ভারত পছন্দ করছে না তাই?

গৌতম দাস | Jun 21, 2020 05:51 am
ভারত পছন্দ করছে না তাই?

ভারত পছন্দ করছে না তাই? - প্রতীকী ছবি

 

ভারতের অবস্থান কোনোভাবেই চীনের কাছাকাছি নয়। না রিসোর্সের সক্ষমতায়, না অভিজ্ঞতায়। এর ওপর ভারতেরই এখন অথবা আগামী মাসে করোনা সংক্রমণের পিক সময়কাল আসে কিনা এ নিয়ে তারা চরম এক হিমশিম অবস্থায়। এছাড়া আরো বিরাট এক সমস্যা আছে। ভারত থেকে সহায়তাকারী কোনো টিম এসেছে এমন যদি হয় তবে ওই টিমকে সাধারণ মানুষই গ্রহণ করবে না, এটা আমাদের আগে খোদ জয়িতাই জানেন! তিনিই তা লিখেছেন। তাহলে?

ইন্ডিয়ার সমস্যা এটা যে, নিজের আকার আকৃতি বা অবস্থানের ব্যাপারেও তার সঠিক ধারণা নেই। তাই ভান করে যেন সে এক পরাশক্তি। যেমন, এক মালিক সম্পাদকের উপজেলার পৌরসভায় পানীয় জলের ব্যবস্থার জন্য প্রজেক্টে ভারত তাতে কয়েক কোটি টাকার অনুদান দিয়েছে। অথবা ধরেন মফস্বলের একটা কলেজের কয়েকটা ঘর দোতলা করতে হবে তাকে এক কোটি টাকা অনুদান। আর ভারতের হাইকমিশনার সেটা আবার ঘটা করে উদ্বোধনও করতে গেছেন। ভারতের ধারণা এতে এবার ভারতকে দাতা দেশের আসনে বসতে জায়গা দেয়া হবে। কথা হলো, সব রাষ্ট্রেরই অনুদান দেবার সক্ষমতা থাকতেই হবে এর তো কোনো মানে নেই। কিন্তু কোন ঘটনাটা নিজেকে অপমানের মধ্যে ফেলবে এটা তো বুঝার ক্ষমতা থাকা উচিত!
আবার দেখেন, এবার করোনা শুরু হলে সার্কের নামে একটা ফান্ড তৈরি করতে হবে বলে হইচই করা হলো। কেন? সত্যিই অর্থপূর্ণ সাঙ্ঘাতিক কিছু কী তারা করতে চেয়েছিল?

ভারতের হাইকমিশনার বাংলাদেশকে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন (যেটা ম্যালেরিয়ার ট্যাবলেট)Ñ এটা করোনার ওষুধ বলে প্রমাণিত নয়। অথচ এটাকেই মোদির পক্ষ থেকে করোনা নিরাময়ের ওষুধ বলে দান করে গেলেন। শুধু তাই নয়, জানিয়ে গেলেন ওই ওষুধের দাম মোদির দেয়া চাঁদার ভাগ থেকে কাটা যাবে। বুঝেন কী মহিমা! এতে দুটো ঘটনা ঘটল। এর একটা অপরাধ। কারণ আমাদের ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদনহীন একটা ওষুধ আমাদের দেশে আমদানি করা হলো। আর এটা করোনার বিরুদ্ধে কাজ করবে এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালই এখনো শেষ হয়নি, ফলে প্রমাণিত কোনো ওষুধ নয় এটি। ফলে আমাদের ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন দেয়ার সুযোগই নেই। মানে যেন দাওয়াত দিয়ে কাউকে গরম ভাতের বদলে পান্তা খেতে দেয়া যায়? আপনি তাই করলেন।
সোজা কথাটা হলো, জয়িতা বলতে চাইছেন এই ‘সিটি অ্যালায়েন্সের’ অফারের মধ্যে চীনা বেল্ট-রোড প্রকল্পের সম্পর্ক আছে। আর এটাতে ‘চিনের জিও-স্ট্র্যাটেজিক লক্ষ্য আছে’। আচ্ছা ধরা যাক আছে। তাতে ভারতের কী সমস্যা? অফার তো বাংলাদেশকেই করেছে তাই না? ভারতকে তো করে নাই? নাকি? কাজেই প্রতিক্রিয়া যা দেখানোর তা বাংলাদেশই দেখাক। অন্তত বাংলাদেশকে দেখাতে দেয়া উচিত।

আসলে, বুঝা গেছে সমস্যাটা মেন্টরের। জয়িতার মেন্টরÑ মুরুব্বি সম্ভবত বলে দিতে ভুলে গেছেন যে বাংলাদেশ কোনো স্বাধীন রাষ্ট্র নয় এমন ধারণা জয়িতার মুখ দিয়ে প্রকাশ পেলে তাকেই লোকে বেকুব বলবে।

আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি। ভারতে কী চীনা ঋণে নেয়া কোনো অবকাঠামো প্রকল্প চালু নেই? ভারতে কোনো নতুন শহরের অবকাঠামো নির্মাণ অথবা রেলের অবকাঠামো বা রেলকর্মী ট্রেনিং ইত্যাদি? তাহলে সেগুলোতে কী ‘চীনের জিও-স্ট্র্যাটেজিক লক্ষ্য আছে’ তা ভারতের মনে হয়নি? নাকি সব জিও-স্ট্র্যাটেজিক ব্যাপার কেবল বাংলাদেশের চীনা প্রকল্পের বেলায়? যত্তসব বিরক্তিকর কাণ্ড!

আবার কিছু কথা তো একেবারেই পরিষ্কার। যেমন বেল্ট-রোড প্রকল্পে বাংলাদেশ প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে যুক্ত আছে সেই ২০১৬ সাল থেকে। এটা তো লুকানো নয়। এ নিয়ে একবার আমাদের অবস্থান ইন্ডিয়াকে জানান দিতে গিয়ে ছোটখাটো একটা বিতর্কও হয়ে গিয়েছিল সে সময়। অর্থাৎ এই ফ্যাক্টসটা প্রতিষ্ঠিত। তবে ভারতের জন্য এই বেল্ট-রোড প্রকল্প হারাম বলে মনে করে ভারত। এটা তাদের সিদ্ধান্ত। ভালো, তা করুক। কিন্তু তাহলে ভারতের জন্য যা হারাম তা আমাদের ওপরও হারাম বলে চাপানোর চেষ্টা কেন?

এখন চীনের ‘সিটি অ্যালায়েন্স প্রকল্পের’ সাথে যদি বেল্ট-রোড প্রকল্প যুক্তও থাকে আর তাহলে তা ভারতের জন্য ‘সন্দেহের উদ্রেক’ করলেও বাংলাদেশের তাতে কী? কারণ আমরা তো বেল্ট-রোড প্রকল্পের অংশ হয়েই ঢুকে আছি। কাজেই ভারতের ‘সন্দেহের উদ্রেক’ আমাদের ঘাড়ে চড়াবার তো সুযোগ নেই। ভারতের নিজের ঘাড়েই এটা রাখতে হবে জয়িতাকে। তিনি নিশ্চয় আশা করবেন না যে আমাদেরও চীনকে নিয়ে সন্দেহের উদ্রেক করতে হবে! আশা করি জয়িতা পরিষ্কার থাকবেন।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us