সজনে একটি বিস্ময়কর উদ্ভিদ

আজাহার গাজী | Jul 17, 2019 04:52 pm
সজনে একটি বিস্ময়কর উদ্ভিদ

সজনে একটি বিস্ময়কর উদ্ভিদ -

 

সজনে একটি উপকারী উদ্ভিদের নাম। সাধারণ নাম ‘সাজনা’ আর শুদ্ধ ভাষায় সজনে। আমাদের দেশে অঞ্চলভেদে সজনে/ সাজনা/ সজনে/ সজনী/ নজনে নামে পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Moringa oleifera.

সজনে গাছের কাঠ অত্যন্ত নরম, বাকল আঠাযুক্ত। সজনে তিন ধরনের হয় নীল, শ্বেত ও রক্ত। সজনে পুষ্টি ও বিভিন্ন খাদ্যগুণসমৃদ্ধ সবজি। সজনে গাছকে প্রচলিত বিভিন্ন খাদ্য প্রজাতির মধ্যে সর্বোচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বহুবিধ খাদ্যগুণ সম্পন্ন হওয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকায় সজনে গাছকে ‘জাদুর গাছ’ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়েছে। অথচ আমাদের দেশে পরিচিত এই গাছটির উপকারিতা ৯০ শতাংশ লোকই জানে না। আসুন জেনে নিই কি সেই বিস্ময়কর সজনে গাছের উপকারিতা:
সজনে গাছের মধ্যে বহু ঔষধি গুণাগুন আছে, যা জানতে পারলে আমাদের সবার উপকারে আসবে। সজনে গাছের পাতার মধ্যে আল্লাহ তায়ালা ৩০০ রোগের ওষুধ দিয়েছেন। তার মধ্যে বর্তমানে ডায়বেটিস, গেঁজ, আলসার এবং ক্যান্সার রোগের কোষ ধ্বংস করার মস্তবড় গুণ আছে।

১০০ গ্রাম সজনে পাতার মধ্যে যা রয়েছে:
১. দইয়ের চেয়ে ৯ গুণ বেশি প্রেটিন
২. গাজরের চেয়ে ১০ গুণ বেশি ভিটামিন এ
৩. কলার চেয়ে ১৫ গুণ বেশি পটাশিয়াম
৪. দুধের চেয়ে ১৭ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম
৫. কমলার চেয়ে ১২ গুণ বেশি ভিটামিন সি
৬. পালংশাক থেকে ২৫ গুণ বেশি আয়রন

শরীরের প্রয়োজনীয় প্রায় সব ভিটামিনের সাথে আবশ্যকীয় প্রায় সবগুলো এমাইনো এসিড সজনে পাতায় বিদ্যমান বলে বিজ্ঞানীরা একে ‘পুষ্টির ডিনামাইট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। প্রধান ঔষধি রাসায়নিক পদার্থ হচ্ছে বিটা-সিটোস্টেরোল, এক্যালয়েডস-মোরিনাজিন। আর ফুলে আছে জীবানুনাশক টিরিগোজপারমিন। এর মধ্যে আছে ভিটামিন এ, বি, সি, নিকোটিনিক এসিড, প্রোটিন চর্বি জাতীয় পদার্থ ও কার্বোহাইড্রেট ইত্যাদি।

সজনে গাছের পাতা শাক হিসেবে অনেক জনপ্রিয়। যা মানব শরীরের জন্য অনেক প্রয়োজন। এ গাছ মানব শরীরে যেমন হরমোন বর্ধন করতে পারে, তেমনি পারে মায়েদের বুকের দুধ বাড়িয়ে দিতে। সজনের পাতার রস খেলে শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি হয়। বর্তমান বিশ্বে এই গাছের পাতার অনেক চাহিদা। আশা করা যায় খুব তারাতারি চা পাতার মতো সজনে পাতাও আমাদের দেশ থেকে রপ্তানি হবে। ঢাকার কাঁচা বাজারগুলোতে সজনের ডাঁটাকে সবজি হিসেবে বিক্রি হতে দেখা যায়। কিন্তু আমরা এই ডাঁটাগুলো খাই না। তাই বাজার থেকে এগুলো কিনে আনা হয় না। আর প্রতি বছর আমাদের গ্রামের বাড়ির গাছের মধ্যেই ডাঁটাগুলো শুকিয়ে যায়। সজনে ডাটার মধ্যে যে এত খনিজ উপাদান থাকে আর সজনে যে মানবদেহের জন্য এত উপকারী তা আর অজানা নয়।

