শীতে কি হাত বেশি শুষ্ক হয়?

কাজী তানজিলা মেহনাজ | Jan 05, 2020 05:19 pm
শীতে কি হাত বেশি শুষ্ক হয়?

শীতে কি হাত বেশি শুষ্ক হয়? - ছবি : সংগ্রহ

 

শীত আসার সাথে সাথেই শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় আপনার হাত দুটো হয়ে ওঠে শুষ্ক। চামড়ায় দেখা দেয় কোঁচকানো ভাব। হাতের কব্জির পেছন দিকের ত্বক পাতলা হয়ে থাকে এবং এতে খুব কম তেল গ্রন্থি থাকে। এ ছাড়াও হাতেই সবচেয়ে বেশি সাবান ও পানি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। দৈনন্দিন কাজকর্ম যেমন- কাপড় কাচা, বাসন মাজা, রান্না-বান্না ইত্যাদি করতে গেলে হাতের ওপর সাবান ও পানির ধকল যায় দিনের মধ্যে বেশ কয়েকবার। এ ছাড়াও আছে গোসল করা, হাতমুখ ধোয়া। এসব কাজ করতে গেলেও হাতে সাবান ও পানি ব্যবহার করা হয়। ফলে হাত খুব দ্রুত শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়, শীতকালে তো এটা আরো বেশি হয়। তাই হাতেরও প্রয়োজন একটু যত্নের। যদিও ত্বকের যত্ন সারা বছরই নেয়া উচিত, শীতকালে এই যত্ন নিতে হয় একটু বেশিই। তাই শীতকালে মেনে চলুন এসব নিয়ম-কানুন :

কাপড় কাচা হোক বা বাসন মাজা, শীতকালে এসব কাজ করার সময় রাবার গ্লাভস ব্যবহার করুন। ঘরের কাছে যে ওষুধের দোকান আছে, সেখানেই পাওয়া যাবে রাবারের সার্জিক্যাল গ্লাভস।

যতবারই কোনো কাজে হাত পানিতে ভেজাবেন, কাজ শেষে হাত মুছে হাতে ভালোভাবে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। হতে পারে কোনো ক্রিম বা লোশন। ভালোভাবে ঘষে ঘষে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে, যাতে ভালোভাবে চামড়ার ভেতরে পৌঁছায়। ত্বকের সাথে নখেও ভালোভাবে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। রাতে ঘুমানোর আগেও ভারী ধরনের কোনো ময়েশ্চারাইজার ভালোভাবে কব্জির পেছনের দিকে ও আঙুলে ঘষে লাগাতে হবে। কারণ, এই অংশে খুব তাড়াতাড়ি বলিরেখা সৃষ্টি হয়।
আঙুলের জয়েন্টগুলোতে ছোট ছোট সার্কুলার বা বৃত্তাকারভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। আর কব্জি ম্যাসাজ করতে হবে আঙুল থেকে কব্জির গোড়ার দিকে। হাত যদি বেশি রুক্ষ হয় তাহলে অলিভ অয়েল হালকা গরম করে হাতে ম্যাসাজ করে হাতে পাতলা গ্লাভস পরে ঘুমালে দারুণ উপকার পাওয়া যায়। অতিরিক্ত রুক্ষ হাতে ঘুমানোর সময় ভেসলিন লাগিয়ে গ্লাভস পরে নিলেও খুব ভালো ফল পাওয়া যায়।

গোসলের সময় সবচেয়ে উপযোগী হাতের একটু বিশেষ যত্ন নেয়ার জন্য। গোসলের আগে অলিভ অয়েল, তিলের তেল, কাঠবাদাম তেল বা নারকেল তেল হালকা গরম করে ভালোভাবে হাতে ম্যাসাজ করে নিলে হাতের ত্বক হারিয়ে যাওয়া লাবণ্য ফিরে পায়, হাত নরম হয়। কাঠবাদাম তেল বা আমন্ড অয়েল কেনার সময় খেয়াল রাখবেন, যেন সেটা খাঁটি কাঠবাদাম তেল হয়। বেশির ভাগ কোম্পানির আমন্ড অয়েলে শুধু ৫ শতাংশ আমন্ড অয়েল থাকে, তাই কেনার সময় দেখেশুনে কিনতে হবে।

