পিত্তপাথর প্রকাশ পায় যে ৯ লক্ষণের মাধ্যমে

মো: জহিরুল আলম শাহীন | Nov 30, 2021 02:46 pm
পিত্তপাথর প্রকাশ পায় যে ৯ লক্ষণের মাধ্যমে

পিত্তপাথর প্রকাশ পায় যে ৯ লক্ষণের মাধ্যমে - ছবি সংগৃহীত

 

পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে এমন কথাটি এখন প্রায়ই শোনা যাচ্ছে এবং এমন রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আসলে অনেকই কিন্তু পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে এমনটি বুঝতে পারেনা। এমনকি লক্ষন প্রকাশ পায় না। নীরবেই দেহে এর প্রতিক্রিয়ায় নানা রোগ ডেকে আনতে পারে। সুতরাং দেহের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য সচেতন ও সতর্কতা প্রয়োজন। রোগ সৃষ্টির শুরুতেই অবশ্যই চিকিৎসা করা অতি প্রয়োজন। আপনার অবহেলা বা অযত্নে মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে।

অবস্থান: মানব দেহের বুকের পাজরের ডান দিকে পেটের ওপরে অংশের কলিজা বা যকৃত বা লিভারের নিচে যুক্ত থাকে পিত্তথলি।

পাথর কেন হয়: পিত্তথলি লিভার থেকে তৈরি পিত্ত রস বা বাইল জমা রাখে এবং চর্বি জাতীয় খাবার খেলে হজমের জন্য পিত্তথলি থেকে পিত্তরস বেরিয়ে আমাদের খাদ্য নালিতে চলে আসে এবং হজমে সহায়তা করে। পিত্তরস পিত্তথলিতে থাকার সময়কালে পিত্তরস তথা বাইলের কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়। পিত্তরস হলুদ রঙের তরল পদার্থ। এতে থাকে কোলেস্টেরল, ক্যালসিয়াম, লবণ, এসিড ও অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান। এই পিত্তরসের বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি হয় পিত্তথলির পাথর। পিত্ত একটি তরল পদার্থ যার মধ্যে কিছু কঠিন পদার্থ থাকে। তরল পদার্থের পরিমাণ কমে গেলে কঠিন পদার্থের পরিমাণ বেড়ে গেলে পাথর হতে পারে। আর কোন কারণে যদি পিত্তথলির সংকোচন ও প্রসারণের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে পিত্তথলিতে পাথর হতে পারে। তাছাড়া চিকিৎসক ও গবেষকদের মতে যারা চর্বি জাতীয় খাবার বেশি খায়, যারা ভেজাল খাবার খান, যাদের ডায়াবেটিস আছে, লিভারের রোগে যারা আক্রান্ত, যেসব নারী বার বার গর্ভবর্তী হন, যারা মোটা ও ওজন বেশি তাদের পিত্তথলিতে পাথর হতে পারে।

পিত্তথলি যেভাবে কাজ করে: যকৃত বা লিভারে পিত্তরস বা বাইল তৈরী হয়। ছোট নালীর মাধ্যমে এই রস পিত্তথলিতে জমা হয়। পিত্তথলিতে এই রস জমা থাকে। আমরা যখন চর্বি জাতীয় খাবার খাই তখন কোলেসিস্টোবাইনিন নামে একধরনের হরমোন নিঃসরণ হয়। এই হরমোনের প্রভাবে পিত্তথলি সংকোচিত হয় এবং জমা থাকা রস বের করে দেয়। পরে এই রস ক্ষুদ্রাতন্ত্রে গিয়ে খাদ্য হজমে সাহায্য করে।

পিত্ত পাথরের লক্ষণ : পিত্তথলিতে পাথর হলে বেশিভাগ ক্ষেত্রেই কোনো উপসর্গ থাকে না। প্রায় ৮৫-৯০ ভাগই ক্ষেত্রেই পিত্ত পাথর ধরা পড়ে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে।
তাছাড়া নিম্ন লিখিত লক্ষণের মাধ্যমে পিত্তপাথর প্রকাশ পায় :

