খেলার মাঠে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় কেন?

ডা. রুদ্রজিৎ পাল | Jun 20, 2021 08:33 am
মাঠে পড়ে আছেন এরিকসন

মাঠে পড়ে আছেন এরিকসন - ছবি : সংগৃহীত

 

১৯৯৩ সাল। কান্নুরে সন্তোষ ট্রফির খেলা চলছে রেলওয়েজ আর অন্ধ্র প্রদেশের মধ্যে। তরুণ মিডফিল্ডার সঞ্জীব দত্ত লাফিয়ে উঠলেন হেড দেয়ার জন্য। সহ-খেলোয়াড়ের সাথে তখনই হলো সংঘর্ষ আর সেই তরুণ অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। হাসপাতালে নেয়ার আগেই মৃত্যু। এর দশ বছর পরে ২০০৪ সালের ফেডারেশান কাপ ফাইনাল। ব্রাজিলের ক্রিশ্চিয়ানো জুনিয়র মোহনবাগানের গোলকিপারের সাথে সংঘর্ষের পর মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। আবার ওই মাঠেই মৃত্যু। এবারের ইউরো কাপে ডেনমার্ক-ফিনল্যান্ডের ম্যাচের সময় একজন ফুটবলারের মাঠে লুটিয়ে পড়ার দৃশ্য আপনারা যারা দেখলেন, তাদের অনেকেরই এই দুই মর্মান্তিক ঘটনার কথা মনে পড়বে। খেলোয়াড় বলতে আমরা ভাবি, শারীরিক সক্ষমতার শেষ কথা। বহু পরিশ্রমে, বহু অনুশীলনের পর একজন খেলোয়াড় মাঠে নামেন। কিন্তু এইসব তরুণ যোদ্ধার জীবনেও আসতে পারে হঠাৎ মৃত্যুর হাতছানি। এবং সেই শমনের ডাক আসে হাজার হাজার দর্শকের সামনে, মাঠের ঘাসের গালিচার ওপরে।

খেলার মাঠে মৃত্যু কিন্তু খুব বিরল নয়। ব্রাজিলের আয়ারটন সেনা রেসিং গাড়ির দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন। রমন লাম্বা ফিল্ডিং করার সময়ে মাথায় বল লেগে মারা গিয়েছিলেন। কিন্তু এদের সাথে জুনিয়র বা ডেনমার্কের ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের তফাত হলো যে এই ফুটবলারদের সেভাবে আঘাত লাগেনি। এদের হয়েছিল সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। আপনারা কিন্তু ভাববেন না যে শুধু এই ফুটবলারদেরই এরকম হঠাৎ হৃৎপিণ্ডের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। যে কারুর যেকোনো সময়ে এরকম হতে পারে। এইজন্যই বিদেশে শপিং কমপ্লেক্সে বা এয়ারপোর্ট-এ ডিফিব্রিলেটার থাকে। খেলার মাঠেও থাকে।

নানা কারণে একজন তরুণ খেলোয়াড়ের এরকম কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতে পারে। খুব আলোচিত কারণ হলো হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি। অর্থাৎ হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশি মোটা হয়ে যাওয়া। যদি এরকম হার্টের পেশি কিছু জায়গায় মোটা হয়ে ফুলে থাকে, তাহলে পাম্প করে রক্ত সরবরাহে বিঘ্ন ঘটবে। এই অসুখ খুব বিরল, সাধারণত জিনগত কিছু ত্রুটি থেকেই হয়। কিন্তু হাই পারফরমেন্স স্পোর্টস যেমন রাগবি, ক্রস কান্ট্রি সাইক্লিং বা ফুটবলে এরকম হৃৎপিণ্ডের অসুখ হঠাৎ মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। এজন্যই ইউরোপে পেশাদার খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্য পরীক্ষা আবশ্যক। ২০০৩ সালে ক্যামেরুনের মার্ক ভিভিয়ান ফো এই হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি থেকেই মাঠে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।

কিন্তু এটি একমাত্র হার্টের অসুখ নয়। ব্রুগাডা সিনড্রোম, লং কিউ-টি সিনড্রোম নামে আরো কিছু অসুখ রয়েছে যার ফলে হার্টের বিদ্যুৎ চলাচল স্বাভাবিক পথ ছেড়ে বক্রপথে চলাচল করে। এগুলোকে বলে হার্টের বিদ্যুৎ পরিবহণ ব্যবস্থার ত্রুটি। এর থেকেও হৃৎপিণ্ড হঠাৎ থেমে যেতে পারে। আজকাল হার্টের ভালভের সমস্যা অনেক কমে গেছে। কিন্তু তাও কিছু ক্ষেত্রে হার্টের ভালভের সঙ্কোচনের ফলে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়ে এইরকম অ্যারেস্ট হতে পারে। খুব বিরল ক্ষেত্রে হার্টের থেকে যে মহাধমনী, অর্থাৎ অ্যাওর্টা বেরিয়ে আসে, সেই ধমনীতে অস্বাভাবিক প্রসারণ (অ্যানিউরিজম) ঘটে। ওই প্রসারিত অংশ ফেটে মৃত্যু হতে পারে। আর সব শেষে, আজকের পৃথিবীর যেটি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ঘাতক, ওই ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজ তো থাকতেই পারে। এটিও এরকম খেলার মাঠে মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

ফলে এরকম ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা এটাই, যে খেলোয়াড়দের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা সব ক্ষেত্রেই দরকার। এবং সেটি দায়সারা ভাবে করা চেক আপ নয়। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে হার্ট সহ প্রতিটি অঙ্গের ডাক্তারি পরীক্ষা বাঞ্ছনীয়। এর মাধ্যমেই বহু তরুণের অকালে ঝরে যাওয়া রোধ করা সম্ভব।

আর আপনারা এই ইউরো কাপের খেলায় দেখলেন যে কিভাবে মিনিটখানেকের মধ্যে চিকিৎসক এবং প্যারামেডিক দল এসে এই খেলোয়াড়টির প্রাণ বাঁচাল। আমাদের দেশেও সব প্রতিযোগিতামূলক খেলার অঙ্গনে এরকম চিকিৎসার বন্দোবস্ত রাখা উচিত।

সূত্র : বর্তমান


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us