ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে কি শ্বাসকষ্টের শঙ্কা থাকে?

অন্য এক দিগন্ত | Dec 24, 2021 07:56 am
ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে কি শ্বাসকষ্টের শঙ্কা থাকে?

ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে কি শ্বাসকষ্টের শঙ্কা থাকে? - ছবি : সংগৃহীত

 

প্রায় ২ বছর আগে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে ভাইরাল রোগটি ও তার উপসর্গ সম্পর্কে কয়েকটি সুস্পষ্ট ধারণা আমাদের আছে। এমনকি সময়ে সময়ে ভাইরাসের নানা প্রজাতি ও তাদের উপসর্গের বিষয়েও আমরা কম-বেশি জানি। কোভিডের সাধারণ কয়েকটি গুরুতর উপসর্গগুলোর মধ্যে শ্বাসকষ্ট একটি। কিন্তু, কোভিডের নতুন প্রজাতি ওমিক্রনের সংক্রমণে শ্বাসকষ্ট না-ও হতে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বিশ্বাস করেন যে ওমিক্রন প্রজাতিতে আক্রান্ত হলে উপসর্গগুলো ভিন্ন এবং অস্বাভাবিক হতে পারে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে কেন শ্বাসকষ্ট হয়?

কোভিড শ্বাসযন্ত্রের একটি রোগ এবং ফুসফুসে বৃদ্ধি পায়। অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাসটি শ্বাস নেয়ার সময় ফুসফুসে প্রবেশ করে। সরাসরি ফুসফুস এবং অ্যালভিওলি-র (ক্ষুদ্র বায়ু থলি) ক্ষতি করে। ভাইরাসটি অ্যালভিওলাস এবং কৈশিকগুলির পাতলা প্রাচীরের ক্ষতি করে। ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু অ্যালভিওলাস প্রাচীরে জমা হতে শুরু করে, যার ফলে আস্তরণ মোটা হয়। যাত্রাপথ সংকুচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন অংশে লোহিত রক্তকণিকার চলাচল সীমাবদ্ধ হয়, যা শেষ পর্যন্ত শ্বাসকষ্টের দিকে পরিচালিত করে।

ওমিক্রনের সংক্রমণে কেন শ্বাসকষ্টের সমস্যা হবে না?

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস ফুসফুসে বৃদ্ধি পায়, যার ফলে শ্বাসকষ্ট হয়। কিন্তু ওমিক্রনের ক্ষেত্রে এটা সম্ভব যে ভাইরাস গলায় বহুগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এইমসের কমিউনিটি মেডিসিনের অধ্যাপক পুণিত মুসরা বলেছেন যে ওমিক্রন প্রজাতিতে আক্রান্ত হলে উপসর্গগুলো মূল প্রজাতির থেকে ভিন্ন এবং অস্বাভাবিক হতে পারে। করোনাভাইরাসের এই নতুন প্রজাতি অন্যান্য প্রজাতির মতো শ্বাসকষ্টের কারণ হচ্ছে বা হবে না, কারণ সম্ভবত এটি ফুসফুসে সংখ্যাবৃদ্ধি করছে না। এ কারণে ফুসফুসে ওমিক্রন সংক্রমণের প্রভাব কম পড়ে। এছাড়াও, বিশ্বের বেশিরভাগ জায়গা থেকে যে রিপোর্ট আসছে, তাতে দেখা গেছে যে ওমিক্রনের সংক্রমণে গলা প্রভাবিত হচ্ছে, যা প্রমাণ করে যে প্রজাতিটি সেখানে সংখ্যাবৃদ্ধি করছে।

এটার মানে কী?

ওমিক্রন প্রজাতি একেবারেই নতুন প্রজাতি। গবেষকরা এখনো এটিকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এই প্রজাতি কিভাবে বৃদ্ধি পায়, উপসর্গগুলি কী ও টিকা কতটা কার্যকর হবে তা বোঝার জন্য। যাই হোক, প্রাথমিক গবেষণায় এটি পরিষ্কার করা হয়েছে যে ওমিক্রন সংক্রমণে ডেল্টা প্রজাতির তুলনায় হালকা উপসর্গ দেখা যায়। চিকিৎসক মুসরা ব্যাখ্যা করেছেন যে যেহেতু ওমিক্রন গলায় বহুগুণ বেড়ে যায়, তাই এটি গুরুতর নিউমোনিয়া সৃষ্টি করবে না। ওমিক্রনের উপসর্গগুলি ডেল্টার তুলনায় হালকা, তবে তুলনায় ৭ গুণ সংক্রমণযোগ্য। এর অর্থ এটি সম্ভবত বেশি লোককে সংক্রমিত করতে পারে, তবে গুরুতর সংক্রমণ, হাসপাতালে ভর্তি বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে না। তবে, এই বিষয়ে আরো জানতে অনেক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

ওমিক্রনের উপসর্গ কী কী?

