বিজয়ের ৫০ বছর

আমীর হামযা | Dec 22, 2021 02:26 pm
বিজয়ের ৫০ বছর

বিজয়ের ৫০ বছর - ছবি : অন্য এক দিগন্ত

 

ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের মাস। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানিদের পরাজিত করে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। এবারের বিজয় দিবস সম্পূর্ণ আদালাভাবে এবং ভিন্ন আঙ্গিকে ধরা দেবে আমাদের জাতীয় জীবনে। এ দ্যোতনা ১৮ কোটি মানুষের হৃদয়ে দোলা দেবে সম্পূর্ণ আলাদা আমেজে। একেবারে অন্য রূপে। এবারো ১৬ ডিসেম্বর দিনটিতে ভোরেও সূর্য উঠবে। তবে সেই সূর্যের মাহাত্ম্য অন্য যেকোনো দিনের চেয়ে হবে আলাদা। দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীলগ্নে এ সূর্য নতুন রূপে নতুন ‘আলোর ঝর্ণাধারা’র বয়ে আনবে সবার জীবনে। ৫০ বছর আগের এ দিনেই বিপুল রক্তের বিনিময়ে বিজয়ের ভেতর দিয়ে অর্জিত হয়েছিল জাতীয় স্বাধীনতা; বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছিল একটি স্বাধীন-সার্বভৌম ভূখণ্ড, বাংলাদেশ।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, শুধু এই পঞ্চাশ বছর ছাড়া ভাটি বাংলা তথা আজকের বাংলাদেশ শাসন করেছে বহিরাগতরা। এ জনপদের ভূমিপুত্ররা কখনোই নিজেদের শাসনভার পায়নি। ফলে শতাব্দীর পর শতাব্দী বহুমাত্রিক বঞ্চণার শিকার হয়ে ভাগ্যবিড়ম্বিত হতে হয় তাদের। সেই তারাই বহু প্রাণের বিনিময়ে অর্জন করে স্বাধীনতা। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পায় মুক্তির স্বাদ।

সুলতানি, নবাবি আমল হয়ে ব্রিটিশরা বাংলা দখলের পর পূর্ববাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ হয় চরমভাবে বঞ্চনার শিকার। ইংরেজ ও বর্ণ হিন্দুদের আগ্রাসনে বাংলার মুসলমান জনগোষ্ঠী হয় নিষ্পেষিত। পরাধীন ভারতের পুরো সময়ই ভাটি বাংলা ছিল কলকাতাকেন্দ্রিক নগর জীবনের কাঁচামাল সরবরাহের জোগানদাতা। এ কথা সত্য যে, শুধু মধ্যযুগে সুলতানরা পূর্ববাংলার জনকল্যাণে মনোযোগী ছিলেন। নবাবি আমলেও সে ধারা অব্যাহত ছিল। বঞ্চনার সূচনা ব্রিটিশ আমলে। এর অন্যতম কারণ-পূর্ব বাংলা দীর্ঘ দিন ধরেই মুসলিম অধ্যুষিত। যেহেতু বাংলার মুসলিম নবাবদের কাছে থেকে ইংরেজরা ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়, সে জন্য অনিবার্যভাবেই ব্রিটিশদের রোষানলে পড়ে পূর্ব বাংলার মুসলমানরা। শাসকদের রোষানলে পড়ে ভাগ্য বিপর্যয় ঘটে। এর জন্য মুসলিম পরিচয়ই ছিল মুখ্য।

দ্বিতীয় যুদ্ধোত্তর দেশে দেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটতে থাকে। প্রায় দুই শ’ বছর শাসনের পর ভারতেও ইংরেজ শাসনের যবনিকাপাত হয়। সাতচল্লিশে ঐতিহাসিক বাস্তবতায় উপমহাদেশে অভ্যুদয় ঘটে দুটি স্বাধীন দেশ ভারত-পাকিস্তান। দীর্ঘ দিনের বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেতে পূর্ববাংলার মুসলমানরা পাকিস্তান আন্দোলন অর্থাৎ আজাদি আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। উপমহাদেশের বিভক্তি অনিবার্য হলে বাংলা ভাগও হয়ে ওঠে অবধারিত। পূর্ব বাংলা হয় পাকিস্তানের অংশ। কিন্তু দেশ ভাগের অব্যবহতি পরই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী চেপে বসে পূর্ববাংলার মানুষের ঘাড়ে। লিখিত হয় প্রায় ২৫ বছরের অনাকাঙ্ক্ষিত বঞ্চনার ইতিহাস। পাকিস্তানি শাসন থেকে মুক্তি পেতে অনিবার্য হয়ে ওঠে একাত্তরের মুক্তি সংগ্রাম।

