যথেষ্ট অভাব।

এজন্য মেলা কর্তৃপক্ষকে আরো পরিকল্পিতভাবে আয়োজন করতে হবে। হতে হবে আরো অনেক আন্তরিক। মেলাকে আরো সফল করার জন্য সকলকেই উদ্যোগী হতে হবে। আয়োজক, প্রকাশক, ক্রেতা ও লেখক সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। মানুষের চাহিদা অনুসারে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বইপ্রেমীদের বিশেষ আগ্রহ থাকে প্রিয় লেখকের সাক্ষাত লাভের। ব্যবস্থাপনা পর্ষদ এর জন্য লেখককুঞ্জ রাখতে পারেন। সেখানে প্রতিদিন প্রতিষ্ঠিত নানা লেখক থাকবেন। যাদের বই পড়ে এত দিন প্রাণ জুড়াতো, পাঠকরা এখানে তাদের সাক্ষাত লাভে তৃপ্তি বোধ করবে। মতবিনিময়ে নিজের স্বপ্ন ও আগ্রহের কথা বলবে। জানাবে নিজের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষার কথা। প্রিয় লেখক থেকে অটোগ্রাফ নেবে। স্মৃতি হিসেবে তা পরম যত্নে সংরক্ষণ করবে। বইপ্রেমীদের আকর্ষণের আরেকটি উপায় হতে পারে মেলা থেকে কেনা বইয়ে বিশেষ কমিশন রাখা। পাঠক যেন নিজের পছন্দের বইটি অল্প মূল্যে সংগ্রহ করতে পারে। আরো থাকতে পারে প্রবীণ লেখকদের আলোচনা সভা। সাহিত্য পর্যালোচনা। কবিতা পাঠের আসর। থাকতে পারে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা।

লেখককেন্দ্রিকও হতে পারে নানা আয়োজন। মেলার পূর্বে বিভিন্ন লেখকের পাণ্ডুলিপি নেয়া হবে। নির্বাচনপূর্বক দেয়া হবে বিশেষ সম্মাননা পদক। মেলায় প্রকাশিত বইয়ের উপরও থাকতে পারে পর্যালোচনার আয়োজন। নির্বাচন করা যেতে পারে মেলায় প্রকাশিত সাহিত্য মানের সেরা বই। এর জন্যও থাকতে পারে প্রকাশনা সংঘের পক্ষ থেকে বিশেষ পুরস্কার। এতে মেলায় প্রকাশিত বইয়ের সাহিত্যমান রক্ষিত হবে। সুস্থ প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হবে।

প্রকাশকদেরও অংশগ্রহণের ন্যায্য সুযোগ দিতে হবে। দিতে হবে বিশেষ সুযোগ সুবিধা। তারা মেলা উপলক্ষে নানা বই প্রকাশ করবে। পেশাদারিত্বের সর্বোৎকৃষ্টতার পরিচয় দিবে। বিভিন্ন প্রকাশনীর প্রকাশিত বইয়ের যথাযথ নিরীক্ষণপূর্বক সাহিত্যের বিচারে সেরা প্রকাশনী নির্বাচন করা হবে। ব্যবস্থাপনা পর্ষদের পক্ষ থেকে দেয়া হবে তাদের বিশেষ পদক। থাকতে পারে সৃষ্টিশীলতারও বিশেষ মূল্যায়ন।

এভাবে নানা উদ্যোগ-আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমরা এই বইমেলাকে গড়ে তুলতে পারি সুস্থ সংস্কৃতি বিকাশের বিপুল সম্ভাবনা হিসেবে। সমাজের নীতি-নৈতিকতা বিনির্মাণের উত্তম সহায়ক হিসেবে। এর মাধ্যমে আমরা ব্যক্তিমনের সর্বপ্রকার তুচ্ছতা ও সংকীর্ণতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি উন্নত ও উচ্চতর ভাবালোকে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us