মেয়েলি সমস্যা মেনোরেজিয়া : অবহেলায় মারাত্মক বিপদ

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায় | Oct 16, 2020 02:21 pm
মেয়েলি সমস্যা মেনোরেজিয়া : অবহেলায় মারাত্মক বিপদ

মেয়েলি সমস্যা মেনোরেজিয়া : অবহেলায় মারাত্মক বিপদ - ছবি : সংগৃহীত

 

কোভিডের ভয়ে অন্যান্য অসুখ বিসুখের চিকিৎসা প্রায় বন্ধের মুখে। অথচ কোনো রোগই কিন্তু থেমে নেই। মেয়েদের অনেকেই ঘর আর অফিস সামলাতে গিয়ে নাজেহাল হয়ে নিজের শারীরিক সমস্যা নিয়ে ভাবার অবকাশ পাচ্ছেন না।

যারা অতিরিক্ত ঋতুস্রাবের সমস্যায় ভুগছেন, তারা যদি সঠিক চিকিৎসা না করান, তাহলে এক দিকে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা দেখা দিতে পারে, অন্য দিকে সমস্যাটা জটিল হয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় জানান, আমাদের দেশের ১৫–৪৪ বছর বয়সের নারীদের ১০০ জনের মধ্যে ১৬ জন মেনোরেজিয়া অর্থাৎ অতিরিক্ত ঋতুস্রাবের সমস্যায় কষ্ট পান।

প্রশ্ন ওঠে মেনোরেজিয়া বা অতিরিক্ত ঋতুস্রাব কখন বলা হয়? অভিনিবেশ জানালেন, সাধারণত প্রতিটি ঋতুচক্রে গড়ে ৩০-৪০ মিলিলিটার রক্ত বেরোয়। কিন্তু যখন ৮০ মিলিলিটার বা তার থেকে বেশি রক্তপাত হয় তখনই ভারী রক্তক্ষরণ-সহ অতিরিক্ত ঋতুস্রাব বা 'হেভি মেনস্ট্রুয়াল ব্লিডিং' বলা হয়। তবে মিলিলিটার দিয়ে মাপ বুঝতে অসুবিধা হতে পারে।

যখন প্রতি ২-২.৫ ঘণ্টা পর পর ন্যাপকিন বদলাতে হয় তাহলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ-সহ ভারী ঋতুস্রাব ধরা হয়। এ ক্ষেত্রে ঋতুকালীন অবস্থা ৪ দিনের বেশি, আবার কখনো ৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঋতুচক্র হয় ২৮ দিন পর এবং ৩-৫ দিন চলে। ৪৫ বছর বয়সের পর ঋতুস্রাবের মাত্রা কমে যায়। যদি ৫০ পেরিয়ে যাওয়ার পরে অতিরিক্ত ঋতুস্রাব হয়, তা কিন্তু মারাত্মক অসুখের লক্ষণ হতে পারে। তাই এই ধরনের সমস্যা ফেলে রাখা ঠিক নয়।

স্ত্রী রোগ চিকিৎসক পলি চট্টোপাধ্যায় জানান, মহিলাদের মধ্যে ঋতুজনিত সমস্যা নিয়ে আগের থেকে সচেতনতা কিছুটা বেড়েছে। একই সঙ্গে রোগ নির্ণয় পদ্ধতি আগের থেকে অনেক উন্নত হওয়ায় চট করে সমস্যা বোঝা যাচ্ছে। তাই আপাতভাবে মনে হতে পারে মেনোরেজিয়ার সমস্যা বাড়ছে। আবার পেটে ব্যথা হলে অনেকেই অতিরিক্ত ওষুধ কিনে খান। এর ফলে সমস্যা জটিল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

মেনোরেজিয়া বা অতিরিক্ত ঋতুস্রাব হলে এবং লাগাতার চলতে থাকলে রোগী ক্রমশ ক্লান্ত হয়ে পড়েন, অ্যানিমিয়া হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে, অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠেন, শ্বাসকষ্ট হয়। তাই মেনার্কি শুরুর পর ঋতুচক্র স্থায়ী হওয়ার পর যদি লাগাতার অতিরিক্ত ঋতুস্রাব চলতে থাকে বিশেষ করে মেনোপজের পরে যদি আচমকা ঋতুস্রাব শুরু হয় দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভারী ঋতুস্রাবের সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। পলি চট্টোপাধ্যায় জানালেন, ঋতু শুরুর সময় এবং মেনোপজের সময় ভারী ঋতুস্রাবের প্রবণতা বাড়ে। এ ছাড়া ইস্ট্রোজেন প্রোজেস্টেরন এবং থাইরয়েড হরমোনের তারতম্যের জন্যেও ভারী ঋতুস্রাব বা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়।

কিছু অসুখ যেমন ইউটেরাসের ফাইব্রয়েড, পলিপ , অ্যাডিনোমায়োসিস, এন্ডোমেট্রিওসিস, টিউমার এবং বিরল হলেও কিছু কিছু ক্যানসারের কারণে অতিরিক্ত ঋতুস্রাব ও তলপেটে ব্যথা হতে পারে। অনেক সময় ক্যানসারের কারণে এবং রক্তের অসুখের জন্যেও অতিরিক্ত ঋতুস্রাব হয়। তাই সেলফ মেডিকেশন না করে অবশ্যই একজন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞকে দেখানো উচিত, পরামর্শ অভিনিবেশের।

ভারী ঋতুস্রাবের সঙ্গে মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তার একটা সম্পর্ক আছে। এখন এই সমস্যা তাই আরো বেড়েছে। যাঁরা চাকরি করেন বা নিজেদের পেশা নিয়ে ব্যস্ত, তাদের শরীর ও মনের চাপ তুলনামূলকভাবে অনেকটাই বেশি। আসলে অতিরিক্ত মানসিক চাপ, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, কথায় কথায় ওষুধ খাওয়া সর্বোপরি রোজকার জীবনযাত্রার ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে মেয়েদের শরীরের নানা হরমোনের ভারসাম্য এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। এরই নিট ফল অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ-সহ ঋতুস্রাব ও তলপেটের ব্যথা।

পেটে ব্যথা ও রক্তক্ষরণের সমস্যা নিয়ে রোগী এলে শুরুতে পেলভিক এক্সামিনেশন করা হয়। এরপর আলট্রাসনোগ্রাফি, টিভিএস অর্থাৎ ট্র্যান্স-ভ্যাজাইনাল সনোগ্রাফি, রক্তের বিভিন্ন রুটিন পরীক্ষা, হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা এবং প্রয়োজনে ল্যাপারোস্কোপ দিয়ে দেখে নিতে হয়, বলে জানালেন পলি।

অনেকেই অস্ত্রোপচারের ভয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। ফল ভুগতে হয় নিজেদেরই। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ-সহ ঋতুস্রাবের সমস্যা শুরুতেই চিকিৎসা হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। হরমোনের সমস্যা থাকলে হরমোন ওষুধ। অন্য সমস্যা থাকলে সেই মতো চিকিৎসা করা হয়।

পলিপ বা ফাইব্রয়েড বা এন্ডোমেট্রিয়োসিস থাকলে ল্যাপারোস্কোপের সাহায্যে চিকিৎসা করা হয়। তাই এই ধরনের সমস্যা হলে প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সুস্থ থাকুন।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us