চুল কি লালচে দেখাচ্ছে?

অন্য এক দিগন্ত | Dec 22, 2021 03:46 pm
চুল কি লালচে দেখাচ্ছে?

চুল কি লালচে দেখাচ্ছে? - ছবি : সংগ্রহ

 

এক ঢালা লম্বা কালো চুলের প্রত্যাশী সকলেই। তবে আবহাওয়া, ধুলোবালি, দূষণ ইত্যাদি কারণে চুল ঝরা, চুলের অকাল পক্কতা, চুলের পাতলা হয়ে যাওয়া প্রভৃতি সমস্যা তো লেগেই আছে। তবে এই সমস্যার তালিকাটি বেশ দীর্ঘ। অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে কালো চুল হঠাৎ করেই লাল হয়ে পড়ছে। কী কারণে এমনটি হচ্ছে না বুঝেই অনেকে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে সমস্যাকে আরও দ্বিগুণ করে তোলেন। তাই সমাধান খোঁজার আগে সমস্যাকে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

রোদের কারণে হতে পারে

খুব বেশিক্ষণ রোদে থাকলে চুল লাল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই রোদে বার হওয়ার আগে হয় সান প্রোটেক্টেড ক্রিম মাখুন কিংবা চুল টুপি বা স্কার্ফ দিয়ে ঢেকে নেয়ার চেষ্টা করুন।

গোসলের পানিরেত অতিরিক্ত পরিমাণে আয়রন থাকলে চুল লাল হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া পানিতে যদি ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম থেকে থাকে তা হলেও চুল লাল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই গোসল করার আগে পানি ফুটিয়ে নিয়ে গোসল করলে ভালো।

জিনগত সমস্যার কারণে

চুলে মেলানিন বলে এক ধরণের উপাদান থাকে। চুলে এই মেলানিনের পরিমাণ কমে যেতে থাকে সেক্ষেত্রেও চুল লাল হয়ে যেতে পারে।

চুলের লালচে ভাব কমাতে কী করণীয়

১) সপ্তাহে একবার অন্তত চুলে মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।

২) সূর্যরশ্মি থেকে রক্ষা করে এমন ক্রিম ব্যবহার করুন চুলে।

৩) বাজারচলতি রাসায়নিক প্রসাধনী ব্যবহার করার পরিবর্তে বাড়িতেই ঘরোয়া উপায়ে তৈরি হেনা ব্যবহার করতে পারেন।

৪) শীতকালে শ্যাম্পু করতে হলেও ঠান্ডা পানিতেই করুন। গরম পানিতে মাথা ধোয়া এড়িয়ে চলুন।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

দ্রুত চুল ঝরছে : হাইপোথাইরয়েডিজম নয়তো?

ব্যস্ত জীবনে কাজের চাপ তো থাকবেই, আর তার জের ধরে পাল্লা দিয়ে বাড়বে নানাবিধ মানসিক অশান্তি এবং মানসিক চাপও। এ বার এই সব কারণে দেখা দিতে পারে হাইপোথাইরয়েডিজমের মতো সমস্যা। আজকাল অনেক মানুষকেই এই রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। আসলে এ ক্ষেত্রে থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা কমে আসতে থাকে, যার ফলে ওজন বৃদ্ধি-সহ নানা ধরনের জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি এর থেকে বন্ধ্যাত্বের মতো সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে। হয় ওজন বৃদ্ধি থেকে চুল দ্রুত ঝরে যাওয়ার মতো চেনা সমস্যাও৷ তাই আমরা বিস্তারিতভাবে জেনে নেব, হাইপোথাইরয়েডিজমের মতো রোগ আসলে কী, কেনই বা এটা হয় আর এই রোগ হলে কিভাবে তা সনাক্ত করা সম্ভব।

হাইপো থাইরয়েডিজমের কারণ এবং কিছু বিষয় :

