কোন দেশ প্রথমে আবিষ্কার করবে করোনার ওষুধ?

নিজস্ব প্রতিবেদক | May 27, 2020 02:21 pm
কোন দেশ প্রথমে আবিষ্কার করবে করোনার ওষুধ?

কোন দেশ প্রথমে আবিষ্কার করবে করোনার ওষুধ? - সংগৃহীত

 

মার্কিন বায়োটেকনোলজি সংস্থা মডার্না (Moderna Inc) এবং চীনের ক্যানসিনো বায়োলজিকস (Cansino Biologics Inc) করোনাভাইরাস বা Covid-19 ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দৌড়ে আপাতত এগিয়ে থাকলেও, মঙ্গলবার প্রতিযোগিতায় সামিল হলো আরো এক মার্কিন সংস্থা নোভাভ্যাক্স (Novavax), যারা অস্ট্রেলিয়ায় পরীক্ষামূলক ভাবে মানুষের ওপর তাদের ভ্যাকসিনের প্রয়োগ শুরু করেছে। আশা, বছর শেষের আগেই তৈরি হয়ে যাবে পরীক্ষিত ওষুধ।

সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত ৫৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ, মৃত এখন পর্যন্ত প্রায় ৩.৫ লক্ষ, বলছে জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির ট্র্যাকার। এই আবহে বিপুল পরিসরে ভ্যাকসিন পরীক্ষার পরিকল্পনা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যার সঙ্গে যুক্ত হবেন ১ লক্ষেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক, এবং বেছে নেয়া হবে অন্তত এক ডজন সংস্থা, যাদের গবেষণা বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আশা জাগিয়েছে। উদ্দেশ্য, ২০২০ শেষ হওয়ার আগে কার্যকরী এবং নিরাপদ ভ্যাকসিনের উদ্ভাবন, জানাচ্ছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।

Covid-19 চিকিৎসার বিবর্তনে ভারতের ভূমিকা কী? সম্প্রতি এদেশে ফরাসি রাষ্ট্রদূত ইমানুয়েল লেন্যাঁ যা বলেছেন, তাতে এই ভূমিকা নেহাত ছোট নয়। লেন্যাঁর বক্তব্য, ভ্যাকসিনের গণ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নেবে ভারত।

এই মুহূর্তে বিশ্ব জুড়ে ১০০-র বেশি করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা চলছে, কয়েকটি একেবারে শূন্য থেকে শুরু করে, আবার কয়েকটি অন্যান্য রোগের প্রতিরোধে ব্যবহৃত অণুর সাহায্যে। এইসব পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনের অধিকাংশেরই লক্ষ্য, করোনাভাইরাসের বাইরের স্তরে যে ‘স্পাইক’ প্রোটিন রয়েছে, আমাদের শরীরকে সেই প্রোটিন চিহ্নিত করতে শেখানো, যাতে যখন সত্যিই ভাইরাসের আক্রমণ ঘটবে, তাতে সঠিক প্রতিক্রিয়া হয় শরীরে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization বা WHO) জানাচ্ছে, বর্তমানে অন্তত ১০টি সম্ভাব্য ভ্যাকসিনকে মানবদেহে প্রয়োগ করার কাজ চলছে।

# সংবাদ সংস্থা এপি জানিয়েছে, মানুষের শরীরে করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার তালিকায় নবতম সংযোজন মার্কিন বায়োটেকনোলজি সংস্থা নোভাভ্যাক্স, করোনা মোকাবিলায় যারা তাদের NVX-CoV2373 ভ্যাকসিনের পরীক্ষা শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়ায়। পরীক্ষার প্রথম ধাপে এই ভ্যাকসিন ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করানো হবে ১৩১ জন স্বেচ্ছাসেবকের দেহে, জানিয়েছেন সংস্থার মুখ্য গবেষক ডাঃ গ্রেগরি গ্লেন।

এই সংস্থার অস্ট্রেলীয় সহযোগী নিউক্লিয়াস নেটওয়ার্কের সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ পল গ্রিফিন বলেন, “মঙ্গলবার মেলবোর্নে ছ’জন ভলান্টিয়ারকে দিয়ে শুরু হয়েছে এই সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের পরীক্ষা।”

আশা করা হচ্ছে, মেলবোর্ন এবং ব্রিসবেন শহরে ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’-এর প্রথম ধাপের ফলাফল জানা যাবে জুলাই মাসে। এর পরের ধাপে এই ট্রায়াল-এর সঙ্গে যুক্ত হবেন নানা দেশ থেকে সংগৃহীত কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবক। নোভাভ্যাক্স-এর পরিকল্পনা অনুযায়ী, চলতি বছরে ভ্যাকসিনের অন্তত ১০ কোটি ডোজ তৈরি করবে তারা, এবং আগামী বছর সেই সংখ্যা দাঁড়াবে ১৫০ কোটি।

