ভারতে বাংলাদেশী : নেপথ্যে অন্য খেলা?

পরান বালকৃষ্ণান | Feb 18, 2020 08:05 am
ভারতে বাংলাদেশী : নেপথ্যে অন্য খেলা?

ভারতে বাংলাদেশী : নেপথ্যে অন্য খেলা? - ছবি : সংগৃহীত

 

একটি সহজ ক্যুইজ : বাংলাদেশের জনসংখ্যা কত? জবাব : ১৬৩ মিলিয়ন। পরিষ্কার একটি সংখ্যা পেয়ে যাওয়ার পর এখন আসুন একটি অনুমান করি : ধরা যাক বাংলাদেশের লোকসংখ্যার ১০ ভাগ নীরবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে ঢুকে পড়েছে এবং ভারতে অবৈধভাবে কাজ করছে। তাহলে আনুমানিক ১৬ মিলিয়ন লোক ভারতে কাজ করছে বলে ধরা যেতে পারে, এমনকি দেশটির ১০ ভাগ লোক ভারতে চলে আসাটা অসম্ভবই মনে হচ্ছে।

অতিরঞ্জিত চিত্র
বাংলাদেশীদের সংখ্যা নিয়ে কিছু লোক সতর্ক ঘণ্টা বাজিয়ে এমনকি এমন কথাও বলছে যে ভারতে তাদের ২০ মিলিয়ন লোক কাজ করছে। আইআইএম-আহমদাবাদের অর্থনীতির অধ্যাপক চিন্ময় টাম্বের মতে, এই হিসাব আবার প্রায় এক যুগ ধরে বিরাজ করছে। তিনি মনে করেন, ২০ মিলিয়ন সংখ্যাটির কোনো প্রমাণ নেই। তিনি আদমশুমারির ভিত্তিতে বলেন যে বাংলাদেশের জন্ম নিয়ে ভারতে বসবাসকারী লোকের সংখ্যা আসলে ২০০১ সালের ৩.৭ মিলিয়ন থেকে ২০১১ সালে হ্রাস পেয়ে হয়েছে ২.৭ মিলিয়ন। এর একটি কারণ হলো, ১৯৪৭ ও ১৯৭১ সালে ভারতে আসা লোকদের অনেকে মারাও গেছে। আর এই হ্রাস পাওয়ার হার পুরো ভারতে দেখা যাচ্ছে।

ঠিক আছে, তারপরও সংখ্যাটি ১৬ মিলিয়ন ধরে নেয়া হলো এবং ধরা যাক ১০ ভাগ বাংলাদেশ ভারতে চলে এসেছে। অন্য কোনো দেশ হলে ১৬ মিলিয়ন অভিবাসরি ধারণাটি সতর্কঘণ্টায় পরিণত হওয়ার যৌক্তিক কারণ ছিল। সংখ্যাটি সুইডেনের ১০ মিলিয়ন লোকের এক-তৃতীয়াংশ বেশি এবং ব্রিটেনের ৬৯ মিলিয়ন লোকের প্রায় এক চতুর্থাংশ। কিন্তু ভারতে আমরা জনসংখ্যার হিসাবটি যেভাবে করি তা সম্ভবত চীন ছাড়া অন্য কোনো দেশ সেভাবে করে না। ধারণা করা হচ্ছে যে ২০২৪ সালে ভারতের জনসংখ্যা চীনকে ছাড়িয়ে যাবে।
ভারতের জনসংখ্যা প্রায় ১.৩ বিলিয়ন এবং তা বাড়ছে। আর এমনকি যদি আমরা ধরেও নেই যে ১৬ মিলিয়ন বাংলাদেশী এখানে চলে এসেছে, তবে তা হবে ভারতের মোট জনসংখ্যার ১ ভাগের সামান্য বেশি।
কিংবা আমরা ভিন্নভাবেও ভাবতে পারি : এই সংখ্যাটি বিশাল সাগরে একটি ফোঁটা মাত্র।

