মধ্য এশিয়া ও রাশিয়ায় ইসলাম প্রচার হয়েছে যেভাবে

শাহ্ আব্দুল হান্নান | Feb 27, 2020 05:46 pm
রাশিয়ায় ঈদের জামায়াত

রাশিয়ায় ঈদের জামায়াত - ছবি : সংগ্রহ

 

মধ্য এশিয়ায় ইসলাম প্রবেশ করে প্রায় বারো শ' বছর আগে ইসলামী খেলাফতের সময়। তখন মধ্য এশিয়ার উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, কিরঘিজস্তান, কাজাখস্তান, তাজিকিস্তান ও আজারবাইজান ইসলামী শাসনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। সেসব এলাকায় আরবি ভাষা এবং পরে তুর্কি ভাষা বিস্তার লাভ করেছে। সেখানে কালচার ইসলামভিত্তিক হয়ে যায়। রাশিয়ায় ইসলাম প্রবেশ করে প্রায় হাজার বছর আগে। রাশিয়ায় কিছু কিছু এলাকাতে ইসলাম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্ম। দেশটির মুসলিম এলাকা ছাড়াও অন্যান্য এলাকায় মুসলিমদের সংখ্যা কম বা বেশি।

রাশিয়া একটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ছিল। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মতো রাশিয়াও মধ্য এশিয়ার অনেক মুসলিম রাষ্ট্র ও এলাকা দখল করে নেয়। রাশিয়ার জার শাসনের সময় পঞ্চদশ শতাব্দীতে এবং তারপর এসব ঘটেছিল। কোনো উপনিবেশবাদী শক্তির অধীনে থাকলে দখলকৃত এলাকার অধিকারীদের অবস্থা ভালো থাকে না। মধ্য এশিয়ার মুসলিম এলাকাগুলোর অবস্থাও তেমনই ছিল।

রাশিয়ার অধীনে মুসলিমদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা ছিল না। তাদের ধর্মীয় অধিকার সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল। তাদের অর্থনীতি শোষিত হচ্ছিল রাশিয়া কর্তৃক। এরপর ১৯১৭ সালে কমিউনিস্ট বলশেভিকরা রাশিয়ার ক্ষমতা দখল করে। তারা কমিউনিজম ও নাস্তিক্যবাদ চাপিয়ে দেয়। একটি মাত্র পার্টির রাষ্ট্র কায়েম করে।
কমিউনিস্ট রাশিয়ায় সব ধর্মের লোকজনের অবস্থাই খারাপ ছিল। সবচেয়ে খারাপ ছিল তৎকালীন মুসলমানদের অবস্থা। রাজনৈতিক পরাধীনতা এবং অর্থনৈতিক শোষণ ছাড়াও ইসলামকে কার্যত নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। নাস্তিকতা সম্পর্কে অধ্যয়ন করা বাধ্যতামূলক করা হয়। ইসলামী শিক্ষা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কুরআন প্রকাশ ও প্রচার করা নিষিদ্ধ ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৯১ সালে ভেঙে যাওয়া পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে থাকে। রাশিয়ায় কমিউনিজমের পতন হয়েছে।

এখন বর্তমান রাশিয়া ও মধ্য এশিয়ার মুসলিম গোষ্ঠী, তাদের অবস্থা আলোচনা করব। প্রথমত, রাশিয়ান ফেডারেশনের আলোচনায় আসি। বর্তমান রাশিয়া কর্তৃক মধ্য এশিয়ার ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এখানকার রাশিয়ার মুসলিম এলাকাগুলো হচ্ছে- চেচনিয়া, ইংগুশেতিয়া, দাগেস্তান, তাতারস্থান ও কারাজাই চেরকেশিয়া। মুসলিম এলাকাগুলোর জনসংখ্যা প্রায় তিন কোটি। এর মধ্যে দুই কোটি মুসলিম। ইংগুশেতিয়ার ৯৬ শতাংশ মানুষ মুসলিম। দাগেস্তানের মুসলিম জনসংখ্যা ৯২ শতাংশ। তাতারস্থান ও কারজাই এলাকায় ৫০ শতাংশের বেশি মুসলিম। রাশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলেও মুসলিম আছে। রাশিয়ার সব এলাকা মিলে মুসলিমরা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ ভাগ।

বর্তমানে রাশিয়ায় মুসলমানরা প্রায় পুরোপুরি স্বাধীন। তাদের সব মসজিদ খুলে দেয়া হয়েছে। তারা ধর্ম শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারেন। নতুন মসজিদ প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। ইসলামী সাহিত্য প্রকাশ ও প্রচার করতে পারেন। বিশ্বের অন্যতম বড় মসজিদ কিছু দিন আগে মস্কোতে তুরস্কের সহায়তায় তৈরি হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন উপস্থিত ছিলেন।

এখন মধ্য এশিয়ার মুসলিমদের অবস্থা আলোচনা করছি। সেখানে রয়েছে কাজাখস্থান (৭০% মুসলিম), কিরঘিজস্থান (৮৬% মুসলিম), তাজিকিস্তান (৯৮% মুসলিম), উজবেকিস্তান (৯০% মুসলিম) এবং তুর্কমেনিস্তান (৯৩% মুসলিম)। এগুলো সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন পর্যন্ত রাশিয়ার দখলে ছিল। এই রাষ্ট্রগুলোর মোট জনসংখ্যা সাড়ে ৮ কোটি যার ৯০ শতাংশ মুসলিম।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এসব রাষ্ট্র স্বাধীন হয়েছে। তবে এদের শাসকেরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাবেক কমিউনিস্ট। তারা তাই তাদের রাষ্ট্রকে সেকুলার ঘোষণা করেছেন। এর পরও কোনো কোনো রাষ্ট্র ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসির সদস্য হয়েছে, ইসলামী ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সদস্য হয়েছে। সেখানে রাজনৈতিকভাবে ইসলামকে ‘স্বাধীন’ বলা যায় না। কিন্তু ভবিষ্যতে এসব এলাকায় গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটলে ইসলামই মূল শক্তিতে পরিণত হবে। এখনই ইসলাম এসব দেশের মূল সামাজিক শক্তি। মুসলিমরা মোটামুটি স্বাধীনভাবে ইসলাম চর্চা করতে পারেন, ইসলামী শিক্ষা নিতে পারেন, কুরআন প্রকাশ করতে পারেন। রাশিয়ার এসব দেশের মুসলিমরা এখন হজ পালন করতে পারছেন। একমাত্র রাশিয়া থেকেই ২০১৮ সালে প্রায় ২০ হাজার মুসলিম হজ পালন করেছেন। মেয়েদের শিক্ষা বাড়ছে এবং হিজাবের ব্যবহারও বাড়ছে। এসব দেশ থেকে ছাত্রছাত্রীরা মুসলিম বিশ্বে পড়তে যাচ্ছে এবং তারা ফিরে এসে কাজ করছে ইসলামের জন্য।

শেষে আমি বলব, মধ্য এশিয়ায় ইসলামের ওপর আজও যেসব বাধা আছে এবং মুসলিমদের ওপর যেসব নির্যাতন করা হচ্ছে, তা দূর হবে। কেননা ওইসব দেশে ক্রমে ক্রমে গণতন্ত্র প্রসার লাভ করছে। গণতন্ত্রের লাভ হচ্ছে জনগণ যা চায়, শেষ পর্যন্ত তা-ই হয়। মধ্য এশিয়ার জনগণ গভীরভাবে মুসলিম। সুতরাং শেষ পর্যন্ত তারা এবং তাদের আদর্শ ইসলামই বিজয়ী হবে।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us