হাইপোথাইরয়েডিজমকে বলা হয় নিষ্ক্রিয় থাইরয়েড ডিজঅর্ডার। সাধারণত ওজন বেড়ে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ক্লান্তি-অবসাদ- এই বিষয়গুলোর সাথে যোগ রয়েছে হাইপোথাইরয়েডিজমের। আসলে এগুলোকেই প্রধান উপসর্গ হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। কিন্তু এ সব ছাড়াও এই রোগের আরো নানান রকম উপসর্গ রয়েছে, তবে সেগুলোর বিষয়ে বেশির ভাগ মানুষই সেভাবে ওয়াকিবহাল নন। আবার এক-এক জনের ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় থাইরয়েড রোগের উপসর্গও এক-এক রকম হয়ে থাকে। এই রোগের এমন কিছু উপসর্গ রয়েছে, যা অনেকেই সেভাবে জানেন না। আবার ওজন বৃদ্ধি থেকে চুল দ্রুত ঝরে যাওয়ার মতো চেনা সমস্যাও৷ হয়৷ তাই সকলের জানা উচিত, কোন কোন উপসর্গ দেখে দ্রুত রোগ নির্ণয় করতে হবে, যাতে সঠিক চিকিৎসা পাওয়া যায়। তবে প্রথমেই জেনে নেব যে, নিষ্ক্রিয় থাইরয়েড আসলে কী।

হাইপোথাইরয়েডিজম বা নিষ্ক্রিয় থাইরয়েড কী?

থাইরয়েড হলো প্রজাপতির মতো দেখতে এক ধরনের গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থি। গলার কাছে এটা থাকে। এর প্রধান কাজ হলো, বিভিন্ন ধরনের হরমোন নিঃসরণ করা। আর শরীরের রক্তচাপ, রক্তের উষ্ণতা এবং হার্ট রেট ঠিকঠাক রেখে মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণে করে। যখন থাইরয়েড খুব একটা সক্রিয় থাকে না, তখন তা পর্যাপ্ত পরিমাণে হরমোন তৈরি করতে পারে না। ফলে এর প্রভাব পড়তে থাকে সারা শরীরে এবং এ ক্ষেত্রে রোগীর মধ্যে কার্ডিওভাসকুলার রোগ, অস্টিওপোরোসিস, বন্ধ্যাত্ব এবং অন্যান্য নানান সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। নিচে কিছু উপসর্গ দেওয়া হল, যা দেখে সহজেই বুঝে নেয়া যাবে, কেউ হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত কি না।

মাথা যন্ত্রণা :

গবেষণায় দেখা গেছে যে ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে হাইপোথাইরয়েডিজমের রোগীদের মধ্যে মাথা ব্যথার মতো উপসর্গ চোখে পড়ে। যদিও হাইপোথাইরয়েড থেকে মাথা যন্ত্রণা হবে, সেই বিষয়ে কোনও প্রমাণ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কিন্তু মাথা যন্ত্রণাকে এই রোগের উপসর্গ হিসেবে ধরার পিছনে কিছু কারণ তো অবশ্যই রয়েছে। নিষ্ক্রিয় থাইরয়েড গ্রন্থির কারণে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনের প্রক্রিয়া ধীর গতিতে হতে থাকে। যার ফলে মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায়। অবসাদ বা ক্লান্তি ভাব তো এমনিতেই হাইপোথাইরয়েডিজমের অন্যতম বড় লক্ষণ। যা আবার মাইগ্রেনের মাথা ব্যথার জন্যও দায়ী।

স্মৃতিলোপ :

থাইরয়েড সনাক্ত করা না-গেলে অথবা থাইরয়েড রোগ নিয়ন্ত্রণে না-থাকলে অনেক সময় অনেক রোগীর ক্ষেত্রে জ্ঞানেন্দ্রিয়ের উপর প্রভাব ফেলে। তার ফলে যে সব রোগী মারাত্মক ভাবে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তিনি কোনো কিছুতে মনঃসংযোগ করতে পারবেন না এবং কোনো কিছু সঠিক ভাবে মনেও রাখতে পারবেন না। তবে মৃদু হাইপোথাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে ব্রেন ফগ খুবই সাধারণ ঘটনা। ব্রেন ফগ হল মানসিক বিভ্রান্তি, বারবার ভুলে যাওয়া, মনঃসংযোগে সমস্যা প্রভৃতি বিষয়। এটা সাধারণত হয় কাজের চাপ, মানসিক চাপের কারণে। মৃদু হাইপোথাইরয়েডে রোগীদের ক্ষেত্রে জ্ঞানেন্দ্রিয়ের উপর অতটাও প্রভাব পড়ে না।

