অবশেষে বৃদ্ধাশ্রম...

শাহিন হাসান | Jan 25, 2020 05:40 pm
অবশেষে বৃদ্ধাশ্রম...

অবশেষে বৃদ্ধাশ্রম... - ছবি : অন্য দিগন্ত

 

স্বামী মারা গেছে সেই কবে। ছেলে সালমানকে নিয়েই রহিমার ছোট্ট সংসার। একমাত্র ছেলের কথা ভেবেই নতুন করে ঘর বাঁধেননি। অনেক আশা পুষে রেখেছেন তিনি পাঁজরের ভেতর। দেখেছেন লাল-নীল কত স্বপ্ন ছেলেকে নিয়ে। রহিমার পুরো জগতটাই এখন পিতাহারা ছেলেটা। যেন প্রতিদিন নতুন নতুন আশা জাগিয়ে সূর্যটা আলো ছড়ায় পৃথিবীতে। একেকটা আশাই তার ভরসা। যা ভাঙা হৃদয়কে চাঙা করতে পিছপা হয় না। মুছে দেয় লেগে থাকা সব কষ্ট। সব যাতনা। যে কষ্টগুলো এক সময় জায়গা পেয়েছিল প্রাণের স্বামীকে হারানোর পর।

দিন যায় রাত আসে। রাত শেষে আবার দিনের পালাও শেষ হয়। হারিয়ে যায় সপ্তাহ। মাস ফুরিয়ে বছরেরও ইতি হয়। দেখতে দেখতে পার হয়ে গেল সালমানের জীবন থেকে ২২টি বসন্ত। জীবনের পড়ন্তবেলায় এসে রহিমা এখন ক্লান্ত। বেশ ক্লান্ত। গতরে খেটেছেন, বাসাবাড়িতে কাজ করেছেন, বোঝাও টেনেছেন মাথায় ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগাতে।

সালমানের নির্জলা হাসিটুকুই রহিমার ক্লান্তিরাশি ধুয়ে দিত দিন শেষে। নিজের সর্বস্ব ছুড়ে ফেলে ছেলের জীবনটাই ছিল তার জীবন। স্বামী চলে যাওয়ার পর সন্তানকে বুকে জড়িয়েই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চান রহিমা।
দু’চোখ ভরে দেখা রহিমার স্বপ্ন আজ সত্য হওয়ার পথে। হৃদয়-কোণে চেপে রাখা স্বপ্নরা আজ বের হয়ে আসবে মুক্তাকাশে। নিয়তি তার দুঃখের অধ্যায় হয়তো এখানেই সমাপ্তি টানবে।

সালমান ভার্সিটির পাট চুকিয়ে গ্রামে ফিরেছে আজ। ছেলেকে কাছে পেয়ে রহিমা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকেন কতক্ষণ। অতিমাত্রার আনন্দগুলো বাঁধ না মেনে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু হয়ে। ছেলেকে বুকে নিয়ে গালে মুখে চুমু খেতে থাকেন। এ যেন তার সাজানো সেই স্বপ্নগুলো, যা বুনেছিলেন রাত-দিন একাকার করে।

কয়েক বছর পর...
সালমান এক ইন্ডাস্ট্রিয়াল অফিসার। বড় বেতনের চাকরি। শহরেই বাড়ি গাড়ির ব্যবস্থা। মাস কয়েক পর সবই নিজের হয়ে যাবে। গ্রামের ঝুপড়ি থেকে মাকে নিয়ে এসেছে শহরের বাড়িতে। ফ্ল্যাটজুড়ে মাত্র তিনজন। মা, ছেলে আর স্ত্রী লিনা। ভার্সিটির তিন বছর জিইয়ে রাখা সম্পর্ক আজ বিয়েতে শেষ হয়েছে।

ভালোই যাচ্ছিল রহিমার দিনকাল। খেয়ে-পরে দিব্বি রাজমাতার মতোই ছিলেন। কিন্তু যুগের অধিক আধুনিকায়ন ধরে রাখতে পারলেন না রহিমা। সুখ যে সবার কপালে সয় না! তার আশার গুড়ে বালি পড়তে শুরু হলো। যেন বালি দিয়ে গড়া তার স্বপ্ন-প্রাসাদটা ঝরে পড়তে লাগল। সঙ্কীর্ণ হয়ে গেল তার পৃথিবীটা। উড়ে এসে জুড়ে বসা পাখিটা যেন সবই কেড়ে নিলো। স্মৃতিপটে ভাসতে লাগল একে একে সব অতীত। কষ্টের বৃষ্টি-ফোঁটা পেয়ে সজীব হয়ে গেল মুছে যাওয়া সব যাতনা। স্বামী হারানো সেই বেদনা।

সময়ের ঘূর্ণিপাকে ঘুরতে থাকে সবই। রহিমা গ্রামের মহিলা। অতি সহজ সরল। গ্রামের কাদামাটি এখনো তার শরীরজুড়ে। শহরের গরম বাতাস তিনি গায়ে মাখতে চান না কিছুতেই। লিনা অস্বস্তি বোধ করে। ধীরে ধীরে স্বামীর কানে বিষ ঢালতে থাকে মায়ের বিরুদ্ধে। একটু দেরিতে হলেও বিষিয়ে যায় স্বামীর মন। কপালে ভাঁজ পড়ে মাকে দেখলে। ভাগ্যের কী করুণ দশা! একদিন বলেই ফেলে মাকে বৃদ্ধাশ্রমের কথা।

রহিমা যেন পাথর হয়ে যান। কথায় বলে, অল্প শোকে কাতর, বেশি শোকে পাথর। যেন তা-ই হলো তার বেলায়। শক্তি হারিয়ে ফেলেন কিছু বলার। মুহূর্তেই গড়িয়ে পড়ে কপোল বেয়ে দু’ফোঁটা অবাধ্য অশ্রু। নীরবে ঝরতে থাকে অশ্রুর ঝর্ণাধারা। ছেলের সুখের কথা ভেবেই আপন করে নেন রহিমা ‘বৃদ্ধাশ্রম’। অবশেষে সেখানেই কেটে যায় তার জীবনের অন্তিম মুহূর্তগুলো।
ফুলতলা, খুলনা।

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us