মুসলিম শাসকেরা ভারতকে যেভাবে সভ্য করেছিলেন

গোলাম মাওলা রনি | Feb 27, 2020 05:55 pm
মুসলিম শাসকেরা ভারতকে যেভাবে সভ্য করেছিলেন

মুসলিম শাসকেরা ভারতকে যেভাবে সভ্য করেছিলেন - ছবি : সংগ্রহ

 

পাপাই নামক একটি মজার কার্টুন চরিত্র আমাদের দেশের অবুঝ শিশুদের বহু দিন পর্যন্ত মাতিয়ে রেখেছিল। বিভিন্ন টেলিভিশনে বিশেষত বিটিভিতে সুদীর্ঘ সময় ধরে পাপাই কার্টুনটি প্রদর্শিত হয়েছে। শিশুরা যখন পাপাইকে দেখে হইহুল্লোড় করত তখন আরো অনেকে কৌতূহলী পিতার মতো আমিও কার্টুনটির দিকে মাঝে মধ্যে চোখ বুলাতাম। সাধারণ ভাঁড় প্রকৃতির চরিত্র পাপাই তার পকেটে স্পিনাচ নামে এক আশ্চর্য ওষুধ লুকিয়ে রাখে। বিরুদ্ধ শক্তিরা হামলা করলে সে ওষুধটি খায়, আর তাতে করে তার হাত ভয়ঙ্কর রকম শক্তিশালী হয়ে ওঠে। পাপাইয়ের সারা শরীরে ওষুধের কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না কেবল হাত ছাড়া। সুতরাং একটি সাধারণ দেহ নিয়ে একজন ভাঁড় যখন তার অসম্ভব বলীয়ান হাত দিয়ে ক্ষণিকের জন্য সুপারম্যান হিসেবে হম্বিতম্বি করে, তখন শিশুরা ভারি আনন্দ পায়।

আজকের নিবন্ধ লিখতে গিয়ে পুরনো সেই পাপাই চরিত্রের কথা কেন মনে হলো সেই কাহিনী বলার আগে নেংটু রাজাদের কীর্তিকলাপ সম্পর্কে কিছু বলে নিই। রাজনীতি যে পৃথিবীর ইতিহাসে কবে নাগাদ শুরু হয়েছিল তা নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারেনি। তবে দুনিয়ার ইতিহাসে ছয়-সাত হাজার বছরের পুরনো রাজাদের যে লিখিত বিবরণ রয়েছে, তাতে রাজাদের নীতি-আদর্শ-কাজকর্ম-পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে যুদ্ধবিগ্রহের কাহিনী পাওয়া যায়। এই সব ইতিহাসের কোথাও কেবল ভারতবর্ষ ছাড়া নেংটু রাজাদের কোনো বিবরণ নেই। আদিকালে ভারতবর্ষের রাজারা প্রায়ই খালি গায়ে অলঙ্কারাদি পরিধান করে এবং মাথায় রাজমুকুট চাপিয়ে রাজকার্য চালাতেন। তাদের শরীরের নিম্নাংশে জাঙ্গিয়া জাতীয় পোশাক থাকত। পরে অবশ্য কেউ কেউ ধুতি পরতেন। আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের সময়ও ভারতের অনেক রাজদরবারে ওই দৃশ্য দেখা যেত বলে উল্লেখ পাওয়া যায়।

মুসলমানদের ভারত আক্রমণ তথা মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয়ের পর থেকে ভারতের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হতে থাকে। ভারতীয়দের পোশাক-আশাক বিশেষ করে রাজাদের পোশাক-পরিচ্ছদে পারস্য রীতির প্রভাব দেখা দেয়। ফলে রাজাদের ফ্যাশনদুরস্ত নকশি ও বাহারি কাপড়-চোপড় সম্ভবত স্থানীয় বুদ্ধিজীবীরা প্রথম দিকে হজম করতে পারেননি। সেজন্য তারা এসব পোশাকাদি নিয়ে নানা ব্যঙ্গ বিদ্রূপ শুরু করেন এবং সম্ভবত এই সময়ে বেশ কিছু রম্য সাহিত্যও সৃষ্টি হয়, যার একটি আমাদের দেশে ব্যাপক প্রচলিত। গল্পটি একেকজন একেক রকমভাবে পরিবেশন করেন; তো আমিও আজ একটু অন্যভাবে সেই নেংটু রাজার গল্পটি বলে মূল প্রসঙ্গে যাবো।

