করোনার মধ্যে প্রেগন্যান্সি : কিছু জরুরি পরামর্শ

ডাঃ দেবলীনা ব্রহ্ম | Aug 06, 2020 09:06 am
করোনার মধ্যে প্রেগন্যান্সি : কিছু জরুরি পরামর্শ

করোনার মধ্যে প্রেগন্যান্সি : কিছু জরুরি পরামর্শ - ছবি : সংগৃহীত

 

সন্তান আসছে, এর চেয়ে খুশির খবর আর কী হতে পারে! কিন্তু করোনা মহামারীর জন্য খুশির পাশাপাশি উদ্বেগ কিছু কম নেই পরিবারের সদস্য ও ভাবী মায়ের মধ্যে। এই সময় কী কী সাবধানতা নেয়া উচিত? বিস্তারিত আলোচনা করলেন স্পর্শ ইনফার্টিলিটি সেন্টার (মধ্যমগ্রাম)-এর কর্ণধার স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, সুপ্রজননবিদ ডাঃ দেবলীনা ব্রহ্ম।

ফেডারেশন অব অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গাইনিকোলজি সোসাইটি, ন্যাশনাল নিওন্যাটোলজি ফোরাম অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস— এই তিনটি সংস্থা মিলে সন্তানসম্ভবা মায়ের চিকিৎসা সম্পর্কিত একটি পথনির্দেশিকা তৈরি করেছে। ওই গাইডলাইন অনুসারেই চিকিৎসকরা সন্তানসম্ভবা মহিলাদের পরামর্শ দিচ্ছেন। দেখা যাক সেগুলো কী কী—

যারা ইতিমধ্যেই সম্তানসম্ভবা

 বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, অন্যদের তুলনায় সন্তানসম্ভবাদের করোনা সংক্রমণ হলেও তা জটিল আকার ধারণ করছে না। এও দেখা যাচ্ছে, সংক্রমণের পরও ৯৯ শতাংশ সন্তানসম্ভবা মহিলার মৃদু উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।

 প্রেগন্যান্ট মহিলার ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, কিডনির সমস্যা, সিকল সেল ডিজিজ, বয়স ৩৫ বছরের ঊর্ধ্বে এবং স্থূলকায়া-এর মতো শারীরিক সমস্যা থাকলে একটু বেশিই সতর্ক থাকতে হবে।

 তবে সকলের করোনা হচ্ছে, এমন নয়। নিয়ম মেনে চললে সংক্রমণের আশঙ্কাও কমানো যায়। অতএব সন্তানসম্ভবা হওয়ার খবর এলে প্রথমে চেষ্টা করুন আইসোলেশনে থাকার।

 কর্মরত হলে, ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর সুবিধা নিন। বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোবেন, মুখ মাস্ক পরে থাকবেন। চিকিৎসকের পরামর্শমতো ফোলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট, ক্যালশিয়াম, আয়রন ট্যাবলেট খেয়ে যান। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না।

 মাথা ঠাণ্ডা রাখুন। সেরকম হলে নিউজ চ্যানেল দেখবেন না। কোনো শারীরিক সমস্যা দেখামাত্রই চিকিৎসকের কাছে ছোটার দরকার নেই। আগে ফোনে কথা বলুন বা টেলিমেডিসিনের সাহায্য নিন। প্রয়োজন বুঝলে তিনিই চেম্বার বা হাসপাতালে যেতে বলবেন।

 তবে প্রেগন্যান্সি এসেছে বোঝার পর, কতকগুলো পর্যায়ে বেশ কয়েকবার চিকিৎসকের কাছে অবশ্যই যেতে হয়। যেমন, প্রেগন্যান্সির ফার্স্ট, সেকেন্ড ও থার্ড ট্রাইমেস্টারে বেশ কতকগুলি রুটিন রক্ত পরীক্ষার দরকার পড়ে।

কী কী করবেন না?

 অনেকেই ভয় পেয়ে সঠিক সময়ের আগে সন্তানের ডেলিভারি করাতে চাইছেন। মনে রাখবেন, প্রি-টার্ম ডেলিভারি মা এবং বাচ্চা, উভয়ের স্বাস্থ্যের পক্ষেই ক্ষতিকর।

সিজার না নর্মাল?

