ট্যুগেদার, উই ক্যান মেক ইট হ্যাপেন

রহমান মৃধা | Sep 10, 2022 01:00 pm
ট্যুগেদার, উই ক্যান মেক ইট হ্যাপেন

ট্যুগেদার, উই ক্যান মেক ইট হ্যাপেন - ছবি : সংগ্রহ

 

 বাংলাদেশ স্বাধীন হবার আগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ কিন্তু খুব বেশি দেশ ছাড়েনি যেমনটি বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকে ঘটে চলেছে। অনেকেই বলবে, পাসপোর্ট থেকে শুরু করে ভিসা জোগাড় করা একটি জটিল প্রসেস ছিল তখন যার ফলে দেশ ছাড়ার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ঘটনার কিছুটা সত্য হলেও কিন্তু দেখা যায়, সিলেটিরা সব সময় দেশ বিদেশ ঘুরছে।

তৎকালীন ১৯টি জেলার মধ্যে যশোর জেলার মানুষ দেশ ছেড়েছে দেরি করে। তবে, এ জেলার অনেক হিন্দু সম্প্রদায় ভারতের কলকাতা আশা যাওয়া পুরোপুরি বজায় রেখে আসছে নানা কারণে।

আমার নিজ পরিবার মূলত দেশ ছেড়েছে দেশ স্বাধীনের পর এবং বিদেশী স্কলারশিপ এবং দেশের অর্থ ব্যয় না করে বাইরে লেখাপড়া করার সুযোগ হওয়া এবং পাওয়া মূলত দেশ ছাড়ার কারণ। নিজ দেশ ছেড়ে অন্য একটি দেশে এসে সবকিছু গুছিয়ে উঠতে কয়েক যুগ লাগার পেছনে শত শত কারণ জড়িত। যেমন বাংলা খাবার এবং দেশীয় শাক সবজি। যদিও মাঝে মধ্যে এসব খাবার পাওয়া যায় তবে দুঃখের বিষয় ভেজাল এবং পচা খাবার দেশ থেকে বেকসুর খালাস হয়ে বিদেশে যখন আসে এবং সেই খাবার যখন দশগুণ বেশি দাম দিয়ে কিনি এবং রান্না করে মুখে দিতে চেষ্টা করি তখন মুখে রুচি বা স্বাদের পরিবর্তে বমি আসে। যার ফলে চেষ্টা করে চলছি দেশীয় শাক সবজি নিজে চাষ করতে সুইডেনের মতো শীতের দেশে।

মজার ব্যপার হলো, সাধনা এবং চেষ্টা থাকলে কিনা সম্ভব জীবনে? সেটাই হয়েছে। সব সবজির মাঝে লাউ বাঙালির কাছে একটি অমৃত খাবার সেটাও সুইডেনে ফলানো, আমার কাছে এত বড় একটি চ্যালেঞ্জ ছিল যা যদি তুলনা করি সুইডেনে প্রতিষ্ঠিত হবার চেয়ে কঠিন। হয়ত অনেকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে না কিন্তু এটাই সত্য। শীতের দেশে লাউ উৎপাদন করা সত্যিই একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তাহলে বুঝতেই পারছেন কী পরিমাণ চেষ্টা করতে হয়েছে সফল হতে। পরাগায়ণ করাতে চেষ্টা করেছি, নিজ হাতে পুরুষ ফুলকে মহিলা ফুলের সাথে যুক্ত করেছি যাতে করে পরাগায়ণ পদ্ধতিটি সঠিক হয় যেমনটি মৌমাছি বা বাতাসের সাহায্যে হয়ে থাকে।

এইভাবে এক দেশে থেকে অন্য দেশে যেমন আমরা এসেছি, নিজেদেরকে মানিয়ে নিয়েছি। এখন আমাদের দেশের সব কিছু আস্তে আস্তে এখানে এনে ছোট্ট একটি বাংলাদেশ গড়ে তোলার চেষ্টা এর চেয়ে বড় কিছু আর কি হতে পারে? এসব চেষ্টা করার পথে দেশের কথা দেশের নতুন প্রজন্মের কথা মনে হয়েছে। মনে হয়েছে, সাধারণ পরিবারে জন্ম নেয়া অনেক তরুণের কথা। ফুলের মতো অনেক প্রাণ অকালে ঝরে পড়ছে সামান্য একটু সুযোগের অভাবে।

ফুল যেমন তার সব সুযোগ থাকতেও একটু সাহায্যের অভাবে পরাগায়ণ ঘটাতে না পারার কারণে ফলে পরিণত হতে পারছে না, ঠিক একটি গরিব পরিবারের অনেকেই একটু সুযোগ, একটু চেষ্টার অভাবে সফল মানুষ হয়ে সমাজের দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে সমাজের বোঝা হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছে! আমরা যারা সুযোগ পেয়েছি তাদের উচিত হবে, যারা সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত তাদের একটু সাহায্য করা। একটু সাহায্য সহানুভূতি পেলে একটি জীবন সুন্দর হয়ে সমাজের কাছে, সমাজের মানুষের কাছে সর্বোপরি নিজের কাছে তার জন্মের স্বার্থকতা খুঁজে পেতে পারে। এতটুকু চেষ্টা যদি আমরা করি অবশ্যই সম্ভব চাওয়া পাওয়ার সফলতা ঘটানো।

আমার সুইডেনের ক্ষেতে সবকিছু হয়েছে। দুঃখের বিষয় হঠাৎ ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে একের পর এক সব শাক সবজি এখন প্রায় মৃত্যু পথের যাত্রী। ভাবছি একদিন আমাদেরও এই সাজানো গোছানো জীবনটা হঠাৎ শেষ হয়ে যাবে তখন মন চাইলেও কারো জন্য কিছু করতে পারব না। ভাবছি সেই সময়টি যখন এখনো আসেনি এবং সুযোগ যখন আছে তখন দেরি কেন? এখনই আমরা কিছু একটা করি। আমার মতো যদি সবাই একটু চেষ্টা করে আমি বিশ্বাস করি, আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশে একজন গরিব অসহায় শিশুর জন্ম হবে না, শুধু যদি একটু চেষ্টা করি সবাই। ট্যুগেদার, উই ক্যান মেক ইট হ্যাপেন।

লেখক : সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন থেকে
rahman.mridha@gmail.com


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us