সৌদি আরব থেকে সেলিনার আকুতি : আমাকে ফেরান

কাওসার আজম | Dec 09, 2019 09:00 pm
সৌদি আরব থেকে সেলিনার আকুতি : আমাকে ফেরান

সৌদি আরব থেকে সেলিনার আকুতি : আমাকে ফেরান - ছবি : সংগৃহীত

 

সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার সেলিনা আক্তার দীর্ঘ দিন ধরে দেশে ফেরার আকুতি জানালেও তাকে এখনো দেশে ফেরাতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। সেলিনাকে সৌদি আরবে পাঠানো মেসার্স মিলেনিয়াম ওভারসীজ লিমিটেড কর্তৃপক্ষের কাছে দীর্ঘদিন ধর্না দিয়ে স্ত্রীকে ফেরাতে না পারায় গত নভেম্বরের মাঝামাঝিতে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) বরাবর আবেদন করেন। এরপর গত ২৪ নভেম্বর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ওয়েজ আর্নার্স ওলেফেয়ার বোর্ডে আবেদন করেন নির্যাতিত স্ত্রীকে দেশে ফেরাতে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সেলিনা আক্তারকে উদ্ধার করে দেশে পাঠানোর জন্য বিএমইটি এবং ওয়েজ আর্নার্স ওয়েল ফেয়ার বোর্ড থেকে সৌদি আরবের রিয়াদ বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম উইংয়ে চিঠি লেখা হয়। কিন্তু, আজ সোমবার পর্যন্ত চিঠির কোনো জবাব দেয়নি শ্রম উইং।

দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএমইটির সহকারী পরিচালক (কর্মসংস্থান) প্রবীর দত্ত সেলিনার স্বামীর আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৭ নভেম্বর সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিকে ২৮ নভেম্বরের মধ্যে তাকে দেশে ফেরত আনতে চিঠি দেন। রোববার বিকেলে এ বিষয়ে বিএমইটিতে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সি সেলিনাকে দেশে ফেরত আনা তো দূরের কথা চিঠিরও জবাব দেয়নি। অন্যদিকে রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম উইংকে চিঠি দিলেও তার কোনো জবাব আসেনি। আজ সোমবার বিকেলে ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গিয়ে জানা যায়, তাদের চিঠিরও কোনো জবাব আসেনি সৌদি থেকে। কল্যাণ বোর্ডের উপ পরিচালক জাহিদ আনোয়ার বলেন, আমরা চিঠি লিখেছি। এখন তারা বিষয়টি দেখছে। এখন পর্যন্ত কোনো আপডেট তাদের পক্ষ (দূতাবাস) থেকে আমাদের জানানো হয়নি।

রাজধানী ঢাকার কদমতলী থানার পূর্ব জুরাইনের মো. উজ্জলের স্ত্রী সেলিনা আক্তার (বিএক্স-০৭১৩৯১৭) ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর মেসার্স মিলেনিয়াম ওভারসীজ লিমিটেডের মাধ্যমে সৌদি আরবে যান। তার স্বামী এবং স্বজনদের কাছে ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে তিনি তার ও’পর নিয়োগকর্তা এবং তার স্বজনদের শারীরিক নির্যাতন ও যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। গত এক সপ্তাহ ধরে এই প্রতিবেদকের সাথে সামাজিক মাধ্যমে নিয়মিত কথা হয়ে আসছিল সেলিনা আক্তারের। নেটওয়ার্ক দুর্বল হওয়ায় তিনি প্রায় প্রতিদিনই ভিডিও বার্তা দিয়ে তার ওপর শারীরিক, মানসিকসহ নানা নির্যাতনের কথা জানিয়ে আসছিলেন। সর্বশেষ তার সাথে কথা হয় রোববার বিকেলে। তখন তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ভাই আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। আমি আর পারছি না। আমি মনে হয় মরেই যাব। প্লিজ আমাকে উদ্ধার করে স্বামী-সন্তানের কাছে নেওযার ব্যবস্থা করেন।’

