কী হচ্ছে অর্থনীতিতে?

জি. মুনীর | Dec 08, 2019 05:21 pm
কী হচ্ছে অর্থনীতিতে?

কী হচ্ছে অর্থনীতিতে? - ছবি : সংগ্রহ

 

একটি সরকারের অন্যতম একটি কাজ হচ্ছে দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা। এরপর সম্ভব হলে অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া। সেই এগিয়ে নেয়ার কাজটি যদি সম্ভব না হয়, তবুও বিদ্যমান অর্থনীতিতে কিছুতেই যেন কোনো পিছুটান সৃষ্টি না হয়। তা ছাড়া, অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে সরকারের আরেকটি বড় ধরনের করণীয় হচ্ছে, দেশের মানুষের মধ্যে আয়ের সুষম বণ্টন। এমন অর্থনৈতিক উন্নয়ন কাম্য নয়, যা মানুষে মানুষে আয়বৈষম্য বাড়িয়ে তোলে। কারণ, আয়বৈষম্য বেড়ে গেলে সমাজে অস্থিরতা বেড়ে যায়, আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে অর্থনীতি ও রাজনীতির ওপর। যার ফলে সমাজে স্থিতিশীলতা আসে না। আর এ অবস্থায় অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া কিছুতেই হয়ে ওঠে না। এ পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক কিছু সূচকে উন্নতি ঘটলেও এর সুফল দেশের সব মানুষের কাছে পৌঁছে না। এটাকে সত্যিকারের উন্নয়ন বলেও স্বীকার করতে চান না অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

আমাদের দেশের সরকারের নীতিনির্ধারকদের মাঝে এই উপলব্ধির অভাব রয়েছে চরমভাবে। ফলে অর্থনৈতিক বাস্তবতা এড়িয়ে রাজনৈতিক লাভালাভ প্রাধান্য পায় সরকারের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে। ফলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলে এলোপাতাড়ি। কোনটা আগে করতে হবে, কোনটাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, সেটি নির্ধারণে আমাদের নীতিনির্ধারকরা বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দেন। সে জন্য আমরা যদিও বলছি আমাদের দেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য-আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে, তবু কার্যত দেশে অর্থনীতির পিছুটান আমরা ঠেকাতে পারছি না। সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে পারছি না, বরং দিন দিন দেশের মানুষের আয়বৈষম্য বেড়েই চলেছে। বাড়ছে সরকারের দেশী-বিদেশী ঋণের পরিমাণ। সাম্প্রতিক সময়ের কথাই যদি আমরা ধরি, তবে যেসব খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হতে দেখি, তা আমাদের রীতিমতো উদ্বিগ্ন করে। প্রশ্ন জাগে, আমরা কি অর্থনীতির সঠিক সড়কপথে হাঁটছি, না আমাদের অর্থনীতি নিয়ে আমরা ভুলপথে হেঁটে চলেছি?

গত শুক্রবার সহযোগী একটি প্রথম শ্রেণীর জাতীয় দৈনিকের এক শীর্ষ সংবাদে দেশের অর্থনীতির ভালো-মন্দ জানাতে গিয়ে লিখেছে- অর্থনীতির প্রায় সব সূচকই এখন নিম্নমুখী। অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে সব খাতে। একমাত্র ভালো খবর প্রবাসী আয়ে। প্রতিবেদনটির মতে- একটি ছাড়া অর্থনীতির প্রায় সব সূচক এখন নিম্নমুখী। রফতানি আয়ে কোনো প্রবৃদ্ধিই নেই, আমদানিতেও একই অবস্থা। রাজস্ব আয়ে বড় ঘাটতি। দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়ে নতুন আইন করার পরও ভ্যাট আদায় মোটেই বাড়েনি। একমাত্র স্বস্তির সূচক প্রবাসী আয়ে। এ ছাড়া অর্থনীতির আর কোনো সূচকেই ভালো নেই দেশের অর্থনীতি। আরো খারাপ খবর হচ্ছে, আয় কম থাকায় সরকারের ঋণ করার প্রবণতা বাড়ছে। বেসরকারি বিনিয়োগ বহু বছর ধরেই স্থবির। চলতি অর্থবছরে পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে। ব্যাংক থেকে বেসরকারি খাতের ঋণ নেয়া অনেক কমে গেছে। এর প্রভাবে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খোলা হয়েছে অনেক কম, নিষ্পত্তিও কম; বরং ভালো অবস্থায় আছেন কেবল ঋণখেলাপিরা। ঋণখেলাপিরা সুযোগ-সুবিধা পেয়েই যাচ্ছেন, কিন্তু বিনিয়োগে এর প্রভাব নেই। অন্য দিকে, শেয়ারবাজার দীর্ঘ দিন ধরে পতনের ধারায়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে দেশের মানুষ নিশ্চয়ই ভালো থাকতে পারে না।