মহারাজা হঠাৎ করেই তার পোশাক পরিচ্ছদ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লেন। বাহারি নকশাখচিত এবং বহুমূল্য রত্নপাথর দিয়ে অলংকৃত পোশাকাদি মহারাজার কাছে অসহ্য বোধ হতে লাগল। কারণ তার শরীরে অ্যাজমা ও অ্যালার্জি থাকায় তিনি গায়ে পোশাকাদি বেশিক্ষণ রাখতে পারতেন না। ফলে তিনি হালকা পাতলা-মোলায়েম পোশাক আবিষ্কারের জন্য তার রাজ্যের বস্ত্র বিশেষজ্ঞদের নির্দেশ দিলেন। পুরো রাজ্যে হইচই পড়ে গেল। বস্ত্রের নকশাবিদ, প্রকৌশলী অর্থাৎ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার, বুনন শিল্পী, রং শিল্পী থেকে শুরু করে তুলা চাষীদের নিয়ে ঝানু ঝানু আমলারা গভীর রজনী অবধি রাজপ্রাসাদে একের পর এক বৈঠক করে রাজার বস্ত্রের খুঁটিনাট নিয়ে পা-িত্যপূর্ণ আলোচনা শুরু করলেন। ব্যাপক গবেষণা চলতে থাকল এবং একের পর এক বস্ত্রের নমুনা আবিষ্কৃত হলো। কিন্তু কোনোটাই রাজার পছন্দ হলো না। এই অবস্থায় বিজ্ঞানীরা অদ্ভুত সুন্দর, অদ্ভুত মোলায়েম এবং যা কিনা মনুষ্য চক্ষু বা মনুষ্য হস্ত দেখতে বা স্পর্শ করতে পারে না এমনতর বস্ত্র আবিষ্কার করে ফেলল। রাজার সামনে যখন সেই বস্ত্র পরিবেশিত হলো তখন রাজা সেই মহাআশ্চর্য বস্ত্র পরিধান করে রাজদরবারে চলে এলেন।

রাজার নতুন বস্ত্র নিয়ে পুরো রাজদরবারে ধন্য ধন্য রব পড়ে গেল। রাজঅমাত্যদের হাততালির বহর দেখে রাজা আনন্দে আত্মহারা হয়ে ভাবতে থাকলেন- হ্যাঁ, এবার তাহলে সত্যিই বস্ত্রশিল্পের যুগান্তকারী উন্নয়ন ঘটল। এহেন অবস্থায় তামাশা দেখার জন্য কিছু নির্বোধ বালক রাজদরবারে ভিড় করেছিল। তাদেরই একজন বলে ফেলল, রাজা! ও রাজা! তুমি তো নেংটু! তোমার কি কোনো কাপড় নেই!

উল্লিখিত গল্প এবং পাপাই নামক কার্টুন চরিত্রটির কথা হঠাৎই আমার মনে হলো রাজধানী ঢাকার কোর্ট-কাচারি বলে পরিচিত পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকায় অবস্থিত ঢাকা জেলা প্রশাসক বা ডিসি নামে পরিচিত কর্মকর্তার অফিস, এসপি অফিস, জেলা জজ কার্যালয়, মহানগর জজ কার্যালয়, সিএমএম বা চিফ মেট্রোপলিটান ম্যাজস্ট্রেট কার্যালয়সহ অন্যান্য অফিসকেন্দ্রিক সার্বিক বেহাল অবস্থা দেখার পর। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে- দেশ এখন সিঙ্গাপুরের চেয়ে ভালো আছে এবং ইউরোপ আমেরিকাকে পেছনে ফেলার জন্য পঁই পঁই করছে এসব কথা যারা বলেন, তাদের যদি একবার হাঁটিয়ে অথবা রিকশায় গুলিস্তান থেকে কোর্টকাচারিতে উপস্থিত করা যেত এবং কোনো একটি কোর্টে হাজিরা দিয়ে পুনরায় ফিরিয়ে এনে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে দাঁড় করিয়ে দেশের উন্নয়নের ব্যাপারে দু-এক মিনিট বক্তৃতা দিতে বাধ্য করা যেত তবে বোঝা যেত পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের অমর কাহিনীর নায়ক-নায়িকা মদনকুমার ও মধুবালার প্রেমের রসায়ন কিভাবে হয়েছিল এবং তারা কিভাবে গেয়েছিল- ‘আমি স্বপ্নে দেখলাম মধুবালার মুখ।’

