অ্যালকোহলে কি নিরাপদ মাত্রা আছে?

ডা: মো: ফারুক হোসেন | Dec 24, 2019 02:14 pm
অ্যালকোহল

অ্যালকোহল - ছবি : সংগ্রহ

 

অ্যালকোহল সেবনে কেউ সামায়িকভাবে কিছুটা আরাম অনুভব করতে পারে কিন্তু অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনে রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড লেভেল বৃদ্ধি পেতে পারে, যার ফলে রক্তনালীতে রক্ত জমাট বেঁধে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক হতে পারে।

রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড লেভেল বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পেলে প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ হতে পারে। ক্রমাগত অ্যালকোহল পান করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আমাদের শরীর অ্যালকোহল পানীয়কে এসিটাইল ডিহাইডে রূপান্তরিত করে। এসিটাইল ডিহাইড একটি কারসিনোজেন অর্থাৎ ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান। অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেয়। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

যারা নিয়মিত মদ্য পান বা অ্যালকোহল সেবন করে থাকেন, তাদের যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, এইচআইভি বা এইডস্, যৌনবাহিত রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। কারণ অতিরিক্ত মদ্যপানকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ যৌন আচরণে নিজেদের সম্পৃক্ত করে থাকে। ফলে তারা অস্বাভাবিক আচরণ করে থাকে। দীর্ঘমেয়াদে অ্যালকোহল সেবনের ফলে ব্রেন, লিভার ও হার্টের সাথে সংশ্লিষ্ট সিরোসিস, অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস, ফাইব্রোসিস, উচ্চ রক্তচাপ, কার্ডিওমায়োপ্যাথি, এরিথমিয়া, স্ট্রোক, প্যানক্রিয়েটাইটিসের মতো প্রাণঘাতী রোগ দেখা দিতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদে অ্যালকোহল সেবনের ফলে মুখ, গলা, ব্রেস্ট এবং লিভারের ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। অধিক পরিমাণে অ্যালকোহল সেবনে ডিমেনসিয়া হতে পারে। বিয়ার, ওয়াইন, অ্যালকোহল যেকোনোরূপে সেবন করলে বেশি প্রস্রাব করতে হয়। অ্যালকোহল মুখকে শুষ্ক করে এবং ডিহাইড্রেশন করে থাকে। এ অবস্থায় ব্যাকটেরিয়া মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে থাকে। অ্যালকোহল সেবনকালে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করা ঠিক নয়। বিশেষ করে এনএসএআইডি গোত্রভুক্ত ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করলে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। অ্যালকোহল সেবনে বছরে ২.৮ মিলিয়ন মানুষ মারা যায়। গবেষকরা বলেন, অ্যালকোহল সেবনের কোনো নিরাপদ মাত্রা নেই। সামান্য অ্যালকোহল সেবনেও অনেক ক্ষতি হতে পারে। তাই এটি মনে করার কোনো কারণ নেই যে অল্প একটু খেলে কোনো সমস্যা হবে না। উপরোক্ত বিষয়ে সর্বসাধারণের আরো বেশি সচেতন হতে হবে।

লেখক : মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ।
ফোন : ০১৮১৭৫২১৮৯৭

ক্যান্সারের ঝুঁকিতে কমাতে

ডা: আবু উবাইদ মুহম্মদ মুহসিন

ক্যান্সার একটি জটিল ব্যাধি। সময়মতো যার চিকিৎসা না হলে মৃত্যুর সম্ভাবনা থেকে যায়। এ পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকভাবে যতখানি জানা গেছে, তাতে করে ক্যান্সার সচরাচর রাসায়নিক পদার্থ, রোগ-জীবাণু এবং বিকিরণের কারণে সঙ্ঘটিত হয়ে থাকে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই তিনটি উপাদান বিশেষ করে রাসায়নিক পদার্থ ও ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্ট ক্যান্সার রোগের বিষয়টি মানুষের জীবনযাত্রা প্রণালীর সঙ্গে সম্পৃক্ত।

উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, তামাক বা বিড়ি-সিগারেটে ছয় হাজারেরও বেশি রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে যার মধ্যে অন্তত ৫০টি ক্যান্সার সৃষ্টিতে সরাসরি জড়িত। অথচ এই বিড়ি-সিগারেট বা তামাক গ্রহণ জীবনযাত্রা প্রণালীরই অংশ।

আবার অন্য দিকে, স্বাস্থ্যসম্মত নয় এমন খাদ্য এবং খাদ্যাভ্যাসে বেশ কিছু ক্যান্সার হয়ে থাকে। খাদ্যাভ্যাসজনিত ক্যান্সার মূলত, রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই হয়ে থাকে। অথচ এই খাদ্যাভ্যাস আমাদের জীবনযাত্রা প্রণালীরই অংশ। ঠিক এই কারণেই বলা হয়ে থাকে, শতকরা ৯০ ভাগ ক্যান্সার কোনো না কোনোভাবে জীবনযাত্রা প্রণালী এবং আমাদের চারপাশের পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পৃক্ত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রকাশনায় পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, অন্ততপক্ষে শতকরা ৩০ ভাগ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায় যদি আমরা আমাদের জীবনযাত্রা প্রণালীতে পরিবর্তন আনতে পারি এবং আমাদের কু-অভ্যাসগুলো থেকে দূরে থাকতে পারি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওই একই প্রকাশনায় উল্লেখ করেছে, সারা বিশ্বে প্রতি বছর যে ১ কোটিরও বেশি লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, তার তিন-চতুর্থাংশের জন্যই তামাক, অ-স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য এবং কিছু সংক্রমণই দায়ী।

গবেষণায় বলে, নিয়মিত কিছু ব্যাপার মেনে চললে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকখানি কমে, যেমন ব্যায়াম। প্রত্যেক দিন নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করা যেমন দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, হাঁটা ইত্যাদি। এমন কোনো নির্দিষ্ট খাবার নেই যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে। তবে ধারণা করা হয়, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে।
লেখক : অধ্যক্ষ, বসুন্ধরা আদ্-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ এবং প্যাথলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us