সাতচল্লিশ পরবর্তী বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর নির্বাচন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন এবং ছিষট্টির ৬ দফা আন্দোলন এবং ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়। সর্বশেষ একাত্তরের ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। মৃত্যু আর ধ্বংসের ভেতর দিয়ে ফিনিক্স পাখি হয়ে জেগে উঠল একটা ছোট্ট স্বাধীন দেশ, বাংলাদেশ। অর্জিত হয় কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। ১৬ ডিসেম্বর আসে কাঙ্খিত বিজয়। চলতি বছর বিজয়ের পঞ্চাশ বছর পূর্তি। মানে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে আমাদের চাওয়া-পাওয়া, সাফল্য-ব্যর্থতা তথা অর্জন নিয়ে অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা হওয়া উচিৎ। সাথে এ প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজতে হবে, যে পাকিস্তানের জন্য বাঙালি মুসলমান সর্বাত্মক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেই তারাই কেন মাত্র সিকি শতাব্দির ব্যবধানে স্বাধীন দেশের প্রয়োজন বোধ করলো। কেন কবি ইকবাল আর মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ‘স্বপ্নের’ দেশ পাকিস্তান ভেঙে গেল? উপমহাদেশের মুসলিমদের জন্য একটি রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন নিয়ে ১৯৪৭ সালে যে দেশের জন্ম, অর্ধ শতাব্দীর ব্যবধানে তার অবসান? বিষয়টি নিয়ে বিগত অর্ধশতাব্দী ধরেই বিস্তর গবেষণা-ব্যাখ্যা-বিতর্ক হয়েছে, এখনো অব্যাহত রয়েছে। টেকসই বাংলাদেশ গঠনে আমাদের এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি বৈকি।

পাকিস্তানের আজাদি আন্দোলনে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর যুক্তিতে সায় দিলেও পূর্ববঙ্গের মুসলিমরা কখনোই নিজেদের বাঙালি জাতিসত্তা এবং স্বাধীনভাবে ভবিষ্যৎ নির্ধারণের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করেনি। কিন্তু সেই আকাক্সক্ষা পূরণে এত দ্রুত কেন পূর্বাংলার মানুষের মনে দোলা দিল? কেন পাকিস্তান সৃষ্টির দুই দশক না যেতেই বাঙালি জাতিসত্তা নিয়ে তাদের আবেগ, আকাক্সক্ষার বাঁধ ভেঙে পড়েছিল? এক কথায় উত্তর- বৈষম্য, শোষণ।

শত বাধা পেরিয়ে আজকের বাংলাদেশ যেকোনো সময়ের চেয়ে পরিণত। এই পথচলা কখনোই মসৃণ ছিল না। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বিনা উসকানিতে প্রথমে বিভিন্ন ব্যারাকে সশস্ত্র বাহিনী, ইপিআর, পুলিশ বাহিনীর ঘুমন্ত বাঙালি সৈনিক তারপর সারা দেশের নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও গণহত্যার মাধ্যমে যে যুদ্ধের সূচনা, তা মোকাবেলায় আক্রান্ত বাঙালি তাৎক্ষণিক প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু করে। মধ্য এপ্রিল ১৯৭১ সালের মধ্যে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের একটি আদল ও কাঠামো গঠিত হয়।

