ভারতে যেভাবে করোনা ছোবল দিলো

অন্য এক দিগন্ত | May 08, 2021 05:01 pm
ভারতে যেভাবে করোনা ছোবল দিলো

ভারতে যেভাবে করোনা ছোবল দিলো - ছবি : সংগৃহীত

 

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যর অধ্যাপক এবং রোগতত্ত্ববিদ ভ্রমর মুখার্জি ভারতের করোনাভাইরাস পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন শুরু থেকেই। ভারতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে এবিষয়ে একটি মডেলও তৈরি করেছেন তিনি। বিবিসি বাংলার জন্য তিনি এই লেখাটি পাঠিয়েছেন।

১৬ মার্চ, ২০২০। মিশিগানে বাড়িতে থেকে কাজ করার নির্দেশ বেরোল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া আমরা ক'জন মিলে করোনার পরিসংখ্যানতত্ত্ব নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম। ছাত্রছাত্রী, অধ্যাপক সবাই মিলে একটা কাজ, নিজেদের মনের দুশ্চিন্তা কাটানোর জন্যে, কিছু একটা অর্থপূর্ণ করছি এই ভ্রান্তিবিলাস।

ওই কাজ করে চলেছি আমরা এক বছরের ওপর। আমরা একটা করোনা ট্র্যাকার বানাই যেটা রোজ ভারতবর্ষ ও তার প্রতিটি রাজ্যের দৈনিক সংখ্যাভিত্তিক একটি মূল্যায়ন করে এবং ভবিষ্যতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা কোথায় যেতে পারে তার একটা পূর্বাভাস দেয়।

২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ভারতবর্ষের করোনা কার্ভ তার পিক বা তুঙ্গে পৌঁছয় তারপর তার অবরোহণ ২০২১ ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত।

ভারত ও বিশ্বের সব বিশেষজ্ঞরা এই অভূতপূর্ব ঘটনার ব্যাখ্যা খুঁজতে ব্যস্ত, দেশের লোকজন নিশ্চিন্তে হাফ ছাড়ছে করোনার কবল থেকে মুক্তি পেয়ে, ভরে উঠছে আবার ট্রেন, বাস, রেস্তোরাঁ। জমে উঠছে বিয়েবাড়ি, পালাপার্বণ, হর কি পউরিতে সমবেত পবিত্র স্নান। সঙ্গে অগ্নিময় রাজনীতি, বিরাট নির্বাচনী জমায়েত।

তারই মধ্যে ভাইরাস অন্তরালে তার কাজ করে চলেছে, দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলতে নামার আগে, সে নিজেকে আরো সতেজ ও সবল করে তুলছে, অতর্কিতে ছোবল মারবে, যখন আমরা আমাদের মাস্ক নামিয়ে দিয়েছি, দিক দিগন্তের অবগুণ্ঠন আবার তার আক্রমণের আহবানে খোলা।

অতিমারির ইতিহাস পড়লে দেখা যায় যে দ্বিতীয় ঢেউ অনেক সময়েই হয়ে ওঠে জলোচ্ছ্বাস, কারণ ঠিক এই ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি ঘটে বারবার, মনুষ্যচরিত্রে আসে বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করার স্বভাবগত প্রবৃত্তি ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী ধূর্ত ভাইরাসের ঘটে দ্রুত বিবর্তন।

ভারতেও এই দুটি প্রক্রিয়ার সমাপাতন ঘটেছে। নূতন সব রূপ ধারণ করেছে ভাইরাস, তার জিনোমটাকে বদলে নিয়ে।

আর এক বছর সতর্কীকরণের বাধা নিষেধ মেনে ক্লান্ত আমরা বেরিয়ে পড়েছি সেই শক্তিমান ভাইরাসের সহজ শিকার হয়ে। নিঃশব্দে পা টিপে এসে ভাইরাস আজ আমাদের এই বিস্ফোরক মৃত্যু-সংখ্যায় নিয়ে গেছে। প্রতি তিন দিনে ১০ হাজার মৃত্যু ঘটছে সরকারি সংখ্যা অনুযায়ী। আসল মৃত্যু-সংখ্যা এর থেকে অনেক বেশি বলেই মনে করেন বহু বিশেষজ্ঞ। অধুনাপ্রাপ্ত কিছু নথি তার অপ্রত্যক্ষ প্রমাণ।

আমরা অসহায় ছিলাম না
এই ভাইরাস ইনফার্নো কি অপ্রতিরোধ্য ছিল? অনতিক্রম্য ছিল কি এ অগ্নি?

