নবজাতকের অন্ধত্ব : রেটিনোপ্যাথি অব প্রিমেচুরিটি

ডা. মো. ছায়েদুল হক | Nov 30, 2021 02:49 pm
নবজাতকের অন্ধত্ব : রেটিনোপ্যাথি অব প্রিমেচুরিটি

নবজাতকের অন্ধত্ব : রেটিনোপ্যাথি অব প্রিমেচুরিটি - ছবি সংগৃহীত

 

এটি আসলে সদ্যপ্রসূত শিশুদের এক ধরনের চোখের রক্তনালীর সমস্যা। নবজাতক শিশুর অন্ধত্বের অন্যতম কারণ হলো এই রেটিনোপ্যাথি অব প্রিমেচুরিটি বা সংক্ষেপে আরওপি।

শিশুর চোখে রক্তনালীর উন্মেষ ঘটে গর্ভাবস্থার চার মাস বয়সে। সেটি চোখের পেছনে অপ্টিক নার্ভ হেড থেকে শুরু হয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে থাকে। জন্মের সময় এই প্রক্রিয়া প্রায় সমাপ্ত হয়ে যায়। রেটিনার প্রান্তিক অংশে অনেক সময় জন্মের সময় রক্তনালীর বিকাশ কিছুটা অসম্পূর্ণ থাকে। বিশেষ করে যেসব শিশু সময়ের আগেই (প্রিমেচুর) ভূমিষ্ঠ হয় তাদের বেলায় এরকমটি হয়ে থাকে। রক্তনালী বিবর্জিত রেটিনার একদম প্রান্তিক অংশটিকে বলা হয় রেটিনাল পেরিফেরাল এভাস্কুলার পার্ট। জন্মের সময় কোনো কারণে রেটিনার এই এভাস্কুলার পার্ট বিদ্যমান থাকাটা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। জন্মের অব্যাবহিত পরে মাসখানেকের মধ্যে এই এভাস্কুলার পার্টে স্বাভাবিক রক্তনালীতে পুষ্ট হয়ে যায়। তবে কখনো কখনো এর ব্যত্যয় ঘটতে দেখা যায়।

জন্মের অব্যাবহিত পরে যেসব শিশু নিউনেটাল কেয়ারে থাকে বা কৃত্রিম অক্সিজেনে থাকে তাদের বেলায় অতিরিক্ত অক্সিজেনের প্রভাবে সাময়িকভাবে রক্তনালীগুলিতে এক ধরনের সংকোচিত অবস্থা বিরাজমান থাকে। পরবর্তীতে যখন কৃত্রিম অক্সিজেন থেকে অবমুক্ত হয়ে নবজাতক স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাসে ফিরে আসে তখন চোখের ভিতরকার রক্তনালী তথা কোষে সাময়িকভাবে অক্সিজেনের মাত্র কমে যায়। হঠাৎ এই অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় রেটিনার এভাস্কুলার পার্টে নতুন করে রক্তনালী তৈরি হওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হয়। নতুন করে সৃষ্টি হওয়া এই রক্তনালীগুলির ধর্ম হলো এরা অপুষ্ট; ভঙ্গুর এবং এরা রেটিনাতে সীমাবদ্ধ না থেকে চোখের ভিতর তরল অংশে প্রবেশ করে। অস্বাভাবিক রক্তনালী সমৃদ্ধ রেটিনার এই অবস্থাটিকে বলা হয় রেটিনোপ্যাথি অব প্রিমেচুরিটি।

নিউভেসেল বা নতুন রক্তনালী যেগুলো তৈরি হয় সেগুলোতে খুব সহজেই রক্তক্ষরণ হয়। এই অপুষ্ট রক্তনালী সম্বলিত অস্বাভাবিক কোষের প্রভাবে রক্তক্ষরণ পরবর্তী বিভিন্ন জটিলতা অন্ধত্ব ডেকে আনে। রেটিনার পেরিফেরাল পার্টে অক্সিজেন স্বল্পতা বা ইস্কেমিয়া এবং এন্ডোথেলিয়াল ভাস্কুলার গ্রোথ ফেক্টর নামক কেমিক্যালের প্রভাব সাধারণত এই সমস্যায় নিয়ামক হিসাবে কাজ করে।

আরওপি-র রিস্ক ফেক্টর
ষ প্রিমেচুর বেবী বিশেষ করে ৩২ সপ্তাহের আগে ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশু অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ।
ষ লো বার্থ ওয়েট বা স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজনের শিশু জন্মের সময় যাদের ওজন ১৬০০ গ্রামের নিচে তারা অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ।
ষ জন্মের অব্যাবহিত পরে যেসব শিশুর কৃত্রিম অক্সিজেন প্রয়োজন হয়।
ষ যেসব শিশুর রক্তশূন্যতা, সেপসিস ও ভিটামিন ই স্বল্পতা থাকে।

আরওপি স্ক্রিনিং বা শনাক্তকরণ
ষ রেটিনোপ্যাথি অব প্রিমেচুরিটি দ্রুত শনাক্ত করা গেলে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া গেলে অন্ধত্ব প্রতিরোধ করা সম্ভব।এই সমস্যাটি নিরূপণ করার একমাত্র উপায় চোখ পরীক্ষা করা। এ ক্ষেত্রে হাসপাতালে বা ক্লিনিকে বিশেষ ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়। রিস্ক ফেক্টর বিদ্যমান নবজাতকের প্রত্যেকের চোখ পরীক্ষা করা এ ক্ষেত্রে খুব জরুরি।
ষ প্রথমবার নবজাতকের বয়স মাস পূর্তিতে আরওপি স্ক্রিনিং প্রয়োজন।
ষ পরবর্তী প্রয়োজনে ১-৩ সপ্তাহ বিরতিতে স্ক্রিনিং অব্যাহত রাখতে হবে।
ষ আরওপি সমস্যাযুক্ত শিশুদের ক্ষেত্রে পরবর্তীতে প্রায়ই দৃষ্টি সমস্যা, চোখে ট্যারাভাব বা স্কুইন্ট ও এমব্লায়োপিয়া বা ভিজুয়েল সাপ্রেশন ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এসব শিশুদেরকে দীর্ঘদিনের জন্য ফলো আপে রাখতে হবে।

চিকিৎসা
ষ আরওপি শনাক্ত হলে লেজার চিকিৎসা বা এন্টি ভিইজিএফ (ভাস্কুলার এন্ডোথেলিয়াল গ্রোথ ফেক্টর ইনহিবিটর) ইনজেকশন অথবা পারস প্লেনা ভিট্রেক্টোমি অপারেশন এর সাহায্যে এর প্রতিকার সম্ভব। তবে সমস্যা থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

লেখক : চক্ষুবিশেষজ্ঞ ও সার্জন

সহযোগী অধ্যাপক (অব:) ও কনসাল্টেন্ট- আইডিয়াল আই কেয়ার সেন্টার, ৩৮/৩-৪, রিং রোড, আদাবর, ঢাকা, ফোন : ০১৯২০৯৬২৫১২


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us