বিশ্বজুড়ে ৮ প্রজাতির করোনাভাইরাসের তাণ্ডব

অন্য দিগন্ত ডেস্ক | Apr 04, 2020 09:32 pm
বিশ্বজুড়ে ৮ প্রজাতির করোনাভাইরাসের তাণ্ডব

বিশ্বজুড়ে ৮ প্রজাতির করোনাভাইরাসের তাণ্ডব - সংগৃহীত

 

সারা দুনিয়ায় এখন একটাই কথা ; করোনাভাইরাস। পুরো বিশ্বকে কাপিয়ে দিয়েছে। জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে ১০ লাখ ৯৯ হাজার ৩৮৯ জনের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। সারা বিশ্বে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে করোনাভাইরাস।

তবে এখন সবচেয়ে আলোচিত যে করোনাভাইরাস, তার নাম দেয়া হয়েছে কোভিড-১৯। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ১১ লাখ ৩৩ হাজার ৮০১ জন। আর মারা গেছে ৬০ হাজার ৩৯৮ জন। কোভিড-১৯ নাম দেয়ার আগে একে বলা হতো নভেল করোনাভাইরাস।

উইকিপিডিয়ায় বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস বলতে ভাইরাসের একটি শ্রেণীকে বোঝায় যেগুলো স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিদেরকে আক্রান্ত করে। মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস শ্বাসনালীর সংক্রমণ ঘটায়। এই সংক্রমণের লক্ষণ মৃদু হতে পারে, অনেকসময় যা সাধারণ সর্দিকাশির ন্যায় মনে হয় (এছাড়া অন্য কিছুও হতে পারে, যেমন রাইনোভাইরাস), কিছু ক্ষেত্রে তা অন্যান্য মারাত্মক ভাইরাসের জন্য হয়ে থাকে, যেমন সার্স, মার্স এবং কোভিড-১৯। অন্যান্য প্রজাতিতে এই লক্ষণের তারতম্য দেখা যায়। যেমন মুরগির মধ্যে এটা উর্ধ্ব শ্বাসনালী সংক্রমণ ঘটায়, আবার গরু ও শূকরে এটি ডায়রিয়া সৃষ্টি করে। মানবদেহে সৃষ্ট করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়ানোর মদো কোনো টিকা বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ আজও আবিষ্কৃত হয়নি।

করোনাভাইরাস রাইবোভিরিয়া পর্বের নিদুভাইরাস বর্গের করোনাভিরিডি গোত্রের অর্থোকরোনাভিরিন্যা উপ-গোত্রের সদস্য তারা পজিটিভ সেন্স একক সূত্রবিশিষ্ট আবরণীবদ্ধ বা এনভেলপড ভাইরাস। তাদের নিউক্লিওক্যাপসিড সর্পিলাকৃতির। এর জিনোমের আকার সাধারণত ২৭ থেকে ৩৪ কিলো বেস-পেয়ার-এর মধ্যে হয়ে থাকে যা এ ধরনের আরএনএ ভাইরাসের মধ্যে সর্ববৃহৎ।

করোনাভাইরাস শব্দটি ল্যাটিন ভাষার করোনা থেকে নেয়া হয়েছে যার অর্থ "মুকুট"। কারণ দ্বিমাত্রিক সঞ্চালন ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে ভাইরাসটির আবরণ থেকে গদা-আকৃতির প্রোটিনের কাঁটাগুলোর কারণে এটিকে অনেকটা মুকুট বা সৌর করোনার মতো দেখায়। ভাইরাসের উপরিভাগ প্রোটিন সমৃদ্ধ থাকে যা ভাইরাল স্পাইক পেপলোমার দ্বারা এর অঙ্গসংস্থান গঠন করে। এ প্রোটিন সংক্রমিত হওয়া টিস্যু বিনষ্ট করে। ভাইরাসটি ডাইমরফিজম রূপ প্রকাশ করে। ধারণা করা হয়, প্রাণীর দেহ থেকে এই ভাইরাস প্রথম মানবদেহে প্রবেশ করে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, সারা বিশ্বে আট প্রজাতির করোনাভাইরাস দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। দ্রুত বদলাচ্ছে তার জিনগত বৈশিষ্ট্য। ৩৫টি দেশের বিজ্ঞানীরা এই মারণ ভাইরাসের হাজারের বেশি জিনগত বৈশিষ্ট্য উন্মোচন করেছেন। ইউরোপ বা চীনে যে করোনাভাইরাস প্রাণঘাতী হয়েছে তার সঙ্গে উপমহাদেশে হামলা চালানো ভাইরাসের তারতম্য রয়েছে। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় সবচেয়ে করোনাভাইরাসের মারণ ক্ষমতা অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

জিনগত পরিবর্তনের থেকে আবহাওয়ার তারতম্যকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। পদ্মভূষণ পুরস্কার জয়ী চিকিৎসক জি পি নাগেশ্বর রেড্ডি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, চীন ও ভারতে ভাইরাসটির জিনগত বৈশিষ্ট্য উন্মোচন করা হয়েছে। তবে ভারতে হামলা চালানো ভাইরাসটির জিনগত বৈশিষ্ট্যে তারতম্য রয়েছে। ভারতে যে করোনাভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন সেটির স্পাইক প্রোটিনে কিছু জিনগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। গবেষকরা বলেছেন, যে সব জায়গায় করোনা হামলা চালিয়েছে সব থেকে বেশি সেখানকার গড় তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৪ থেকে ৯ গ্রাম। তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বাড়লে করোনা জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে বলে আন্দাজ করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যেকোনো ভাইরাসের ভিতরে ডিএনএ ও আরএনএর মতো বংশীয় নিউক্লিওটাইড থাকে। এটি প্রোটিনের আবরণে মোড়া অবস্থায় থাকে। কিছু প্রোটিন স্পাইক ভাইরাসের দেহ থেকে বেরিয়ে থাকে। করোনাভাইরাসের ভিতরে একটি ফিতার আকৃতির আরএনএ রয়েছে। ভাইরাসের গা থেকে বেরিয়ে রয়েছে এস-প্রোটিন নামে স্পাইক। এই আরএনএ ভাইরাস সব সময়ই সব সময় জিনগত পরিবর্তন ঘটাতে থাকে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সার্স, মার্স, সোয়াইন ফ্লু যেকোনো ভাইরাসের বিস্তারেই আবহাওয়ার প্রভাব ছিল। করোনার ক্ষেত্রেও তাই। আবহাওয়ার তারতম্যে এই ভাইরাসের গতিবিধি ভিন্ন হয়। ভাইরাসের মারণ ক্ষমতাও নির্ভর করে আবহাওয়ার তারতম্যে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, শ্বাসনালীতে প্রবেশের পরই করোনা কোষ দখল করে লাখ লাখ সংস্করণ তৈরি করছে। তাই উপসর্গ প্রকাশ পাওয়ার আগেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। ইতালিতে যে প্রজাতির করোনা আক্রমণ চালিয়েছে সেটির ইআরএনএতে তিনটি নিউক্লিওটাইড পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে সেটি প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। ভারতে হামলাকারী করোনা কিন্তু ততটা বিপদজনক নয়। এটুকুই যা আশার বাণী শুনিয়েছেন বিজ্ঞানীদের একটি দল।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us