না, আমরা অসহায় ছিলাম না।

ফেব্রুয়ারির গোড়া থেকে বোঝা গেছিল বাড়ছে আবার সংক্রমণ সংখ্যা। তখনই সমস্ত সভা সমাবেশ, সমবেত অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিলে, এ রাজ্য থেকে ও রাজ্যে যাতায়াত নিয়ন্ত্রিত করলে, মাস্ক পরে থাকলে, ব্যাপক টিকা অভিযানে সামিল হলে আজ আমাদের এ অবস্থা হতো না।

কিন্তু আমরা ও দেশের নেতৃত্ব প্রবল বিক্রমে অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দিয়ে গেছি। আজ আমরা বুঝতে পারছি গত বছরের দেশ জোড়া 'লকডাউন' ভাইরাস কার্ভকে প্রশমিত করতে, সময়ের ওপর বিস্তৃত করতে বা 'ফ্ল্যাটেন' করতে কতটা সাহায্য করেছিল।

কিন্তু গণ-হাহুতাশ করে লাভ নেই। অতীতের একটি কণাও বদলানো যাবে না।

সামনে কি আসছে?

আমাদের মডেল অনুযায়ী পিক আসছে মে মাসের প্রথম দুই সপ্তাহের মধ্যে, তারপর সেটা নামতে নামতে জুনের শেষ, জুলাই।

কিন্তু মনে রাখবেন এটা শেষ ঢেউ নয়। এবার যে ভুল করেছি আমরা আর যেন না হয়। টিকা নিন। এটাই আমাদের এই যুদ্ধ থেকে বেরোনোর বিজয়-টীকা। তার পরও বাইরে বেরোলে মাস্ক পরে থাকুন।

রাষ্ট্র যেখানে অনুপস্থিত, ব্যক্তিকেই তার সামাজিক কর্তব্য করতে হবে। দেখছেন না হাসপাতালের বেড, অক্সিজেনের সিলিন্ডার এসব খুঁজে দিচ্ছে কারা, টুইটারে আর ফেসবুকে?

মানুষ, সাধারণ মানুষ, একে অপরকে সাহায্য করে এই তাণ্ডব থেকে ত্রাণ খুঁজছে। প্রতিরোধ গড়ছে মানুষ, মানুষের হাত ধরে। এটাই একমাত্র রুপালি আলোর ঝিলিক এই অন্ধকারে।

আমরা কয়েকজন মিলে একটা কাজ শুরু করেছিলাম এক বছর আগে। আজ কত মানুষ সেই করোনা ট্র্যাকার ব্যবহার করেন। নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, বিবিসি আর টাইম ম্যাগাজিনে বেরিয়েছে আমাদের এই কাজের কথা গত কয়েক দিনে।

এটা একটা সংখ্যাতত্ত্ব দিয়ে করা বিপ্লব। সবাই মিলে কাজ করার একটা নমুনা।

এই অতিমারি থেকে বেরোনোর পথে আমাদের একমাত্র সহায় বিজ্ঞান, মনুষ্যত্ব এবং জনসেবা।

আসুন আমরা সম্মিলিত হয়ে যে যার দায়িত্বটুকু পালন করি, কারণ মানুষ বড় কাঁদছে, রাষ্ট্র তাহার পাশে দাঁড়ায় নাই। জনস্বাস্থ্যে জন-গণেশের দায়িত্ব সমধিক, আমরা যৌথভাবে তা পালন করি, এই মর্মান্তিক শক্তিশালী ভাইরাসকে গোহারান হারিয়ে দেই নেক্সট রাউন্ডে।

সূত্র : বিবিসি

 

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us