আমি জনজট নই, আমি স্মার্ট!

রহমান মৃধা | Jan 18, 2023 04:10 pm
আমি জনজট নই, আমি স্মার্ট!

আমি জনজট নই, আমি স্মার্ট! - ছবি : সংগ্রহ

 

হলিউডের তারকা হতে কে না চায়! হতে চাওয়া কঠিন কিছু নয় কারণ এটা সম্ভব। শয়নে, স্বপনে এবং জাগরণে আমরা সবাই সুখি, ধনী, ক্ষমতাশীল হতে চাই। কল্পনার রাজ্যে আমি বহু বছর বসবাস করেছি। এবার তার বাস্তবায়ন করতে চাই।

আমি মেয়েটির কথা শেষ হতেই জিজ্ঞেস করলাম কিভাবে সম্ভব?
উত্তরে সে বলল, আমি সুন্দর দেখতে, এটাই আমার যোগ্যতা। আমি জাতে মাতাল- এটাই আমার দক্ষতা। আমি যা করি- জেনে শুনে করি এবং এটাই আমার দৃঢ়তা। আমি জাতে মাতাল তালে ঠিক।

প্লেনে করে সেদিন যাচ্ছিলাম লস এঞ্জেলসে। মেয়েটির সিট পড়েছে আমার পাশে। বয়স কত হবে! বড় জোর ২৫। এ কথা সে কথা, পরে জিজ্ঞেস করলাম, তা লেখাপড়া কতদূর করেছ?

সে বলল, আমি কলেজ শেষ করেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। ভালো বেতনের চাকরি হবে না, যে শিক্ষা আমি পেয়েছি স্কুল এবং কলেজ থেকে। কারণ আমি যা শিখেছি তা বর্তমান যুগে সবাই কম বেশি জানে।
পরিশেষে ভাবনার জগতে গিয়ে ভেবেছি অনেক! ভালো মন্দের উপর একটি পরিষ্কার ধারণা হয়েছে। আমার যে নিজস্ব একটি যোগ্যতা রয়েছে, সেটাকে এখন কাজে লাগাতে হবে সঠিকভাবে।

আমি আগ্রহের সাথে জানতে চাইলাম সে যোগ্যতাটি কী? সে উত্তরে বলল, আমার রূপ, আমি দেখতে সুন্দর, আমি সুইডিশ ভাষার পাশাপাশি সুন্দর ইংরেজি জানি। আমার সুন্দর লুক। আমি আমার সুন্দরকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে জীবনে সফল করতে চাই।

পৃথিবীর সবাই যা নেই সেটা পাবার জন্য ব্যাকুল। এত ব্যাকুল যে যা আছে তা উপভোগ করতে ভুলে যায়। এটা আমি নিজের ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করেছি। আমি স্মার্ট, আমি অন্যের কথা মুখস্ত করতে চাই না। আমি আমার মতো করে ভাবতে পছন্দ করি। কিন্তু, সমাজে মানুষের জ্ঞান গড়ে উঠেছে ধারের ওপর। সুন্দর বাড়ি, গাড়ি সবকিছু ধারের টাকায় কেনা। নামের আগে শিক্ষার ডিগ্রি অথচ সব কিছুই অন্যের, মানে অতীতে জ্ঞানী ব্যক্তিরা যা জেনেছেন সেটা আমরা শুধু জেনে জেনে নিজেদের পণ্ডিত তথা নতুন যুগের জ্ঞানী সেজে সমাজকে শোষণ করছি। এখন সমাজ যেহেতু এসব পণ্ডিতের নেতৃত্বাধীন, স্বাবাভিকভাবেই এরা সবকিছু লুটেপুটে খাচ্ছে। ভোগ বিলাসের আসক্তে মাতাল হয়ে মনুষ্যত্বকে আজীবনের জন্য বিদায় দিয়েছে। আমি এদের ঘাড়ের ওপর বসে বসে খেতে চাই, এটাই আমার পরিকল্পনা।

আমি মুগ্ধ হয়ে মেয়েটির কথা শুনছি, আমার বলার কিছু ছিল না। তারপরও জিজ্ঞেস করলাম, তা এখন কোথায় যাচ্ছো এবং তোমার পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কিভাবে ঘটাবে?

