পৃথিবীতে কেন বিপর্যয় নেমে আসে

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন | Mar 08, 2020 05:28 pm
পৃথিবীতে কেন বিপর্যয় নেমে আসে

পৃথিবীতে কেন বিপর্যয় নেমে আসে - ছবি : সংগ্রহ

 

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এবং পঙ্গপালের আক্রমণের জাগতিক উৎপত্তি ও বিস্তৃতির বৈজ্ঞানিক কারণ যাই হোক, এটা নিঃসন্দেহে প্রাকৃতিক বিপর্যয়। এ প্রকৃতির নিয়ন্ত্রকশক্তি একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে যুগে যুগে নানা জাতির ওপর বিপর্যয়, মহামারী, দুর্যোগ-দুর্বিপাক নেমে এসেছে। ঝড়ঝঞ্ঝা, প্লাবন, ভূকম্পন, ভূমিধস, সুনামি, খরা, জলোচ্ছ্বাস, শিলাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, সার্স ও মার্স ভাইরাস, এইডস, দাবানল প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিচিত্র রূপ। অনৈতিক যৌনকর্ম, পাপাচার, ধর্মীয় মূল্যবোধের বিরোধিতা, অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা ও আল্লাহ তায়ালার বিধিনিষেধের অবাধ্যতার কারণে পৃথিবীতে বিপর্যয় নেমে আসে। অতীতে সীমালঙ্ঘন, নাফরমানি, নবী-রাসূলদের প্রতি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে অসন্তুষ্ট হয়ে আল্লাহ তায়ালা বহু জাতিগোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তার অনুমতি ব্যতীত কোনো বিপদ আপতিত হয় না (সূরা তাগাবুন : ৪০)। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক মানুষের প্রতিটি ক্রিয়াকর্ম ও গতিবিধির ওপর নজর রাখেন এবং প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের জন্য প্রতিদান ও শাস্তি দেন। তাওবা, ক্ষমা প্রার্থনা ও সৎ জীবনযাপনের মাধ্যমে এসব বিপর্যয় থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।

মনে রাখতে হবে, আল্লাহ তায়ালা কোনো জাতি ও সম্প্রদায়ের অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না স্বয়ং তারাই নিজেদের অবস্থা, কাজকর্ম, অনৈতিকতা ও অবাধ্যতায় পরিবর্তিত করে না দেয়। যখন আল্লাহ তায়ালা কোনো ব্যক্তি বা সমষ্টিকে আজাব বা শাস্তি দিতে চান তখন কেউ তা রদ করতে পারে না; আল্লাহর নির্দেশের বিপরীতে তার সাহায্যার্থে কেউ এগিয়ে আসতে পারে না (সূরা রা’দ; মা’আরিফুল কুরআন, পৃষ্ঠা-৭০২)।

পাঁচ হাজার বছর আগে হজরত লুত আ:-এর উম্মতকে সমকামিতার মতো গর্হিত কর্মের জন্য তাদের পাঁচ লাখ অধ্যুষিত জনপদকে আসমানে তুলে আছাড় দিয়েছেন। এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে এক নদী, যা ইতিহাসে ‘মৃত সাগর’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে। এ সাগরের দৈর্ঘ্য ৬৭ কিলোমিটার, প্রস্থ ১৮ কিলোমিটার এবং গভীরতা ১.২৪০ ফুট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪২২ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এ সাগরের পশ্চিমে রয়েছে ইসরাইল ও পূর্বে জর্দান। এখান থেকে জেরুসালেম নগরীর দূরত্ব মাত্র ১৫ মাইল। অন্যান্য মহাসাগরের তুলনায় লবণাক্ততা বেশি হওয়ায় এতে কোনো মাছ জন্ম নেয় না। জর্দান নদী থেকে মাছ এই নদীতে আসার সাথে সাথে মারা যায়। তবে আশ্চর্যজনকভাবে রয়েছে বিপুল ব্যাকটেরিয়া এবং ক্ষুদ্রকায় ছত্রাক ।