* বুকের ডান পাজরের নিচে ব্যথা শুরু হতে পারে তা কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ব্যথা ধীরে ধীরে ডান কাঁধ বরাবর ছড়িয়ে পড়ে, এমন সময় জ্বরও হতে পারে।
* পিঠের বা পেটের মাঝ বরাবর এবং বুকের ভিতর ও ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
* বমি বা বমি বমি ভাব হতে পারে।
* পায়খানার রং সাদা সাদা এবং পায়খানার সাথে চর্বি যেতে পারে।
* বদ হজম বা চর্বি জাতীয় খাবার খেলেই বদ হজম হয়।
* বার বার ঢেকুর ওটা।
* পেটে গ্যাস জমা পাতলা পায়খানা হওয়া।
* মাথার ডান পাশে ব্যথা করা।
* খাওয়ার পর গলায় তেতো ভাব লাগা।

কী পরীক্ষা প্রয়োজন : আপনার উপরোক্ত সমস্যাগুলো দেখা দিলেই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসের পরামর্শ নিবেন এবং পরামর্শ মতে পরীক্ষা ও চিকিৎসা চালিয়ে যাবেন। তবে রোগটি নিশ্চিত করার জন্য পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম করে নিতে হয়। কিছু রক্তের পরীক্ষা, ইসিজি ও এক্সরে প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় গ্যাসের কারণে পেটে আলসার আছে কিনা তা নির্ণয়ের জন্য এন্ডোসকোপি পরীক্ষা ও প্রয়োজন হতে পারে। তবে মনে রাখবেন আপনার চিকিৎসকই তা ঠিক করবেন।

চিকিৎসা : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে পিত্তথলির পাথরে চিকিৎসার প্রধান উপাদান হলো অপারেশন। অপারেশন দুই ভাবে করা যায়। ১) সরাসরি পেট কেটে ২) লেপারস্কোপিক মেশিনের সাহায্যে। আধুনিক চিকিৎসা জগতে লেপারস্কোপিক পদ্ধতি খুবই সুবিধাজনক। ল্যাপারস্কোপির অর্থ হলো ক্যামেরা দিয়ে দেখা। পেটের যে অংশে পিত্তথলি অবস্থিত সেখানে ছোট ছোট ছিদ্র করে সূক্ষ্ম সরু যন্ত্র দিয়ে পিত্তথলির পাথর অপসারণ করা হয়। এতে অপারেশনের পর ব্যাথা ও রক্ষ ক্ষরণ কম হয়। রোগী দুই একদিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।

অপারেশন না করলে কী হয়? : পিত্তথলিতে পাথর নিশ্চিত হওয়ার পর তা অপারেশন করে নেওয়া চিকিৎসকদের মতে খুবই প্রয়োজন। অনেকে ঔষধ খাওয়ার পর সামান্য ব্যথা কমে আসে সমস্যাও করেনা ফলে অপারেশন করেন না। অবহেলায় বসে থাকে। তা আপনার বিপদ ডেকে আনতে পারে। বেশি দেরী না করে অপারেশন করে ফেলা ভালো। তা না হলে এরোগে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। অনেক দিন পাথর নিয়ে থাকলে শরীরে জন্ডিস, অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহ সৃষ্টি এমনকি পিত্তথলিতে ক্যান্সারও দেখা দিতে পারে।

সতর্কতা : শরীরের যেকোন রোগের জন্য কোনো ঔষধ নিজে নিজে খাবেন না। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মতে ঔষধের মাত্রা বুঝে সময়মত ঔষধ খাবেন এবং চলবেন।

লেখক : শিক্ষক, স্বাস্থ্য বিষয়ক কলামিস্ট
গোলাপগঞ্জ, সিলেট

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us