প্রণোদনার ১৯ প্যাকেজ : যা যা আছে এতে

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Jun 29, 2020 04:45 pm
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা - ছবি : সংগৃহীত

 

করোনাভাইরাসের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপ্তিতে ভাষণে প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর কথা তুলে ধরেন। এখানে তা তুলে ধরা হলো।

প্রণোদনা প্যাকেজগুলো আমি এখানে সংক্ষেপে উল্লেখ করছি:
(১) রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা অব্যাহত রাখার স্বার্থে আমরা ৫ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল প্রদান করেছিলাম যার মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক কর্মচারির কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। এ তহবিল হতে ৩৫ লক্ষ শ্রমিক-কর্মচারির এপ্রিল ও মে মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধে সমুদয় অর্থ শেষ হয়ে যায়।

পরবর্তীতে বিশেষ বিবেচনায় ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ সুবিধা হতে মাত্র ২ শতাংশ সুদে আরও ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা জুন মাসের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য প্রদান করা হয়েছে। অর্থাৎ রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য মোট ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে।

(২) ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবসায় টিকিয়ে রাখতে আমরা ৩০ হাজার কোটি টাকার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ সুবিধা প্রণয়ন করেছি। এ ঋণ সুবিধার সুদের হার হবে ৯ শতাংশ; এর মধ্যে অর্ধেক ৪.৫০ শতাংশ ঋণ গ্রহীতা এবং অবশিষ্ট ৪.৫০ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করবে। এ সুবিধার ফলে শিল্প ও সেবা খাতের আনুমানিক ৬০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান টিকে থাকবে।

(৩) কুটির শিল্পসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও আমরা ২০ হাজার কোটি টাকার আরও একটি স্বল্প সুদের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ সুবিধা চালু করেছি। ৯ শতাংশ সুদের এ ঋণ সুবিধার ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করবে অবশিষ্ট ৪ শতাংশ প্রদান করবে ঋণ গ্রহীতা। এর মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের ২৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান ধরে রাখা সম্ভব হবে।

(৪) শিল্পের কাঁচামাল আমদানি সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের আকার আমরা ৩.৫ বিলিয়ন ডলার হতে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত এবং এর সুদের হার কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করেছি।

(৫) রপ্তানিকারকদের প্রি-শিপমেন্ট খাতের ব্যয় অর্থায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে আমরা ৫ হাজার কোটি টাকার নতুন একটি রিফাইন্যান্স স্কিম চালু করেছি।

(৬) করোনা রোগীদের সেবা প্রদানের কাজে প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সকলকে দুই মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ বিশেষ সম্মানী প্রদান করা হবে। এ খাতে আমরা ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছি।

(৭) করোনা রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি নিয়োজিত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ এ সংক্রান্ত সরকার ঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মচারী দায়িত্ব পালনকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে পদমর্যাদা অনুযায়ী ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকা এবং মৃত্যুবরণ করলেতাঁদের পরিবারকে এর পাঁচগুণ ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। এ খাতে ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

(৮) হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়া দরিদ্র-অসহায় মানুষের মাঝে আমরা খাদ্য বিতরণ করছি। এ লক্ষ্যে মানবিক সহায়তা হিসেবে দেশব্যাপী মোট ৪ লাখ মেট্রিক টন চাল ও ১ লাখ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ রেখেছি। এ পর্যন্ত ১ কোটি ৫৯ লক্ষ পরিবারের মাঝে বিনামূল্যে চাল বিতরণ করা হয়েছে।

(৯) নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর মধ্যে আমরা খোলাবাজারে মাত্র ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয় শুরু করেছি; এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৬ হাজার মেট্রিক টন চাল বিক্রয় করেছি এবং এ কার্যক্রম এখনও অব্যাহত আছে। এ বাবদ ২৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

(১০) করোনাভাইরাসজনিত কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া দেশের অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে আমরা সারাদেশে নির্বাচিত ৫০ লাখ উপকারভোগীর প্রত্যেককে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে অনুদান ট্রেজারি থেকে সরাসরি তাঁদের ব্যাংক বা মোবাইল একাউন্টে প্রদান করছি।

(১১) দেশের অতি দরিদ্র ১০০টি উপজেলায় বয়স্ক ভাতা এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা কর্মসূচির আওতা শতভাগে উন্নীত করা হবে। এর আওতায় নতুন ৫ লক্ষ বয়স্ক ভাতা এবং ৩ লক্ষ ৫০ হাজার বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা বাড়ানো হবে। এছাড়াও, প্রতিবন্ধী ভাতা কর্মসূচির আওতায় সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করে আরও ২ লক্ষ ৫৫ হাজার নতুন ভাতাভোগী যুক্ত হবে।

(১২) জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা সকল গৃহহীন মানুষের জন্য গৃহ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী অর্থবছরে এ কর্মসূচিতে ২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

(১৩) কৃষকের উৎপাদিত ধান-চালের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা ও বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে সরাসরি ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা আরো ২ লক্ষ টন বাড়িয়ে মোট ১৯ লক্ষ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধান-চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে।

(১৪) ধান কাটা ও মাড়াই কাজ যান্ত্রিকীকরণে আমরা ২০০ কোটি টাকার প্রণোদনা ইতোমধ্যে প্রদান করেছি। এ ছাড়াও আগামী অর্থবছরে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার একটি নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

(১৫) কৃষির সার্বিক উন্নয়ন, কৃষককে প্রণোদনা প্রদান এবং দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা কৃষি খাতে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়িয়ে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করেছি।
(১৬) কৃষকের ঋণ প্রাপ্তি সহজ করার লক্ষ্যে আমরা ৫ হাজার কোটি টাকার একটি কৃষি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করেছি।

(১৭) নিম্ন আয়ের পেশাজীবী, কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ৩ হাজার কোটি টাকার অপর একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম আমরা গঠন করেছি।

(১৮) বিদেশ ফেরত প্রবাসী শ্রমিক, প্রশিক্ষিত তরুণ এবং বেকার যুবকদের ব্যবসা ও আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজে স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যে কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ও পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনকে আমরা মোট ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করেছি। এতে আনুমানিক ৯ লক্ষ বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

(১৯) সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের বিপরীতে এপ্রিল ও মে মাসের সুদ আদায় স্থগিত করা হয়েছে। এ দু‘মাসের মোট সুদের মধ্যে আমরা সরকারের পক্ষ হতে ২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদান করবো এবং ঋণ গ্রহীতাগণ অবশিষ্ট অংশ সমান ১২টি কিস্তিতে পরিশোধ করবেন। এ কর্মসূচিতে প্রায় ১ কোটি ৩৮ লক্ষ ঋণ গ্রহীতা উপকৃত হবেন।

দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠী যেন উপকৃত হয় সে লক্ষ্য নিয়েই পরিকল্পিতভাবে এবং যথাযথ সময়ের পূর্বেই প্রতিটি প্রণোদনা প্যাকেজ প্রণয়ন করা হয়েছে। উল্লিখিত প্রণোদনা প্যাকেজসমূহ বাস্তবায়ন শুরু হওয়ায় ইতোমধ্যে ৫ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে সুবিধা পেয়েছে এবং ১৯টি প্যাকেজ সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে ১২ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ সুবিধা পাবে। এছাড়াও, প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ কর্ম সুরক্ষা ও নতুন কর্ম সৃজন হবে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us