১৯৭১ সালের ২৫ থেকে জেনারেল নিয়াজির এক লাখ পাকিস্তানি সেনাসদস্য কিছু বাঙালি অনুসারী নিয়ে যে তাণ্ডব এ দেশে চালায়, তাতে এ দেশের প্রত্যেকে জীবন-মৃত্যুর শঙ্কা নিয়ে প্রতিটি দিন, ক্ষণ ও মুহূর্ত ‘মুক্তি’র অপেক্ষায় প্রহর গুনত। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সেই দিনটি এলো। তখন সারা দেশের আবালবৃদ্ধবনিতা আনন্দে-উল্লাসে ফেটে পড়ে। তবে এ নতুন দেশের যাত্রা ছিল নানাভাবে কণ্টকাকীর্ণ ও বিপদসঙ্কুল। একদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ। ভৌত-অবকাঠামো, রাস্তাঘাট-ব্রিজ-যানবাহন, বিদ্যুৎ, টেলিফোন, প্রায় সব কিছুই বিনষ্ট, বিধ্বস্ত। প্রশাসন অসংগঠিত ও অনুপস্থিত। বৈদেশিক মুদ্রার শূন্য ভাণ্ডার ও ভারসাম্যহীন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। নিঃস্ব, সহায়-সম্বলহীন কোটি শরণার্থীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন চ্যালেঞ্জ। বিশ্বমন্দা ও নানা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। বন্যা, খাদ্যাভাব, সামাজিক অস্থিরতা ও আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি। স্বাধীনতাযুদ্ধে একসঙ্গে যারা যুদ্ধ করলেন, তাদের মধ্যে ঘোরতর বিভক্তি। চরমতম রাজনৈতিক অস্থিরতা, রক্তারক্তি, গুম ও খুন। কলকারখানায় লুটপাট ও আগুন। মুনাফাখোর, মজুদদার ও চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্য। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অবিশ্বাস্য অগ্নিমূল্য। স্বাধীনতার প্রথম ২-৩টি বছর ছিল একটি দুর্বিষহ দুঃসময়। যার সঠিক ও বাস্তব মূল্যায়ন কখনো নির্মোহভাবে হয়নি।

সাতচল্লিশে পাকিস্তান অর্জিত হলে প্রথমে পূর্ব বাংলার মানুষ চেয়েছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রকাঠামোর ভেতরেই তাদের সার্বিক সমস্যার সমাধান। ১৯৪৮ সাল থেকে একাত্তরের মার্চ পর্যন্ত সেই কাঠামোর ভেতরে যাবতীয় জুলুম-নির্যাতন-শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির প্রয়াস চলেছে। কিন্তু এ সময়ের অভিজ্ঞতায় যখন দেখা গেল, তা সম্ভব নয়; তখনই স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার বিষয়টি উত্থাপিত হয়। তদুপরি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যখন জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবির জবাবে এবং আলোচনাকালে বিশ^াসঘাতকতা করে একটি অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়, তখনই ঘোষিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা ছিল অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক শোষণ-নির্যাতন থেকে মুক্তি, ক্ষুধা-দারিদ্র্যের অবসান, মানুষের মর্যাদা ও সাম্য প্রতিষ্ঠা, সামাজিক ন্যায়বিচার কায়েম এবং জনগণের সমর্থিত সরকার তথা গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা। এ জন্যই জনযুদ্ধ সংঘটিত হয়। বস্তত ১৯০৫ সালে বঙ্গ ভঙ্গের মাধ্যমে গঠিত ঢাকাকেন্দ্রিক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ব বাংলার চূড়ান্ত পরিণতিই আজকের বাংলাদেশ। ধারাবাহিক সংগ্রাম ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেই একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় ধরা দেয়।

পাকিস্তান আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা যেহেতু দেশের পশ্চিমাংশে ঘাঁটি গাড়েন, শাসন ক্ষমতাও সেখানেই কুক্ষিগত হয়ে পড়ে, যদিও পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশ। সেই সাথে শুরু হয় রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, শিক্ষা, প্রশাসন, প্রতিরক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে দেশের অন্য একটি অংশের নাগরিকদের প্রতি পদে পদে বৈষম্য। পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা পশ্চিমের চেয়ে বেশি হলেও সরকারি উন্নয়ন বরাদ্দে বৈষম্য কতটা পাহাড় সমান ছিল তা বোঝা যায়, পাকিস্তানের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৫০-৫৫), কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়ন বরাদ্দের মাত্র ২০ শতাংশ পূর্ব পাকিস্তানকে দেয়ার মধ্য দিয়েই। তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৬৫-৭০) সেই বরাদ্দ বাড়লেও তা হয়েছিল ৩৬ শতাংশ। যেখানে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের দুই অংশে মাথাপিছু আয় ছিল সমান, ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানিদের আয় আগের প্রায় দ্বিগুণ হয়। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে, সেনাবাহিনীর উঁচু পদে বাঙালিদের নিয়োগ পাওয়া খুব কঠিন ছিল। সেই সাথে, বিনিয়োগে অবহেলার কারণে পূর্ব পাকিস্তানে হয়ে উঠেছিল পশ্চিমের কল-কারখানার কাঁচামালের জোগানদাতা এবং তাদের উৎপাদিত পণ্যের প্রধান ক্রেতা। সাতচল্লিশে পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা মাথাপিছু আয়ের বিবেচনায় তেমন কোনো তারতম্য না থাকলেও, অব্যাহত বৈষম্যের পরিণতিতে পরের ২৫ বছরে পূর্ব পাকিস্তানের মাথাপিছু আয়ের চেয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের আয় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান মনে করেন, শাসক শ্রেণী অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং পাকিস্তানেও সেটাই হয়েছে। ২৫ বছর প্রভুসুলভ মনোভাবের প্রতিফলন দেখা গেছে প্রতি মুহূর্তে। ফলে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সাথে বাঙালির দূরত্ব ক্রমাগত বেড়েছে। তাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী মনোভাব চাঙ্গা হয়েছে।

পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে রিজওয়ান উল্লাহ কোকাব একটি গবেষণাপত্রের উপসংহারে লিখেছেন, ‘সরকারি চাকরিতে বাঙালিদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ এবং কম প্রতিনিধিত্ব- এ দুটো বিষয় বাঙালিদের মধ্যে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্নতায় ইন্ধন দিয়েছে’। ব্রিটিশ সমাজবিজ্ঞানী জেনিফার কোটস পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের সংস্কৃতি রক্ষার লড়াই নিয়ে গবেষণাধর্মী একটি বই প্রকাশ করেছিলেন। ওই বইতে তিনি লেখেন, ‘বছরের পর বছর অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং সামাজিক-সংস্কৃতি নির্যাতন বাঙালিদের পাকিস্তান রাষ্ট্র থেকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন করেছে। তাদের মধ্যে দিনে দিনে বাঙালি জাতীয়তাবাদ শক্ত হয়েছে’। এসব বিষয় বিবেচনায় অবশ্যই বলতে হবে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একটা পটভূমি আছে, একটি ধ্রুপদি ইতিহাস আছে। কিন্তু এ ইতিহাস অনেকে দলীয় কাচের নিচে ফেলে দেখে থাকেন। বাস্তবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটা সম্পাদিত রূপ অনেকের কাছেই পছন্দনীয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শেষে আমরা যখন ভেবেছি একটা উপনিবেশ থেকে মুক্ত হয়েছি, অথচ অনেকের মনেই সেই উপনিবেশ শেকড় গেড়ে বসেছে। ইতিহাস-সম্পাদনার কাজটা তাদের হাত ধরেই শুরু। জাতি হিসেবে আমাদের আত্মবিশ্বাসে যদি ঘাটতি থাকে, মনটা অন্য কেউ দখলে নেয়, তাহলে ভবিষ্যতের পথচলা কঠিন।

পেছনের যে বিষয় আমাদের বিস্ময় জাগায়, তা হলো এত বিভক্তি, দলাদলি, হানাহানি, তিক্ততা আর বৈরিতার পরও দেশ এগিয়েছে। এটি খোলামনে স্বীকার করা দরকার। না হলে যারা এ উন্নয়নের প্রধান রূপকার, সেই গণমানুষ, তাদের প্রতি সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হবো আমরা। তারা রাজনীতির স্লোগান না দিয়ে, হানাহানির পঙ্কিলতায় পা না ফেলে কাজ করছেন। পরিশ্রম করছেন, কিন্তু প্রায়ই তাদের ন্যায্য মজুরি পান না, সেটি যায় নানা জনের পকেটে। কার্যসম্পাদনের প্রায় সব ক্ষেত্রে দুষ্টচক্র লুটেরাদের উদ্ভব হয়েছে। এ ব্যবস্থা বহাল তবিয়তে থাকলে বৈষম্য বাড়বে। বৈষম্য বাড়লে উন্নয়নের বিস্তার একদিন একটা পাথুরে দেয়ালে গিয়ে ঠেকবে। বৈষম্য সৃষ্টির আরো অনেক পথ বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে, পুঁজির শাসন, দুর্নীতি, স্বার্থান্বেষী এবং লুণ্ঠনকারীদের অবাধ শক্তি অর্জন, দুর্বল আইনের শাসন, রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা থেকে, মৌলিক অধিকার থেকে, অধিকাংশ মানুষের বঞ্চিত থাকা এগুলোর কয়েকটি মাত্র। এসবের নিষ্পত্তি না হলে নিরবচ্ছিন্ন উন্নয়নে যে ভারসাম্য প্রয়োজন, তা গড়ে উঠবে না।