সত্যিকারের কোনো উদ্বেগ নেই
মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলা মন্তব্য করেছেন যে ভারতের কোনো টেক কোম্পানির প্রধান যদি কোনো বাংলাদেশী হয়, তবে তিনি রোমাঞ্চিত হবেন। তবে খুব শিগগিরই তেমনটি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বরং বিপরীতটিই হতে পারে। বাস্তবতা হলো, ভারতে অভিবাসন করা গরিব বাংলাদেশীরা নিম্নমানের মধ্যেও সবচেয়ে নিম্নমানের কাজ করে থাকে, এসব কাজ স্থানীয়দের অনেকেই করতে চায় না। সম্প্রতি ভারতীয় পুলিশ বেঙ্গালুরু থেকে বেশ কয়েক গ্রুপ বাংলাদেশীকে বহিষ্কার করেছে। তারা ময়লা সংগ্রহ বা গার্বেজ ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছিল।
একইভাবে কুর্গ জেলার পুলিশ গত মাসে খামার মালিকদের তাদের শ্রমিকদের আটকে রাখার নির্দেশ দিয়েছে, যাতে সতর্ককভাবে কাগজপত্র পরীক্ষা করা যায়। আর ইন্দোরে বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গিয়া এক সভায় বলেছেন, তার বাড়ির একদল শ্রমিক ‘বাংলাদেশের অধিবাসী’ বলে তার সন্দেহ হয়। কারণ তাদের খাদ্যাভ্যাস অদ্ভূত- তারা ভাত খায়, কিন্তু রুটি খায় না।

এটা নিশ্চিত যে ভারতের বাংলাদেশীরা উচ্চপদের চাকরি গ্রহণের মতো শিক্ষা গ্রহণ করেনি। টাম্বে হিসাব করে দেখেছেন যে ভারতের ৬৪০টি জেলার মধ্যে প্রায় ৫০০টিতে বিদেশী অভিবাসীদের হার ০.৫ ভাগের নিচে।
এসব ‘উইপোকাই’ কি ভারতের ভিত্তি ধ্বংস করে দিচ্ছে- যার কথা ভারতের রাজনীতিবিদেরা বলছেন?তেমনটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ভারতের নির্বাচনে কি বাংলাদেশী ভোট-ব্যাংক প্রভাব বিস্তার করার মতো কোনো বিপদ ঘটাতে পারে? এমনটা হওয়ার ন্যূনতম সম্ভাবনা যেসব স্থানে আছে সেগুলো হলো আসামের সীমান্ত এলাকা ও পশ্চিমবঙ্গ। অন্যান্য স্থানে বাংলাদেশী অভিবাসীরা এত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে যে নির্বাচনে তাদের প্রভাব পড়ার কোনোই সম্ভাবনা নেই। ফলে ইস্যুটি মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। ভারতে প্রবেশ করা অনেক বাংলাদেশী অভিবাসী হিন্দু। আর বিজেপি সরকার তাদের গ্রহণ করার জন্য দুহাত বাড়িয়ে দিয়েছে, তাদেরকে সিএএর আওতায় নাগরিকত্বও প্রদান করা হবে।
ভারতীয়দের মনে রাখা উচিত, অনেক বাংলাদেশী এখন আরো উপরের দিকে নজর দিচ্ছে, তারা উপসাগরীয় বা ইউরোপে অভিবাসনের স্বপ্ন দেখছে। আর বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিও ভালো করায় ভারতে অভিবাসনের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের ভালো বন্ধু, পরিষ্কার করেছেন যে তিনি সিএএ নিয়ে চরমভাবে উদ্বিগ্ন। সম্ভবত ভারতীয়দের একটু দম নিয়ে জানতে চাওয়া উচিত, সরকার কি আমাদের বন্ধুদের সরিয়ে দিচ্ছে এবং সেটা আদতে কোনো সমস্যাই নয়, সেটিকে বিশাল সমস্যা হিসেবে দেখাচ্ছে।

হিন্দু বিজনেস লাইন


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us