বেশ কয়েকটি মামলা-মোকদ্দমায় হাজিরা দেয়ার জন্য প্রায় প্রতি মাসেই কোর্টকাচারিতে যাই। যখন আমি কোর্টকাচারির দিকে রওয়ানা করি তখন থেকে ফিরে আসার পর দু-তিন ঘণ্টা পর্যন্ত আমার শরীর মনে যে ক্লান্তি, অবসাদ ও বিষণ্নতা বিরাজ করে তাতে আমার পক্ষে স্বাভাবিক কোনো কাজ করা সম্ভব হয় না। আমার উদ্ভাবনী শক্তি, কাজ করার উদ্যম এবং সিদ্ধান্ত দেয়ার দক্ষতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। ফলে এই সময়গুলোতে আমি কোনো ব্যবসায়িক কর্মকা- করি না- লেখালেখি, সেমিনার বা টকশোর মতো বুদ্ধিবৃত্তিক কর্ম থেকে নিজেকে দূরে রাখি এবং যথাসম্ভব সমাজ সংসার থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়ে দুনিয়া ও আখিরাতের অলৌখিক পরিণতি নিয়ে চিন্তাভাবনা করে সময় কাটাই।

যে বাংলাদেশকে এখন সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ার চেয়ে উন্নত বলে প্রচার করা হয় কিংবা বাংলাদেশের মতো হওয়ার জন্য নাকি ভারত-পাকিস্তানের লোকজন দিবারাত্র স্বপ্নে বিভোর থাকে বলে আমাদের দেশের কিছু লোক ঢোলের মতো শব্দ করে বগল বাজায় সেই দেশের রাজধানীর কোর্টকাচারির পায়খানা-প্রস্রাব খানার যে মান তাতে সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়ার মানুষ তো দূরের কথা সেই দেশের রাস্তায় ঘোরাফেরা করা বেওয়ারিশ কুত্তা বিলাইও মলমূত্র ত্যাগ করার কথা মনে আনবে না। আমরা ছোটকালে শুনতাম যে, একটি পরিবারের রুচিবোধ, আভিজাত্য এবং অভ্যাস বোঝা যায় তাদের বাথরুমের পরিচ্ছন্নতার ওপর। একইভাবে হাঁকডাক, অঙ্গভঙ্গি এবং খাওয়া দাওয়ার ধরন প্রকৃতি দেখে বোঝা যায় মানুষটির মননের স্তর কোন পর্যায়ের। অর্থাৎ মানুষগুলো কি ডারউইনের তত্ত্বমতে আদিম অবস্থায় রয়েছে, নাকি লোকারণ্যে ঠিকানা ও পরিচয়বিহীন অবস্থায় ঘুরে বেড়ানো অঙ্গরাগভোগী নিকৃষ্ট প্রাণীতে পরিণত হয়েছে তা আপনি বুঝতে পারবেন মানুষের দৈনন্দিন আহার-বিহার, কথা-বার্তা এবং আচরণ দেখে।

আপনার আমার শৈশবের উল্লিখিত নৈতিক শিক্ষা মনের গহীনে ধারন করে যদি আপনি কোর্টকাচারিতে যান এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় কিছুটা সময় ঘুরে বেড়ান তবে নিশ্চিত যে, আপনার নিজের প্রতি ধিক্কার জন্ম নেবে। এরপর আপনি যদি সেখানকার হোটেল রেস্টুরেন্টে একটু ঢুঁ মারেন- ফুটপাথের ওপর পসরা সাজিয়ে বসা দোকানদার খরিদ্দার এবং পথচারীদের আচার আচরণ অঙ্গভঙ্গি লক্ষ করেন তবে আপনি যে সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ার নাগরিকদের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছেন তা হাড়ে হাড়ে টের পাবেন। আপনি যদি কোর্টকাচারি এলাকার কিছু দালাল-ফড়িয়া, ঘুষখোর এবং টাউট বাটপাড়ের সাথে কোনো বিষয়ে দেনদরাবার করেন তবে বাংলাদেশের উন্নয়নের স্কেল পৃথিবীর আলোবাতাস ভেদ করে কোন দূরতম গ্রহে ঊর্ধ্বগামী হয়েছে তা এত সহজে বুঝে যাবেন যে, আপনি নিজেকে আলবার্ট অ্যাইনস্টাইন, স্টিফেন হকিং কিংবা জাবির আল হাইয়ানের চেয়েও বড় বিজ্ঞানী হিসেবে দাবি করতে পারবেন এবং আপনার বুদ্ধিশুদ্ধির জন্য নোবেল পুরস্কার পেলেও পেয়ে যেতে পারেন।