গলা ব্যথা ছাড়াও ওমিক্রনের অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে দুর্বলতা এবং গায়ে ব্যথা। এই তিনটিকে করোনাভাইরাসের প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে ধরা হয়। অন্যান্য প্রজাতির থেকে ভিন্ন এই নতুন প্রজাতি শ্বাসকষ্ট, দারুন জ্বর বা গন্ধ বা স্বাদ হারানোর কারণ হয় না।

ওমিক্রনের উপসর্গগুলো কি অন্যান্য প্রজাতির তুলনায় তাড়াতাড়ি দেখা যায়?

ওমিক্রনের সংক্রমণ অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বজুড়ে বেড়েছে। নতুন প্রজাতির উপসর্গগুলি কিছুটা আলাদা বলেও বলা হচ্ছে। কিন্তু এর মানে কি নতুন প্রজাতির ইনকিউবেশন পিরিয়ড স্বাভাবিকের চেয়ে কম? এই বিষয়ে জানতে গবেষণা এখনও চলছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে ওমিক্রনের উপসর্গগুলো আগের প্রজাতিগুলোর তুলনায় তাড়াতাড়ি দেখা যেতে পারে। ব্রিটেনের স্বাস্থ্য সচিব সাজিদ জাভিদের মতে, 'স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ থেকে জানা যায় যে ডেল্টা প্রজাতির তুলনায় ওমিক্রন প্রজাতির সংক্রমণ এবং সংক্রামকতার মধ্যে সময় কম হতে পারে।' অর্থাৎ ওমিক্রন ছোট ইনকিউবেশন পিরিয়ডের সম্ভাবনাকে উচ্চতর সংক্রমণ হারের পিছনে একটি কারণ বলা হয়। কোভিড সংক্রমিত একজন ব্যক্তি উপসর্গ দেখা দেওয়ার প্রায় ২ দিন আগে এবং উপসর্গ দেখা দেয়ার ১০ দিন পর্যন্ত সংক্রামক থাকেন। যার অর্থ এই সংক্রামক উইন্ডো চলাকালীন সংক্রমিত ব্যক্তি অন্য যে কাউকে সংক্রমিত করতে পারে। তাই যদিও কোনো কোভিড-সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে কেউ আসে, তাহলে অবশ্যই কোয়ারান্টিন করতে হবে ও টেস্ট করাতে হবে। রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কারও সংস্পর্শে যাওয়া যাবে না। রিপোর্ট পজিটিভ আসলে আইসোলেশনে যেতে হবে। এই সময়ে উপসর্গগুলোর প্রতি নজর রাখতে হবে। বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, অক্সিজেন লেভেল কম থাকলে অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।

ওমিক্রন কি সত্যিই টিকার কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করবে?

বর্তমানে, নতুন প্রজাতির একাধিক মিউটেশন রয়েছে, স্পাইক প্রোটিনেই রয়েছে তিরিশের বেশি মিউটেশন। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক, তা শুধুমাত্র সংক্রমণের ক্ষেত্রে নয়, টিকার কার্যকারিতার ক্ষেত্রেও। টিকা নির্মাতারা এখন ইতিমধ্যেই চালু থাকা তাদের টিকার কার্যকারিতা জানার জন্য ওই প্রজাতিকে নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে। আইসিএমআরের প্রধান চিকিৎসক সমীরণ পাণ্ডা সম্প্রতি জানিয়েছেন যে বর্তমানে উপলব্ধ কোভিড টিকাগুলো নতুন প্রজাতির বিরুদ্ধে ততটা কার্যকর প্রমাণিত নাও হতে পারে যতটা হওয়া উচিত। তবে, তিনি আরও বলেছেন যে টিকা কার্যকর হবে কি না তা শুধুমাত্র সময়ই বলবে। নতুন প্রজাতি সম্পর্কে আরো তথ্য জানার প্রয়োজন রয়েছে।

ওমিক্রন প্রজাতি কি করোনার অন্যান্য প্রজাতিগুলোর চেয়ে বেশি মারাত্মক?

বর্তমানে, নতুন প্রজাতির একাধিক মিউটেশন রয়েছে, স্পাইক প্রোটিনেই রয়েছে তিরিশের বেশি মিউটেশন। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক, তা শুধুমাত্র সংক্রমণের ক্ষেত্রে নয়, টিকার কার্যকারিতার ক্ষেত্রেও। বর্তমানে উপলব্ধ কোভিড টিকাগুলো নতুন প্রজাতির বিরুদ্ধে ততটা কার্যকর প্রমাণিত না-ও হতে পারে যতটা হওয়া উচিত। তবে, টিকা কার্যকর হবে কি না তা শুধুমাত্র সময়ই বলবে। নতুন প্রজাতি সম্পর্কে আরো তথ্য জানার প্রয়োজন রয়েছে।

সূত্র : নিউজ ১৮

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us