দেশের মানুষের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা যে ভালো নেই, তা প্রতিদিন দৃশ্যমান হচ্ছে রাজধানীর মোড়ে মোড়ে টিসিবির ট্রাকের পেছনে পেঁয়াজ আর অন্যান্য নিত্যপণ্য কেনায় অতি আগ্রহী মানুষের লাইন দেখে। মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনও এখন অভাব-অনটনে পড়ে তাদের মর্যাদাবোধের কথা ভুলে গিয়ে টিসিবির ট্রাকের পেছনে লাইন দিয়ে পণ্য কিনছেন। বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারের ব্যর্থতা ও অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতা পাশাপাশি চলছে হাত ধরাধরি করে। শুধু পেঁয়াজ নয়, বাজারে প্রায় সব কিছুতেই সম্প্রতি অস্বাভাবিক হারে দাম বেড়ে চলেছে। মধ্যবিত্তসহ দরিদ্র মানুষ এখন বাজারে যেতে ভয় পায়। এর ওপর আবার সরকার চেষ্টা করছে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে। এ সিদ্ধান্ত হবে সরকারের জন্য চরম একটি ভুল। এতে বাজার ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। ইতোমধ্যেই বামপন্থীরা জানিয়ে দিয়েছে, যেদিন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে, সে দিনই হরতাল। ইতোমধ্যে অর্থনীতিতে সঠিক নীতিনির্ধারণে সরকারের ব্যর্থতার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সমাজে। বাড়ছে মানুষের মধ্যে সম্পদ ও আয়ের বৈষম্য। হু হু করে বাড়ছে দেশে কোটিপতির সংখ্যা।

অপর দিকে, বাড়ছে দেশের দরিদ্র মানুষের সংখ্যাও। গত সপ্তাহে একটি ইংরেজি দৈনিক ও একটি বাংলা দৈনিকের খবর থেকে জানতে পারি, দেশে বর্তমানে দুই কোটিরও বেশি মানুষ হতদরিদ্র, যাদের সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১১ দশমিক ১৩ শতাংশ। অপর দিকে, মোট জনসংখ্যার ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ, অর্থাৎ এক কোটি ৫৫ লাখ মানুষ দরিদ্র শ্রেণিভুক্ত। খবর মতে, দেশের আড়াই কোটি দরিদ্র মানুষ পুষ্টিহীনতার শিকার। তা ছাড়া বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টিমান প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১০ বছরে বাংলাদেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা সাত লাখ বেড়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে তুলছি, এ নিয়ে আমাদের গর্বের শেষ নেই। আবার বলছি, বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে উন্নয়নের রোল মডেল। তাই যদি হয়, তবে কেন দেশে গরিব ও পুষ্টিহীন মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলবে। কেন দেশের দুই কোটি ১০ লাখ মানুষ পুষ্টিকর খাবার কিনে খেতে পারছে না। একটি দেশের মানুষের কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়েই মূলত অর্থনীতির সম্প্রসারণ ঘটে। অথচ এই বিপুলসংখ্যক মানুষকে পুষ্টিহীন রেখে কী করে দেশের উন্নয়ন এগিয়ে নেয়ার কথা ভাবা যেতে পারে?