এ ছাড়াও মাঝে মধ্যে গোসলের আগে ৩ টেবিল চামচ বেসন, পরিমাণ মতো দুধ ও এক চিমটি কাঁচা হলুদের গুঁড়ো দিয়ে প্যাক বানিয়ে হাতে লাগিয়ে রাখতে পারেন ২০ মিনিট। ২০ মিনিট পর গোসল করে নিন। গোসলের সময় প্রথমে হাত দুটো পানিতে ভিজিয়ে হালকা ম্যাসাজ করে ধুয়ে নিন। এই প্যাকটি লাগালে আর ত্বকে সাবান লাগানোর প্রয়োজন নেই। এই প্যাকটি রোদে পোড়া দাগ দূর করে, হাতের রুক্ষতা দূর করে ও ত্বকের রঙ ফর্সা করে।

গোসলের পানি হতে হবে কুসুম গরম। বেশি গরম পানি ত্বক শুষ্ক করে ফেলে। আর গোসলের সময় হতে হবে সংক্ষিপ্ত। বেশি সময় ধরে যারা গোসল করেন, তারা বেশির ভাগ সময় বেশি গরম পানি ব্যবহার করে থাকেন যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে গোসল করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়, সম্ভব না হলে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়েই গোসল করতে হবে।

গোসলের পর হাত মুছে হাতে ভেজা ভেজা ভাব থাকতেই ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে। এতে করে হাতের ময়েশ্চার ত্বকের ভেতরেই লক হয়ে থাকবে। শীতকালে গোসল করার সময় সাবানের পরিবর্তে সোপ-ফ্রি শাওয়ার জেল ব্যবহার করা ভালো, অথবা মাইল্ড গ্লিসারিন সোপ যেমন- ডাভ সাবান ব্যবহার করতে পারেন।

বারবার হাত ধোয়া পরিহার করুন। সম্ভব হলে হাত বারবার ধোয়ার পরিবর্তে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। এক্ষেত্রে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যেন আপনার হ্যান্ড স্যানিটাইজারটি অ্যালকোহল বেসড না হয়, নয়তো হিতে বিপরীতও হতে পারে। কারণ, অ্যালকোহল বেসড হ্যান্ড স্যানিটাইজার হাতকে আরো রুক্ষ করে তুলবে। হাত ধুতে হলে সাবান ব্যবহার না করে ময়েশ্চারাইজারযুক্ত মাইল্ড হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার করুন।
বাজারে নানা ধরনের গ্লাভস পাওয়া যায়। কাপড়, পশম, উল বা চামড়ার তৈরি। পছন্দসই একজোড়া গ্লাভস কিনে নিন। খুব শীত পড়লে বাইরে বের হওয়ার সময় অবশ্যই সেই গ্লাভস জোড়া পরে নিন।

একটি ছোট্ট আকারের হ্যান্ড ক্রিম কিনুন যা বাইরে যাওয়ার সময় ব্যাগে করে সাথে নিয়ে যেতে পারেন। ফলে যখনই প্রয়োজন পড়বে, আপনার হাত ময়েশ্চারাইজ করে নিতে পারবেন। এতে হাতের ত্বক সুন্দর ও কোমল থাকবে শীতকালেও।
দিনের বেলা মুখের পাশাপাশি দুই হাতেও সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলবেন না। যারা ড্রাইভিং করেন, তাদের হাত আরো বেশি রোদ লাগে। তাই বাইরে বের হলে প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর হাতে নতুন করে সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিন।