 করোনা সঙ্কটকালে সিজার বা নর্মাল, কোনো পদ্ধতির আলাদা সুফল নেই। তবে হ্যাঁ, বাচ্চা ও মায়ের শারীরিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে সিজার কখনই ৩৬ সপ্তাহের আগে করানো উচিত নয়।

করোনা টেস্ট কখন?

 ফার্স্ট, সেকেন্ড ও থার্ড ট্রাইমেস্টারে সন্তানসম্ভবা মায়ের কোনওরকম উপসর্গ দেখা না গেলে সাধারণত করোনা পরীক্ষা করাতে হয় না। তবে সিজার বা সাধারণ প্রসবের তিন থেকে পাঁচ দিন আগে পরীক্ষা করানো হয়।

 শুকনো কাশি, সর্দি, বমি, ডায়ারিয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিলে সতর্ক হন। এই ধরনের উপসর্গের সঙ্গে নাকে গন্ধের বোধ উবে যাচ্ছে কি না খেয়াল রাখতে হবে। চিকিৎসা পরিভাষায় এই সমস্যার নাম অ্যানোসমিয়া। মনে রাখবেন করোনা সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণই হল গন্ধবোধ চলে যাওয়া।

 রিপোর্ট পজিটিভ হলে অবশ্যই চিকিৎসককে জানান। কোনো সন্তানসম্ভবা মহিলার যদি অতি সম্প্রতি দূরবর্তী স্থানে ভ্রমণের ইতিহাস থাকে বা বাড়ির সদস্যের করোনা পজিটিভ হয় বা তিনি যে এলাকায় বাস করেন সেখানে একাধিক লোকের মধ্যে সংক্রমণ হয়, সেক্ষেত্রে করোনা পরীক্ষা করাতে বলা হয়।

আপদকালীন পরিস্থিতি

 ফ্লুইড লিক, রক্তপাত, ব্যথার মতো আপদকালীন পরিস্থিতিতে সন্তানসম্ভবা মাকে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে প্রসবের প্রয়োজন পড়ে। এই অবস্থায় আগেভাগে করোনা টেস্ট করা সম্ভব হয় না। তবে সন্তান প্রসবের পর যত দ্রুত সম্ভব, মায়ের কোডিভ টেস্ট করানো হয়। রিপোর্ট পজিটিভ এলে সন্তানেরও পরীক্ষা করাতে হবে। বাচ্চার ক্ষেত্রে আইজিজি ও আইজিএম রক্তপরীক্ষা করাতে হয়।

 গত কয়েক মাসের সমীক্ষায়, মাতৃদুদ্ধ থেকে করোনা সংক্রমণের নজির মেলেনি। মাকে মুখে সার্জিক্যাল মাস্ক ও হাতে ভালোভাবে স্যানিটাইজার নিয়ে তারপরেই বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে হবে। কোনোভাবেই মাতৃদুগ্ধ থেকে সন্তানকে বঞ্চিত করবেন না। এই দুধই ওর শরীরের প্রথম রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলবে।

সন্তানের সংক্রমণ হলে

 বাচ্চার দেহে সংক্রমণ ছড়ালে, প্রসবের পর হালকা জ্বর, পেটের সমস্যা, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে রয়্যাল কলেজ অব গাইনিকোলজি অ্যান্ড অবস্টেট্রিকস-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সংক্রমণের কারণে বাচ্চার প্রাণহানির আশঙ্কা বা জন্মগত কোনো ত্রুটি হওয়ার কথা এখনো জানা যায়নি।

এখন সন্তানের পরিকল্পনা কি করা যাবে?

 করোনা সংক্রমণ কতদিন চলবে কেউ জানে না। ফলে একটু বেশি বয়সে যারা সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা করছেন, তাদের অপেক্ষা করতে বলাটা ঠিক নয়। তাছাড়া এই সঙ্কটকালেও পৃথিবীর বুকে কোটি কোটি শিশু জন্মাচ্ছে। নিয়ম মেনে, সতর্ক থেকে তারা সুস্থ-সবলও আছে। অতএব অহেতুক আতঙ্ক দূরে সরান। সতর্ক হন। তাহলেই হবে।

সূত্র : বর্তমান


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us