কোর্টকাচারি থেকে আরো একটু এগিয়ে সদরঘাট গেলে বাংলাদেশের উন্নয়নের হালহকিকত আপনার কাছে ফকফকা হয়ে যাবে। আপনি যদি বুড়িগঙ্গার তীর দিয়ে পোস্তগোলা অথবা ওয়াইজঘাটের দিকে কিছুটা পথ হাঁটেন কিংবা ডিঙ্গি নৌকা করে নদীটি পাড়ি দিয়ে ওপারের কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া শুভাড্যা ইত্যাদি এলাকায় ঘোরেন তবে সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া তো দূরের কথা- আপনার বাবার নামটিও ভুলে যেতে পারেন। আপনি যখন ডিঙ্গিতে করে একবিংশ শতাব্দীর মহাউন্নয়নের জোয়ারে ভাসতে ভাসতে বুড়িগঙ্গার পুঁতিগন্ধময় পরিবেশ অতিক্রম করবেন তখন যদি আপনার সংজ্ঞা থাকে তবে ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটির ওপর দিয়ে বহমান সায়গন নদী অথবা লন্ডন শহরের মধ্য দিয়ে প্রবহমান টেমস নদীর ইতিহাস যদি মনে করেন তবে দেখবেন যে দুটো নদীর অবস্থাই বুড়িগঙ্গার চেয়েও ভয়াবহ ছিল। কিন্তু হো চিমিনবাসী এবং লন্ডনবাসী নিজেদের সভ্য বলে দাবি করার আগে নদীগুলোকে মানুষের অসভ্যতামি থেকে রক্ষা করেছিল।

বাংলাদেশ কতটা উন্নয়নের মহাসড়কে পৌঁছে গেছে তা অনুধাবনের জন্য বুড়িগঙ্গার তীর এবং বুড়িগঙ্গার পানিই যথেষ্ট। আপনারা শুনে অবাক হবেন, ঢাকার মতো জনসংখ্যা অধুষ্যিত পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোনো মহানগরী নেই যেখানকার বাসিন্দাদের মলমূত্র সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোনোরকম বাছবিচার বা প্রক্রিয়াজাত না করে একেবারে কাঁচা ও তরতাজা অবস্থায় সরাসরি নদীতে ফেলা হয়। আমাদের দেশে সাধারণত আফ্রিকার দেশ উগান্ডাকে নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করা হয়। অথচ ইদি আমিনের জমানায় উগান্ডার রাজধানী কাম্পালার সার্বিক ব্যবস্থাপনা সেই সত্তরের দশকে যতটা আধুনিক এবং স্বাস্থ্যসম্মত ছিল সেই পর্যায়ের ধারের কাছেও আমাদের রাজধানী ঢাকা এই ২০২০ সালে পৌঁছাতে পারেনি। অন্যদিকে, আফ্রিকার আরেক দেশ জাম্বিয়ার রাজধানী লুসাকার কথা না হয় বাদই দিলাম। সেই দেশের জেলা পর্যায়ের একটি শহরে সরকারি যে অবকাঠামো, পয়োনিষ্কাশন পদ্ধতি, পরিচ্ছন্নতা, প্রশস্ত সড়ক-মহাসড়ক-বিদ্যুৎ বিতরণ-সুপেয় পানি এবং ন্যায়বিচার ও সুশাসন নিশ্চিত করেছে তার সাথে বাংলাদেশের কোনো মানদণ্ডেই তুলনা করা যায় না।