জানা গেছে, বর্তমানে দেশের ব্যাংক খাত থেকে সরকারের নেয়া ঋণ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এর ফলে বেসরকারি খাতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণের হার অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়া। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ মাসে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ৪৩ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯২ শতাংশ। পুরো বছরে সরকারের ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। এ হিসাবদৃষ্টে স্পষ্টতই বলা যায়, ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার বেশিমাত্রায় ঋণ করেছে। আর এর চাপ সহজবোধ্য কারণেই গিয়ে পড়েছে বেসরকারি খাতের ওপর।

মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল সাড়ে ১৪ শতাংশ। কিন্তু অক্টোবর শেষে অর্জিত হয়েছে মাত্র ১০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয় রয়েছে। ব্যাংকাররা বলছেন, বেশির ভাগ ব্যাংকেই এখন টাকার সঙ্কট রয়েছে। ব্যবসায়ীদের টাকা দেয়া যাচ্ছে না। এমনকি চাহিদা অনুযায়ী চলতি মূলধনও জোগান দেয়া যাচ্ছে না। এক দিকে আমানত প্রবাহ কমে যাওয়া, অপর দিকে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের অতিরিক্ত ঋণ নেয়ার ফলে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনায় অস্থিরতা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি খাত বঞ্চিত হচ্ছে চাহিদা কিংবা লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ব্যাংক খাত থেকে ঋণ পেতে। অর্থনীতির স্বাভাবিক হিসাব হচ্ছে, কোনো খাত যদি চাহিদা অনুযায়ী ঋণ না পায়, তবে এ খাতে স্থবিরতা নেমে আসতে বাধ্য। আমাদের দেশের বেসরকারি খাত তেমনি একটি পরিস্থিতির মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে পিছুটানের এটিও একটি কারণ।

অপর দিকে, রফতানি আয় কমে যাওয়ায় সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতেও নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে। এই সময়ে পণ্য রফতানিতে আমাদের জন্য ভালো কোনো খবর নেই।
ধারাবাহিকভাবে কমছে রফতানি আয়। কমছে রাজস্ব আয়ের পরিমাণও। এক দিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসেই এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি পড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। অপর দিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসেই হোঁচট খায় রফতানি আয়ও। এরপর থেকে রফতানি আয়ে ইতিবাচক আর কোনো খবর নেই আমাদের জন্য। কেউ বলছেন, রফতানি আয়ে এখন চলছে শনির দশা। চলতি অর্থবছরের পঞ্চম মাস নভেম্বরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রফতানি আয় কমেছে, ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ। জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এক হাজার ৫৭৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ কম। আমরা জানি, আমাদের রফতানি আয় মূলত তৈরী পোশাকের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বিশ্ববাজারে এখন তৈরী পোশাকের চাহিদা কম। বছরের শুরু থেকেই এ খাতে ক্রয়াদেশ কমছে। সেই সাথে তৈরী পোশাক পণ্যের দামও কমছে। এ ছাড়া রয়েছে অবকাঠামোগত সমস্যা, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন না করা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারসহ আরো নানা কারণে রফতানিবাণিজ্যে আয় কমে গেছে।

অর্থনীতির এই নানাধর্মী পিছুটানের এ সময়টায় বাংলাদেশ মূল্যস্ফীতির ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কাও সৃষ্টি হয়েছে। পেঁয়াজসহ অনেক নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বমুখী, ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমে যাওয়া ভারত ও চীনসহ বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস পাওয়ার প্রেক্ষাপটেই মূলত এ আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সরকারের আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময়সংক্রান্ত অর্থনৈতিক কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে এই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। তবে বিশ্ববাজারে নতুন বছরে জ্বালানি তেল ও কৃষিপণ্যের দাম বাড়বে না, এমন পূর্বাভাসকে নিয়ামক ধরে নিচ্ছে বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্টদের মতে, বংলাদেশের পণ্য আমদানির সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে চীন ও ভারত। এ দুই দেশের মূল্যস্ফীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে খেটে খাওয়া মানুষ। চলতি অর্থবছরে দেশের মূল্যস্ফীতির গড় হার নির্ধারণ করা হয়েছিল সাড়ে ৫ শতাংশ। শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার এই হার ধরে রাখা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এই সংশয় যাতে বাস্তবে রূপ নিতে না পারে, সে জন্য এখন থেকেই আমাদের সাবধান হতে হবে বৈকি।

