যেসব খাবার করোনা প্রতিরোধে কার্যকর

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Aug 09, 2020 07:23 am
যেসব খাবার করোনা প্রতিরোধে কার্যকর

যেসব খাবার করোনা প্রতিরোধে কার্যকর - ছবি : সংগৃহীত

 

করোনাভাইরাসের প্রকোপ যেন ঠেকানোই যাচ্ছে না। এ নিয়ে মানুষ চিন্তিত হয়ে পড়েছে। চিকিৎসকদের মতে, ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক ব্যবহার, হাত ধোওয়া ইত্যাদি মেনে চলার পাশাপাশি বাড়াতে হবে নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে। তবেই হয়তো রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা সুবিধা হবে।

বিজ্ঞানীদের মতে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে মানবদেহের ফুসফুস। যার ফলে দেখা দিচ্ছে শ্বাসকষ্টের সমস্যা। তাই, এই মারণ রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ফুসফুস-কে সুস্থ রাখার বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে আমাদের। কারণ, ফুসফুস হলো রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার অন্যতম অঙ্গ। শ্বাসের মাধ্যমে যে দূষিত পদার্থ শরীরের মধ্যে ঢোকে তাদের বাইরে বার করে দিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে মানবদেহের এই অঙ্গটি। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন ফুসফুসকে সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে খাদ্য। বয়স বাড়ার কারণে, অত্যাধিক পরিবেশ দূষণ এবং বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ এর ফলে যাদের ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে গেছে, তাদের খাবারের প্রতি বিশেষ যত্ন নেয়া প্রয়োজন।

'আমেরিকান লাং অ্যাসোসিয়েশন'-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এই সমস্ত লোকের কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। কারণ কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার পরিপাকের সময় বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি করে এবং উপকারি ফ্যাট জাতীয় খাবার পরিপাকের সময় কার্বন ডাই অক্সাইড কম পরিমাণে তৈরি করে। যার ফলে সুস্থ থাকে আমাদের ফুসফুস।

তবে চলুন, রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ফুসফুসকে সুস্থ রাখার জন্য কী ধরনের খাবার খাওয়া উচিত তা দেখে নেয়া যাক।

১) পানি
ফুসফুসের স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখতে প্রতিদিন দুই থেকে তিন লিটার বা তার বেশি পানি পান করুন। এতে ফুসফুসের রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে এবং শ্লেষ্মা পাতলা থাকে। যার ফলে দূষিত পদার্থ ও জীবাণু হাঁচি-কাশির মাধ্যমে বার করে দিতে সুবিধা হয়।

২) গ্রিন টি
গ্রিন টি আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারি একটি পানীয়। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ফুসফুসের প্রদাহ কমায় ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। ২০১৭ সালের এক গবেষণার রিপোর্ট অনুযায়ী, কোরিয়ার এক হাজার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন দুই কাপ করে গ্রিন-টি পান করতেন। অন্যদের তুলনায় সেই ১০০০ জনের ফুসফুসের কার্যকারিতা অনেক ভালো ছিল। তাই রোজ দু'কাপ করে গ্রিন-টি পান করুন।

৩) মাছ
গবেষণায় দেখা গেছে, ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত সামুদ্রিক মাছ ফুসফুসের কার্যক্ষমতাকে অনেকটাই বাড়িয়ে তোলে। ম্যাকারেল, ট্রাউট, হেরিং এর মত মাছগুলি সিওপিডি রোগের চিকিৎসায় সহায়তা করতে পারে। ইউনিভার্সিটি অফ রচেস্টার স্কুল অফ মেডিসিন অ্যান্ড ডেন্টিস্ট্রি এর গবেষকদের মতে, মাছে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ফুসফুসের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। তাই সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিন দিন পাতে মাছ রাখুন।

৪) কাঁচা হলুদ
হাজারেরও বেশি বছর ধরে এশিয়ায় হলুদের ব্যবহার শুধু মশলা হিসেবেই নয়, ঔষধি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। হলুদে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, কারকিউমিন ফুসফুসকে দূষিত পদার্থের প্রভাব থেকে রক্ষা করে এবং প্রদাহ কমায়। বেঙ্গালুরুর ৭৭ জন হাঁপানি ও সিওপিডির রোগীকে কারকিউমিন ক্যাপসুল খাইয়ে দেখা গেছে যে, তাদের কষ্ট অনেকটাই কমেছে। তাই রোজ সকালে কাঁচা হলুদ চিবিয়ে খেতে পারেন। শুধু হলুদ না খেতে চাইলে মধু ও হলুদ একসঙ্গেও খেতে পারেন।

৫) রসুন ও আদা
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খেতে পারেন আদা ও রসুন। এগুলোতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য ফুসফুসকে ভালো রাখতে এবং ফুসফুস থেকে দূষিত পদার্থ বার করতে সহায়তা করে। এছাড়াও, ফুসফুসের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল ব্যক্তিরা সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার কাঁচা রসুন খান, তাদের ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা ৪৪ শতাংশ কমে যায়।

৬) ব্রকলি
ব্রকলিতে থাকা সালফোরাফেন, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এর ক্ষতি থেকে শরীরকে রক্ষা করে এবং ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। তাই রোজকার খাবারের পাতে অবশ্যই রাখুন ব্রকলি।

৭) তুলসী পাতা
তুলসী পাতার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য ফুসফুসের সুরক্ষার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে। বাতাসে ভেসে থাকা দূষিত পদার্থ নিঃসরণ করতে তুলসী পাতা সহায়তা করে। তাই রোজ সকালে তুলসী পাতা চিবিয়ে বা এক টেবিল চামচ রস বার করে খেতে পারেন।

৮) ফল ও শাকসবজি
বেদানা, আপেল, আঙুর, কমলালেবু, পেয়ারা, গাজর, বিনস, শসা, কুমড়ো ইত্যাদি ফল ও শাকসবজি ফুসফুসের স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এগুলোতে থাকা ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ, ফ্ল্যাভোনয়েড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং ফুসফুসের কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই রোজ শাকসবজি খান এবং খাবারের পরে ফল খান। এছাড়াও, পাকা লঙ্কা, অলিভ অয়েল, বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার, পেঁয়াজ, দুধ ও ডিম ইত্যাদি খাবার ফুসফুসের যত্ন নিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তাই এই মহামারীর সময়ে নিজেকে সুস্থ রাখতে ডায়েটে এই সকল খাবারগুলি অন্তর্ভুক্ত করুন।

সূত্র : বোল্ডস্কাই


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us