মুড স্যুইংস :

শরীরে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা কমতে শুরু করলে রোগীর মুড বা মেজাজের ওপর তার প্রভাব পড়তে শুরু করে। ডিপ্রেশন, মন খারাপ, উত্তেজনার মতো বিষয়গুলো তখন বেশি পরিমাণে প্রকট হতে শুরু করে। তবে এই সব উপসর্গগুলো দেখে রোগী চট করে ধরতে পারেন না যে, সমস্যাটা কোথায়। আসলে অবসন্ন লাগা বা ক্লান্তি ভাবের সাথে মুড স্যুইংয়ের যোগসূত্র রয়েছে। লো এনার্জি থেকে দেখা দিতে পারে ডিপ্রেশন, উত্তেজনা এবং মুড স্যুইংসের মতো সমস্যাও। তবে অনেক ক্ষেত্রে এই উপসর্গগুলো দেখে অনেকেই ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন ভেবে বসেন।

শুষ্ক ত্বক বা ড্রাই স্কিন :

হাইপোথাইরয়েডিজমের মতো রোগ থাকলে আমাদের ত্বকের উপরেও তার প্রভাব পড়ে। আসলে অনেকেই বোধহয় জানেন না যে, সুন্দর এবং স্বাস্থ্যোজ্বল ত্বক হলে বুঝতে হবে যে, থাইরয়েড গ্রন্থি দারুণ কাজ করছে। কিন্তু এই গ্রন্থির কর্মক্ষমতা কমতে থাকলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং প্রাণহীন হয়ে পড়ে। শুধু তা-ই নয়, হাইপোথাইরয়েড থাকলে ত্বক শক্ত হয়ে যায়, ফলে চুলকানি, আঁশ ওঠার মতো লক্ষণ চোখে পড়ে। আর এই রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করলে মাথার স্কাল্প এবং পায়ের পাতাও শুষ্ক হয়ে যেতে থাকে।

চুল ঝরে যাওয়া :

মানসিক চাপ, দূষণ প্রভৃতির মতো নানান কারণে চুল ঝরে যাওয়া বা চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা যেতে পারে। তবে চুল ঝরে যাওয়ার অন্যতম কারণ হল হাইপোথাইরয়েডিজম। ফলে যারা এই রোগে আক্রান্ত হন, তাদের চুল ঝরে গিয়ে চুল পাতলা হতে শুরু করে। শুধু তা-ই নয়, ভ্রু-ও লোমও ঝরে পড়তে থাকে। কিন্তু এমনটা হওয়ার কারণ কী? আসলে আমাদের শরীরে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা কমতে শুরু করলে ফলিকল স্টিমুলেশন প্রক্রিয়াও ধীর গতিতে হতে শুরু করে। যদিও এই উপসর্গটা সবার ক্ষেত্রে যে দেখা যাবে, এমনটা নয়। প্রত্যেকের ক্ষেত্রে উপসর্গের ধরন ভিন্ন ভিন্ন হয়। সাধারণত হাইপোথাইরয়েডিজম হওয়ার ৩-৪ মাস পর থেকে প্রচুর পরিমাণে চুল ঝরে চুলের ঘনত্ব কমতে শুরু করে।

গলার কাছে ফোলা ফোলা ভাব :

থাইরয়েড গ্রন্থিতে প্রদাহ হলে অথবা ফুলে উঠতে শুরু করলে তার প্রভাব গলার ওপরেও পড়ে। গলার কাছে একটা ফোলা ফোলা ভাব তৈরি হয়, এবং একটা অস্বস্তিও থাকে। ফলে রোগীর খাবার গিলতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়! কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার এই থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা রয়েছে কি না, সেই বিষয়টা বাইরে থেকে একটা পরীক্ষা করলেও রোগী সহজেই বুঝে যেতে পারবেন। সেই সব ক্ষেত্রে হাইপোথাইরয়েডিজমের রোগীর মনে হয়, যেন গলায় প্রদাহ হচ্ছে। অথবা গলার কাছে যেন একটা মাংসপিণ্ড তৈরি হয়েছে।
সূত্র : নিউজ ১৮


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us