যেভাবে বুঝবেন কিডনিতে পাথর আছে

ডা. এম এ রাজ্জাক | Nov 19, 2019 01:20 pm
যেভাবে বুঝবেন কিডনিতে পাথর আছে

যেভাবে বুঝবেন কিডনিতে পাথর আছে - ছবি : সংগ্রহ

 

মূত্রগ্রন্থি বা কিডনিতে পাথর হওয়া এ কথাটা বর্তমানে শুনলে আঁতক ওঠার কিছু নেই বা নতুন কিছু মনে করারও নয়। কিডনির মধ্যে শক্তদানা কঠিন পদার্থ বা স্টোনের মতো জমা হলে তাকে রেনাল স্টোন বা কিডনির পাথর বলে। এ পাথর কখনো মূত্রগ্রন্থি/কিডনি, মূত্রানালী, আবার কখনো মূত্রথলিতে এসে জমা হয়। যার ফলে বিভিন্ন সমস্যাসহ প্রস্রাব অবরোধ হতে পারে।

কেন হয় কিডনিতে পাথর : কিডনির কাজ শরীরের রক্ত থেকে ময়লা আবর্জনা ও পানি শোধন করে প্রস্রাব আকারে বের করে দেয়া। দু’টি ইউরেটারের মাধ্যমে প্রস্রাব মূত্রথলিতে এসে জমা হয়। তারপর প্রয়োজনমতো বেরিয়ে আসে। আমরা সারা দিন যা পানাহার করি তা থেকে শরীরের দরকারি অংশ শরীর কোষ নিজে রাখে। বাকি অংশ বর্জ্য পদার্থ হিসেবে রক্তের সাথে মেশে। কিডনি এ বর্জ্য পদার্থ রক্ত থেকে বের করে নিয়ে প্রস্রাব আকারে নিঃসরণ করে। তাছাড়া আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কিডনি পালন করে থাকে।
সাধারণত পাথর যে কারণে হয়
কিডনিতে অনেক রকম স্টোন হতে পারে। যেমন ইউরিক স্টোন, স্ট্রভাইট স্টোন, সিস্টিক এবং ক্যালসিয়াম স্টোন হতে পারে।

যেসব খাবারে ইউরিয়া বা ইউরিক এসিড বেশি থাকে * ক্যালসিয়াম খুব বেশি নিলে * যারা পান খান তারা কন্টিনিউ চুন খাচ্ছেন পানের সাথে, আর চুনে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম থাকে। একটু ভেবে দেখুন চুন আর চিনি সমপরিমাণ একত্রে করে কিছু সময় রাখার পর কত শক্ত হয়? পাথরের মতো হয় কিনা। যারা পানের সাথে চুন আর মিষ্টি মসলা খাচ্ছেন তাদের জন্য কি এটা হওয়া খুব অসাধারণ?
* অতিরিক্ত স্নেহ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করে যারা
* রক্ত সংবহন ক্রিয়ার ব্যাঘাত
* পরিপাক বা পরিপোষণ কাজের ব্যাঘাত
* যেকোনো সংক্রামক রোগ যদি মূত্রযন্ত্র আক্রমণ করে
* শরীর হতে অতিমাত্রায় ঘাম নির্গত হওয়ার ফলে
* জলবায়ু
* পেশা
* সর্বোপরি বংশে থাকলেও হতে পারে।