পবিত্র কুরআন ও হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, সমকামিতার মতো জঘন্য পাপকার্যে লিপ্ত হওয়ার কারণে সদোম ও গোমাররাহ নামক লোকালয় মহান আল্লাহর হুকুমে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত হয়ে যায়। ঘটনাটি আজ থেকে প্রায় ছয় হাজার বছর আগের। ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থানটি বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের ‘মৃতসাগর’। আল্লাহর নবী হজরত লুত আ:-এর বারবার সাবধান বাণী সত্ত্বেও সে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী অবৈধ যৌন সম্পর্ক ও সমকামিতার অভ্যাস পরিত্যাগ করেনি। পৃথিবীর বুকে একমাত্র তারাই যৌনক্ষুধা চরিতার্থের উদ্দেশ্যে মহিলাদের বাদ দিয়ে পুরুষদের ওপর উপগত হতো (সূরা আরাফ : ৮০-৮১)। ফলে গজব হিসেবে আল্লাহ তায়ালা এ জনপদের জনগোষ্ঠীকে বাস্তুভিটাসহ বিধ্বস্ত করে দিলেন।

অনৈতিক যৌন সম্পর্ক ও সমকামিতার শাস্তি স্বরূপ সাম্প্রতিককালে দেখা দিয়েছে এইডস/এইচআইভি। ‘এইডস’ মানে নিশ্চিত মৃত্যু। আজ পর্যন্ত এর কোনো কার্যকর ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। ২০১৭ সাল পর্যন্ত ‘এইডস’-এ আক্রান্ত হয়ে দুনিয়ায় তিন কোটি ৫০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছে তিন কোটি ৭০ লাখ মানুষ। বাংলাদেশে এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছে সর্বপ্রথম ১৯৮৯ সালে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে এইডস/এইচআইভি ভাইরাস বহনকারী মানুষের সংখ্যা ১৪ হাজার। এর মধ্যে মারা গেছে এক হাজার ২২ জন। এইচআইভি সংক্রমণের প্রধান কারণ হচ্ছে, অবৈধ যৌন মিলন ও সমকামিতা।

হজরত নুহ আ:-এর অধস্তন পুরুষ, প্রাচীন আদ জাতির হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তায়ালা হজরত হুদ আ:কে নবী হিসেবে পাঠালেন। জর্দান থেকে হাজরামাউত ও ইয়েমেন পর্যন্ত ছিল তাদের অধিবাস। গৃহনির্মাণ ও স্থাপত্যশৈলীতে তাদের দক্ষতা ছিল অসাধারণ। কিন্তু তারা আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ অমান্য করে মূর্তিপূজা শুরু করে। শাদ্দাদ স্বর্ণখচিত একটি কৃত্রিম বেহেশত বানিয়ে ঔদ্ধত্যের পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছিল। ‘আদ জাতির অমার্জনীয় পাপের ফলে গজব স্বরূপ তিন বছর বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকে। ফলে ক্ষেতখামার, বাগান ও গাছপালা পানির অভাবে শুকিয়ে যায় এবং প্রচণ্ড খাদ্যাভাব দেখা দেয়। তারপরও তারা পাপাচার ত্যাগ করেনি। অবশেষে চূড়ান্ত শাস্তি নেমে আসে। সাত রাত-আট দিনব্যাপী অনবরত ঘূর্ণিঝড় ও বজ্রপাতে বিধ্বস্ত হয়ে যায় জনপদ ও লোকালয়। মানুষ ও জীবজন্তু শূন্যে উত্থিত হয়ে সজোরে জমিনে পতিত হয়। উৎপাটিত খর্জুর বৃক্ষের কাণ্ডের মতো তাদের নিক্ষেপ করা হয়েছিল’ (সূরা আল কামার : ১৮-২১)।

মাদায়েনের সামুদ জাতিকে আল্লাহ তায়ালা বিধ্বস্ত করে দেন অগ্নিবৃষ্টি দিয়ে। তারা ওজনে কম দিত। দুর্নীতি, ডাকাতি, ধর্ষণ, ছিনতাই ও খাদ্য গুদামজাত করে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করত। আল্লাহ তায়ালা তাদের সতর্ক করার জন্য পাঠালেন হজরত সালেহ আ:কে। তারা নবীর কথা তো শোনেইনি, উপরন্তু আল্লাহর নিদর্শন উষ্ট্রীকে হত্যা করতে দ্বিধা করেনি’ (সূরা আশ শামস : ১২-১৫)। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা স্পষ্ট- ‘মানুষের কৃতকর্মের জন্য জলে-স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে তাদেরকে কোনো কোনো কর্মের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে’ (সূরা আর রুম : ৪১)।

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us