কাশ্মিরি কুল কোটি টাকার স্বপ্ন আব্দুল বারীর

আব্দুল আওয়াল বাগাতিপাড়া (নাটোর) | Mar 07, 2020 02:48 pm
কাশ্মিরি কুল

কাশ্মিরি কুল - ছবি : সংগ্রহ

 

নাটোরের বাগাতিপাড়ায় বাণিজ্যিকভাবে কাশ্মিরি কুল চাষে সফলতা পেয়েছেন আব্দুল বারী বাকি। উপজেলার চকতকিনগর ও সান্ন্যালপাড়া মাঠে ২৪ বিঘা জমি লিজ নিয়ে নিজ উদ্যোগে বাণিজ্যিকভাবে এ ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন তিনি। চলতি মৌসুমে তিনি প্রায় এক কোটি টাকার কাশ্মিরি কুল বিক্রয় করতে পারবেন বলে আশা করছেন। ভরা মৌসুমে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে কাশ্মিরি কুল। প্রত্যেক গাছে ৭০ থেকে ৮০ কেজি কাশ্মিরি কুল শোভা পাচ্ছে। তার এ সফলতায় উপজেলার অনেক কৃষকই এখন কাশ্মিরি কুল চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।

জানা যায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের খন্দকার মালঞ্চি গ্রামের আব্দুল বারী বাকি ১৯৯৪ সালে এসএস পাস করেন। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে আর লেখাপড়া করা হয়নি তার। বেশ কয়েক বছর বেকার ছিলেন। একপর্যায়ে পৈতৃক জমিতে স্বল্পপরিসরে সবজি চাষ শুরু করেন। সবজি চাষের সুবাদে ২০০৭ সালে কর্মরত বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তন্ময় দাস ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুব্রতকুমার সরকারের সঙ্গে একদিন কথা হয় তার। তাদের অনুপ্রেরণায় ওই বছরই পৈতৃক ও লিজকৃত ছয় বিঘা জমিতে থাই-৩ জাতের পেয়ারা চাষ করে সফলতা পান। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

এখন নিজ উপজেলা, পার্শ্ববর্তী উপজেলা লালপুর, নাটোর সদর এবং রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলায় প্রতি বিঘা জমি ১০ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা দরে পাঁচ বছর থেকে ১০ বছর মেয়াদে মোট ১৯৫ বিঘা জমি লিজ নিয়েছেন তিনি। লিজকৃত ১২০ বিঘা জমিতে রয়েছে থাই-৩ জাতের পেয়ারা, ৩০ বিঘা জমিতে কমলালেবু, ১০ বিঘা জমিতে মালটালেবু এবং নিজ মালিকানাধীন জমিতে রয়েছে আম ও লিচু বাগান। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছর পাবনা হর্টিকালচারের উপপরিচালক কে জে এম আব্দুল আওয়ালের পরামর্শে বাণিজ্যিকভাবে কাশ্মিরি কুল চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের নাজমুল নার্সারি থেকে প্রতিটি ৫০ টাকা দরে দুই হাজার ৫০০ কাশ্মিরি কুলের চারা কিনে লিজ নেয়া ২৪ বিঘা জমিতে রোপণ করেন। এর আগে বিভিন্ন প্রজাতির কুলের চাষ করলেও নতুন এই প্রজাতির কুল এবারই প্রথম চাষ করেছেন।

কুলচাষি আব্দুল বারী বাকি জানান, বাগাতিপাড়ায় তিনিই প্রথম কাশ্মিরি কুলের চাষ করেছেন। অন্য কুলের থেকে এ কুলের চাহিদা বেশি। চারা রোপণ, জমির চারপাশে ঘেরাও ও পরিচর্যা বাবদ ২৪ বিঘা জমিতে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ইতোমধ্যে বাগান থেকে কুল বিক্রয় শুরু হয়েছে। শ্রমিকরা বাগানে কুল তোলা ও বাজারজাতকরণে ব্যস্ত সময় পার করছে। প্রথম বছরে গাছ খুব ছোট থাকায় অল্প কিছু টাকার কুল বিক্রি করলেও এই বছর প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে ১২ লাখ টাকা স্থানীয় বাজারে, ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ও পাবনায় পাইকারি বিক্রয় করেছেন। আর এখনো গাছে যে কুল আছে তা ৮৫ লাখ থেকে ৯০ লাখ টাকা বিক্রয় করতে পারবেন বলে তার আশা। ব্যাপারীরা জমিতে এসে দাম করছেন। তিনি আরো জানান, প্রতি দিন গড়ে ১০০ জন লোক তার বিভিন্ন বাগানে কাজ করে। ফলে অনেক লোকের কর্মসংস্থান করতে পেরে তিনি নিজেকে ধন্য মনে করছেন।

বাগাতিপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার মোমরেজ আলী বাগান পরিদর্শন করে জানান, আব্দুল বারী একজন সফল চাষি। উপজেলায় নতুন প্রজাতির এই কুলের বাম্পার ফলন হয়েছে। এই প্রজাতির কুল আকারে বেশ বড়, সুস্বাদু এবং চাষে লাভজনক। বেকার ও শিক্ষিত যুবকরা কুল চাষে এগিয়ে এলে এক দিকে বেকারত্ব দূর হবে অপর দিকে উপজেলার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও ত্বরান্বিত হবে। তিনি কুল চাষে আগ্রহীদের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us