মোদিকে কি হারাতে পারবেন কেজরিওয়াল

বাসুদেবন শ্রীধরন | Feb 14, 2020 09:07 am
কেজরিওয়াল ও মোদি

কেজরিওয়াল ও মোদি - ছবি : সংগৃহীত

 

নয়া দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ভারতীয় রাজধানীতে মঙ্গলবার দুর্দান্ত নির্বাচনী জয়ের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নগরকেন্দ্রে অবস্থিত হিন্দু দেবতা হনুমানের একটি মন্দিরে শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন।

তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্বে আসতে পেরে ৫১ বছর বয়স্ক কেজরিওয়াল আকুণ্ঠভাবে ‘হনুমানজিকে’ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন । এই জয়ের ফলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কব্জা থেকে দিল্লিকে মুক্ত রাখতে দেখতে আগ্রহীদের মধ্যে কেজরিওয়ালকে বিশেষ মর্যাদা এনে দিয়েছে।
অনেক দিক দিয়েই মোদির ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে গঠিত আম আদমি পার্টির (আপ) জয় হনুমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন তাৎপর্যপূর্ণ।
ভোটাভুটির মাত্র কয়েক দিন আগে এক সাংবাদিক বলেছিলেন যে কেজরিওয়াল যে খাঁটি হিন্দু তা প্রমাণ করার জন্যই হনুমান দেবতার পূজায় হনুমান চলিসা আবৃতি করে থাকেন। ভারতের হিন্দি বলয়ে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হনুমান চালিশা কেজরিওয়ালের মুখে উচ্চারণ সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। সারা ভারতের টিভি চ্যানেলগুলোতে তা প্রচার করা হয়।

রাজনীতিতে প্রবেশের আগে কেজরিওয়াল ২০০৬ সালে র্যা মন ম্যাগসেসে পুরস্কার জয় করেন তার দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমের কারণে। তিনি হিন্দু জাতীয়তাবাদী মতাদর্শকে বিচক্ষণতার সাথে নমনীয়ভাবে প্রকাশ করেন।
তবে বিজেপির পেশীশক্তির রাজনীতিকে মোকাবিলা থেকেই নয় কেবল, সেইসাথে তিনি বিতর্কিত রাজনীতি প্রশ্নে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মোকাবিলা থেকেও বিরত থাকেন। বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কিংবা কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের মতো বিষয়গুলোতে তিনি মোদির সাথে দ্বন্দ্বে জড়াননি।
এই প্রেক্ষাপটে আম আদমি পার্টি দিল্লি রাজ্য বিধান সভার নির্বাচনে ৭০টির মধ্যে ৬২টি লাভ করেন। বিজেপি মাত্র ৮টিতে জয় পায়। কংগ্রেস পুরোপুরি ০ থাকে।
গত দশকে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে আপ ও বিজেপি উভয়ে উপকৃত হয়েছে। কংগ্রেসের ব্যাপক দুর্নীতির বিরুদ্ধে উভয় দলই ছিল সোচ্চার। এর জের ধরেই ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসে। তবে কেজরিওয়ালের সাফল্যও কম নয়।
মাত্র সাত বছর আগে গঠিত আম আদমি পার্টিটি বিপুল শক্তিধর বিজেপির মোকাবিলা করেছে দারুণভাবে। মোদির অতি ঘনিষ্ঠ খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ ২৭৫ জন বিজেপি পার্লামেন্ট সদস্যের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট ভিক্ষার বিরুদ্ধে জয়ী হয়েছেন।

গত ৫ বছর ধরে বিনা মূল্যে পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ, শিক্ষা সংস্কার, অধিকতর ভালো স্বাস্থ্যসেবাসহ সমাজকল্যাণমূলক কাজের পুরস্কার হিসেবে আবারো নির্বাচিত হয়েছেন কেজরিওয়াল।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কেজরিওয়াল প্রশাসন দিল্লির ২০০ সরকারি স্কুলে ২০ হাজার নতুন শ্রেনিকক্ষ সংযোজন করেছেন। অথচ আগের কয়েক দশকে আগের প্রশাসনগুলো মিলে তৈরী করেছিল মাত্র ১৭ হাজার।
জনবান্ধব ও গরিবমুখী পরিষেবা সত্ত্বেও দিল্লি সরকার বাজেট উদ্বৃত্ত রাখতে পেরেছে। গত অক্টোবরে রাষ্ট্রীয় বাসে সব নারীদের জন্য বিনা টিকেটে ভ্রমণের সুযোগ দেন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ কারণেই নারীরা তাকে ব্যাপক সংখ্যায় ভোট দেয়।
এমনকি কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধবাদীরাও একমত যে তার রাজনীতি দিল্লির তিন কোটি মানুষের মধ্যে অনুরণিত হয়। বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র বিজয় শাস্ত্রী দিজ উইককে বলেছেন, আম আদমি পার্টির নগদে প্রাপ্তি বিজেপির প্রতিশ্রুতির চেয়ে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
ভারতের কয়েকটি রাজ্যে মুসলিমবিরোধী হিসেবে বিবেচিত সিএএবিরোধী আন্দোলনের মধ্যেই দিল্লির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে আম আদমি পার্টির এই নির্বাচনী জয় মোদির বিরুদ্ধে কোনো বিশ্বাসযোগ্য রাজনৈতিক আন্দোলনের সৃষ্টি হয় কিনা বা কেজরিওয়ালের গৃহীত পদক্ষেপগুলো জাতীয় পর্যায়ে বিজেপিকে পরাজিত করতে পর্যাপ্ত হয় কিনা তা দেখার বিষয় রয়ে গেছে।

দিল্লিভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সোসাইটি ফর পলিসি স্টাডিজের পরিচালক উদয় ভাস্কর বলেন, হিন্দু ভোটারদের প্রতি সহমর্মিতা ও সংখ্যালঘুদের প্রতি সহানুভূতিপূর্ণ হওয়ার একটি চমৎকার ভারসাম্য বজায় রাখেন কেজরিওয়াল। আম আদমি পার্টিকে স্পষ্টভাবে মুসলিমপন্থী মনে হয় না।
তিনি বলেন, প্রতিটি ভারতীয় রাজ্যে নিজস্ব রাজনৈতিক গতিশীলতা রয়েছে। দিল্লির রাজনীতি মোদির হিন্দুত্ববাদী ও মুসলিমবিরোধী বিভেদসূচক রাজনীতিকে পরিশোধিত করেছে।
তবে মোদির দুর্বলতাগুলোকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় পর্যায়ে তাকে কুপোকাত করার বিষয়টি এখনো অনেক দূরে রয়ে গেছে।

শাস্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মাধবন রাঘবেদ্রন বলেন, আম আদমির মডেলটি সাধারণভাবে প্রয়োগ করা কঠিন কাজ হবে।
তিনি বরেন, বিশেষ করে বড় বড় রাজ্যের জন্য এই নীতি অনুসরণ করা কঠিন কাজই হবে।
তিনি বলেন, এই পরাজয় বিজেপির জন্য নিশ্চিতভাবেই একটি লজ্জা। তবে জাতীয় পর্যায়ে বিজেপিকে হারানোর জন্য যে সঙ্ঘবদ্ধ পরিকল্পনা প্রয়োজন, সেটা প্রণয়ন করা খুবই কঠিন।
এসসিএমপি

 

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us