এই সময়ে আরেকটি বিষয় মাথায় রেখে আমাদের অর্থনৈতিক পদক্ষেপগুলো নিতে হবে। বিশ্বজুড়ে এখন চলছে মন্দার আশঙ্কা। চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে মন্দার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবেশী ভারতের অর্থনীতির গতি ধীর হয়ে সেখানে প্রবৃদ্ধি নেমে গেছে সাড়ে ৪ শতাংশে। দ্রুতগতিতে চলার পর বাংলাদেশের অর্থনীতিও মন্দার দশায় পড়তে যাচ্ছে কি না, সে সংশয়ও অনেকের মনে জেগেছে। অর্থনীতির সাম্প্রতিক পিছুটান আমাদের মনে এ সংশয় আরো বাড়িয়ে তুলছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এ ব্যাপারে বলেছেন, ‘ভারতীয় অর্থনীতি গর্তে পড়ে গেছে। দেশটি এই গর্ত আরো গভীর করে তুলছে। আমাদের সূচকগুলো বিবেচনা করলে আমরাও একই দিকে যাচ্ছি। প্রবাসী আয় বাড়লেও প্রবাসীর সংখ্যা কমছে। তাই ভবিষ্যতে প্রবাসী আয়ও কমে যাবে। সার্বিকভাবে অর্থনীতির যে চাঙ্গাভাব আশা করছি, তা আর থাকবে না।

এ দিকে, খবর পাওয়া যাচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্যে সৃষ্টি হয়েছে ভাটার টান। কমছে বিক্রি পর্যন্ত। বেশ কয়েক বছর বড় বড় শিল্পগোষ্ঠীর ব্যবসা ভালোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ভাটার টান পড়েছে। বিক্রি কমে যাওয়ায় প্রবণতায় ব্যবসা-বাণিজ্যের সুখবর হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে অভ্যন্তরীণ বাজারে কোনো কোনো খাতে বিক্রি কমে গেছে।

আসলে সরকারকে উপলব্ধি করতে হবে, সরকারের আয় কমে গেছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে রফতানি খাত, সে খাতেই এখন প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক। রাজস্ব আয়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়া নিয়েও আছে আশঙ্কা। অতএব, সরকারকে ব্যয় সঙ্কোচন করতে হবে। বড় বড় প্রকল্প গ্রহণের আগে সাতবার ভাবতে হবে। সেই সাথে বিদ্যমান প্রকল্পগুলোর ধাপে ধাপে ব্যয় বাড়ানো ও এসব প্রকল্পে পুকুরচুরি বন্ধ করতে হবে। আপাতত যত দিন অর্থনীতির এই পিছুটান বন্ধ করা না যাবে, অর্থনীতির সূচকগুলোকে ইতিবাচক অবস্থানে না আনা যাবে, সে পর্যন্ত বড় কোনো প্রকল্প নতুন করে চালু করার কথা ভুলে যেতে হবে। প্রয়াস চালাতে হবে দেশে বেসরকারি খাতে কী করে বিনিয়োগ বাড়ানো যায়, এ খাতে চাহিদামতো ঋণ সরবরাহ করা যায়। বেসরকারি খাতকে চাঙ্গা না করে দেশের অর্থনীতিকে কখনোই চাঙ্গা করা সম্ভব নয়।

আপাতত বিদ্যমান প্রকল্পগুলো যথাসময়ে শেষ করার ব্যাপারে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে। নইলে দেশের অর্থনীতি দ্রুত অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। সেই সাথে দেশে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলাও বেড়ে যাবে। অতএব, সাধু সাবধান।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us