প্রস্রাব ঝরা : সমস্যা ও সমাধান

ডা: মো: সাইফুল ইসলাম সেলিম | Dec 22, 2020 04:09 pm
প্রস্রাব ঝরা : সমস্যা ও সমাধান

প্রস্রাব ঝরা : সমস্যা ও সমাধান - ছবি সংগৃহীত

 

সাধারণত আমাদের দেশের ৩৫-৬৫ বছরের মেয়েদের একটি বিরাট অংশ যা শতকার ১০ ভাগ হাঁচি, কাশি বসা থেকে উঠা বা ভারী কোনো জিনিস তোলার সময় মূত্রথলির সঙ্কোচন ছাড়াই অনিচ্ছাকৃতভাবে অল্প পরিমাণ মূত্র বের হয়। অনেকেই এটাকে পাত্তা দিতে চান না বা লজ্জায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে চান না। এটা কিন্তু একটা রোগ। আর একে স্ট্রেস ইউরিনারি ইনকনটিনেন্স (এসইউআই) বলা হয়। মহিলাদের সাথে সাথে পুরুষরাও এ সমস্যায় ভুগতে পারেন। সচেতনতাই পারে এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে।

সামান্য কোনো চাপ প্রয়োগ করলেই প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে কয়েক ফোঁটা থেকে অল্প পরিমাণ মূত্র বের হয়ে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রস্রাবের সংক্রামণ, জ্বালাপোড়া, প্রস্রাবের থলির অংশ বিশেষ যোনিপথে বের হয়ে আসা, জরায়ু নেমে আসাসহ অন্যান্য স্ত্রীরোগও থাকতে পারে। এটি একটি বিশেষ রোগ বিধায় এর চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়াই বাঞ্চনীয়। এর চিকিৎসায় সাধারণ জীবন মানের পরিবর্তন, বিশেষ ব্যয়াম, মুখে খাওয়ার ওষুধসহ বিশেষ অপারেশনের ব্যবস্থা থাকলেও প্রচারণার অভাবে রোগীরা বিনাচিকিৎসায় থাকেন।
এ রোগ প্রতিরোধে পরিমিত পানি পান করা ( পূর্ণ বয়স্ক পুরুষের জন্য প্রায় ১.২ থেকে ১.৫ লি:), ওজন কমানো, কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করা, বেশিবেশি সবজী জাতীয় খাবার খাওয়া, ইসবগুলের সরবতও খাওয়া, প্রশ্রাব- পায়খানার বেগ চেপে না রাখা, প্রশ্রাবের সংক্রামণ, জ্বালাপোড়া, সিসটোসিল, ইউটিরাইন প্রলাপসসহ অন্যান্য স্ত্রীরোগের চিকিৎসা নিতে হবে। আবার রোগীকে মূত্রনালীর বা তলপেটের আশপাশের মাংসপেশিকে সবল করার জন্য বিশেষ এক ব্যয়াম রোগীকে শেখানো হয় যা নিয়মিত অভ্যাস করলে রোগীর সংশ্লিষ্ট মাংসপেশী শক্তিশালী হয় এবং রোগীর মূত্রথলীতে মূত্রধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

তা ছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর রোগের তীব্রতা অনুসারে মুখে খাওয়ার ওষুধ দিয়ে থাকেন যা নিয়মিত সেবন করলে কোনো কোনো সময় উপকার পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, এই রোগের জন্য রোগীর প্রোয়োজন ও সামর্থ্য অনুসারে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রপচারের ব্যবস্থা আছে। এই অপারেশনের জটিলতা যেমন কম তেমনি এর সফলতাও অনেক বেশি।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ফিমেল অ্যান্ড অ্যান্ড্রোলজিকেল ইউরোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ

ইন্টারনেট আসক্তি : আসছে বিপদ
এখন যুগ ডিজিটালের। প্রেমিক মন আর তাই লেখে না আকাশের ঠিকানায় চিঠি। ছেলের হাতের লেখা চিঠি যত্নে আঁচলে বেধে রাখেন না কোনো মা। দরকারইবা কী? যেখানে স্কাইপে ছেলের বা প্রেমিকার ভিডিও কলে কথা বলে সামনাসামনি কথা বলার শিহরণ পাওয়া যায় সেখানে কষ্ট করে চিঠি লেখার প্রয়োজনইবা কী? ফেসবুকে নতুন বন্ধুত্বের হাতছানি। দূরত্বকে জয় করেছে ফেসবুক। মনের মানুষের সাথে চ্যাট করে আনন্দে কাটছে ক্ষণ। কিন্তু তারপরও কী সব সমস্যার সমাধান হয়েছে। ফিঁকে হয়েছে ভালোবাসার রঙ। ঠুনকো কারণে দুটো পথ বেঁকে যাচ্ছে দু’দিকে। সংসার ভাঙছে অবিশ্বাসের বিষক্ত বাতাসে। শুধু তাই নয়, দেখা দিচ্ছে মানসিক ও শারীরিক সমস্যা।