সজনের পাতা দিয়ে জুস যেমন বানিয়ে পান করা যায় তেমন করে শুকনা পাতা দিয়ে চাও বানিয়ে পান করা যায়। পাতাকে শুকিয়ে গুড়ো করেও ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। উন্নত বিশ্বে সজনের পাতার গুঁড়া দিয়ে ক্যাপসুল/টনিক বানিয়ে বাজারে বিক্রি করা হয়। এমন কী সজনের বীজ থেকে বেল ওয়েল নামক উন্নমানের তেলও তৈরি করা হয়।
সজনের ডাটার মতো এর পাতারও রয়েছ যথেষ্ট গুণ। সজনে পাতা শাক হিসেবে, ভর্তা করেও খাওয়া যায়, এতে মুখের রুচি আসে। সজনে পাতার রস খাওয়ালে শ্বাসকষ্ট নিরাময় হয়। তা ছাড়া, পাতাকে অনেকক্ষণ সিদ্ধ করে তা থেকে যেই ঘন রস পাওয়া যায় তার সাথে হিং (এক ধরনের বৃক্ষ বিশেষ) ও শুকনো আদার গুঁড়ো মিশিয়ে খাওয়ালে পেটের গ্যাস বেরিয়ে যায়। বার্মিজ চিকিৎসকদের মতে সজনের পাকা পাতার টাটকা রস দু’বেলা খাবাবের ঠিক আগে দুই-তিন চা চামচ করে খেলে উচ্চ রক্ত চাপ কমে যায় তবে ডায়বেটিস থাকলে তা খাওয়া নিষেধ। সজনে পাতার বেটে অল্প গরম করে ফোঁড়ার ওপর লাগালে ফোঁড়া ফেটে যায়। সজনে পাতার রস মাথায় ঘষলে খুসকি দূর হয়। সজনে পাতার রসে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করার ক্ষমতাও রয়েছে।

এত উপকারী সজনে পাতা দিয়ে ভারতীয়রা স্যুপ তৈরি করে পান করে থাকে। সজনে আবার বসন্ত রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। সদির্, কাশিতে, যকৃতের কার্যকারিতায়, কৃমি প্রতিরোধে সজনে পাতার রস ফলদায়ক। সজনের ছাল ও মূলের নির্যাস ব্যথা নিবারক হিসেবে কাজ করে। শরীরের কোনো মাংশপেশিতে ব্যথা অনুভব হলে সেই স্থানটিতে সজনের ছাল অথবা মূলের নির্যাস লাগিয়ে দিলে সেরে যায়। সজনের ডাঁটা শরীরের ব্যথানাশক, হজম শক্তি বর্ধক, রক্তের সংবহনতন্ত্রের ক্ষমতা বর্ধক, রক্ত স্বল্পতা দূর করে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে, হাঁপানি রোগ নিরাময় করে, বাত রোগও উপশম করে। সজনে গাছের ছাল তুলে তা বেটে রস চিপে নিয়ে এই রস নিয়মিত পাঁচ-ছয় চা চামচ খেলে বাতের ব্যথা প্রায় ৬৫ শতাংশ উপশম হয়।

সজনে গাছ লাগানো অনেক সহজ। সজনে গাছের ডাল তেসড়া ভাবে কেটে লাগিয়ে দিলে হয়ে যাবে। আমাদের দেশে ডাল পুঁতে অঙ্গজ উপায়ে বংশ বিস্তার বেশি প্রচলিত। তার কারণ হলো এটি করতে তেমন দক্ষতার প্রয়োজন হয় না। আর খরচও কম, অঙ্গজ বংশ বিস্তারের জন্য পাঁচ-ছয় হাত লম্বা নিরোগ এবং আঘাত মুক্ত ডাল ব্যবহার করা ভালো। লাগানোর সময় যে বিষয়টি মনে রাখতে হবে সেটি হলো ডালটি গাছে থাকা অবস্থায় এর আগা বা মাথা এবং গোড়া যে দিকে ছিল পুঁতার সময় যেন ঠিক সেই ভাবেই থাকে। লাগানোর আগে ডালের গোড়ায় একটি ধারালো কিছু দিয়ে তেসড়া করে কেটে দিতে হবে তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন থেঁতলে না যায়। এ কাজটি করলে ডালটি টিকে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকগুণ বেড়ে যায়। ডালটির গোড়ার প্রায় এক হাত যেন মাটির নিচে থাকে এবং পুঁতার পর যেন এটি নাড়াচড়া না করে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। ডালের মাধ্যমে বংশ বিস্তারের কাজটি আমাদের দেশে করা হয়ে থাকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত। কারণ এ সময় ডাঁটা সংগ্রহের পর গাছগুলোকে ছাঁটাই করে দেয়া হয়। ফলে অঙ্গজ বংশ বিস্তারের জন্য এর সহজ প্রাপ্যতা বেড়ে যায়। তা ছাড়াও, এ সময়ে অল্প বৃষ্টি হয়ে থাকে, যার ফলে লাগানো ডালটি সহজেই টিকে যায়।

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us