রাশিয়ার সমীকরণে চীন

মাসুম খলিলী | Oct 20, 2020 06:03 pm
পুতিন ও শি

পুতিন ও শি - ছবি সংগৃহীত

 

আশির দশকের শেষ দিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার পর স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটে। বিশ্বে এককভাবে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। অনেক দেশই আগের প্রভাব বলয় থেকে আমেরিকামুখী হয়। এর দুই দশক পর এখন নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে শুরু করেছে।

নতুন পরিস্থিতিতে রাশিয়া এককভাবে সোভিয়েতের স্থলাভিষিক্ত হতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে চীন। আর আমেরিকান একাধিপত্য মোকাবেলা করতে চীন ও রাশিয়া একটি অভিন্ন বলয় তৈরি করেছে। পূর্ণাঙ্গ স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে প্রতিহত করতে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাবেক প্রজাতন্ত্র এবং পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েত প্রভাবিত দেশগুলোতে প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা নেয়। যুক্তরাষ্ট্র এখানকার কোনো কোনো দেশকে ন্যাটোর সদস্য করে নিয়েছে। কোনো কোনো দেশে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করেছে। পুতিন রাশিয়ার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মস্কো সোভিয়েতভুক্ত সাবেক প্রজাতন্ত্র ও প্রভাব বলয়ের দেশগুলোতে আবার আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হয়েছে। যার অংশ হিসেবে ক্রিমিয়া দখল করে রাশিয়া ইউক্রেনের এই অংশকে তার মানচিত্রভুক্ত করে নিয়েছে। এর বাইরেও ইউক্রেনের অংশ বিশেষের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে ক্রেমলিন ছায়া বাহিনী পাঠানোর মাধ্যমে। জর্জিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যও রাশিয়া নানা উদ্যোগ নিয়েছে। সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলোকে নিয়ে রাশিয়া একটি সহযোগিতা বলয় তৈরি করেছে। এভাবে রাশিয়াকে নিজস্ব আধিপত্য বিস্তারের ব্যাপারে একটি অবস্থানে নিয়ে এসেছেন ভ্লাদিমির পুতিন। সিরিয়া লিবিয়ায় বিশেষ ভূমিকা নিয়ে নিজস্ব আঙিনার বাইরে রুশ প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টাও নিয়েছেন পুতিন।

এ দিকে অর্থনৈতিক ও বিকাশমান প্রযুক্তির দেশ হিসেবে চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে এসেছে। ২০১৪ সালের পর থেকে চীন নিজ আঙিনার বাইরে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। এই প্রভাব বলয় বিস্তারে প্রধানতভাবে বেছে নিতে শুরু করেছে এশিয়ার প্রতিবেশী অঞ্চলকে। যার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া রয়েছে বিশেষভাবে। এর বাইরে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলেও চীন তার অর্থনৈতিক ও সামরিক বাজার বিস্তারের প্রয়াস চালাচ্ছে। চীনের এই ক্রমউত্থান ঠেকানোর ব্যাপারে আগে থেকেই সচেষ্ট ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এখন আমেরিকান প্রভাব এ ব্যাপারে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। এটি বিশেষভাবে দৃষ্টিগোচর হয় ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসার পর। ট্রাম্প প্রশাসন শুরু থেকে চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করে। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি ঘটার পর মার্কিন প্রশাসন বাণিজ্যযুদ্ধ আরো বিস্তৃত করে বিনিয়োগ যুদ্ধ এবং সামরিক সঙ্ঘাতের প্রস্তুতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

সর্বশেষ পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবেলায় বিপর্যয়কর অবস্থা দেখা দেয়ার পর ট্রাম্প প্রশাসন এর জন্য চীনকে দায়ী করতে শুরু করেছে। এর মাধ্যমে মার্কিন প্রশাসন চীন বিরোধী সংঘাতের সর্বাত্মক রূপ দেয়ার সক্রিয় উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে চীনবিরোধী এই যুদ্ধ প্রস্তুতির একটি মৌলিক দিক হলো চীনকে তার নিজস্ব আঙিনায় সীমিত ও ব্যস্ত করে রাখা।

এ জন্য চীনের সাথে যেসব নিকটবর্তী দেশের সীমান্ত ও অন্যান্য বিরোধ ছিল সেসব দেশকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নিয়েছে ওয়াশিংটন। এর অংশ হিসেবে ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েতনাম ও আশপাশের দেশগুলোকে একটি চীনবিরোধী জোটে সমন্বয় ঘটানোর জন্য কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারত জাপান অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় জোট ‘কোয়াড’ গঠন এই প্রচেষ্টার অংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা থাকবে এই কোয়াড জোটকে আরো সম্প্রসারণের। চীনের সাথে বিরোধপূর্ণ দেশগুলোকে কোয়াডে সম্পৃক্ত করা এবং চীন ঘনিষ্ঠ দেশগুলোকে যথাসম্ভব নিরপেক্ষ অবস্থানে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা থাকবে। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় রয়েছে পাকিস্তান, মিয়ানমার, বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা। মালদ্বীপকেও একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান শক্তি ভারত কোয়াড সদস্য হিসেবে চীনের সঙ্ঘাতে প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে এর মধ্যে আবির্ভূত হয়েছে। আর দক্ষিণ এশিয়াকেও ভারত নিজের আঙিনা হিসেবে বিবেচনা করে। ফলে প্রভাব বিস্তার নিয়ে এ অঞ্চলের প্রতিটি দেশেই ভারত ও চীনের প্রতিযোগিতা রয়েছে। এই প্রতিযোগিতা পাঁচ বছর ধরে এক ধরনের দ্বন্দ্বে পরিণত হয়েছে। দোকলাম সঙ্কটে এটি বেশ চাঙ্গা হয়। আর লাদাখে সাম্প্রতিক দুই দেশের সীমান্ত সংঘর্ষের পর এ দ্বন্দ্ব চরম অবস্থার দিকে গতি নিতে শুরু করেছে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us