গোখরার বিষের জিনোম আবিষ্কার : আসছে অব্যর্থ ওষুধ

হামিম উল কবির | Jan 09, 2020 06:18 am
গোখরা

গোখরা - ছবি : সংগৃহীত

 

সামনের দিনগুলোতে সাপে কামড়ালে মানুষ আর হয়তো তেমন পাত্তা দেবে না। খুব শিগগিরই গোখরার মতো বিষধর সাপের অব্যর্থ ওষুধ চলে আসছে বাজারে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা ভারতীয় গোখরা সাপের বিষের জিনোম কোড বের করে ফেলেছেন।

সর্প দংশন বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য সমস্যার একটি কিন্তু তা নীতি নির্ধারকদের নজর এড়িয়ে গেছে সব সময়। বিশ্বের কোনো কোনো অঞ্চলে সাপের কামড়ে অনেক মানুষ মারা যায়। কিন্তু এতে প্রতিকারের খুব বেশি কিছু করার থাকে না বলে নীতি নির্ধারকরা এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছেন না। বাংলাদেশেই বছরে মারা যায় ছয় হাজার মানুষ। বিষধর সাপের কামড়ে বাংলাদেশের মানুষ প্রথমেই ওঝা অথবা কবিরাজের কাছে ছুটে যায় বলে কোথায় কতজন মারা যাচ্ছে এর সঠিক হিসাব নেই। শেষ পর্যন্ত যারা হাসপাতালে আসেন তাদের হিসাব নিয়ে বলা হচ্ছে বাংলাদেশে বছরে ছয় হাজার মারা যাচ্ছে সাপের কাপড়ে। সারা বিশ্বে বিষধর সাপের কামড়ে বছরে মারা যাচ্ছে প্রায় এক লাখ মানুষ।

বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং সাপের বিষের গবেষক অধ্যাপক ডা: এম এ ফায়িজ জানিয়েছেন, বন্যার সময় বাংলাদেশে সাপের কামড়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ মারা যায়। সাপ সাধারণত মানুষের বসবাসকৃত এলাকা থেকে অনেক দূরে বাস করে। কিন্তু বন্যার সময় পানির কারণে এরা মানুষের কাছাকাছি এলাকায় চলে আসে। এ সময় মানুষ সহজেই বিষধর সাপের সংস্পর্শে চলে এলে আপাতত নিরীহ এ প্রাণীটি মানুষের অজান্তেই হঠাৎ কামড়ে দিয়ে থাকে এবং সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে মানুষ মৃত্যুবরণ করে। বাংলাদেশে ৮২ ধরনের সাপ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ২৭ জাতের সাপ বিষধর। এর মধ্যে ছয় জাতের বিষধর সাপ মানুষের জন্য উদ্বেগের কারণ বেশি। গোখরা এবং কালনাগিনী বিষধর সাপের মধ্যে অন্যতম।

অপর দিকে বিশ্বব্যাপী বছরে ৫৪ লাখ মানুষকে সাপে কামড়ায়। এর মধ্যে বিষধর সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয় ২৭ লাখ মানুষ। এই ২৭ লাখ থেকে বছরে এক লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করে এবং তিন লাখ মানুষের অঙ্গহানি ঘটে এবং বিকলাঙ্গতায় কাটে তাদের বাকি জীবন।

উল্লেখ্য ১৮৯১ সালে ফ্রান্সের চিকিৎসক আলবার্ট ক্যালমেট ভিয়েতনামের সায়গন (বর্তমানে হো চি মিন) শহরে এ সংক্রান্ত একটি ক্লিনিক চালু করেন গুটি বসন্ত ও জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাক্সিন আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে। কিন্তু গোখরা সাপের কামড়ে প্রচুর মানুষ মারা যাওয়ায় তিনি খুবই মর্মাহত হন এবং তিনি সাপের বিষে কাজ করে এমন কোনো ওষুধ আবিষ্কার করা যায় কি না চেষ্টা করতে থাকেন। তখন থেকে আলবার্ট সাপের কামড়ে বেঁচে যাওয়া মানুষের পচা মাংসপেশি ও ভেঙে যাওয়া টেনডনের চিকিৎসা করতে শুরু করেন। মানুষকে সুস্থ করতে গিয়ে আক্রান্ত স্থানের অনেকটা কেটে ফেলতে হয়। পরে তিনি বিষ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন এবং ইঁদুরের দেহে অল্প অল্প করে সাপের বিষ ঢুকিয়ে মাত্রা পরীক্ষা করেন। তিনি দেখেন ইঁদুরের দেহে স্বল্প মাত্রায় বিষ ঢুকিয়ে দিলে ইঁদুরের কোনো সমস্যা হয় না, কিছু দিন পর স্বাভাবিক চলাফেরা করতে শুরু করে। এভাবে ডা: আলবার্ট কেলমেট ইঁদুরের রক্ত নিয়ে সাপের বিষের প্রাথমিক ওষুধ তৈরি করেন। পরে তিনি ঘোড়া ও গাধার দেহে স্বল্প মাত্রার সাপের বিষ ঢুকিয়ে রক্ত সংগ্রহ করেন এবং সেখান থেকে অ্যান্টিবডি নিয়ে ব্যাপক মাত্রায় সাপের বিষের ওষুধ তৈরি করেন। এখন পর্যন্ত ডা: আলবার্টের আবিষ্কৃত পদ্ধতিতেই সাপের বিষের ওষুধ সংগ্রহ করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক একটি গবেষকদল দুই বছরের চেষ্টায় ভারতীয় গোখরা সাপের জিনোম বের করেছে। এই আবিষ্কারের ফলে সব ধরনের বিষধর সাপের কামড়ের ওষুধ চলে আসবে। ভারতীয় গোখরাকে গবেষণার বিষয়বস্তু বানানোর কারণ হিসেবে গবেষকরা জানিয়েছেন, ভারতীয় গোখরার বিষে ১৯ ধরনের টক্সিন (বিষ) রয়েছে। এ গবেষণায় সবগুলো টক্সিনের জিন আবিষ্কার করা হয়েছে। ফলে এখান থেকে সাপের বিষের আধুনিক ওষুধ আবিষ্কার করা সম্ভব। গোখরার জিনোম আবিষ্কারের এ গবেষণাটি বিখ্যাত নেচার জেনেটিক সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us