ইন্টারনেট আজ মানুষের সব কাজ সহজ করে দিয়েছে। কিন্তু সব সহজ ভালো নয়। এটি বিরূপ প্রভাব ফেলছে স্বাস্থ্যে। এ নিয়ে বেশ গবেষণা হয়েছে, হচ্ছে।

সব গবেষণার শেষে বলা হচ্ছে- ইন্টারনেট আসক্তি যেটা মাদকের মতো। মাদকাসক্তিতে ছেয়ে গেছে দেশ। এটি শরীরের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে, মানসিক দিকও অন্তর্ভুক্ত। তেমনি নেশা ইন্টারনেট। মাদক হঠাৎ বন্ধ করে দিলে শরীরে যেমন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তেমনি প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় ইন্টারনেট ব্যবহারেও। দিন দিন বাড়ছে ইন্টারনেট আসক্তদের সংখ্যা।

ইন্টারনেট ব্যবহাকারীদের মধ্যে বিষণ্নতায় আক্রান্তের হার বেশি। গবেষণায় তা প্রমাণিত হয়েছে। দেখা যায় যারা ইন্টারনেট বেশিক্ষণ ধরে ব্যবহার করেন কম্পিউটার লগ অফ করার পর তারা বিষাদে আক্রান্ত হন। সম্প্রতি পিএলওএস ওয়ান জার্নালে একটি গবেষণা তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এতে ৬০ জন ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেন। এদের মধ্যে দেখা যায় ৩২ জন দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটার বা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন বাকি ২৮ জন কম ব্যবহারকারী। এদেরকে নেট ব্যবহারের আগে প্রশ্নোত্তর করা হয়। ১৫ মিনিট নেট ব্যবহার করার পর আবার বিভিন্ন প্রশ্ন দেয়া হয়। দেখা যায় তাদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে।

বিশ্বব্যাপী আত্মহত্যার হার বেড়েছে। বিষণ্নতা এর মূল কারণ। ইন্টারনেট আসক্তি থেকে আত্মহত্যার ঘটনা যে ঘটছে না তার প্রমাণ কী? বরং গবেষকরা বলছেন এটিও অন্যতম কারণ।

অতিরিক্ত নেট আসক্তি সম্পর্কে খারাপ প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে যারা বেশিক্ষণ নেট ব্যবহার করেন তারা সঙ্গীর সাথে সময় কাটানোর চেয়ে নেটে বসে থাকাকেই বেশি আনন্দের বলে মনে করেন। ফলে দূরত্ব বাড়ে। এক সময় বিচ্ছেদ। বিচ্ছেদ হলেই যে সমস্যার শেষ তা কিন্তু নয়। এতে করে তারা আরোও বিষণ্নতায় ভোগেন। এটিই নিয়ে যায় আত্মহত্যার পথে।

যারা দীর্ঘ দিন ধরে বেশিক্ষণ নেট ব্যবহার করেন তাদের হঠাৎ করে নেট ব্যবহার বন্ধ করে দিলে উল্টো ফল হতে পারে। এতে করে বাড়তে পারে বিষণ্নতা, হতাশা, দুশ্চিন্তা। এটি আরো খারাপ। হঠাৎ মাদক সেবন বন্ধ করার মতো।

বেশিক্ষণ ধরে বসে থাকার জন্য দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা। মুটিয়ে যাচ্ছেন অনেকেই, এ থেকে বাড়ছে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি।

মানসিক স্বাস্থ্যের বাইবেল নামে পরিচিত ডায়াগনোস্টিক অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্যাল ম্যানুয়াল অব মেন্টাল ডিজিজ (ডিএসএম)। আসছে পঞ্চম অ্যাডিশন। এতে ইন্টারনেট ইউজ গেমিং ডিজঅর্ডার সংযুক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার পাশাপাশি আরো গবেষণার প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us