মুখের ত্বক যেমন এক্সফলিয়েট করা প্রয়োজন, তেমনি হাতের ত্বকও। মৃদু একটি এক্সফলিয়েটর দিয়ে আলতো করে পুরো হাত ম্যাসাজ করে নিতে হবে যাতে মৃত কোষ সব ঝরে যায়। খুব সাধারণ কিছু জিনিস দিয়ে ঘরেই তৈরি করে নেয়া যায় দারুণ কার্যকরী কিছু এক্সফলিয়েটর। ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল আর ২ চা চামচ চিনি একসাথে মিশিয়ে দুই হাতে ঘষে নিন ১৫ মিনিট। এক্সফলিয়েট করাও হলো, আবার তেলের কারণে হাত ময়েশ্চারাইজ করাও হলো। এ ছাড়াও মুগডাল বেটে নিয়ে ঘষে ঘষে হাতে লাগালে সেটাও এক্সফলিয়েটর হিসেবে কাজ করে। মনে রাখবেন, ফাটা চামড়ায় এক্সফলিয়েট করা উচিত নয়। ফাটা সেরে গেলে তখনই এক্সফলিয়েট করতে হবে।
মাঝে মধ্যে দুই হাতে কোনো প্যাক লাগানো প্রয়োজন। সপ্তাহে অন্তত একদিন আপনার হাতের ত্বকের ধরন বুঝে মাস্ক লাগান। এতে করে হাত হবে উজ্জ্বল, কোমল ও দাগহীন।

অতিরিক্ত শুষ্ক হাতের জন্য
৫০ মিলিলিটার গোলাপজলের সাথে ১ টেবিল চামচ গ্লিসারিন লাগিয়ে দুই হাতে মেখে নিন। ৩০ মিনিট পর শুধু পানি দিয়ে ধুয়ে মুছে নিন। ময়েশ্চারাইজার লাগান।
৪ কাপ কুসুম গরম পানিতে ৮ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে ২০ মিনিট হাত ডুবিয়ে রাখুন। হাতের রুক্ষতা দূর হবে। ২০ মিনিট পর হাত ধুয়ে মুছে ময়েশ্চারাইজার লাগান।

নারকেল তেল, জলপাই তেল ও তিলের তেল সমপরিমাণ নিয়ে একটি মিশ্রন বানিয়ে কুসুম গরম করে হাতে মাসাজ করে হাত দুটো ভালোভাবে ঢেকে সারারাত রাখুন। সকালে দেখবেন হাতের শুষ্ক ও রুক্ষভাব দূর হয়ে গেছে।
নখ সুন্দর করতে ও হাতের ত্বক কোমল করতে এক কাপ গরম দুধ একটি পাত্রে নিয়ে এতে ২০ মিনিট হাত ডুবিয়ে রাখতে হবে। ২০ মিনিট পর হাত ধুুয়ে নিতে হবে।
১ টেবিল চামচ গ্লিসারিন, ৬ টেবিল চামচ গোলাপজল, ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, ১টি ডিমের কুসুম, ও ১ টেবিল চামচ লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। হাতে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এটি যেমন রুক্ষতা দূর করে, তেমনি হাতকে উজ্জ্বল ও সুন্দর করে তোলে।

হাতের দাগ ও কালোভাব দূর করতে :
২ টেবিল চামচ সূর্যমুখী তেল, ২ টেবিল চামচ লেবুর রস, ৩ টেবিল চামচ চিনি মিহি করে পিষে নেয়া। সব একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। হাতে ঘষে ঘষে লাগান। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এতে করে হাত ময়েশ্চারাইজ হবে এবং হাতের উজ্জলতা বাড়বে।
কমলার খোসা বেটে এর সাথে কাঁচা গরুর দুধ মিশিয়ে সপ্তাহে একদিন দুই হাতে লাগালে হাতের উজ্জলতা দ্রুত বৃদ্ধি পায় ও রোদেপোড়া দাগ দূর হয়।
অ্যালোভেরা পাতার ভেতর থেকে জেলি বের করে নিয়ে দুই হাতে লাগিয়ে ২০ মিনিট রাখলে হাতের দাগ ও কালচে ভাব দূর হয়।

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us