আমাদের দেশের অপরিকল্পিত এবং লোক দেখানো তথাকথিত কিছু স্থাপনা নির্মাণের ভাবসাব-হম্বি তম্বি দেখলে মনে হয় সরকার কোনো কুতুবমিনার অথবা তাজমহল তৈরি করছে অনাদিকালের দুনিয়াকে দেখানোর জন্য। মধ্যযুগীয় রাজা বাদশাহরা নিজেদের ক্ষমতা-বিত্তবৈভব ইত্যাদি প্রদর্শনের জন্য প্রায়ই বড় বড় স্থাপনা তৈরি করতেন। রোম নগরীর কলোসিয়াম, দিল্লির লালকেল্লা, ইস্তাম্বুলের টপকাপি প্রাসাদ, চীনের নিষিদ্ধ নগরী ইত্যাদি স্থাপনা তৈরি হয়েছিল তৎকালীন রাজা বাদশাহদের জৌলুস ও জাঁকজমকপূর্ণ শান শওকত প্রদর্শনের জন্য। কিন্তু মধ্যযুগের শাসকরা কেউই অপরিকল্পিতভাবে অথবা জনকল্যাণমূলক খাত বাদ দিয়ে কিংবা ঋণ করে কোনো স্থাপনা তৈরি করেননি। তাদের রাজকোষ যখন স্বর্ণমুদ্রায় উপচে পড়ত কেবল তখনই তারা বিলাসী প্রকল্পে হাত দিতেন। তারা পাপাইয়ের মতো কোনো ওষুধ সেবন করে ক্ষণিকের তরে শক্তিশালী হতেন না কিংবা সারা দেহ দুর্বল করে কেবল বিশেষ একটি অঙ্গ স্বল্পসময়ের জন্য শক্তিশালী বানিয়ে বালক-বালিকা হাসাতেন না।
আমাদের পাক ভারতে জনহিতৈষী শাসক হিসেবে শেরশাহ যে কার্যক্রম করেছিলেন তার সেই কর্ম সারা দুনিয়ায় শতাব্দীর পর শতাব্দী অনুসৃত হচ্ছে। শেরশাহ সবার আগে নিজেকে সৎ এবং ন্যায়বিচারক হিসেবে চরিত্রবান বান্দাহরূপে গড়ে তুলেছিলেন। অতঃপর তার মতো সৎ ও যোগ্য লোকদের সেনাপতি, বিচারক, পুলিশ ও রাজস্ব কর্মকর্তারূপে নিয়োগ দিয়েছিলেন। এরপর তিনি জনগণের চরিত্র গঠন করেছিলেন। এসব কর্ম করতে তিনি সর্বোচ্চ বছরখানেক সময় নিয়েছিলেন। তারপর মাত্র চার বছরের মধ্যে পৃথিবীর ইতিহাসের সর্বকালের সর্ববৃহৎ মহাসড়ক যার দৈর্ঘ্য ছিল দুই হাজার মাইল সেটি নির্মাণ সম্পন্ন করেছিলেন। গ্রান্ড ট্রাংক রোডের প্রতি এক ক্রোস পর পর একটি সরকারি পোস্ট অফিস, হোটেল, সেনাছাউনি, ঘোড়ার আস্তাবল ইত্যাদি সরকারি অফিস ছিল। সেই রাস্তায় যদি কেউ এক বস্তা স্বর্ণমুদ্রা ফেলে যেত তবে এক বছর পর এসেও তা অক্ষত অবস্থায় দেখতে পেত।

মধ্যযুগের শেরশাহের উন্নয়নের সাথে পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল কিংবা ঢাকার মেট্রো রেলের তুলনা করলে বর্তমানের উন্নয়ন কি লোক হাসানো নাকি লোক কাঁদানো উন্নয়ন তা আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন প্রকল্প এলাকা দর্শনান্তে প্রকল্পগুলোর খরচ-উদ্দেশ্য ইত্যাদি বিবেচনা করলে। এরপর যদি আপনার মাথা ঘুরে যায় বা বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে এবং আপনাকে যদি কোর্টকাচারির বাথরুমে অথবা বুড়িগঙ্গার মাঝখানে ডিঙ্গি নৌকায় করে নিয়ে যাওয়া হয় তখন উন্নয়ন কাকে বলে এবং উহা কত প্রকার এবং কী কী তা হাড়ে হাড়ে টের পাবেন।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us