এরপর থেকে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে কল ঢুকলেও রিসিভ হচ্ছে না। উজ্জল ও সেলিনা এক কন্যা সন্তানের জনক জননী। সোমবার দুপুরে তিনি এই প্রতিবেদককে ফোন দিয়ে বলেন, ‘ভাই তাকে (স্ত্রী) তো আর ফোনে পাচ্ছি না। তার কি হলো বুঝতে পারছি না। গতকাল (রোববার) রাতে কথা বলা অবস্থায় ওই পাশ থেকে এক পুরুষের কণ্ঠ শুনতে পাই। সম্ভবত তার (সেলিনা) মালিক। তাদের কথা বলার এক পর্যায়ে ফোন বন্ধ হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তাকে পাইনি। তার জন্য আমরা সবাই দুশ্চিন্তায় আছি।’

এর আগে সেলিনা আক্তার একাধিক ভিডিওতে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার আঁকুতি জানান। তিনি বলেন, বিনা কারণেই আমাকে প্রায় প্রতিদিনই মা’রধর করে নিয়োগকর্তা ও তার স্বজনরা। গরম ইস্ত্রি দিয়ে ছেক দিতে আসে, চুল কে’টে দিতে আসে। আমার শরীর জুড়ে মা’রের (নি’র্যাতন) দাগ। পিঠে মা’রে, বুকে-মাথায় মা’রে। এসব জায়গা তো আর দেখানো যায়? কেন আপনারা বুঝেন না। আমি বার বার বলছি, আমাকে এখান থেকে নিয়ে যান। কেন নিচ্ছেন না?
সেলিনা আক্তার বলেন, প্রথম ২-৩ মাস ভালই ছিলাম। তারপর থেকে বেতন নিয়ে সমস্যা করে আসছে। বেতনের কথাও বলতে পারি না। কথা কথায় মারধর করে। বেশ কিছু দিন ধরে আমি অসুস্থ। আমাকে চিকিৎসা করায় না। আর পারছি না। প্লিজ আমাকে বাঁচান। আমার স্বামী সন্তানের কাছে ফিরিয়ে দিন।

এদিকে, রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর মো. মেহেদী হাসানকে গত ৪ ডিসেম্বর থেকে বার বার চেষ্টা করেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। নিজের পরিচয় দিয়ে এসএমএস দিলেও কোনো সাড়া দেননি। ফার্স্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানকে কয়েকবার ফোন দেয়ার পর রিসিভ করেননি। তবে নিজের পরিচয় দিয়ে এবং কারণ জানিয়ে এসএমএস দেয়ার পর তিনি পাল্টা এসএমএস দিয়ে জানান, সেলিনা আক্তারের বিষয়টি রাফি নামে (তার পদপদবী জানা যায়নি) একজন দেখছেন। এজন্য তিনি একটি নম্বরও দেন। ওই নম্বরে দুই দিন অসংখ্যবার ফোন দিলেও রাফি ফোন ধরেননি।

গত নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত সেলিনা আক্তারকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণ ম’ন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ প্রতিষ্ঠান জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) ও ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে আবেদন করেছেন তার স্বামী মো. উজ্জল। এসব আবেদনে সেলিনার উল্লেখ করেন, প্রথম দিকে ঠিকমতোই চাকরি করছিল সেলিনা। কিন্ত গত ৪ মাস যাবত নিয়োগকর্তা ও তার আত্মীয়রা আমার স্ত্রীকে কু প্রস্তাব দিয়ে যৌন হয়রানিসহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করছে। বেতনও দিচ্ছে না। বেতন চাইলে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে।

আবেদনে উজ্জল আশঙ্কা করেন, সৌদিস্থ নিয়োগকর্তা বা তার পুরুষ আত্মীয়-স্বজন আমার স্ত্রী সেলিনা আক্তারকে নির্যাতন করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিয়ে আইনের হাত থেকে রেহাই পাবার চেষ্টা করে সফল হবে; কিন্তু আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। এমতাবস্থায় বাংলাদেশী নাগরিকের জীবন রক্ষার মৌলিক অধিকার সুরক্ষা করতঃ আমার স্ত্রীকে সৌদিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় নিয়োগকর্তার হাত থেকে উদ্ধার করে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে তিনি অনুরোধ জানান।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us