ভারতকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে চীন-মিয়ানমার!

এম কে ভদ্রকুমার | Jan 20, 2020 08:46 am
ভারতকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে চীন-মিয়ানমার!

ভারতকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে চীন-মিয়ানমার! - ছবি : সংগৃহীত

 

চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের ১৭-১৮ জানুয়ারি মিয়ানমার সফরটি (১৯ বছরের মধ্যে প্রথম) চীন-মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং সেইসাথে আঞ্চলিক নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে বড় ধরনের ঘটনা হতে যাচ্ছে।

শির সফরের পর প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে পারস্পরিক কল্যাণ, সাম্যতা ও উইন-উইন সহযোগিতার লক্ষ্যে অভিন্ন ভবিষ্যতের জন্য মিয়ানমার-চীন সম্প্রদায় নির্মাণের দিকে এগিয়ে যাবে দুই দেশের মধ্যকার ব্যাপকভিত্তিক কৌশলগত অংশীদারিত্ব।

নে পি তাওয়ে ভোজসভার বক্তৃতায় শি বলেন, বন্ধুত্বপ্রতীম দুই দেশের সম্পর্ক হাজার বছর টিকে থাকবে, কারণ তারা পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও পারস্পরিক কল্যাণে একসাথে দাঁড়াচ্ছে। একই নৌকার যাত্রীদের মতো সুপ্রতিবেশী হিসেবে বিরাজ করার জন্যও তিনি আহ্বান জানান। তিনি দেশ দুটির অর্থনৈতিক ও সামাজিক কল্যাণে আরো অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানান।

শি বলেন, দুই দেশের উচিত হবে চীন-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোরকে (সিএমইসি)কে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণকাজে পরিণত করা এবং প্রজন্মের প্রজন্ম ধরে তাদের বন্ধুত্ব বজায় থাকে।
শির জন্য বিপুল সংবর্ধনার আয়োজন করে মিয়ানমার। স্টেট কাউন্সিলর আং সান সু চি বলেন যে চীন সবসময়ই মিয়ানমারের বন্ধু, ভাগ্যই দুই দেশকে একসাথে জুড়ে দিয়েছে। দুই দেশ কিয়াকফু বিশেষ অর্থনৈতিক জোন, নিউ ইয়াঙ্গুন সিটি ও চীন-মিয়ানমার সীমান্ত অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোন ছাড়াও রাস্তা, রেলওয়ে ও বিদ্যুৎ, জ্বালানি অবকাঠামো নির্মাণে সম্মত হয়েছে। সার্বিকভাবে এই সফরের ফলে সিএমইসিকে ধারণাগত পরিকল্পনা থেকে গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণে পরিণত হয়েছে।

চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ি ওয়াং বলেন, শির কাছে মিয়ানমারের প্রতিরক্ষাপ্রধান মিন আং হ্লাইঙ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী বেল্ট অ্যান্ড রোড যৌথ নির্মাণে জোরালোভাবে সমর্থন দেবে।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই দেশ আসিয়ান, জাতিসঙ্ঘসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় ফোরামে একসাথে কাজ করবে। এতে আরো বলা হয়, রাখাইন রাজ্যে মানবিক পরিস্থিতির সমাধান করা এবং সব সম্প্রদায়ের মধ্যে সেখানে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের সহায়তা করবে।
এই সম্পর্ক থেকে তিনটি ভিত্তি আত্মপ্রকাশ করছে। প্রথমত, দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা ও পারস্পরিক দায়বদ্ধতা নতুন পর্যায়ে উপনীত হওয়া। দ্বিতীয়ত, সিএমইসি চালু এবং তৃতীয়ত, পাশ্চাত্যের সমালোচনার মুখে মিয়ানমারের মূল স্বার্থ ও গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগগুলো দূর করতে সহায়তা করা।

রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে চীন একটি পক্ষ, এবং এমনকি নিশ্চয়তাদাতেও পরিণত হয়েছে। উল্লেখ্যৈ, ১৬ শ’ কিলোমিটার দীর্ঘ সিএমইসি, কিয়াকফু বিশেষ অর্থনৈতিক জোন, বঙ্গোপসাগরের গভীর সমুদ্র বন্দর রাখাইন রাজ্যেই অবস্থিত। সিএমইসির মধ্যে বিশাল আন্তঃসীমান্ত তেল ও গ্যাস পাইপ লাইনও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সিনহুয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্দর ও শিল্প পার্কটি বছরে এক লাখ চাকরির সৃষ্টি করবে, ১৫ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব সৃষ্টি করবে।

চীন-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর
সিএমইসির মাধ্যমে ভারত মহাসাগরে যাওয়ার সুযোগ পাবে চীন। এছাড়া উপসাগরীয় দেশগুলো থেকৈ তেল ও গ্যাস আমদানি সহজ হবে, চীনের তুলনামূলক অনুন্নত দক্ষিণাঞ্চলকে বিশ্ববাজারের সাথে যুক্ত করবে। যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য এই প্রকল্পের তীব্র বিরোধিতা করছে। ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে সিএমইসি হলো বড় ধরনের বিপর্যয়কর বিষয়। এই প্রকল্পটি ভারতের নিজস্ব পরিকল্পনায় বিপর্যয় ডেকে আন পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে ভরতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ঢাকায় ভারতের প্রতি ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, এবং এর ফলে চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছে, ভারতের বিমস্টেক এজেন্ডার প্রতি সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। আঞ্চলিক কানেকটিভিটির পরিকল্পনাতেও সাড়া পাচ্ছে না ভারত। নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার যোগ দিযেছে বিআরআইতে। ভারত ভয়াবহ রকমের একঘরে হয়ে পড়েছে।

আর সাগরে ব্যাপকহারে চলাচলের ফলে ভারত মহাসাগরে চীনা নৌবাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিতভাবেই বাড়িয়ে দেবে। চীনা নৌবাহিনীর জাহাজগুলোকে গোয়াদর, হাম্বানতোতা, চট্টগ্রাম ও কিয়াকফুতে দেখতে পাওয়া তখন অস্বাভাবিক হবে না। বঙ্গোপসাগের সিএমইসি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক বিষয়ে পরিণত হবে।
ফলে ভবিষ্যতে হয়তো মালাক্কা প্রণালী বর্তমানের গুরুত্ব বজায় রাখতে পারবে না। সিপিইসি ও সিএমইসি ভারত মহাসাগরে আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্য ব্যাপকভাবে পুনঃবিন্যাস করবে।
এই প্রেক্ষাপটে ভারতের উচিত হবে চীনের সাথে জরুরি ভিত্তিতে কৌশলগত যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা। তাকে অবশ্যই তার বর্তমান নীতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
ইন্ডিয়ান পাঞ্চলাইন


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us