বাংলাদেশের ৫০ বছরের পথচলা আশা-জাগানিয়া। অর্জনগুলোও চমৎকার। কিন্তু উন্নয়ন নামের প্রদীপের নিচে যে অন্ধকার, যার একটি নাম বৈষম্য, সে দিকে নজর দেয়া আবশ্যক। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রাক্কালে বাংলাদেশ এখন স্বাধীনতার ঘোষণা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার বিপরীতে হাঁটছে শাসকশ্রেণী। পাঁচ দশকে তাদের ব্যর্থতা ও দেউলিয়াত্বে জনগণের মুক্তির আকাক্সক্ষা অনেকটাই প্রতারিত। পাকিস্তানি জমানার মতো এক দেশে দুই সমাজ, দুই অর্থনীতি কায়েম হয়েছে। জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ সীমিত হয়েছে। উন্নয়নের কথা বলে গণতন্ত্র ও সুশাসন দুর্বল করা হয়েছে।

সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে পেছনে তাকাতে হবে কারণ, এই ৫০ বছরের ইতিহাসকে পেছনে রেখেই আমরা এ অবস্থানে এসেছি, তেমনি দৃষ্টিটা সামনেও মেলে ধরতে হবে, কারণ সুবর্ণজয়ন্তী একটা গন্তব্য মাত্র, শেষ যাত্রা নয়। যাত্রাটা ভবিষ্যতের দীর্ঘ পথের। সেই পথে চলার পাথেয় আমাদের কিছুটা হয়েছে বটে, তা দিয়ে লম্বা পথ পাড়ি দেয়া কঠিন। কীভাবে পাথেয় আরো বাড়ানো যায়, যাত্রাটা সহজ ও সচ্ছন্দ করা যায় তার একটি খতিয়ান এখনই করা দরকার।
অর্ধ শতাব্দীতে অর্থনীতি থেকে শিক্ষা, যোগাযোগ থেকে কৃষি, প্রায় সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে।
বর্তমানে যে দলাদলির রাজনীতি, চর দখল আর ক্ষমতার শাসন চলছে সেটা প্রাচীন পথ। দেশ পরিচালনায় সত্যিকার অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি আর সুনীতি হচ্ছে বিকল্প। যেসব ব্যক্তি ও দলের মনজুড়ে আছে পুরোনো উপনিবেশ, উগ্রতা, সাম্প্রদায়িকতা, তারা আমাদের ইতিহাসে, সংস্কৃতিতে, গণতন্ত্রে, স্বচ্ছতায়, সততায় আস্থা স্থাপন করলে অপশাসন যেমন অতীত হবে, নতুন চর্চার পথগুলো সুগম হবে। কারণ নতুন চর্চার সংস্করণগুলোতে তরুণেরা বিনিয়োগ করছে।

