ভয়াবহ বিপদে পড়তে যাচ্ছেন মিন্নি!

অন্য দিগন্ত ডেস্ক | Jul 18, 2019 08:13 am
মিন্নি

মিন্নি - ছবি : সংগৃহীত

 

বরগুনায় চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। কিন্তু আদালতে একজন আইনজীবীকেও তার পক্ষে লড়ার জন্য পাননি। ফলে তিনি ভয়াবহ বিপদে পড়তে যাচ্ছেন বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন। তিনি এর আগে যে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন, তাতেও তিনি বলেছিলেন যে তিনি প্রভাবশালীদের তোপের মুখে রয়েছেন। তিনি ন্যায়বিচার পাবেন না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। এর জের ধরেই তিনি বুধবার তার পক্ষে একজন আইনজীবী পাননি। তার বাবা জানিয়েছেন, তিনি অনেক চেষ্টা করেও কাউকে পাননি।

এর আগে মঙ্গলবার সারা দিন ধরে পুলিশ কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর রাতে তাকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।

২৬ জুন প্রকাশ্য দিবালোকে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে হত্যার ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। এই মামলার এক নম্বর সাক্ষী ছিলেন আয়শা সিদ্দিকা।

আয়শার বাবা মোজাম্মেল হোসেন অভিযোগ করেছেন, বুধবার সকাল থেকে অনেক চেষ্টা করেও তিনি তার মেয়ের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য একজন আইনজীবী পাননি।

"যারা আসামি তাদের বাঁচানোর জন্য এখন এগুলা করতেছে। যার স্বামী মারা গেল, তাকে বাঁচানোর জন্য কী চেষ্টা আমার মেয়ে করছে, সবাই দেখছেন আপনারা," বলেন তিনি।

"সেই এক নম্বর সাক্ষী আজ কাঠগড়ায়। এমনকি আজ আমার মেয়ের পক্ষে কোনো উকিলও (আইনজীবী) দিতে পারিনি। কেউ যাতে তার জন্য কোর্টে না দাঁড়ায়, সেজন্য বারে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে শুনেছি।"

কারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিবিসির এমন প্রশ্নের জবাবে হোসেন বলেছেন, "এলাকার প্রভাবশালী লোকেরা ছাড়া কারা এ কথা বলতে পারে, আপনারা বুঝে নেন। আমি বলতে গেলে কী আমি দেশে থাকতে পারবো?"

আয়শার বাবার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান নান্টু।

তিনি দাবি করেছেন, জেলা আইনজীবী সমিতি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। "উনি (আয়শার বাবা) মিথ্যা কথা বলছেন। এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত (আয়শার পক্ষে না দাঁড়ানোর) আমাদের হয়নি।"

"আয়শার বাবার সাথে আমার আদালতের বারান্দায় দেখা হয়েছে, উনি তো আমাকে কিছু বলেন নাই এ ব্যপারে।"


আলোচিত এই মামলায় বুধবার আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে তোলা হয় আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে।

বরগুনা অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সঞ্জীব কুমার দাস বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাত দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।

তিনি জানিয়েছেন, তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে জানিয়েছেন, মামলার একজন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে আয়শাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এছাড়াও হত্যাকাণ্ডের আগে মামলার আসামিদের কয়েকজনের সঙ্গে আয়শার কথোপকথনের একটি কললিস্ট আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন দাস।

রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।

হত্যাকাণ্ডের পর গত প্রায় তিন সপ্তাহে নিহতের বাবা দুলাল শরীফ এবং নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা আলাদা আলাদা কয়েকটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

বরগুনার স্থানীয় সংবাদকর্মীরা জানিয়েছেন, গত ১৩ই জুলাই রিফাতের বাবা বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ছেলের হত্যাকাণ্ডে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির সম্পৃক্ততা রয়েছে দাবি করে তার পুত্রবধূর গ্রেফতার দাবি করেন।

পরদিন আয়শাকে গ্রেফতারের দাবিতে বরগুনায় একটি মানববন্ধনও করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, এ মামলার তদন্তে এ পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে স্বীকারোক্তি প্রদানের জন্য ১০জনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এখনো রিমান্ডে রয়েছে তিনজন।

