সার্ক দেশগুলোতে কেন করোনার সংক্রমণ এত কম?

শারিয়ের খান | Apr 28, 2020 07:06 pm
সার্ক দেশগুলোতে কেন করোনার সংক্রমণ এত কম?

সার্ক দেশগুলোতে কেন করোনার সংক্রমণ এত কম? - সার্ক দেশগুলোতে কেন করোনার সংক্রমণ এত কম?

 

করোনাভাইরাসে বিশ্বের গড় মৃত্যু হার যেখানে প্রতি মিলিয়নে গড়ে ২৬.১, তখন বিশ্বের সবচেয়ে ঘন বসতিপূর্ণ সার্ক দেশগুলোতে এখনো মৃত্যুর হার খুবই কম।
বেলজিয়ামে যেখানে করোনাভাইরাসে প্রতি মিলিয়নে মারা গেছে প্রায় ৬০০ জন, সেখানে শ্রীলঙ্কা, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে এক ভাগেরও কম। এখন পর্যন্ত মালদ্বীপ, ভুটান ও নেপালে একজনের মারা যাওয়ার খবরও পাওয়া যায়নি।

প্রতি হাজার সংক্রমণে মৃত্যুর হারের আলোকেও উপমহাদেশের রোগীরা ইউরোপের তুলনায় ভালো আছে। বাংলাদেশের মৃত্যু ২৮ এবং সার্কের অন্যান্য দেশের অবস্থাও একই রকম। ইউরোপের যেসব দেশে ভয়াবহভাবে আঘাত হেনেছে করোনাভাইরাস, তাদের তুলনায় এক-চতুর্থাংশ থেকে এক-পঞ্চমাংশ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইউরোপিয়ান দেশগুলোর তুলনায় এখানকার লোকজন তরুণ হওয়ার কারণেই এমনটা হচ্ছে। বাংলাদেশ বা ভারতের অর্ধেক জনসংখ্যা হচ্ছে ২৪ বছরের কম বয়স্ক। কিন্তু ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে বয়স্ক লোক বেশি। এসব লোক আগে থেকেই নানা রোগে ভুগছিলেন, ফলে করোনাভাইরাসে বেশি হারে সংক্রমিত হয়েছিলেন।

মার্চে সার্কভুক্ত সব দেশে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। ভারতে প্রথম মৃত্যু ঘটে ১২ মার্চ, বাংলাদেশে ১৮ মার্চ। আর পাকিস্তান, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কায় প্রথম মৃত্যু ঘটে ওই মাসের শেষ দিকে।
ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে এসব দেশের প্রত্যেকেই পুরোপুরি বা আংশিক লকডাউন করে। এটি মে মাসের প্রথম দিকে বা মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়।
এই সময়কালে বিশ্বের বাকি অংশে মৃত্যুর হার বাড়তেই থাকে। মধ্য এপ্রিলে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে। ইউরোপ ও আমেরিকা- উভয় স্থানেই তা বাড়ে। কিন্তু সার্ক দেশগুলোতে তা কমতে থাকে।
অবশ্য করোনাভাইরাস বিস্তার সত্যিই মন্থর হয়েছে, তা প্রমাণ করার মতো পর্যাপ্ত পরীক্ষা বাংলাদেশ বা ভারতে করা হয়নি। বাংলাদেশ প্রতি মিলিয়নে পরীক্ষা করেছে ২৬২টি। ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য বা আমেরিকার তুলনায় পরীক্ষা করা হয়েছে খুবই কম।

সার্ক দেশগুলোর মধ্যে ভুটানে সবচেয়ে বেশি হারে পরীক্ষা করা হয়েছে। দেখানে প্রতি মিলিয়নে ১১,৬০৩ জনের পরীক্ষা করা হয়েছে। এরপর মালদ্বীপের স্থঅন। পরীক্ষার হারের দিক থেকে কেবল আফগানিস্তানই বাংলাদেশের থেকে পিছিয়ে রয়েছে।
এর মানে হলো, আরো অনেক করোনাভাইরাস মৃত্যু রয়েছে এবং এই অঞ্চলের প্রকৃত পরিস্থিতি সরকারি প্রতিবেদনে প্রকাশ পাচ্ছে না।
কিন্তু যদি আমরা উপমহাদেশের দেশগুরোর সার্বিক মৃত্যু ও মৃত্যুর হার পর্যালোচনা করি, তবে আমরা প্রকৃত চিত্র পেতে পারি। লকডাউনের কারণে দূষণ বা সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু কমে গেলেও প্রকৃত তথ্য ও এর বিশ্লেষণ খুবই জটিল চিত্র উপস্থাপন করে।

ভারতে মন্থর বিস্তারের চারটি কারণ উল্লেখ করা হয়। ১৬ এপ্রিল কোয়ার্ট ইন্ডিয়ায় অনুপ মালানি, অর্পিত গুপ্তা ও রেবেন আব্রাহাম বলেন, অন্যান্য দেশের চেয়ে পরে এখানে করোনা হানা দিয়েছে। মহামারিটি শুরুতে মারাত্মকভাবে সংক্রমণ ঘটালেও সামান্য বিলম্বও অনেক পার্থক্য সৃষ্টি করে।
তাদের মতে, লকডাউনের কারণেই মহামারিটির বিস্তার হ্রাস পায়।
তারা তৃতীয় কারণ হিসেবে বলেন, করেনায় শনাক্ত ও মৃত্যুর পর্যাপ্ত পরীক্ষা না হওয়ায় সংখ্যাটি কম দেখা যাচ্ছে। অনেক মৃত্যুকে করোনায় মৃত্যু হিসেবেও দেখানো হয়নি।

চতুর্থত, কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে ভারত সম্ভবত সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। গবেষকদের মতে, এখানকার মানুষ যেমন কম বয়স্ক, তেমন আবার তাপমাত্রা বেশি, আর্দ্রতা বেশি, আবার যক্ষ্মার বিরুদ্ধে টিকা গ্রহণের হারও বেশি। যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিষেধক গ্রহণ করায় করোনা মহামারিটি থেকে রক্ষা পেতে সহায়ক হয়েছে।

তাপমাত্রা বেশি হলে কোভিড ১৯ প্রতিরোধ মন্থর হয়?
অনুপ মালানির মতে, ভারতের তাপামাত্রা তুলনামূলক বেশি হওয়াতে ভাইরাসটি মন্থর হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, এই তত্ত্বের কিছু ভিত্তি আছে। বিষুব রেখার উপরে বা নিচের ৩০-৫০ ডিগ্রিতে গড় তাপমাত্রা ৫-১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসব দেশেই করোনার আঘাত ভয়াবহভাবে হয়েছে। অবশ্য, তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা করোনা বিস্তারে কোনো ভূমিকা রাখে না বলেই বেশির ভাগ গবেষকের ধারণা।

যক্ষ্মার টিকা ও ম্যালেরিয়ার ওষুধ
অনুপ মালানি মনে করেন, যেসব দেশে যক্ষ্মার টিকা দেয়া হয় ওইসব দেশে কম সংক্রমণ ঘটেছে। আবার এসব দেশ তুলনামূলক উষ্ণ, তাদের জনসংখ্যাও তরুণ। আবার এসব দেশ অপেক্ষাকৃত গরিব হওয়াতে এখানে সৌভাগ্যবশত পরীক্ষাও হয় অনেক কম।

টিবিসি

 

 

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us