প্রাচীন ধারার বিকল্পের মধ্যে আছে অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র, সেবাধর্মিতা, সম-অধিকারের চর্চা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, নেতার পরিবর্তে সহযাত্রী, প্রশাসকের পরিবর্তে কার্য সমন্বয়কের ভূমিকা গ্রহণ। ইন্টারনেট তরুণদের এখন সারা বিশ্বের সাথে সংযুক্ত করেছে। তারা নতুন চর্চাগুলো সম্পর্কে বিশদ জানে। তাদের ভাবনা আমলে না নিলে বিপর্যয় অবধারিত, কারণ আগামীর পথ তারাই তৈরি করবে। যদি তাদের আকাক্সক্ষার বাস্তবায়ন হয়, তারা একাত্তরের ভাবনাকে বিবেচনায় নিয়ে গণতন্ত্রকে মানের বিচারে উন্নত করে দেশকে এগিয়ে নেবে। তখন নির্বাচন অবাধ হবে, দলগুলো মানুষের কাছে দায়বদ্ধ হবে, জাতীয় সংসদে তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতারা গণমানুষের পক্ষে আইন তৈরি করবেন। কিন্তু মান্ধাতা আমলের পথ আঁকড়ে বসে থাকলে, নতুনের দিকের জানালাগুলো সব বন্ধ রেখে দিলে অসহিষ্ণু রাজনীতির খোলস থেকে বেরোতে না পারলে, উপনিবেশী ও নানা উগ্র চিন্তায় মাথা বোঝাই করে রাখলে এগুলো অনর্জনীয় বিকল্পই থেকে যাবে। মনে রাখা আবশ্যক, আগামীর পথে বিশ্বের গতি মেনে চলতে সনাতন পন্থা কিছু দিনের মধ্যেই অকেজো হয়ে পড়বে। এ জন্য প্রাচীন পন্থার বিকল্প সন্ধানে তরুণদের দ্বারস্থ হতে হবে। যেহেতু বিকল্পটাও তারা জানে। উন্নয়ন সুষম করে একে আরো বেগবান করে মানের সমৃদ্ধি ঘটিয়ে এগিয়ে যেতে চাইলে বিকল্পের সমাবেশ ঘটাতে হবে। একবার কৃতসঙ্কল্প হয়ে পথে নামলে বিকল্পের জোগান দ্রুতই পাওয়া সম্ভব। এখন যারা প্রাচীনপন্থী, সীমাবদ্ধতাটা স্বীকার করে তরুণদের কথা বরং শুনতে হবে, দেখি নতুন গল্পগুলো তারা কত দ্রুত, কত সুন্দর আর ঝকঝকে বিন্যাসে লিখতে থাকে।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন একাত্তরের ১৭ এপ্রিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মূলনীতি ঘোষণা করা হলেও আজো ঘোষিত সেই বিষয়গুলোর পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। মনে রাখা দরকার, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের মতো সার্বজনীন মূল্যবোধের ওপর একটি জাতি ও রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে হলে এসব বিষয় যেকোনো ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব ও বিরোধের ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। নতুন করে বিশ্বাস ও আস্থাযোগ্য মনোভাব, ভাষা ও পদ্ধতিতে নেহায়েত সমন্বয়ধর্মী তাত্ত্বিক প্রস্তাব হিসেবে এসব বিষয়কে তুলে ধরতে হবে। একটি ভৌগোলিক সীমারেখার ভেতরকার জনগোষ্ঠীকে একক রাজনৈতিকতার মধ্যে আনতে ক্ষুদ্রতম ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, নৃ-তাত্ত্বিক ও ভাষাগত গোষ্ঠীকেও সন্তোষজনকভাবে অন্তর্ভুক্ত করে এমন বিষয়কে পরিচয় হিসেবে নির্ধারণ করতে হবে। ইতিহাসের চলমান ঘটনার মধ্য থেকে কোনো বিশেষ ঘটনা ও বিষয়কে বিচ্ছিন্নভাবে তুলে এনে যুক্তির ধূম্রজাল সৃষ্টি করে জাতীয় রাজনৈতিক পরিচয় নির্ণয়ের প্রস্তাব ও প্রচেষ্টা সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। জাতীয় পরিচয় নির্ধারণ করে দেয়া যায় না। জাতীয় পরিচয় তথা জাতীয়তা নির্ধারণের মানে হলো, এমন ঐকমত্যের বিষয়গুলো যথাসম্ভব নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠভাবে আগে ভাষায় রূপদান করা। পরে রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে প্রতিস্থাপন করা। কৃত্রিম বিনয় ও কপট আন্তরিকতা দিয়ে জাতি গঠন হয় না। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসব বিষয় সবাইকে গভীরভাবে ভাবতে হবে। তবেই আগামীর পথচলা সহজ হবে।

প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

একাত্তরে স্বাধীন বাংলাদেশের মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বার্ষিক বাজেট আজ পরিণত হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকায়। ১২৯ ডলার মাথাপিছু আয়ের দেশটির বর্তমান মাথাপিছু আয় ২০৬৪ ডলার। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও এগিয়েছে। তাই বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তির প্রাককালে দেশের সার্বিক অগ্রগতি ও কাক্সিক্ষত উন্নয়নের তুলনা করার সময় এসেছে। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে, বৈদেশিক বাণিজ্য বেড়েছে, সম্পদ উৎপাদন ও আহরণ বেড়েছে। তবে বাস্তবিক অর্থে একটি দেশের প্রকৃত সমৃদ্ধি বা অগ্রগতি নির্ভর করে বেশ কিছু নিয়ামকের ওপর, যা সাধারণত পরিসংখ্যানের নজর কাড়তে পারে না। জনগণের জীবনযাত্রার বাস্তব রূপ, খাদ্য নিরাপত্তা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, মতপ্রকাশের অধিকার, গুণগত মানসম্মত বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা, কর্মসংস্থান প্রভৃতি প্রকৃত উন্নয়নের চিত্র প্রদর্শন করে।