সে দিব্বি তার পরিকল্পনার কথা বলতে শুরু করল। হলিউডে এ ধরনের বড়লোকের অভাব নেই। আমি বললাম, কিন্তু কিভাবে এদের সাথে যোগাযোগ করবে? কি বলবে? সে বলল, যোগাযোগ না শুধু, সব ব্যবস্থা করেই এখন লস এঞ্জেলসের পথে।

সে বলল, আমি সুইডিশ, আমরা সব কাজকর্ম কম-বেশি করতে পারি। বড়লোকের বাড়িতে নানা রকমের কাজের লোকের দরকার হয়। ছোট একটি রেজুমি তৈরি করে সাথে একটি সুন্দর ছবি এবং রেফারেন্স দিয়ে কাজ খুঁজতেই সানসেট ভুলিভার্ডে কাজের অফার মিলে যায়। থাকা খাওয়াসহ ৩৫০০ ডলার মাসিক বেতন। নিজের প্রাইভেট রুম এটাচ বাথরুম। দরকারে গাড়ি ব্যবহার করার সুযোগ, সর্বোপরি পরিবারের সাথে ভ্রমণ করারও ব্যবস্থা, হয়ে গেল চাকরি।

আমি সব শুনে মনে মনে বললাম, এত এক ধুরন্ধর মহিলা! তারপরও একটু সুন্দর করে হেসে দিয়ে বললাম, উইশ ইউ গুড লাক।

আমাদের জার্নি শেষ, যার যার পথে সেই সেই চলে গেলাম। এ ছিল চার বছর আগের কথা।

আমি এই মুহূর্তে বসে টিভি দেখছি। আমেরিকান ডকুমেন্টরি 'হলিউড ফ্রুয়ার'। যে সব সুন্দরী সুইডিশ মেয়েরা আমেরিকা গিয়ে হলিউডে হাউস ওয়াইফ হয়ে বিলাস বহুল জীবনযাপন করছে, মূলত তাদের নিয়ে এ ডকুমেন্টরি। হঠাৎ দেখি গত চার বছর আগের সেই মেয়ে ছবিতে। বলছে, তার জীবনের কথা, বর্ণনা করছে আমেরিকার হলিউডে প্রথম দিনের স্মৃতি : মালিকের বাড়ি ঢুকতেই দেখি মালিক এবং তার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নেই। আমার আগমনে তারা মহাখুশি।

সাংবাদিক জিজ্ঞেস করছে, খুশির কারণ কী? উত্তরে বলল, মহিলা খুশি। কারণ তার বয়ফ্রেন্ড আছে। পুরুষ খুশি, কারণ বাড়িতে সুন্দরীর আগমন, মানে আমি এসেছি।

সাংবাদিক বলছে, তাহলে বাড়িতে কাজের লোক হিসেবে ঢুকে পরে বাড়ির মালিক হবার সুযোগ! সে আরো বলল, ছবিতে দেখেছি যেমন প্রিটি ওমেনের মতো অনেক ছবি, যেখানে সুন্দর দেহের কারণে জীবনের পুরো ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে।

মেয়েটি শেষে এও বলল, ইদানীং অনেকেই ভাগ্যের চাকা নিজ হাতে ঘুরিয়ে যেমন খুশি তেমন করে নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়েছে, সব দুর্নীতিবাজের মতো প্রতিষ্ঠিত করেছে। পুঁথিগত বিদ্যায় শিক্ষিত হয়ে যখন সবাই অমানুষ হতে পারে তখন আমি কেন সমাজ কী বলবে বা ভাববে সেই ভয়ে সমাজের নিম্ন শ্রেণীর নাগরিক হয়ে থাকব?
অসৎ বা কুকর্মে প্রতিষ্ঠিত হওয়া আর নিজের সৌন্দর্যকে প্রয়োজনে বিক্রি করে যদি সমাজকে কিনে নেয়া সম্ভব তাহলে সমস্যা কোথায়?

সবাই তো বর্তমান এমনটি করেই জীবনের 'সাকসেস' নামক চাবির মালিক। আমিও তাদের একজন।
আমার নাম হ্যাপি, আমি খুব লাকি, বসত করি হলিউডে, ঘুরি আমি বিশ্বজুড়ে। বয়স আমার বেশি না, জাতে আমি মাতাল না, তালে আছি ঠিক। আমি যা করি এখন সেটাই সঠিক।

লেখক : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
rahman.mridha@gmail.com


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us