যেভাবে বুঝবেন কিডনির পাথর আছে
যেকোনো বয়সে নারী, পুরুষ, সবারই কিডনিতে পাথর জমতে পারে
* বারবার প্রস্রাবের বেগ
* বেদনা কিডনি বরাবর হয়ে নিম্ন কুচকির দিকে, পেটে, বুকে প্রসারিত হতে পারে
* কুচকি, অণ্ডকোষ প্রভূতি স্থানে অত্যন্ত যন্ত্রণা হতে পারে
* যেকোনো ভারী জিনিস তুলতে গেলে বা রাতে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ বেদনার উদ্রেক হতে পারে
* অণ্ডকোষ ঊর্ধ্ব দিকে টেনে ধরা মতো অনুভব হতে পারে
* বেদনা ও যন্ত্রণা কখনো কখনো বা সবসময় থাকতে পারে
* বমি ভাব
* বমি হতে পারে
* হিক্কা-কপালে ঘাম, মূর্ছা যেতে পারে
* নাড়ি দ্রুত ক্ষীণ
* দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত
* সর্বদাই প্রস্রাব করার ইচ্ছা থাকে কিন্তু পারে না
* প্রস্রাব ফোঁটা ফোঁটা বের হয়
* তলপেটে ব্যথা হয়
* প্রস্রাবে পুঁজ রক্ত মিশ্রিত থাকতে পারে
* কোনো কোনো অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রোগী বোধ করে পাথর যেন নড়াচড়া করে
* ছোট শিশুরা প্রস্রাব করতে গিয়ে কান্না করতে পারে
* চার বছরের একটি শিশুর বেশ কয়েকটা স্টোন এসেছিল। সে আমাকে জানালো, শেষ দিন যে পাথরটা আসছে, সেদিন আমার অনেক কষ্ট হয়েছে, অনেকক্ষণ কেঁদেছি, সহ্য করতে না পেরে একটা কাঠি দিয়ে খুঁটে এবং টিপে টিপে বের করেছি। পরে অনেকক্ষণ রক্ত আসছে। তাই বলি এখন ছোটদেরও দেখা যায়।

আধুনিক পরীক্ষা নিরীক্ষা
প্রথমত হিস্ট্রি নিয়ে বুঝা যায়
* এক্স-রে করে, আলট্রাসোনগ্রাম করে, আইভিও করে, প্রস্রাব পরীক্ষা করে জানতে পারেন কিডনির স্টোনের অবস্থা।

যে কারণে আপনাকে চিকিৎসা নিতে হবে : এর জটিলতাস্বরূপ কিডনির প্রদাহ, শরীর হাত পা ফুলে যেতে পারে * কক্সিমিয়া * মূত্র অবরোধ হয়ে যন্ত্রণায় অস্থির ও অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।

চিকিৎসা : হোমিওপ্যাথিতে কিডনির স্টোনের জন্য অনেক মেডিসিন আছে। তবে এ মেডিসিনগুলো এলোপ্যাথির ন্যায় ধারাবাহিকভাবে প্রয়োগ করা চলে না। প্রত্যেকটি মেডিসিনই আলাদা আলাদা লক্ষণ সাদৃশে ব্যবহার করে থাকে। যেমন লাইকোপুডিয়াম, লিথিয়াম কার্ব, সার্সাপেরিলা, থ্যালপসি-বার্সা, বারবারিস, এপিজিয়া পেমস্, ক্যানথারিস ও ক্যালকেরিয়া ইত্যাদি। যা একজন আদর্শ চিকিৎসকের পক্ষেই সঠিক মাত্রা শক্তি নির্বাচন সম্ভব।

পাথর যদি বেশি বড় হয়ে যায় বা দীর্ঘদিনের হয় তখন তা অনায়াশে বেরিয়ে আসতে পারে না। অর্থাৎ ৫ মিলি মিটারের ছোট হলে সহজে বেরিয়ে আসে।

যা করতে হবে আপনাকে : *পানি পানের অভ্যাস রাখতে হবে প্রয়োজন মতো * ঠাণ্ডা না লাগাতে হবে * বেদনা উপশমের জন্য হালকা গরম সেঁক দেয়া যেতে পারে। * দুধ, সাগু, বার্লি, দধি সুপথ্য। ফলমূল, লেবুর শরবত, বিশুদ্ধ পানি, বিশুদ্ধ বায়ু।

যা করবেন না : রোগ নিয়ে অবহেলা * চুন, সুপারি খাবেন না *অম্ল, অর্জনকর দ্রব্য, মদ্যপান, ধূমপান, গোশত, গুরুপাক খাদ্য নেবেন না। পেইনকিলার দীর্ঘদিন নেবেন না।

লেখক : অ্যাসো: প্রফেসর তানজিম হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, নারায়ণগঞ্জ। চেম্বার : দি সিটি হোমিও ইন্টারন্যাশনাল, ২৩ জয়কালী মন্দির রোড, ঢাকা।
ফোন : ০১৯১২৮৪২৫৮৮


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us