স্বাধীনতার অর্ধশত বছরে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান যে উন্নত হয়েছে; তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে জীবনযাত্রার প্রত্যাশিত মান অর্জন করা গেছে কি না। সবার জীবনমানের উন্নতি হয়েছে কি না তাÑই দেখার বিষয়। দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা আজো সম্ভব হয়নি। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ, আইন প্রণয়ন হলেও বাস্তবায়ন হতাশাজনক।

একটি দেশের উন্নয়নের অন্যতম মাপকাঠি দেশটির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। দেশে এখন যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে, বাস্তবতা তেমন নয়। বিদেশী গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর পর্যবেক্ষণ বলছে, শাসকদল ক্রমাগত কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠছে। বিদেশী বিনিয়োগ ও বাণিজ্য, অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন, রাষ্ট্রের স্বাভাবিক কার্যক্রমসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এর ওপর নির্ভরশীল।

প্রকৃত উন্নয়নের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি শিক্ষা। এটি পরিমাপের দুটি দিক রয়েছে। একটি পরিমাণগত, অন্যটি গুণগত। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত আমরা শিক্ষার পরিমাণগত দিকটিকেই সাফল্যের মানদণ্ড বিবেচনা করেছি। স্বাধীনতার সময় দেশে সাক্ষরতার হার ছিল ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ, বর্তমানে যা ৭৪ দশমিক ৭ শতাংশ। এতেই আমরা পরিতৃপ্ত। শিক্ষাব্যবস্থায় পরিমাণকে মানদণ্ড বিবেচনা করা নিরেট বোকামি। জাতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। দেশের উচ্চশিক্ষাব্যবস্থার অবস্থা আরো নাজুক। মান্ধাতা আমলের সিলেবাসে চলছে পাঠদান। গবেষণা নেই। নেই সৃষ্টিশীলতা। আবার বাস্তব জীবনের চাহিদার সঙ্গে উচ্চশিক্ষা কারিকুরামের কোনো সম্পর্ক নেই।

কর্মসংস্থান একটি দেশের উন্নয়নের অন্যতম ধারক ও বাহক। বাংলাদেশে বেকারত্বের হার নিয়ে প্রায়ই ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়। সরকারি তথ্যমতেই, দেশে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা ৩০ লাখ। এর মধ্যে আবার ৪০ শতাংশ বেকার উচ্চশিক্ষিত। ক্রমেই বাড়ছে এ সংখ্যা। সার্বিকভাবে দেশের উন্নতি হয়েছে। তবে সমতাভিত্তিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। শহরকেন্দ্রিক উন্নয়নে ঝুঁঁকে পড়ায় গ্রাম ও শহরের মধ্যে বিস্তর ফারাক।

আমাদের বর্তমান অপূর্ণতার কিছু বিষয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা সময়ে দাবি। সুশাসন না থাকা সত্ত্বেও যে উচ্চ প্রবৃদ্ধি, তা প্রশংসনীয়। কিন্তু উচ্চ প্রবৃদ্ধি সুশাসনের বিকল্প নয়। প্রবৃদ্ধি ও সুশাসন পাশাপাশি হাত ধরাধরি করে চলতে হবে। টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে এ দুটোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া জরুরি। ৫০ বছরের পরিবর্তনকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সূচকের সাথে সাথে অন্যান্য দর্পণে দেখারও সুযোগ আছে।

বৈশ্বিক জ্ঞান এবং দুর্নীতি সূচকে আমাদের অবস্থান খুবই বাজে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আমাদের জাতীয় প্রবৃদ্ধির উচ্চ হার বজায় থাকলেও শিল্পায়ন, ব্যবসাবাণিজ্য, সুশাসন, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের সূচকগুলোতে অবস্থান সম্মানজনক নয়। তাই বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সুশাসন ও গণতন্ত্রের নতুন অভিযাত্রা শুরু হোক, এটি সবার আন্তরিক প্রত্যাশা এবং আকুতি। সবশেষে বলতে হয়, দেশে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে দুর্নীতি দমন এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হলে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো সময়ের ব্যাপার মাত্র।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us