শুধু অনুভবে হৃদয় চেনে গো হৃদয়ের বন্ধুরে!

রহমান মৃধা | Jul 14, 2022 05:26 pm
শুধু অনুভবে হৃদয় চেনে গো হৃদয়ের বন্ধুরে!

শুধু অনুভবে হৃদয় চেনে গো হৃদয়ের বন্ধুরে! - ছবি : সংগ্রহ

 

অনেক দিন বসে থেকেছি পথ চেয়ে একখানা চিঠির অপেক্ষায়। শেষে একখানা চিঠি এসেছিল, চিঠিতে বিরহের কথা লেখা ছিল। তো চিঠি পড়া শেষে বসে বসে ভাবছি, 'তুমি না করেছ মোরে, বহু বছর পরে। আমি দুঃখ পাইনি বরং খুশি হয়েছি। কারণ আমি তোমার থেকে যে না উত্তরটা পেয়েছি এতেই আমি ধন্য।' হঠাৎ কে যেন ঘরের দরজা নক করেছে। আমি দরজা খুলতেই দেখি বিনয়। আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকাতেই সে বলল, কী ব্যাপার তুমি খুশি হওনি আমাকে দেখে? আমার মুখ তখনো বন্ধ হয়ে আছে। ভাবনায় ঢুকেছে আমি কী তাহলে সত্যিই জিতেছি পরাজয়ের কাছে!

বিনয় আমার অতীতের ভালোবাসা। খুব ইচ্ছে ছিল দুজনে ভালোবেসে গড়ব সুখের ঘর, কিন্তু তা আর হলো না। পুলিশের চাকরি পেয়ে বিনয় শহরকেন্দ্রিক হলো। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিনয় অনেক বড় অফিসার হলো, অনেক কিছু পেল, শুধু হারালো আমাকে। বিনয়ের ধারণা ছিল, তখন সবাই নাকি টাকার পাহাড়ে উঠতে চায়। সে ভেবেছিল আমাকে সে বিয়ে করে টাকার পাহাড়ে উড়াবে, কিন্তু আমি তো কখনো অসৎপথে রোজকার করা টাকার পাহাড়ে উঠতে চাইনি!

যেদিন সে বিয়ের কথা বলেছিল, সেদিন তার আয় ছিল বেতনের চেয়ে দশগুণ। আমি বিনয়কে বলেছিলাম, ওই টাকার পাহাড় তোমার না, ওটা দেশের জনগণের টাকা। বিনয় আমার কথা রাখেনি সেদিন। আমি বলেছিলাম, যদি টাকার পাহাড়টা ভেঙ্গে চুরমার করতে পার তবে তুমি আমার বুকে এসো। সেদিন সে না করে দিয়েছিল আমাকে। তাই আমাদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই বহুদিন ধরে।

হঠাৎ গণমাধ্যমে পড়েছে সাড়া, বিনয় হয়েছে দেশের সেরা পুলিশ সুপার। ফেলে এসেছে সেই পাহাড় ভরা টাকা। আজ তার সেই পূর্ণ পাহাড় হয়েছে শূন্য শুধু আমাকে পাবার জন্য। বিনয় ঘরে ঢুকে বললো, 'আমি শপথের বাণীতে কথা দিয়েছি দুর্নীতি করব না।'

তাহলে আমি কি এই 'দুর্নীতি করব না' কথাটির শোনার জন্য অপেক্ষা করে বসে ছিলাম বিনয়ের জন্য?

এতক্ষণ যার হৃদয়ের কথা শেয়ার করলাম তার নাম পুষ্প। পুষ্পের সাথে বিমানে দেখা, লন্ডন থেকে লস এঞ্জেলসের পথে, আজ থেকে ২৫ বছর আগে। হঠাৎ বিমানে দেখা, সামান্য সময়ে এতসব কাহিনী গড় গড় করে বলতে লাগল। বিষয়টি একটু অবাক করার মতো! অবাক সেদিন আমিও যে হইনি তাও না। তবে আমি পুষ্পকে চিনি, সেই ১৯৮৪ সালে। এসএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেটের ইংরেজি কপি যশোর বোর্ড থেকে আনতে গিয়েছিলাম যশোরে। পুষ্প সেদিন যশোর বোর্ডে ছিল, তার বাবার পাশে। মূলত তার বাবাই আমার কাগজগুলো সেদিন দ্রুততার সাথে জোগাড় করে দেন। পুষ্প তখন ক্লাস নাইনের ছাত্রী। আমার বিদেশ যাত্রার গল্প তাকে নিশ্চিত আপ্লুত করেছিল। সেদিনের সেই ক্ষণিকের দেখা এবং পরিচয় মনের মধ্যে অমন করে আটকে থাকতে পারে কে জানত তা!

আমি কাজের সুবাধে সুইডেন থেকে লন্ডন হয়ে লস এঞ্জেলসের পথে। আমার সিট বিজনেস ক্লাসে, পাশের আসনে পুষ্প বসে আছে। ১০ ঘণ্টার ফ্লাইট খুবই স্বাভাবিক যদি সুযোগ মেলে আড্ডা জমাবার তবে তাতে ক্ষতি কী? পুষ্প চাকরি করে সিলিকন ভ্যালিতে কম্পিউটার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে, এসেছিল লন্ডনে বিজনেস পারপাজে। জিজ্ঞেস করলাম, বিনয় এখন কোথায়? উত্তরে বলল, সে বাংলাদেশ ছেড়ে কোনো একসময় অস্ট্রেলিয়া পাড়ি দিয়েছে। বললাম, তাহলে তোমাদের দুজনার সম্পর্কের শেষ কীভাবে হলো? উত্তরে বললো, সম্পর্ক শুরু হবার আগেই শেষ হয়ে যায়। বললাম মানে?

বিনয় দুর্নীতি ছাড়লেও দুর্নীতি তাকে ছাড়েনি। শেষে বিনয় রাতের অন্ধকারে দেশ ছেড়ে প্রথমে কলকাতা পরে সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমায়। আর আমি লেখাপড়া শেষে আমেরিকায় মামার কাছে চলে যাই। এখন আছি সান ফ্রান্সিকোতে।

পুষ্প লস এঞ্জেলস এয়ারপোর্টে বিদায় নেবার সময় হাতদুটি ধরে বলেছিল যেন বেড়াতে যাই তার ওখানে। যাবো যাবো করে আজও যাওয়া হয়নি। দূর থেকে তাই গানের লিপিকা গেয়ে যাই সুরে সুরে, আর ভাবি পুষ্প কত দূরে!
বহু বছর পর হলেও আজ মনে পড়ে গেল সেদিনের সেই প্লেনে দেখার স্মৃতিটুকু হঠাৎ! মনে করিয়ে দিলো অনেকটা প্রণব রায়ের কথাগুলো সুবল দাসগুপ্তের সুরে, 'মনে পড়ে কবে অলখে আসিয়া, সহসা মোর চোখে, রাখিয়া কোমল করপল্লব শুধালে, শুধালে বলো তো কে? আমি কহিলাম আজও কী জানো না, তুমি যে আমার সকল সাধনা, শুধু অনুভবে হৃদয় চেনে গো হৃদয়ের বন্ধুরে..!'

লেখক : সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us