# এবার আসা যাক ভারতের কথায়। আইএএনএস সংবাদসংস্থাকে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR) জানিয়েছে, তাদের দ্বারা প্রস্তুত Covid-19 ভ্যাকসিনের মানবদেহে প্রয়োগ শুরু হতে পারে আজ থেকে ছ’মাস পরে। এই ভ্যাকসিনটি যৌথভাবে তৈরি করছে ICMR এবং ভারত বায়োটেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড (BBIL)। ICMR-এর আঞ্চলিক মেডিক্যাল গবেষণা কেন্দ্রের অধিকর্তা ডাঃ রজনী কান্ত বলেছেন, “পুণের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ভাইরোলজিতে ভাইরাসের যে ‘স্ট্রেইন’ পৃথক করা হয়েছে, তা ব্যবহার করেই ভ্যাকসিন বানানো হবে, এবং BBIL-এর কাছে সেই ‘স্ট্রেইন’ সফলভাবে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আগামী ছ’মাসের মধ্যে এই ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়াল শুরু করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।”

ICMR এবং BBIL মিলে মৃত ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছে, যা সাধারণভাবে ‘immunogenicity’ (কোনও বাহ্যিক বস্তু ব্যবহার করে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা মজবুত করা)-কে পুষ্ট করে। শরীরে প্রবেশ করে সংক্রমণের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করবে এই ভাইরাস। বর্তমানে ভারতে দুটি ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে জাইডাস ক্যাডিলা, এবং একটি করে ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে সেরাম ইন্সটিটিউট, বায়োলজিক্যাল ই, ভারত বায়োটেক, ইন্ডিয়ান ইমিউনোলজিক্যালস, এবং মিনভ্যাক্স।

# ওদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১ লক্ষের বেশি ভলান্টিয়ার এবং ১২ থেকে ১৪টি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারককে নিয়ে শুরু হতে চলেছে ‘অপারেশন ওয়ার্প স্পিড’-এর আওতাধীন একটি বিশাল পরীক্ষা অভিযান, জানিয়েছে সংবাদসংস্থা রয়টার্স। এই অভিযানের মূল লক্ষ্য, ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে যে কাজে ১০ বছর সময় লাগে, সেই কাজ কয়েক মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা।

এই লক্ষ্যে পৌঁছতে একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতা এবং তথ্যের লেনদেন করতে স্বীকৃত হয়েছে পৃথিবীর শীর্ষ ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি। “সব ঠিকঠাক চললে নিশ্চিতভাবে ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারির মধ্যে ভ্যাকসিন তুইরি হয়ে যাবে,” বলেছেন ন্যাশনাল ইন্সটিটিউটস অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস-এর অধিকর্তা ডাঃ অ্যান্টনি ফাউচি।

# ভ্যাকসিন প্রস্তুত করার দৌড়ে যোগ দিয়েছে থাইল্যান্ডও, সৌজন্যে তাদের Thai mRNA ভ্যাকসিন, যদিও তারা সম্প্রতি জানিয়েছে যে তাদের লক্ষ্য হলো সাধ্যের মধ্যে বাজারে ভ্যাকসিন আনা, বিশেষভাবে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলির জন্য, যাতে আন্তর্জাতিক বাজারে ভ্যাকসিনের সম্ভাব্য ঘাটতির কোনও প্রভাব না পড়ে, বলছে রয়টার্স।

“টাকা রোজগার করা আমাদের লক্ষ্য নয়। এটা টাকাপয়সার ব্যাপার নয়, সাধ্যের ব্যাপার,” বলছেন ব্যাঙ্ককের চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন প্রকল্পের অধিকর্তা কিয়াত রুখরুংথাম। গত সপ্তাহ থেকে বানরদের উপর শুরু হয়েছে এই ভ্যাকসিনের প্রয়োগ, এবং এর আগে সফলভাবে এটি পরীক্ষা করা হয়েছে ইঁদুরদের ওপরেও।

উত্তর আমেরিকার একাধিক বিজ্ঞানী এবং বায়োটেক সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতায় প্রস্তুত হচ্ছে এই ভ্যাকসিন, এবং সাধ্যের দামে এটির গণ উৎপাদন করে থাইল্যান্ড এবং ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, এবং মিয়ানমারের মতো পড়শি দেশের বাজারে ছাড়তে চায় চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়। কিয়াত বলছেন, “আমাদের পড়শিদের মধ্যে সংক্রমণের হার বেশি হলে আমরাও তো বেশি দিন এড়াতে পারব না।”

# পরিশেষে, জাপানের বায়োফার্মা সংস্থা অ্যানজেস জানিয়েছে যে তারা জুলাই মাসে সময়ের আগেই শুরু করতে পারবে তাদের ডিএনএ ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। সংস্থার তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, মার্চ মাস থেকে ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জীবজন্তুর ওপর যে পরীক্ষানিরীক্ষা তারা চলাচ্ছিল, তাতে অ্যান্টিবডির মাত্রা বৃদ্ধির প্রমাণ মিলেছে।

ডিএনএ ভ্যাকসিন হলো সেই প্রজাতির, যেগুলি রোগ বহনকারী জীবাণুর থেকে জেনেটিক দ্রব্য নিয়ে ইমিউন সিস্টেমকে চালিত করে অ্যান্টিবডি তৈরির কাজে লাগায়। এ ধরনের ভ্যাকসিন যদিও এখনো মানুষের ব্যবহারযোগ্য বলে গণ্য হয় নি, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এর মূলে যে প্রযুক্তি, তা সম্পূর্ণ নিরাপদ, এবং গণ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও সুবিধাজনক। সুতরাং এর কার্যকারিতা প্রমাণিত হলে বছর শেষের মধ্যেই অনুমোদিত হতে পারে এই ভ্যাকসিন, জানাচ্ছে নিক্কেই এশিয়ান রিভিউ।

সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us