এই মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন, যিনি 'নয়ন বন্ড' নামে পরিচিত, জুলাই মাসের দুই তারিখে তিনি পুলিশের সঙ্গে কথিত 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে যা বলেছিলেন মিন্নি
রোববার বরগুনায় বাবার বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি - সংগৃহীত
রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের আড়াল করতে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। তাকে গ্রেফতারের দাবিতে শ্বশুর দুলাল শরীফের করা সংবাদ সম্মেলনের বিপরীতে রোববার নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মিন্নি।

শ্বশুরের দাবিকে ভিত্তিহীন বলে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে মিন্নি বলেন, আমার শ্বশুর অসুস্থ। তিনি কখন কী বলেন তার কোনো ঠিক নেই। আমার শ্বশুরকে দিয়ে কোনো মহল স্বার্থ হাসিল করার জন্য আমাকে পেচিয়ে মামলাটি হালকা করার চেষ্টা করছে। যাতে আসামিরা ছাড়া পেয়ে যেতে পারে। আর আমার যদি নয়নের সঙ্গে বিয়েই হবে তবে যখন রিফাতের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তখন নয়ন কেন বাধা দেয়নি।

মিন্নি তিনি অভিযোগ করেন, যারা বরগুনায় ‘বন্ড ০০৭’ নামে সন্ত্রাসী গ্রুপ সৃষ্টি করিয়েছিল, তারা খুবই ক্ষমতাবান ও বিত্তশালী। নেপথ্যের এই ক্ষমতাবানেরা বিচারের আওতা থেকে দূরে থাকা ও এই হত্যা মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য শ্বশুরকে চাপ দিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করিয়েছেন।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, ‘নয়ন বন্ড একজন মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ী। তার নামে অনেক মামলা ছিল। সে আমাকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করত। আমার ছোট ভাই ও বাবাকে হত্যার হুমকি দিত। এ জন্য তার বিরুদ্ধে কখনো মুখ খোলার সাহস পাইনি।’

মিন্নি বলেন, ‘বিয়ের দুই মাস পর স্বামীকে হারালে একজন নারীর মানসিক অবস্থা কেমন থাকতে পারে! তার ওপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনবরত কুৎসা এবং বাজে ছবি পোস্ট দেয়ার কথা শুনে আমি আরও বিপর্যস্ত। রিফাতকে হত্যার পর থেকেই আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’


এ সময় তিনি অপপ্রচারকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবিও জানান।

এর আগে শনিবার রাত ৮টার দিকে বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন নিহত রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন,‘রিফাত হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা মিন্নি, নয়নের সঙ্গে মিন্নির বিয়ে হয়েছিল। সেই বিয়ের কথা গোপন রেখে রিফাতের সঙ্গে মিন্নির বিয়ে দেয় তার পরিবার। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মিন্নি জড়িত রয়েছে। তাই তাকে (ছেলের বউ) গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনাতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন,‘রিফাতের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পরেও প্রতিনিয়ত নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির যোগাযোগ ছিল। প্রায় প্রতিদিন নয়ন বন্ডের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতো মিন্নি। রিফাতকে হত্যার সময় সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে সরকারি কলেজের সামনের গেটে মিন্নিকে রিফাত তার মোটরসাইকেলে উঠিয়ে নিয়ে যেতে চায়, তখন মিন্নি সময়ক্ষেপণ করে। এর মধ্যেই বন্ডগ্রুপ রিফাতকে মারধর করতে করতে কলেজের পূর্ব দিকে নিয়ে যায়। সে সময়ে মিন্নি স্বাভাবিকভাবেই সেই সব দৃশ্য দেখতে থাকে এবং তাদের পেছনে হাঁটতে থাকে। পরে যখন রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজী দা নিয়ে এসে নয়নের হাতে দিয়ে কোপাতে শুরু করে, তখন মিন্নি বাধা দিলেও তাকে কেউ আঘাত করেনি।’

এসব কারণে মিন্নিকেই হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা দায়ী করে গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী, রিশান ফরাজীসহ তার সহযোগীরা। এ ঘটনায় রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us