কোটি টাকার ফুটপাত বনাম ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ

হাসান আল-মাহমুদ | Apr 19, 2022 08:08 pm
কোটি টাকার ফুটপাত বনাম ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ

কোটি টাকার ফুটপাত বনাম ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ - নয়া দিগন্ত

 

রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা নিউমার্কেট। ঢাকা কলেজ ও স্থানীয় ব্যবাসায়ীদের মধ্যে প্রায়ই ছোটোখাটে সংঘর্ষ ঘটে। সোমবার দিবাগত রাত বারোটার পর তেমনি কথা কাটাকাটির জেরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার হয়। যেভাবে এ ঘটনার সূত্রপাত, তেমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে নিউমার্কেট এলাকায়। শিক্ষার্থীরা সেখানকার দোকানে কম দামে কেনাকাটা করবে, হোটেলে খেয়ে অর্ধেক বিল দিয়ে বের হয়ে আসবে, কিছু শিক্ষার্থী এমনটা তাদের অধিকার বলেই মনে করে। তবে বাধ সাধে কিছু সুবিধাভুগী ছাত্র নামধারীদের কারণে। অনেক সময় সেখানকার ব্যবসায়ীরা অনেকটা অসহায় হয়ে যায়। যেমনটা অসহায় তারা সাধারণ ক্রেতাদের করে।


নিউমার্কেট এলাকার কোনো দোকানের সামনে দিয়ে একজন ভদ্র মানুষ হেঁটে যেতে লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায়। চারদিক থেকে দোকানের কর্মচারীরা ডাকাডাকিতে আপনাকে অতিষ্ট করে তুলবে। সেখানে কোনো দোকানে একটা জিনিস দাম করলে পণ্যের দাম দশগুণ পর্যন্ত বেশি চাইবে। আপনি চাওয়া দামের অন্তত অর্ধেক না বললে লজ্জায় পড়ে যাবেন। একবার দাম বলবেন তো ফেসে যাবেন। আর দাম না বললে বা পছন্দ না হলে অনেকগুলো কটু কথা শুনিয়ে দেবে। প্রতিবাদ করলেই সেখানে অপমানিত হয়ে ফিরে আসতে হবে। এমনি শারীরিকভাবে হেনেস্তা করতেও তারা দ্বিধা করবেন না।

সেখানে একমাত্র ব্যতিক্রমন হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তথা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। বেশির ভাগ দোকানদারকেই দেখা যায় শিক্ষার্থীদের সমীহ করতে। এই যে তাদের একচাটিয়া আধিপত্য সেখানে মূল বাধা হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এই বাধা তারা যেকোনো মূল্যেই দূর করতেই চাইবে। শুধু নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী নয়, মটরশ্রমিক, পুলিশ, আমলা- সবার প্রতিপক্ষই কিন্তু এই শিক্ষার্থীরা। এমনকি সরকারও অধিকাংশ সময় শিক্ষার্থীদেরকে প্রধান প্রতিপক্ষ মনে করে। রাজনৈতিক দলগুলোর লেজুড়বৃত্তিক ছাত্রদের চেয়ে প্রতিবাদী সাধারণ ছাত্ররা এদেশে অনিয়মের একমাত্র প্রতিপক্ষ।

এখানকার ফুটপাতগুলো বিক্রি হয়ে গেছে ইঞ্চি দরে। এসব ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা ধরণের সঙ্ঘবদ্ধ চক্র। রাস্তার ধারে একজন জীর্ণ শীর্ণ লোককে ব্যবসা করতে দেখে আপনার মায়া হতে বাধ্য। আপনি ভাববেন গরিব মানুষ সেখানে ব্যবসা করছে। এতে অন্তত একজনের কর্মসংস্থান হয়েছে। কিছু উপার্জন করে খেতে পারছে। কিন্তু এর আড়ালে চলে অন্য কিছু। এখানে ফুটপাতে গলা ছেড়ে হাঁকডাক করা আর প্রচণ্ড রোদে রক্ত পানি করা ব্যক্তি এখানে গৌণ। এখানে ব্যবসা করে অন্য কেউ।

কিছুদিন আগে রাস্তার সরবত আর আখের রস নিয়ে প্রতিবেদন করতে গিয়ে দেখা যায়, ফুটপাতের প্রতিটি দোকানের নেপথ্যে একাধিক ব্যক্তি। দোকানদার ছোটো ছেলেটার সঙ্গে কথা বলতে গেলে সে সতর্ক হয়। কথা বলতে ইতস্তত করে। হঠাৎ পিছন থেকে অন্য একজন এসে দাঁড়াল। ব্যবসা মূলত তার। ওই ছেলে তার কর্মচারী। এরা সবাই সঙ্ঘবদ্ধ চক্র। এদের সঙ্গে যোগাযোগ রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ প্রশাসন সবার সঙ্গে। প্রতিদিন নিউমার্কেট এলাকায় কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয়। এই টাকা কিভাবে ভাগাভাগি হয় কারা ভাগ পায় তা শিক্ষার্থীরা ভালো করেই জানে।

কাজেই নৈতিকতার বিচারে ছাত্রদের খেয়ে বিল না দেয়ার বা কাপড়ের দোকানে গিয়ে ফাপড় দিয়ে চলে আসা সেখানে অন্যকিছু। সাধারণ কোনো বিষয় না। আর এটা সব ছাত্র করে না। করে বড় ভাই আশ্রিত কিছু ছাত্র নামধারী। তবে প্রতিবাদ সেখানকার স্বকীয়তা। যদি এই ছাত্ররা হেরে যায় তবে হেরে যাবে বাংলাদেশ। দেশের যেকোনো আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা কখনই অস্বীকার করার নয়। এমনকি বাংলাদেশের জন্মের ভিত তৈরি হয়েছিল ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে। সেখানে পুলিশ যদি ভাগের টাকা নিয়ে ব্যাবসায়ীদের পক্ষ নেয় তবে সেটি সফল হবে না। গত ১০০ বছরের ইতিহাসে ছাত্ররা হারেনি। আজকের ঢাকা কলেজের ছাত্ররাও হারবে না। হারতে দেয়া যাবে না।

লেখক : গণমাধ্যম কর্মী


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us